নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ক খ গ

শামসুদ্দীন হাবিব

আমি অতি সাধারন একজন মানুষ,নিজকে নিয়ে খুব বেশি প্রত্যাশা নাই।পেশায় টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার,একসময় নাটকে ক্যামেরার পেছনে কাজ করেছি।টুকটাক লেখালেখি করি।হাসতে ভালোবাসি,ভালোবাসি হাসাতে।এই তো।

শামসুদ্দীন হাবিব › বিস্তারিত পোস্টঃ

ফাঁদ

১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সকাল ১১:০৫

সাগর পাড়ে বেশীক্ষণ থাকা গেল না,ভালো বৃষ্টি শুরু হয়েছে।প্রথম দিকে অবিশ্যি ভালোই লাগছিল,সাগরের উত্তাল ঢেউয়ের সাথে বৃষ্টি।ছাউনির নিচে গা এলিয়ে শুয়েছিল অতনু, সৈকতে আছড়ে পরা ঢেউ,চারদিকে হালকা কুয়াশার মত বৃষ্টি,সামনে বিশাল জলরাশি,অদ্ভুত আকর্ষন,আশেপাশে কেউ নাই,দুই একজন চা বিক্রেতা ছাড়া,অতনুর কেবলই মনে হচ্ছিল বিশাল জলরাশির মাঝখানে শুয়ে আছে সে।পৃথিবীর কোন কিছুর সাথে তার যোগাযোগ নাই,সে একা সাথে প্রকৃতিও একা।এর আগেও অনেক ক বার কক্সবাজারে এসেছে অতনু।কিন্তু এমন মজার পরিবেশ কখনই পায়নি।গলায় ঝোলানো ডি এস এল আর ঝামেলা পাকালো।বৃষ্টির পানি পড়লে নির্ঘাত নষ্ট হয়ে যাবে।অনিচ্ছা সত্ত্বেও উঠতে হল।

হোটেলে ফিরে যেতে ইচ্ছে করছে না অতনুর।

অগত্যা বার্মিজ মার্কেটের বিপরীতে শুঁটকির দোকানে দাঁড়িয়ে সিগারেট টানছিল।

অযাচিত বৃষ্টি,সবকিছুর তাল কাটিয়ে দিয়েছে।দোকানীরা অলস ভঙ্গীতে বসে আছে,কোন কাস্টমার নাই।

ওই যে ওইটা হ্যাঁ হ্যাঁ!

আচমকা সুমধুর মেয়েলি কন্ঠ!অতনুর ভাবনায় ছেদ ঘটায়।

বার্মিজ মার্কেটের প্রথম দোকানটায় কফি কালারের ব্রান্ড নিউ টয়োটা এফ প্রিমিও দাঁড়িয়ে আছে।মেয়েলি কন্ঠের সাথে গাড়িটার যোগ আছে।মেয়েটা এ গাড়িতে করেই এসেছে।

মাথা পাগল করে দেওয়ার মত কন্ঠ!

অতনু কিছু না ভেবেই দোকানটার দিকে এগিয়ে যায়।

কালো রঙয়ের নিটেড কাপড়ের কাল ধুতি সেলোয়ার এবং হালকা গোলাপী রঙয়ের টাইট ফিটিং গেঞ্জী পড়ে সামনে ঝুকে স্যান্ডেল দেখছে মেয়েটা।

মোয়েটার পেছন দিকে নজর পড়ায় ক্ষানিকটা লজ্জা পায় অতনু।সেলোয়ার ভেদ করে লাল রঙয়ের অন্তর্বাস স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছিল সে।ওটা নিয়ে মেয়েটার কোন প্রকার মাথা ব্যাথা দেখা গেল না।বিক্রেতা বেশ মজা পাচ্ছে দেখে,ওর মন নিশ্চয়ই বলছে খুব তাড়াতাড়ি যেন মেয়েটা চলে না যায়।

মেয়েটার পাশে টুলে বসা অসম্ভব সুদর্শন যুবক পা দোলাচ্ছে,মেয়েটার সাথে যুবকের সম্পর্ক আছে কিনা অতনু অত কিছু না ভেবেই সামনের দিকে এগিয়ে গেল।

প্রচন্ড ডোমিনেটিং,কিন্তু অদ্ভুত আকর্ষন করার মত একটা চেহারা।এমন মেয়ে যে অতনু দেখে নাই তা নয় কিন্তু এ মেয়েটার ব্যাপারটা কেমনজানি আলাদা লাগল,চোখের কাজল লেপ্টে গেছে তবুও মনে হচ্ছে এটাই আর্ট।অতনু ভেবে ফেলে এত কষ্ট করে,টাকা খরচ করে মিস ইউনিভার্স বানানোর কি দরকার,এই মেয়েটাকেই তো অনায়াসে মিস ইউনিভার্স করে ফেলা যায়।

অন্যসময় হলে অতনু ডি এস এল আরের লেন্স কাভার খুলে বলত এক্সকিউজ মি কিছু মনে না করলে আমি কি একটা অসাধারন মুখের ছবি আমার তৃতীয় চোখে ধরে রাখতে পারি?

গলায় ঝোলান থাকা সত্ত্বেও অতনু ডি এস এল আর ভুলে গিয়েছিল।

ভাই কিছু লাগবে?

এই যে ভাই ওইদিকে নজর দেওয়া বাদ দেন,কিছু লাগবে নাকি বলেন?

ওহ সরি হ্যাঁ লাগবেই তো।ভালো লাইটার দেখান তো।

এর মধ্যে একটা কাপল দোকানে ঢুকে পড়ে।দুইজন দোকানী মেয়েটাকে নিয়ে ব্যস্ত দেখে খানিক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকে।

ভাইয়া কি ঢাকা থেকে এসেছেন?

কোন উত্তর পাওয়া যায় না।

আসলে ভাই আপনার ওয়াইফের পায়ে নুপুরটা খুব সুন্দর,আমার ওয়াইফ বলছিল ওটা এখান থেকে নেওয়া,আর আমি বলেছি ঢাকা থেকে নেওয়া।

টুলে বসা সুদর্শন যুবক মুখ খোলে।

নুপুরটা ঢাকা থেকে নেওয়া আর আমরা চাঁটগার।

দেখছ বলেছিলাম না!

অতনু ধাক্কা খায়!কি?মেয়েটা বিবাহিত!এটা হতে পারে না অসম্ভব।

কি ভাই লাইটার নেবেন না?

অতনু কোন জবাব না দিয়ে বেড় হয়ে আসে।

মেয়েটা কেন বিবাহিত হল?এটা কিছুতেই সে মানতে পারছে না।

অতনু সিগারেট ধরায় অস্থিরভাবে শুটকীর দোকানের সামনে পায়চারী করতে থাকে।



এই চল এখানে ভালো স্যান্ডেল নাই।

কি বল!এত স্যান্ডেল আর তুমি বলছ স্যান্ডেল নাই?

না নাই,আমার পছন্দ হয় নাই,অন্য দোকানে চল।

ছেলেটা গজগজ করতে করতে দোকান থেকে বেড় হয়,তুমি দেখে কেন আমি গাড়িতে বসলাম।

মেয়েটা একবারের জন্যও অতনুর দিকে তাকালো না,ইশ কি নিষ্ঠুর!

মেয়েটাকে নিয়ে অদ্ভুত সব চিন্তা মাথায় আসে,এমন একটা মেয়েকে বাসার ড্রয়িং রুমে সাজিয়ে রাখা যায়।

এবার অতনু একটা উদ্দেশ্য নিয়ে কক্সবাজার এসেছে,সুন্দর ফটোগ্রাফী করবে আর নিভৃতে সময় কাটাবে।প্রথম দিনেই সব কিছু গোলমাল হয়ে গেল,বাকি দিনগুলো কাটাবে কিভাবে?অযাচিত ঘটনা মনে বিশাল ছাপ ফেলে দিল।

বৃষ্টি কিছু সময়ের জন্য থেমে গেছে মনে হয়,আকাশে মেঘ কমে নাই আবার যেকোন মুহুর্তে শুরু হতে পারে।সাগরে জোয়ার চলছে বিশাল বিশাল ঢেউ আছড়ে পড়ছে সৈকতে।ঝাউ বন হালকা হাওয়ায় দুলছে।

ইলশে গুড়ির মত পানির ফোয়ারা অতনুর মুখে এসে লাগছে,গাছের ডালে হাওয়ার দোলায় এমনটা হচ্ছে।অসম্ভব বিক্ষিপ্ত সময়।মনটাকে কোনভাবেই কেন্দ্রীভূত করা যাচ্ছে না।

মেয়াটাকে ভুলে থাকার চেষ্টা করবে অতনু।

এখন সোজা গিয়ে সে বারে ঢুকবে,ভরপুর মদ খাবে তারপর ঢলে পড়া শরীর নিয়ে সাগরে একা একা বসে সময় কাটাবে।

মেয়েটা আরও কয়েক দোকান ঘুড়ল,শেষ পর্যন্ত কি মনে করে সেই প্রথম দোকান থেকেই স্যান্ডেল কিনে নিল।বিক্ষিপ্ততার মাঝেও অতনু ঠিকই খেয়াল রাখল মেয়েটা কি করছে।

গাড়িতে ঢোকার আগে সুমধুর কন্ঠে বলল,এই আমার ফোন!

ছেলেটা বলল,পেছনের সীটে রাখা আছে।

ও আই সি।

শেষবারের মত কন্ঠ শুনল অতনু।



*******



অতনু হোটেল কক্স টুডের বারে বসেছে,বয় গ্লাসে করে ভদকা,বাটিতে আইস আর পিরিচে বাদাম দিয়ে গেছে।বাদাম খেতে ইচ্ছে করছে না,আইস কিউব গ্লাসে নিয়ে ভদকার গ্লাসে চুমুক দিল অতনু।কিছুক্ষণের মধ্যে কয়েক পেগ গলায় ঢেলে দিলে মাথা বেশ ঝিম ধরে আসে।

মেয়েটা বিবাহিত? হলেই আমার কি?নিজে নিজেই বলে অতনু।

সৃষ্টিকর্তা সবাইকে সব কিছু দেন না।মদ মেয়েটার ভাবনা আরও বাড়িয়ে দিল।

নিজের সাথে আরও কিছুক্ষণ কথা বলে অতনু।

এক্সকিউজ মি স্যার আপনি মনে হয় বেশী পরিমানে ড্রিঙ্কস করে ফেলেছেন!

কি বলছেন আপনি?

আপনি আমাকে বলুন মেয়েটা কেন বিবাহিত হবে?

আপনি কার কথা বলছেন?

কিছু না,আরও দু পেগ ভদকা নিয়ে আসুন।

কি বলছেন আপনি,এত ড্রিঙ্কস করলে তো পুরো উন্মাদ হয়ে যাবেন।

আপনাকে যা বলছি তাই করুন বেশী মদ খেলে আমার মাথা পরিষ্কার হয়ে যায়।

অতনুর মাথায় হঠাত একটা চিন্তা বেশ করে ফিরে আসে,মেয়েটা এত দোকানে ঘুড়ল কেন?এক জোড়া স্লিপার কিনতে এত দোকান ঘোড়ার দরকার পরে না।তাছাড়া সে যেসব দোকানে ঢুকেছে তার সবগুলোতে স্লিপার নেই,শুধুমাত্র দুই তিন দোকান ছাড়া।এর মাঝে আবার কয়েকটা দোকানে সে দু তিনবার করে ঢুকেছে।

ওয়েটার!

জী স্যার?

একটা সাদা কাগজ আর কলম দিন তো।

অতনু হিসেব কষতে বসে যায়।

মেয়েটা গুনে গুনে আট দোকানে ঢুকেছে,এর মধ্যে পাঁচ নম্বর দোকানে ঢুকেছে তিনবার।

ওয়েটার আমার বিল হয়েছে কত?

তের শ ষাট টাকা!

অতনু ঝট করে তিনটা পাচশ টাকার নোট ওয়েটার এর হাতে গুঁজে দিয়ে,একদম দৌড়িয়ে বার থেকে বেড় হয়ে ঢুলতে ঢুলতে পাঁচ নম্বর দোকানের সামনে এসে দাঁড়ায়।

পাঁচ নম্বর দোকানে কোন স্যান্ডেল নাই।ও মাই গড!

অতনুর মাথায় সবকিছু হঠাত করে পরিষ্কার হয়ে যায়।সে একে একে দোকানের নাম্বারগুলো ক্রমিক অনুসারে পরপর সাজিয়ে ফেলে,

১৬৭৫৮২৫৫৯৩

ডিজিটগুলোর সামনে একটা শুন্য বসালেই এটা এয়ারটেলের সেলফোন নাম্বার।

অতনু ঘামতে থাকে,মেয়েটা গাড়িতে ওঠার আগে যে কথা বলেছিল সেটা তাহলে একটা সংকেত ছিল!

“এই আমার ফোন”

আমি কি গাধা অতনু মনে মনে নিজেকে গালি দেয়।তার মানে মেয়েটা আড়ালে ঠিকই অতনুকে খেয়াল করেছে।হয়ত তার সঙ্গে থাকা ছেলেটিকে বুঝতে দিতে চায়নি।হঠাত করেই অতনুর মনে হতে থাকে মেয়েটা বিবাহিত নয়।তাছাড়া যে লোকটা বলেছিল সে তো আন্দাজে বলেছে,লোকটা মেয়েটার আত্মীয়ও নয়,পরিচিতও নয়।

ওফ! হাফ ছাড়ে অতনু থ্যাঙ্কস গড।

নমস্য ভদকা!মাথা খুলে দিয়েছে অতনুর।

নাম্বারটা নিজের স্মার্টফোনে সেভ করে নেয় অতনু।

সে কি এখনই ফোন দেবে মেয়েটাকে?নাহ এটা ঠিক সময় নয় রাতে কথা হবে,তবে এখন একটা এস এম এস পাঠানো যেতে পারে।

আকাশ পরিষ্কার হতে শুরু করেছে।অতনুর নেশার ঘোড় কেটে যাচ্ছে।পাতলা সফেন চাদড়ের মত আবেশী বাতাস শরীরে এসে লাগছে,উন্মাদ করে দিচ্ছে মন প্রাণকে।

প্রচন্ড উদাস মন নিয়ে এস এম এস পাঠাল অতনু “গট ইট”

হাঁটতে হাঁটতে এগোতে থাকে সৈকতের দিকে।নিজেকে বেশ হালকা লাগছে ইচ্ছে করলে উড়ে যেতে পারবে এখন সে।অজানা শঙ্কাও মনে কাজ করছে যদি সেলফোন নাম্বারটা ঠিক না হয়?

বেশীক্ষণ অপেক্ষা করতে হল না রিপ্লাই এল

“ভেবেছিলাম আপনি বুঝবেন না”



***********

রাত এগারোটা সাত,অতনু হোটেল লবিতে দাঁড়িয়ে পায়চারী করছে।সাগরের গর্জন স্পষ্ট শোনা যায় এখান থেকে।অন্ধকারের গা জুড়ে নিয়ন বাতিগুলোকে বেশ লাগছে।মেয়েটা কি তার ফোন পেতে অপেক্ষা করছে?সেও কি লবিতে পায়চারী করছে আর সাগরের গর্জন শুনছে?

এমন অনেক সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে কল করে অতনু।

রিং হতে হতে কেটে যাবে এই মুহুর্তে রিসিভ হল।

এতক্ষণে আপনার সময় হল?

মাথা পাগল করে দেওয়ার মত কন্ঠ,প্রথম কথাটাই এমনভাবে বলল যেন মেয়েটা অতনুর অনেক দিনের পরিচিত।

না ঠিক তা নয়,আমি আরও ভাবছিলাম আপনি ব্যাস্ত কি না?

এই পৃথিবীতে সবাই ব্যাস্ত,যার কাজ নেই সেও ব্যাস্ত,এর মাঝেই সময় বেড় করতে হয় সব কিছুর।

আপনি দেখী ফিলোসোফারদের মত কথা বলেন।

প্রত্যেক মানুষের মধ্যেই দর্শন আছে,কেউ প্রকাশ করে কেউ করে না।আমি ভনিতা টনিতা বুঝি না,মনে যখন যেটা আসে ফট করে বলে দেই।

আপনি খুব সুন্দর করে গুছিয়ে কথা বলেন।

এই সব মেয়ে ভুলানো কথা বলে লাভ নেই,আমি জানি আমি কিভাবে কথা বলি।

আপনি না ভুললে তো খুব সমস্যা হয়ে যাবে আমার।

আপনার সমস্যা দূর করতে আমার বয়েই গেছে।

এই মুহুর্তে দুইজনই একসাথে হাসিতে ফেটে পড়ে,দুই জনের কেউই জানে না কেন?

অনেক্ষণ কথা হয় দুজনের মধ্যে,সাগরের জল ভাটায় চলে যায়।প্রাথমিক পরিচয় ছাড়াও দুজনে অনেকদুর আগায়।কথা হয় দেখা হবে সাগর পাড়ে।

ছেলেটার প্রসঙ্গও চলে আসে।মেয়েটা জানায় ছেলেটা তার ভাই।পরিবারের সবাই একসাথে অবসর কাটাতে কক্সবাজার এসেছে তারা।তার মানে ছেলেটা কোন বাধা নয়।

মেয়েটা বলে,কি ভেবেছিলেন আপনি ও আমার বয়ফ্রেন্ড!

হা হা হা।

হ্যাঁ ভেবেছিলাম,বরং একটু বেশিই ভেবেছিলাম,আপনারা বিবাহিত।

ওহ নো।পাগল একটা।

ঠিক আছে রখছি,কাল দেখা হবে।



**********



তুমি কি নতুন প্রজেক্ট হাতে নিলে?

মনে কর তাই।

এটা ঠিক করছ না, আর হাতে গোনা চারদিন আমরা এই দেশে আছি,ফ্লাইটের টিকিট কনফার্ম আর তুমি বলছ নতুন প্রজেক্ট হাতে নিলে।নতুন প্রজেক্ট হাতে নেওয়ার আগে আমরা দুজনে একসাথে সিদ্ধান্ত নেই অথচ এবার কিছুই বললে না আমাকে।

আমার আরও টাকার প্রয়োজন।

দুজনে যা কামিয়েছি তা কি যথেষ্ট নয়?

ফিফটি ফিফটি হলে ঠিক ছিল,কথা তাই ছিল,তুমি আমার সাথে বীটরে করে সেভেন্টি থার্টি করলে।

অথচ পুরো কাজে আমার রিস্কটা সবচেয়ে বেশী।

দেখ পাগলের মত কথা বোল না,প্ল্যান বানিয়েছি আমি অতএব প্রাপ্যটা আমার বেশী।

প্ল্যান তুমি বানিয়েছ ঠিক আছে কিন্তু ইফোর্ট টা কিন্তু আমার।ছেলে পটানো,তাদেরকে উপযুক্ত স্থানে নিয়ে আসা,ব্ল্যাকমেইল করা সব আমার কাজ।তুমি শুধু ফোন করে মুক্তিপণ চেয়েছ,টাকা হাতে আসলে গুনে নিয়েছ।আর ছেলেরা তোমার রুপ দেখে পটে না,ওরা আমাকে দেখে পটে।

ঠিক আছে সিক্সটি ফোর্টি।

শোন সজল তুমি আমার পার্টনার,তোমার সাথে গন্ডগোল করার কোন ইচ্ছা আমার নাই।এই প্রজেক্টটা আমি একাই সামলাব,তোমাকে কোন ইফোর্ট দিতে হবে না।

আমি সেটা মীন করছি না,আমাদের হাতে আর বেশী সময় নেই।এত কম সময়ের মধ্যে তুমি কি করে সবকিছু ম্যানেজ করবে?তাছাড়া আমাদের সব টাকা হোটেলেই রাখা,সেগুলো পার করতে হবে।বাইরে যাবার আগে আমাদের গাড়িটাও তো বেচতে হবে।

ও এল এক্সে অ্যাড দিয়েছিলাম,ওটার কাষ্টমার ম্যানেজ হয়ে যাবে,নাহয় দু এক লাখ লছ হবে তাতে কি?ঢাকায় ফিরে টাকার ব্যবস্থা করা যাবে।

ইরা পারে না এমন কোন কাজ নাই।

তুমি কিন্তু বেশ পাগলামী করছ ইরা।

পাগলামীকে বাস্তবে রুপ দেওয়াই ইরার কাজ হা হা হা।মুরগীটা হৃষ্টপুষ্ট আছে,মনে হয় বেশ বড়লোকের ছেলে।

তুমি কি ছেলেটাকে সত্যিই ফাঁসাতে চাইছ না কি নিজের করে নিতে চাইছ?

তোমার মত হ্যান্ডসাম যুবা পুরুষ ছেড়ে আমি যাব ওই মুরগীটার কাছে?এস জান আমরা ঘুমিয়ে পড়ি অনেক রাত হয়েছে,তোমাকে আদর করে দেই।

তমালের কাছে ব্যাপারটা ঠিক ভালো ঠেকে না।ইরার মনে কি আছে কে জানে?এই অসম্ভব রুপবতী মেয়েকে বোঝা খুবই কঠিন।

******



ব্যাটারীচালিত অটোরিক্সাটা সৈকতের পাশ ধরে ছুটে চলেছে।উদ্দেশ্য হিমছড়ি আর ইনানী।অতনু ইরা গা ঘেঁষাঘেঁষি করে বসেছে।ইরার গা থেকে বিদেশী পারফিউমের গন্ধ উপচিয়ে পড়ছে।সাগরের পাগলা বাতাসে চড়ে সেগুলো অনেক দূর পর্যন্ত ভেসে যাচ্ছে।একদিনেই দুজন বেশ ঘনিষ্ট হয়ে পড়েছে।মেয়েটা পরনে জিন্স সাথে হাওয়াই শার্ট।শার্টটা অতনু এর আগেও কোথায় জানি দেখেছে।হঠাত তার মনে পড়ে ইরার ভাই গতকাল এই শার্টটা পড়ে দোকানে এসেছিল।

হাওয়ায় ইরার সিল্কি চুল এসে লাগছে অতনুর গালে।অতনু অবাক হয়ে ইরার দিকে তাকিয়ে থাকে।এত সুন্দর মানুষ কি করে হয়!

কি দেখ অমন করে।

বোঝ না তুমি।

না বুঝি না।

এইদিকে তাকাও না,একটা স্ন্যাপ নেই।

প্লীজ এখন না,পরে হবে ওসব।ইরা পাশ কাটিয়ে যায়।

সারাদিন ওরা একসাথে কাটাল।হাসল,মজা করল, অন্তরঙ্গ হল সন্ধ্যার পর মুহুর্তে।ইনানী বিচের পাথরের ওপর বসে দুজনের ঠোঁট স্পর্শ করল দুজনকে, নিঃশ্বাস ভারি হল।অতনুর হাত ইরার পিঠের ওপর খেলা করল অনেক্ষণ,তারপর বুকের ওপর।

রাতের বেলা ওরা বসল বারবিকিউ এ।

অতনু অর্ডার দিতে যাবে এমন সময়,ইরা বলল আমি রিচ ফুড খুবই হেট করি।তুমি চিকেন খাও,আমি সংগ দিচ্ছি।ফ্রুটস খেয়ে।

এখানে তো ফ্রুটস পাওয়া যাবে না।

ইরা ভ্যানিটি ব্যাগ থেকে আপেল বেড় করল,সাথে মালটা।

ওয়েটার এদিকে আসুনতো।

কেন?

নাইফ লাগবে না?

ইরার মুখে দুষ্টু হাসি খেলা করে।ভ্যানিটি ব্যাগ থেকে চাকু বেড় করে।

অতনু অবাক হয় না,বাপরে এত সাস্থ্যসচেতন!

নাহলে এমন রুপ ঠিক রাখব কি করে?

এই একটু হেল্প করবে ইরা বলে!

কি?

ফলগুলো একটু স্লাইস কর না,আমি ওয়াশ রুমে যাব।

শুধু এইটুকু হেল্প!আমি ত তোমার জন্য শরীরের সমস্ত রক্ত ক্ষয় করে দিতে পারি।

পাগল কোথাকার!

ওয়াশ রুম থেকে ফিরে ইরা খুব স্বাভাবিক ভাবে বলল,কাল আমরা ফিরে যাচ্ছি।

কি বলছ এসব?

হ্যাঁ,আমাদের নির্ধারিত সময় শেষ।

আবার কবে দেখা হবে?

এত অস্থির হবার কি আছে বাবা,আমি তো আর হারিয়ে যাচ্ছি না।ঢাকায় ঠিকই দেখা হবে।

তুমি থেকে যাওনা সোনা।

পাগল একটা।

অতনু নিজের হাতের ব্রেসলেটটা খুলে নেয়,

এটা আমার খুব প্রীয় একটা ব্রেসলেট,মুম্বাই থেকে নিয়েছিলাম।এটা তোমার জন্য।পুরনো বলে মন খারাপ করলে না তো।

ওটা তোমার কাছেই রেখে দাও,কারও প্রীয় বস্তু আমি নেই না।

প্লীজ,না নিলে আমার খুব মন খারাপ হবে।



********



সকালে নাস্তার টেবিলে বসেছে সবাই।বিশাল ড্রইংরুমের সাথে লাগোয়া ডাইনিং রুম।রুমের চারিদিকে আভিজাত্যের ছাপ ষ্পষ্ট।অতনু বেশ উৎফুল্ল ,মিসেস দেবরায় টেবিলে খাবার দিচ্ছে।

দেবরায় স্যান্ডুইচ তুলে নিতে নিতে বললেন, অতনু কেমন কাটল তোর কক্সবাজার ট্যুর।

ফ্যান্টাস্টিক বাবা!

মিসেস দেবরায় মুখে হাসি মেখে বলল, মুখ দেখে বুঝতে পারছ না কতটা উৎফুল্ল আছে।ট্যুর শেষে ও তো খালি পড়ে পড়ে ঘুমায়,এবার দেখছ না ট্যুর শেষের পরদিনই তোমার সাথে নাস্তার টেবিলে বসেছে।

কি কোন ঘটনা ঘটেছে নাকি?

না বাবা ঠিক তা নয়,আসলে।

কি আসলে আসলে করছিস,আসল কথাটা বলে ফেল।

ও কি বলবে আমি বলছি শোন,মিসেস দেবরায় কথা কেড়ে নেয়।

তোমার একমাত্র ছেলে,ডানাকাটা পরীর সন্ধান পেয়েছে।

তাই নাকি অতনু।

অতনু মাথা চুলকায়।

যাক ফটোগ্রাফির ভুত মাথা থেকে নেমে নতুন ভুত ভর করেছে।

বাবা আমি সিরিয়াস।

মেয়েটার ব্যাপারে ডিটেইলস কিছু জেনেছ?

এখনও জানা হয় নি,তবে তুমি বললে খুব দ্রুত আমি সব জোগাড় করে ফেলব।

হুমম,পড়াশোনাটা মাথায় তুলবে দেখছি!

বাবা আজ হোক কাল হোক তুমি তো আমাকে ব্যাবসায়ই বসাবে।

তা ঠিক কিন্তু বাইরের জগত সম্পর্কে ধারনা থাকা উচিত।

তুমি মেয়েটাকে একবার দেখই না বাবা।

ঠিক আছে দেখব,আগে সব খোঁজ খবর নাও।

অতনু খুশীতে ফেটে পড়ে,থ্যাঙ্ক ইউ বাবা।

নাস্তা শেষ করে সবাই উঠতে যাবে এমন সময় কলিং বেল বেজে উঠল।

দেবরায়ের কপালে ভাঁজ পড়ে,এতসকালে কলিং বেল।

কাজের মেয়ে আসমা দড়জা খুলে দেয়।

নমস্কার দেবরায় বাবু।

নমস্কার,আপনারা এত সকালে আমার বাসায়?বসুন।

অতনু আপনার ছেলে?

হ্যাঁ,কেন কি হয়েছে।

আমরা খুবই দুঃখিত মিঃদেবরয়,খুনের দায়ে আপনার ছেলেকে এ্যারেষ্ট করতে এসেছি।

কি বলছেন এসব!

ঠিকই বলছি,আপনার ছেলে কক্সবাজার গিয়েছিল গত চারদিন আগে,তাই নয় কি?

হ্যাঁ গিয়েছিল ফিরেও এসেছে।

মিসেস দেবরায়,আর অতনু ততক্ষণে ড্রয়িংরুমে এসে দাঁড়িয়েছে।

আপনি মিঃ অতনু।

হ্যাঁ।

আপনি কি মিসেস ইরাকে চেনেন?

আমি মিসেস ইরাকে নয় মিস ইরাকে চিনি।

উনার স্বামী মিঃ সজলকে আপনি ইনানী বিচে খুন করেছেন ঠান্ডা মাথায়।

এসব ভুল,সবই মিথ্যা আমি কাউকে খুন করিনি আর ঐ লোকটা ইরার হাজব্যান্ড নয়।

ওনাদের ম্যারিজ সার্টিফিকেট আমাদের কাছে আছে।মিসেস ইরা থানায় বাদী হয়ে খুনের মামলা দায়ের করেছেন।তাছাড়া লাশের পরনের শার্টে এবং যে চাকু দিয়ে লোকটার শ্বাসনালী কাটা হয়েছে তাতে আপনার হাতের ছাপ পাওয়া গেছে।দেখুনতো এই ব্রেসলেটটা চিনতে পারেন কি না?এরচেয়ে জোড়ালো প্রমান আর কি হতে পারে মিঃঅতনু রায়।





শামসুদ্দীন হাবিব

মাওনা (১৮.১০.২০১৪)











মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.