নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ক খ গ

শামসুদ্দীন হাবিব

আমি অতি সাধারন একজন মানুষ,নিজকে নিয়ে খুব বেশি প্রত্যাশা নাই।পেশায় টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার,একসময় নাটকে ক্যামেরার পেছনে কাজ করেছি।টুকটাক লেখালেখি করি।হাসতে ভালোবাসি,ভালোবাসি হাসাতে।এই তো।

শামসুদ্দীন হাবিব › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাজি

২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সকাল ১১:৪২

সগীর যখন মালিবাগ ১ম লেনের ১৩১/১ নম্বর বাসা থেকে বেড় হল,বাইরে চাঁদিফাটা রোদ।বেশ দেরী হয়ে গেল।ইচ্ছা করে দেরী করে নাই,বাথরুমে পানি ছিল না।ঢাকা শহরের বাসার কেয়ারটেকাররা অসম্ভব রকম শুয়োর,এদেরকে খুব বেশী তেল মাখিয়ে না চললে হয় না।সকালে না ডাকা পর্যন্ত ঘুম ভাঙ্গবে না,পানি ছাড়বে না।কিছু বলতে গেলেও বিপদ চিল্লাচিল্লি শুরু করবে,ব্যচেলর থাকতে দিছি শোকর গোজার করেন,বেশী গলাবাজি করলে ঘাড় ধরে বেড় করে দেব,রাস্তায় গিয়ে থাকতে হবে।প্রতিমাসে বাসা ভাড়ার সাথে আরও পাঁচশ টাকা বাড়তি দিতে হয় ঘূষ হিসেবে,নয়তো কবেই এ বাসা ছেড়ে দিতে হত!অগত্যা সগীর ছয়তলা থেকে নিচে নামল,শাহীন হারামজাদা এখনও ঘুমে,সগীর চিন্তা করল আজ বেশ একচোট ঝাড়বে শাহীনকে,তাতে যদি রাস্তায় গিয়ে থাকতে হয় তাও থাকবে।বেশ কয়েকবার কড়া নাড়ার পর লুঙ্গী ঠিক করতে করতে শাহীন বেড়িয়ে এল।
কি? কি হইছে এত সকালে?
শাহিনের চোখে ঘুম।
সগীর হাত কচলাতে থাকে।
আপনেরা মানুষ না পশু!একটা মানুষেরে ঘুমাতেও দিবেন না?আপনেগেরে বেশিদিন আর এ বাসায় থাকার সৌভাগ্য নাই,আর কত সহ্য করব?
সগীর মিনমিন করে বলে,শাহিন ভাই আজ আমার চাকরীর ভাইভা,ভাই পানিটা ছাড়েন।
সগীর এমনই,কোনদিন কাউকে উচুগলায় কথা বলতে পারে না,উল্টো অন্যরাই শুনিয়ে দেয়।আজ আবার তার ভাইভা,সকাল সকাল সগীর কোন ঝামেলায় যেতে চায় নাই।চাকরীটা তার ভীষন দরকার।
সগীর আস্তিক না নাস্তিক নিজেই সেটা জানে না।কোন কাজে সফলকাম হলে ঊপরওয়ালার প্রতি বেশ দরদি হয়ে পড়ে,মসজিদের আশে পাশেও দুই একদিন ঘোরাঘুরি করতে দেখা যায়।আর যদি কাজ বিফলে যায়,উপর ওয়ালার গুষ্ঠী তো উদ্ধার করবেই সাথে সাথে অস্তিত্ত নিয়ে প্রশ্ন তুলে নিজের বিফলতার ভার মুক্ত হবে।
চাকরিটা তার বিশেষ দরকার,এজন্য উপরওয়ালার দরবারে মাসখানেক হল তার যাতায়াত বেড়েছে।কপালের মাঝখানে হালকা ঘাটিও পড়েছে।বেশ সুলক্ষণ,সগীর আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেই ভাবে।

রুমের আর সবার মত সগীর না।ইচ্ছা করলেই আর সবার মত গা ভাসিয়ে চলার মত সামর্থ্য তার নাই।রুমের সবাই প্রেম করে মোবাইলে লম্বা সময় আলাপ মারে,ডেটীং করে,মাঝে মাঝে দুই একজনের প্রেমিকা আসে রুমে অন্তরংগ সময় কাটাতে।সগীর এসবের মধ্যে নাই,নাই বলতে তার কুলায় না।রুমের একজন আছে তমাল ভাই,সগীরকে বেশ সমীহ করে,বিপদে পড়লে টাকা পয়সাও দেয়।তমাল ভাই মাসতিনেক পর পর গার্লফ্রেন্ড বদল করে।দুই তিনবার অন্তরংগ সময় কাটানোর পরে নতুন গার্লফ্রেন্ড খোঁজ করে।এই ব্যাপারটা মোটেও ভালো লাগে না সগীরের কাছে।কিন্তু মুখ ফুটে কিছু বলতেও সাহস পায় না,পাছে সাহায্যটা বন্ধ হয়ে যায়।
সগীর আজ বেশ গোছানো পোশাক পড়েছে,কালো প্যান্ট,সাদা শার্ট,লাল টাই,কালো জুতা।এসবই তমাল ভাইয়ের কাছ থেকে একদিনের জন্য ধার নিয়েছে।হিসাব করতে গেলে শুধু অন্তর্বাস ছাড়া সবই তমাল ভাইয়ের।
বাসার সামনের ঘুপচি গলি পেড়িয়ে বড় রাস্তায় আসতেই সগীরের চোখে পড়ল প্রতিদিনের মতই টোপ খাওয়া বুড়িটা আজও বসেছে।অনবরত জিকির করে যাচ্ছে,একটা ট্যাকা দে ব্যাটা।প্রতিদিনই বুড়ির সাথে তার দেখা হয়।কোনদিন সগীরের পকেট থেকে ভিক্ষাসরুপ একটা টাকাও বুড়ির থালায় ওঠে নাই।আজও দেব না দেব না করেও পাঁচ টাকার আধুলি বুড়ির থালায় ছুড়ে দিল।বুড়ি বেশ ক্ষানিকক্ষন সগীরের দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকল এই ভেবে যে ছেলে কোনদিন একবারও তার দিকে ফিরে তাকায় নাই,আজ পাঁচ টাকার আধুলি ছুঁড়ে দিল!
সগীরে বুক থেকে বড় একটা পাথর নেমে গেল।বুড়িকে পাঁচ টাকা দান করে চাকরি পাওয়ার ব্যাপারে একধাপ এগিয়ে গেল।
রাস্তায় প্রচন্ড জ্যাম,রাস্তার দুইধারে মানুষ জটলা করে দাঁড়িয়ে আছে।বেশিরভাগেরই চোখে মুখে আতঙ্ক।কেউ কেউ এমন অসহায়ভাবে তাকিয়ে আছে যেন ,আজ বেড় হওয়াটাই ভুল হয়েছে,সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না বাসায় ফিরে যাবে নাকি গন্তব্যের দিকে যাবে।
সগীরও খানিকটা সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে,ফলের দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে চিন্তা করল লোকাল বাসে যাবে নাকি কাউন্টার বাসে যাবে?লোকাল বাসে যাওয়ার চিন্তা বাদ দিতে হল।লোকাল বাসের যে অবস্থা,তাতে মৌচাক থেকে ফার্মগেট গিয়ে নামতে তমাল ভাইয়ের দামি রেমন্ড প্যান্ট,আর ক্যাটস আইয়ের শার্টের অস্তিত্ব কই গিয়ে দাঁড়াবে?সগীরকে নামতে হবে শুধু অন্তর্বাস পরে।
হাঠাত সগীরের ভাবনায় ছেদ পরে,রামপুরার দিক থেকে একটা বাস ছুটে আসছে,দড়জার হাতল ধরে একটা যুবক ছেলে প্রানপনে চেষ্টা করছে বাসে ওঠার।ইশ! ছেলেটা কি বাসে উঠতে পারবে?সগীর বাজি ধরে ফেলল ছেলেটা যদি বাসে উঠতে পারে তবে সে চাকরীটা পাবে আর যদি না উঠতে পারে তবে পাবে না।
ইশ! আল্লাহ ছেলেটাকে দয়া কর!
বাসের দড়জায় প্রচন্ড ভীড়,বাসের হেল্পার প্রানপণে চেষ্টা করছে ছেলেটির হাত ছুটিয়ে দিতে পারছে না।সগীর ঘেমে উঠতে থাকে,ইশ! সগীর চোখ বন্ধ করে ফেলে,চাকরীটা বুঝি গেল!বাসটা ফলের দোকান পাড় হয়ে যাচ্ছে।সগীর চোখ খুলল।ছেলেটি বাসে উঠতে পারে নাই,হন্তদন্ত হয়ে পরের বাসের জন্য দৌড়াতে থাকে।
সগীর আর দাঁড়াবে না,মনে একটা পোকা ঢুকে গেল-সারাক্ষন খচখচ করবে।বাজিতে সে হেরে গেল।
টাংগাইল সুইটস এর সামনে এক মধ্যবয়েসী লোক সাত আট বছরের মেয়ের হাত ধরে দাঁড়িয়ে আছে,কাধে ব্যাগ ঝোলানো।মনে হয় ঢাকাতে নতুন এসেছে।সগীরকে ধরে ফেলে বাবা-গুলিস্তান যাওয়ার রাস্তাটা একটু দেখিয়ে দেবে?বাবা!
বাজিতে হেরে সগীরের মেজাজ খুব খারাপ,মুখ ঝাকিয়ে চিনি না বলে সকল্প বাস কাউন্টারের দিকে দ্রুত হাঁটা দিল।
মৌচাক মার্কেটের সামনে বেজায় ভীড়।শালার মহিলারা,খেয়েদেয়ে কাজ নাই খালি স্বামীর টাকার শ্রাদ্ধ!সগীর গজগজ করতে করতে ভীড় ঠেলে সামনে এগিয়ে যায়।
বাসে উঠতে না পারা ছেলেটাকে কিছু শোনানো দরকার ছিল।খালি গতরটাই বাড়ছে।আজকাল মহিলারা কেমন পুরষদের সাথে পাল্লা দিয়ে বাসে যায়গা করে নিচ্ছে আর পাঁঠার মত শরীর নিয়ে,উফ! সগীর আর ভাবতে পারে না।এর মধ্যে আরো কিছু ফকিরের সামনে দিয়ে হেঁটে গেল সগীর ইচ্ছে করেই ওদের দিকে ফিরে তাকাল না।কার দৃষ্টিতে কি আছে কে জানে?শেষে কুদৃষ্টিতে চাকুরীটা না খোয়াতে হয়।
বাস কাউন্টারেও প্রচন্ড ভীড়,টিকিট কেটে লাইনে দাঁড়িয়ে সগীর খেয়াল করল পনের বিশজনের লাইনে সে সবার পেছনে।ঘড়ির দিকে চোখ দিলে সগীরের মাথায় ঝাকুনী লাগে,নানান টেনশনে এতক্ষন ঘড়ির দিকে তাকানোই হয় নাই নয়টা দশ।
লাইনের লোকগুলো মাথা বেড় করে উকিঝুকি মারছে,একটা বাস এসে থামল মাত্র।বাসেও প্রচন্ড ভীড়! অনেক চেষ্টা করেও পাচজনের বেশী যায়গা হল না।যাত্রীরা বেশ হতাশ।সগীর ঘেমে নেয়ে উঠছে, সিএন জি করে গেলে তাড়াতাড়ি যাওয়া যেত।সে উপায়ও নাই কম করে শ খানেক টাকা লাগবে সিএনজিতে যেতে,এত টাকা সগীরের পকেটে নাই।ইশ তাড়াতাড়ি আরএকটা বাস আসে না কেন?মাথার মধ্যে বিভিন্ন ধরনের বাজির গুটি ঘুড়ঘুড় করছে,ধরবে না ধরবে না করেও সগীর আর একটা বাজি ধরে ফেলল,এবারের বাসে যদি সে উঠতে পারে তবে তার চাকরীটা হবে না পারলে চাকরী হবে না।
এবার সগীর বাজিতে জিতে বাসে উঠল।উফ! অন্যের ওপর ভরসা করে বাজি ধরতে নাই,ঐ ছেলেটাকে নিয়ে বাজি ধরাই ভুল হয়েছিল।বাসের ভেতর সগীর খুব কষ্টে দাঁড়িয়ে আছে,ড্রাইভারের পাশের রড ধরে কোনমত অস্তিত্ব রক্ষার চেষ্টা করছে।
কিছুটা সময় পেরোলে সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে আসে।হঠাত একটা সাইনবোর্ডের দিকে তাকিয়ে সগীরের গায়ের রক্ত হিম হয়ে যায়,সে কি তার ভাইভা কার্ড সাথে এনেছে!মনে পড়ছে না তো সকালে বেড় হওয়ার সময় সে ভাইভা কার্ড দেখেই নাই।ও মাই গড সগীরের চোখ বুঁজে আসে,সব মাঠে মারা গেল।সগীর আতিপাতি করে প্যান্টের পকেটে খুঁজতে থাকে,যাহ চাকরীটা গেল।গলায় পানি নাই তাই ঢোক চিপতে পারে না সগীর।গাড়ি ওয়ার্লেস গেট ছাড়িয়ে যাচ্ছে,সগীর সিদ্ধান্ত নিয়ে নেয় পরের কাউন্টারে সে নেমে পড়বে,সারাদিন বাইরে ঘুড়বে হেঁটে হেঁটে,বাসায় ফিরবে গভীর রাতে।
পকেটে টাকাগুলো ঠিক আছে তো!সগীর বুকপকেটে হাত দেয়,ধবক করে চোখদুটো জ্বলে ওঠে,সগীর হা হা করে হেসে উঠতে গিয়েও নিজেকে থামিয়ে ফেলে।নিজেকে অনেকগুলো বকা দেয় একসাথে।গতরাতে অতিরিক্ত খেয়ালীর কারনে ভাইভা কার্ডটা সে শার্টের পকেটে তুলে রেখেছিল যেন ভুল করেও সে ভাইভা কার্ড নিতে ভুল না করে।
ঢাকা শহরে যারা বসবাস করে মগবাজারের ভয়াবহ ট্রাফিক জ্যামের কথা সবাই কমবেশী জানে।বাস মগবাজারের জ্যামে গা ডুবালে সগীর অস্থির হয়ে নিজের সাথে আর একটা বাজি ধরে ফেলে।পাঁচ মিনিটের মধ্যে যদি জ্যামটা ছেড়ে যায় তবে তার চাকরী হবে না ছাড়লে নয়।আশ্চর্য্যজনকভাবে সময়ের অনেক আগেই জ্যাম ছাড়ায় সগীর বাজিতে জিতে গেল।চাকরীটা এবার হয়েই যায়।হিসেব করে দেখলে বাজিতে জেতার সংখ্যা বেশী,বেশী কি?শুধু ঐ বাস মিস করা ছেলেটার কথা,ওকে বাদ দিলেও চলে ও তো আউট অফ সিলেবাস।তাছাড়া গত একমাসে উপরওয়ালার দুয়াড়ে যতবার সে মাথা ঠুকেছে তার এক চতুর্থাংশ বিবেচনা করলেও চাকরী নিশ্চিত।
শুধু ভুল হয়ে গেল মিষ্টির দোকানের সামনের লোকটাকে বাসে তুলে দেওয়া দরকার ছিল,বেচারা মনে হয় গ্রাম থেকে এসেছে।মেয়েটাকে নিয়ে কি হাল ই না হচ্ছে,নাহ তা হবার কথা নয়,আরও কত লোকজন আছে তাদের জিজ্ঞেস করলেই তো হয়ে যাবে,ওফ! বাঁচা গেল।তাছাড়া এত কিছুর হিসেব করলে হয়?চোখের ওপর তো কত ঘটনাই ঘটে যাচ্ছে সবই কি সগীরকে সমাধান করতে হবে নাকি?
বাংলামোটর রোড বেশ ফাঁকা,বাস দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে।কাউন্টার বাসগুলোর এই এক সুবিধা ক্ষণে ক্ষণে থামিয়ে যাত্রী ওঠায় না ফাঁক পেলেই জোড়ছে টান দেবে।
চাকরী হলে কি কি করবে তার একটা খসড়া চিন্তায় ডুবে যায় সগীর,প্রথম মাসের বেতন দিয়ে মাকে শাড়ি দিতে হবে,বাবাকে পাঞ্জাবী,ছোটবোনের শখ লেহেঙ্গার।আর নিজে একবেলা কে এফ সি তে ভাজা মুরগী খাবে,কতদিনের শখ তার।কে এফ সি এর সামনে দিয়ে যতবার সে গেছে,ফ্রায়েড চিকেনের মাতাল করা গন্ধে তার ক্ষিধেভাব প্রবল হয়েছে।কিন্তু কিছুই করতে পারে নাই তখন,পকেট ছিল ফাঁকা,চাকরী পেলে এমনটা হবে না নিশ্চয়ই।
হায় হায় রে এটা কি হল!আল্লাগো চীৎকারে সগীর পার্থিবতায় ফিরে দেখল আচমকা ব্রেকে বাস থেমে গেছে সেই সাথে সে সামনের দিকে ছিটকে পড়ল।বাসের ড্রাইভার জানালা দিয়ে এক লাফে রাস্তার ওপাশে পড়েই কি বুঝে দৌড় লাগাল,বাসের ভেতর দুদ্দাড় আওয়াজ সবাই তড়তড় করে নিচে নামছে।বাসের সামনে প্রচন্ড জটলা বেধে গেছে।কি হল আবার?সবার সাথে নীচে নেমেই যার ওপর চোখ পড়ল তাতে তার মাথা চক্কর দিয়ে উঠল।মধ্যবয়েসী এক লোক রাস্তার মাঝে পড়ে আছে,মাথা দিয়ে গলগল করে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে।সবাই হায় হায় করছে কিন্তু কেউ এগিয়ে গিয়ে লোকটাকে ধরছে না।পাশেই হাসপাতাল,সগীর একবার চিন্তা করল লোকটাকে পাঁজাকোলা করে হাসপাতালে নিয়ে যায়,আবার ঘড়ির দিকে তাকিয়ে আর সাদা জামার কথা চিন্তা করে সগীরের বুকের ভেতরটা হা হা করে উঠল,সময় পেড়িয়ে যাচ্ছে।সময়মত পৌছতে না পারলে চাকরীটা যাবে,বেশীক্ষণ ভাবার সময় নাই।আহত লোকটাকে ছেড়ে যেতেও তার মানবতায় বাধছে।হঠাত একজন পুলিশকে আসতে দেখা গেল ভীড় ঠেলে ভেতরে ঢুকতে।এবার নিশ্চয়ই লোকটার কোন গতি হবে।সগীর আর বেশী সময় নিল না,দ্রুত একটা লোকাল বাসে উঠে পড়ল।
সগীর মাথা নিচু করে বড় সাহেবের সামনে বসে আছে,বড় সাহেব ব্যাস্ত।সবার ভাইভা শেষ হওয়ারও আধা ঘন্টা পরে সে পৌছেছে।কিছু বলতেও পারছে না।বড় স্যারের কখন আজ্ঞা হয় কখন তাকে প্রশ্ন করে।
বড় সাহেব নীচ থেকে একটা ফাইল নিয়ে চোখ না তুলেই বললেন তো আপনি সগীর হোসেন?
সগীর বুকে একশ হাতীর বল পেল জী স্যার।
আপনার দেরীর কারনটা নিশ্চয়ই ট্র্যাফিক জ্যাম?
না স্যার
তবে কি কারন?
হঠাত করে সগীর বড় স্যারকে যা বলল তাতে নিজেও ধাক্কা খেল
স্যার আসার পথে বাংলামোটরে আমার বাসের সাথে এক মধ্যবয়েসী লোকের একসিডেন্ট হয়েছে।লোকজন সবাই দেখছে শুনছে কিন্তু কেউ লোকটাকে সাহায্য করছে না,লোকটার তখন যাই যাই অবস্থা।ওদিকে আমিও সিদ্ধান্ত নিতে পারছি না কি করব!একদিকে আমার চাকরী অন্যদিকে লোকটার জীবন।শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেললাম,চাকরী জীবনে অনেক পাব,কিন্তু লোকটা যদি মরে যায় তার পরিবারের কি হবে!আর কিছু ভাবলাম না,ভীড় ঠেলে লোকটাকে পাঁজাকোলা করে সাফেনা হাসপাতালে ভর্তি করে একটা ব্যাবস্থা করে এলাম।
বড় সাহেব খানিকক্ষণ টেবিলের দিকে তাকিয়ে থাকলেন,তারপর বললেন,ভেরী স্যাড।ওনার কি অবস্থা এখন?
ভালো,ডাক্তার বলেছে কয়েকদিন বিশ্রাম নিলে ঠিক হয়ে যাবে।
আপনার শরীরে কোন রক্তের দাগ দেখছি না!
সগীর নিজেকে সামলে নিল,স্যার আমার সাথে ব্যাগ আছে রিসিপশনে রাখা,ব্যাগে সবসময় দুটো শার্ট,প্যান্ট,লুঙ্গী থাকে যাযাবর মানুষ কখন কোথায় থাকি ঠিক নাই।
আপনাকে দেখে যাযাবর মনে হয় না,ড্রেস আপ দেখে মনে হয় খুব উচ্চবংশে আপনার জন্ম।
জী স্যার
আপনার এডুকেশনাল ব্যাকগ্রাউন্ড খুব একটা ভালো না।
স্যার ঠিকই বলেছেন,ছোটবেলা থেকেই আমার অভ্যেস মানবসেবার,পুর্বের ঘটনায় তা বুঝেছেন নিশ্চয়ই।মানুষের সেবা করতে গিয়ে পড়াশোনাটা ঠিক মত করতে পারি নাই।
আমাদের এন জি ও এর মোটোও মানুষের সেবা করা।আপনার ব্যাবহার আর কথা শুনে বেশ ভালো লাগল।আমি রিসিপশনে বলে দিচ্ছি আপনার জয়েনিং লেটারটা নিয়ে যাবেন।
সগীর স্বপ্নেও চিন্তা করে নাই এত কম প্রশ্নে আর এত সহজে তার চাকরী হয়ে যাবে।
সগীর দাঁড়িয়ে পড়ল,থ্যাঙ্ক ইয়্যু স্যার।স্লামালেকুম
ওয়ালাইকুম আস সালাম,দেখা হবে।
সগীর বিজয়ীর বেশে বড় সাহেবের রুম থেকে বেড় হয়ে আসে।এতগুলো মিথ্যে বলায় তার কোন অপরাধবোধ জাগে না।জয়েনিং লেটারটা হাতে নিয়ে সগীর সোজা রাস্তায় নেমে পড়ে।তার ভেতরে বিশাল উত্তেজনা।বাড়িতে সংবাদটা দেওয়া দরকার।সগীর পকেট থেকে আধাভাঙ্গা মোবাইল বেড় করে,ব্যালেন্স নাই।
রাস্তা ধরে হাঁটছে সগীর পথের ধারের ফকিরগুলোর দিকে এখন না তাকালেও চলবে।দুর্ঘটনায় পড়া লোকটার কথা তার মনেই রইল না।সে চিন্তায় ডুবে গেল প্রথম মাসের বেতনের টাকা দিয়ে কি করবে,চিন্তাটা তখন সে শেষ করতে পারে নাই।
পরদিন সকালে বেশ আয়েশী ভঙ্গীতে পত্রিকার পাতায় চোখ বুলাচ্ছিল সগীর।হঠাত শেষ পাতার একটা খবরে গিয়ে তার চোখ আটকে গেল।
“বাংলামোটরে বাসের ধাক্কায় জনৈক ব্যাক্তি নিহত”
সগীর পুরো খবর পড়তে পারল না,বার বার বিষম খেতে লাগল।অজানা শঙ্কা তার মনের ভেতর।নতুন করে একটা বাজি ধরে ফেলল সে যদি বড় স্যার খবরটা পড়ে তবে তার চাকরী হবে না আর যদি না পড়ে তবে চাকরীটা হবে।

শামসুদ্দীন হাবিব
মৌচাক(১৮.১০.২০১০)

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.