নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ক খ গ

শামসুদ্দীন হাবিব

আমি অতি সাধারন একজন মানুষ,নিজকে নিয়ে খুব বেশি প্রত্যাশা নাই।পেশায় টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার,একসময় নাটকে ক্যামেরার পেছনে কাজ করেছি।টুকটাক লেখালেখি করি।হাসতে ভালোবাসি,ভালোবাসি হাসাতে।এই তো।

শামসুদ্দীন হাবিব › বিস্তারিত পোস্টঃ

Golpo

০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৩:৫০

পুরাঘটিত বর্তমান
শরতের দুপুর,রেললাইনের উপর দিয়ে একা হেটে চলেছি আমি।মাথা উচু করা বেয়াড়া ঘাস পায়ে সুড়সুড়ি দিচ্ছে,সেটার অনুভূতি চলে যাচ্ছে মাথা পর্যন্ত,মৃদু হাওয়ায় মাথার চুলে বিলি কাটার অনুভূতি হত হয়ত।সেটা সম্ভব না,অনেকদিন হয় শ্যাম্পু না করার কারনে মাথায় জট হয়েছে।বর্ষার পানি এখনো চলে যায় নাই,চারিদিকে পাটপচা পানির গন্ধ।হালকা রোদ আমাকে আষ্টেপৃষ্ঠে ঢেকে রেখেছে।দুই ধারে কাশবনে হাওয়া লেগে ছন্দময় মুহুর্তের সৃষ্টি করছে।প্রাকৃতিক কিছু আবেশ ছাড়া,পার্থিব সবকিছু আমার উপকূলে কাজ করছে।প্রদীপ ষ্টোরের মালিক আমাকে বেড় করে দিয়েছে।আমি হাঁটছি রেল ষ্টেশনের দিকে।ওখানে অনেক বেওয়ারিশ মানুষ দিনের পর দিন চিন্তামুক্তভাবে দিন যাপন করছে,আমিও ওদের মত চিন্তামুক্ত হতে চাই,পার্থিবতার লেশ মাত্র যেন আমাকে স্পর্শ করতে না পারে সেরকম হতে চাই।এখন মিষ্টি হাওয়ার সাথে মানুষের বিষ্ঠার গন্ধ নাকে লাগছে।মাঝে মাঝে হাওয়াও দূষিত হয়ে পড়ে।দূষিত হাওয়ার সাথে দূষিত কথা কানে লাগছে,রেলবাজার হাইস্কুল মাঠে আজ সংসদ সদস্য এসেছেন,তার আগমনে বক্তৃতা হচ্ছে ,বন্যাপিড়ীত মানুষদের ত্রান দেওয়া হবে।বিষ্ঠার গন্ধের চেয়ে কথার মাধ্যমে প্রতিশ্রুতির দূষন আমার কাছে প্রকট হয়ে উঠছে।পকেটে টাকা নাই,থাকলে দুই টাকার আট দশটা বাদাম কিনে চিবুনো যেত আর নেতাদের বক্তৃতা শোনা যেত,অবিশ্যি ত্রানের লাইনে দাঁড়নো যেতে পারে,শুনেছি নগদ টাকাও নাকি দেবে।নিজের অতীতের কথা মনে করতে ইচ্ছে করছে না।বর্তমানে আমি বেশ ভালো বোধ করছি।অতীত আর সব পিছুটান আমি শেষ করে দিয়ে এসেছি,অবশ্যি আমার পিছুটান বলতে কিছু ছিলই না।আমার কাছে বর্তমানটাই এখন মুখ্য,ভবিষ্যত বলতেও এখন আমার কিছু নাই।
মুখের ভেতর শুকনোভাব হচ্ছে পানি খাওয়া দরকার,অগত্যা কাশবন থেকে একটা পাতা তুলে তার ডগা চিবুতে থাকি।বাহ!বাদামের চেয়ে কোন অংশে কম নয় তো,বরং বাদামের চেয়ে ভালো,মিষ্টি।ষ্টেশনের ঘন্টায় বাড়ি পড়েছে,ঢং ঢং ঢং কিছুক্ষণ বাদে ট্রেন আসবে মনে হচ্ছে।রেললাইন থেকে নামতে হবে।থাক না কি দরকার?তারপরও নামতে হল।নিজেকে শেষ করে দিতে মন সায় দিচ্ছে না।আমার কেউ নেই কিছু নেই তারপরেও তো মনটা আছে রে ভাই,মনের কথা আমাকে শুনতেই হয়।
পোওওওও শব্দে ট্রেনটা ঈশ্বরদীর দিক থেকে ষ্টেশনে ঢুকছে,ঢাকাগামী সুন্দরবন এক্সপ্রেস।একবার মনে হল যাই দৌড়ে গিয়ে ট্রেনে উঠে ঢাকা চলে যাই,আবার থামতে হল,আগে এই ছোটখাট ষ্টেশনে নিয়মিত হই সবকিছু শিখি তারপর ঢাকা যাব,ঢাকা তো কম কথা নয়।ভাবনায় ছেদ ঘটল,একটা বাচ্চা ছেলে খেলার ছলে আমার গায়ে থু থু ফেলেছে,বাচ্চা আর তার বোন বাজি ধরেছে চলন্ত ট্রেন থেকে কে বেশিদুর থুথু ছুঁড়ে দিতে পারে।বেশিদূর দেওয়ার চেয়ে আমার গায়ে পড়াতে মনে হয় বেশি মজা পেল , বাচ্চাদুটো হাতে তালি দিয়ে খিল খিল করে হেসে গড়িয়ে পড়ল।তারপর কি হয় দেখা সম্ভব হল না কারন ট্রেনের বগী সহ ট্রেনটা ষ্টেশনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।বাচ্চা ছেলের থু থু বলে গন্ধ নাই।প্রদীপ বাবুর মত কোন লোকের থুথু গায়ে পড়লে নির্ঘাত বমি করে দিতে হত।
শরতের আকাশ এত সুন্দর হয় কেন?এই আকাশের দিকে একবার তাকালে সারা জীবন সার্থক মনে হয়।নিজেকে ঘোড়ার মত মনে হয়,দুটো পাখা থাকলে কি ভালোই না হত,পেঁজা তুলোর ভেতর উড়ে উড়ে হাবুডুবু খেতাম।তুলোর মত মেঘ কেটে নীল বেড় হয়ে পড়ে,সাদা মেঘ আবার এসে ঢেকে দেয়,নীল আর সাদার লুকোচুরি দেখতে দেখতে,আর নিজেকে পাখাহীন ঘোড়া ভাবতে ভাবতে আমি ষ্টেশন অবধী পৌঁছে যাই।
ষ্টেশনটা খালি মনে হচ্ছে।সুন্দরবন এক্সপ্রেসে সব যাত্রী চলে গেছে।এখন যারা ষ্টেশনে আছে বেশিরভাগই আমার মত বেওয়ারিশ। এরা জনসভায় যায়নি কেন?ওখানে কি আয় রোজগার কম নাকি?হতে পারে,ওরা নিজেরাই গরীব লোকের পয়সা মেরে খায়,ভিক্ষে দেবে কি?এদের মাঝে আমি জুটে যাচ্ছি।সকালে থেকে এ অবধী কিছু পেটে পড়েনি,না খাইয়ে,না বেতন দিয়েই প্রদীপ বাবু আমাকে বেড় করে দিয়েছে।
এখন আমাকে মানুষের কাছে হাত পাততে হবে।কি রকম আয় রোজগার হবে তা নিয়ে ভাবছি না তবে প্রদীপ বাবুর কাষ্টমারদের সাথে দেখা হয়ে গেলে নানা প্রশ্ন করে বিরক্ত করবে।
ষ্টেশনে আলস্যভাব,দোকানীদের বেশীরভাগই কান চুলকাচ্ছে।এদের সবার কি এখন কান চুলকানোর সময়?
ষ্টেশন মাষ্টারের রুমের পাশে যাত্রীদের অপেক্ষা করার জন্য জোড়া চেয়ার পাতা।ওখানে এক মধ্যবয়েসি মহিলা বসে নিজেকে বাতাস করছে,বিশালদেহি মহিলার ভাব ভঙ্গী দেখে মনে হয় বেশ অবস্থাসম্পন্ন ঘরের।এর কাছে টাকা চাওয়া যেতে পারে,তাছাড়া মেয়েমানুষের মন নরম হয়,শালা প্রদীপ বাবুর মত না।
কোনরকম ভাবভঙ্গী ছাড়াই মহিলার সামনে গিয়ে হাত পেতে ফেললাম।
আম্মাজান সকাল থেকে কিছু খাই নাই,আমারে কয়টা ট্যাকা দেন!
কি কইলি?আমারে দেখে কি আম্মাজান মনে হয়?তোর গা গতর দেখে তো ভালোই মনে হয় কাজ করে খেতে পারিস না?যত্তসব।
মহিলা আরও কিছু বলতে যাবেন,মহিলার স্বামী এসে পড়লেন।লোকটাকে দেখে বেশ ভদ্র মনে হল,চোখে চশমা।
আহ! ছেলেটাকে শুধু শুধু বকাবকি করছ কেন?
কি? তুমি ওকে ছেলে বলছ!ধেড়ে গাধা,কাজ করে খেতে পারে না?মানুষের কাছে হাত পাতে!
তুমি তাকে টাকা দেবে না ভালো কথা,এত কথা শুনাচ্ছ কেন?
এই ছেলে এদিকে এস বলে একশ টাকার নোট বেড় করে দিল।
ওর কথায় কিছু মনে কোর না,বাচ্চাকাচ্চা হয় না বলে মন মেজাজ সব সময় খিটখিটে থাকে।আমাদের জন্য দোয়া কোর।টাকা দিয়ে নেশাটেশা না করে পেটভরে ভাত খেও।
আমি কিছু মনে করি নাই।
ঠিক আছে।
ভিক্ষের টাকার গন্ধ বেশ মজার,এই গন্ধ আগে কোন টাকায় পাই নাই।আমার এক বদ অভ্যাস টাকার গন্ধ শোঁকা।কামাই করা টাকার গন্ধ এক,চুরী করা টাকার গন্ধ এক আর ভিক্ষের টাকার গন্ধ আর এক।
গন্ধ শোঁকাশুঁকি বন্ধ,এখন সোজা হোটেলে যাব।আস্তা তেলাপিয়া ভুনা দিয়া ভাত খাব,তারপর ত্রানের লাইনে দাঁড়াব।হাত পাতা টাকার মজাই আলাদা।
ওই এদিকে আয়!
আমি পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখলাম আমার চেয়ে কমবয়েসী তিনজন বেওয়ারিশ ছেলে দাঁড়িয়ে।
ক্যান?
কাম আছে।
এইখেনেই ক।
বেশি কথা বাড়াইসনা,আমাগো লগে আয়।সমস্যা হইব।
কথা না বাড়িয়ে অনেকদুর পর্যন্ত যেতে হল।
কয় ট্যাকা পাইছস?
ও এই কথা?
তা ওইখানে কইলিই পারতিস
কয় ট্যাকা পাইছস ক কইলাম।
আমি কয়ট্যাকা পাইলাম না পাইলাম এইডা নিয়া তোগো কি?
আরে ব্যাডা দেহি গাধা,আমাগো এলাকায় ভিক্ষা করবি আর কয় ট্যাকা কামাইবি এইডা কইবি না?আমাগো ভাগ দেওয়ন লাগব না!
ব্যাপারটা ভালো ঠেকছে না আমার কাছে,একটা গোলমাল আজ হবেই।
এইডা তোগ রেষ্টারী করা এলাকা নাকি?মনে মনে বলি এইডা আমার জীবনের প্রথম ভিক্ষের টাকা,তাছাড়া ভুনা তেলাপিয়া দিয়া ভাত খাইতেই হইব।
শোন আমি ভালো কইরা কইতাছি এক ট্যাকাও আমি তোগো দিতে পারমু না।
ছেলে তিনটা বিদ্রুপের হাসি হাসে।
বিকেল হয়ে এসেছে,ভুনা তেলাপিয়ার স্বাদ নষ্ট হয়ে আসছে।ওদিকে জনসভা জমে গেছে বজ্রকন্ঠ ধ্বনিত হচ্ছে।এরমাঝে আমরা চারজন বিষয়বস্তু এক নয় কিন্তু সারমর্ম এক নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি। বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে হল না।
সবার দৃষ্টির অন্তরালে তিনজন মিলে ভয়ানক পিটিয়ে আমাকে রাস্তার একপাশে ফেলে রেখে গেল,আমি বেশ চেষ্টা করেছিলাম নিজেকে বাঁচাতে পারি নাই।ওদের পুঁচকে শরীর হলেও জোড় বেদম আমি কোনমতেই সুবিধা করে উঠতে পারলাম না,পুরোদস্তুর মার ও দিল আবার প্যান্টের পকেট থেকে একশ টাকার নোটটাও নিয়ে গেল।আমি কাতরাতে কাতরাতে ভুনা তেলাপিয়ার গন্ধে বিভোর হয়ে জ্ঞান হারালাম।
শরতের বিকেল গড়িয়ে তখন সন্ধ্যা নামি নামি করছে।
কতক্ষণ এমন জ্ঞান হীন অবস্থায় ছিলাম মনে থাকার কথা না।
চোখ খুলে দেখলাম ধুন্দুমার কান্ড,চারিদিকে চীৎকার চেঁচামেচী।আমি কি বেঁচে আছি?আছিই তো, নাহলে শরীরে এমন ব্যাথা অনুভব হচ্ছে কেন?
মানুষজন যে যেদিকে পারে ছুটছে।কি হয়েছে কিছু ঠাহর করে উঠতে পারছি না।ট্রেন এক্সিডেন্ট হয়েছে?তাও তো না উকি দিয়ে দেখলাম কোন ট্রেন নাই লাইনের ওপর।
হঠাত মনে হল জনসভায় কোন গোলমাল হয়নি তো।
যে ভাবা সেই কাজ।
দুম করে একজন হাতীর মত শরীর নিয়ে আমার শরীরের ওপর এসে পড়ল,হাতের ব্রিফকেস ছিটকে পড়ল কোনদিকে।
লোকটা বুঝতে পারে নি আমার সাথে ধাক্কা খেয়ে সে গড়িয়ে পড়েছে।
হায় হায় আমার টাকার ব্রিফকেস কোনদিকে গেল?
বিধাতা আর সে ছাড়া তৃতীয় মানুষ হিসেবে আমি ব্যাপারটা জেনে ফেললাম।পেছন দিক থেকে একটা দল ভারী অস্ত্র নিয়ে এগিয়ে আসছে।লোকটা খানিকক্ষণ আতিপাতি করে খুজে ব্রিফকেসটা না পেয়ে,প্রাণ বাঁচাতে দৌড় লাগাল। ব্যাপারটা এত দ্রুত ঘটল যে কোন বাড়তি কিছু ভাবা গেল না,যা ঘটল প্রাকৃতিক ভাবেই ঘটল।
আমি প্রাণপণে চেষ্টা করি নিজেকে লুকিয়ে রাখতে।এখন অমাবশ্যা মনে হয়,শরতে কি অমাবশ্যা হয়?আমার জন্য প্রকৃতি বিশাল এক সুযোগ এনে দিল।হিংস্র লোকগুলো অনেকদুর হারিয়ে গেলে আমি উঠে পড়ি, ব্রিফকেস খুঁজে নিতে আমার বেশী বেগ পেতে হয় না।টাকা ভর্তি ব্রিফকেস আমার কাছে খুব বেশী অর্থবহ মনে হয় না।একদিনে এতগুলো ঘটনা আমার জীবনে ঘটে গেল,এটা খুবই অস্বাভাবিক ।
শরতের রাত।ক্ষিধেয় পেট গুলিয়ে আসছে।আমি আবার হেঁটে চলেছি একা রেললাইন ধরে,আমার হাতে ব্রিফকেস ভর্তি টাকা।লু হাওয়া বইছে,পাটপচা পানির কটু গন্ধ ভেসে আসছে।আমি হেঁটে চলেছি শরতনগরের দিকে ওখান থেকে বড়ালব্রীজ হয়ে সিরাজগঞ্জ।ব্রিফকেস ভর্তি টাকার গন্ধ কেমন হয় সেটা জানতে মন চনমন করছে।
আমার সারা শরীরে ব্যাথা,দুই চোখে অশ্রুধারা।সারা আকাশে একটাও তারা নেই যে আমার সঙ্গী হতে পারে।
শামসুদ্দিন হাবিব
৩১.০৮.২০১৪

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:১০

অচেনামন বলেছেন: সুন্দর লাগল :D :)

২| ০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:২৩

শামসুদ্দীন হাবিব বলেছেন: dhonnobad

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.