নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ক খ গ

শামসুদ্দীন হাবিব

আমি অতি সাধারন একজন মানুষ,নিজকে নিয়ে খুব বেশি প্রত্যাশা নাই।পেশায় টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার,একসময় নাটকে ক্যামেরার পেছনে কাজ করেছি।টুকটাক লেখালেখি করি।হাসতে ভালোবাসি,ভালোবাসি হাসাতে।এই তো।

শামসুদ্দীন হাবিব › বিস্তারিত পোস্টঃ

২৩ অক্টোবর

২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সকাল ৯:৩৭


লোকটা সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠেছিল,ইদানিং সে স্ত্রীর সাথে এক বিছানায় থাকত না।স্ত্রীর মুখের দিকে তাকালে তার মনে হত পুরনো দিনের ডাইনিদের মত কেবলই কোঁ কোঁ শব্দ করত,চামড়া ঝুলে যাওয়া স্ত্রীর শরীরের অসংখ্য রোগ তাকে পীড়া দিত।লোকটা ঘুমের ওষুধ খেয়ে ঘুমাত বেশ কিছুদিন হল,কারন রাতে তার ঘুম হত না,অদ্ভুত সব চিন্তায় বিভোর থাকত,লোকটা আড়ালে আবডালে সিগারেট ফোঁকাও শুরু করেছিল কিন্তু কেউ তা জানত না।লোকটার স্ত্রীর অসংখ্য রোগ থাকলেও মন ছিল পবিত্র আর স্বামীকে ছাড়া সে কিছুই বুঝতে চাইত না,এর কারন হিসেবে ধরা যায় মহিলার মাথায় বুদ্ধিশুদ্ধী কম ছিল।লোকটার ওপর কোনরকম নিয়ন্ত্রন তার ছিল না,তবুও স্ত্রী ভাবত তাদের মত সুখী খুব কম লোকই এই পৃথিবীতে আছে।হয়ত কখনও স্ত্রী লোকটার কাছে বলত শুনলাম পৃথিবী না কি অচিরেই ধ্বংস হয়ে যাবে?লোকটা সব উড়িয়ে দিয়ে বলত এসব আজেবাজে কথা কার কাছ থেকে শোন?মহিলা বেশ লজ্জা পেত নিজের নির্বুদ্ধিতার জন্য,নিজের স্বামীকে সে সর্বজ্ঞানীও ভাবত।এই লোকটা কেন আলাদা বিছানায় ঘুমাচ্ছে তা নিয়ে স্ত্রীর কোন আক্ষেপ বা প্রশ্ন ছিল না।লোকটার নিজেরও জন্ডিস ,উচ্চরক্তচাপের সমস্যা আর ডায়াবেটিস ছিল।শেষ জীবনে এসে লোকটা যা খুশী তাই করুক কেউ বাধা দেবে না এমনটাই ভেবে রেখেছিল পরিবারের সব লোক।তাই অনেক রাত করে সে যখন বাড়ি ফিরত স্ত্রী চোখ ডলতে ডলতে দড়জা খুলে দিত কিন্তু কখনই বলত না কেন তোমার এত রাত হল,স্ত্রী ভাবত এটাই স্বাভাবিক।এই লোকটা পরকাল নিয়ে কখনই ভাবে নাই,পরকাল নিয়ে তার মধ্যে অনেক দ্বিধা ছিল।তবুও লোকটাকে এলাকার সবাই বেশ সন্মান দেখাত।তার সামনে সিগারেট খেত না,উচ্চস্বরে কথা বলত না,সে কোন প্রস্তাব রাখলে সমাজের কেউ ফেলতেও পারত না।আপাত দৃষ্টিতে সবাই তাকে সুখী আর জ্ঞানী বলে ভাবত,তার সন্তানদের সবাই প্রায়ই প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে,তারা মুক্ত পাখীর মত ছেড়ে দিয়েছিল নিজেদের বাবাকে।সবকিছুর মাঝে স্ত্রী আর তার দূরত্ব কেউ কোনদিন খেয়াল করে নাই,এমনকি তাদের ছেলেমেয়েরাও না।
লোকটা সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠেছিল কারন তার পিঠের দুপাশে প্রচন্ড ব্যাথা হচ্ছিল।সে মানসিকভাবে দুর্বল ছিল তাই পিঠের ব্যাথাটাকে বড় কিছু হয়েছে ভেবে বেশ গভীরভাবে নিল এবং ঘুম থেকে উঠে সরাসরি বারান্দার বেসিনের সামনে দাঁড়াল,ওখানে আয়না লাগানো আছে ।লোকটার স্ত্রী তখনও বেঘোড়ে ঘুমাচ্ছে।আয়নার সামনে দাঁড়িয়েই তার মনে হল পিঠের দুপাশে কি জানি বিড়বিড় করছে।উলটো করে জামার ভেতর হাত ঢুকিয়ে সে দেখার চেষ্টা করল কোন পোকামাকড় ঢুকেছে কি না!কোন পোকামাকড় নাই তবে দুপাশের মাংস কেঁপে কেঁপে উঠছিল।লোকটা বেশ ভয় পেয়েছিল আর কাউকে জানাতে চাইছিল না তার ব্যাথার কথা।বেশ কিছুদিন হল সে একা থাকতে বেশ স্বচ্ছন্দ বোধ করত।
শীতের আগমন টের পাওয়া যাচ্ছে,বাইরে মিষ্টি রোদ সাথে মিষ্টি বাতাস।জলপাই গাছে থোকায় থোকায় জলপাই ধরেছে।লোকটা জানে সে নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত জলপাই পাড়া হবে না,এই বাড়ির কোন কাজ তার নির্দেশ না পেলে হয় না।ইজি চেয়ারটা টেনে নিয়ে সে বারান্দায় গা এলিয়ে দিল।বারান্দা থেকে বাড়ির উঠোন আর লিচু গাছের বাগানটা স্পষ্ট দেখা যায়।বাতাস বেশ শুষ্ক ঠোঁট আর চামড়া জড়িয়ে আসতে চায়।প্রকৃতির সাথে সে কিছুক্ষন পিঠের ব্যাথাটা ভুলে ছিল,এখন আবার শুরু হয়েছে।ব্যাথাটা সবসময় হচ্ছে তা নয়,ঢেউয়ের মত আসছে আবার মিলিয়ে যাচ্ছে।লোকটা বেশ ভয় পায় এবার,নিজের মধ্যে কেমন জানি পরিবর্তন টের পায় সে।খুব বড় অঘটন ঘটতে যাচ্ছে নাকি?ডাক্তারদের খুব একটা বিশ্বাস করে না লোকটা।দিনের পর দিন এরা কেমন বেয়াড়া হয়ে উঠছে,চিকিৎসার নামে ব্যবসা শুরু করেছে।অথচ আগে কি ভালোই না ছিল ফড়িং ডাক্তার আসত ভাঙ্গা সাইকেলের পেছনে ব্যাগ ঝুলিয়ে।ওষুধের চেয়ে মিষ্টি কথা বলেই অর্ধ্যেক ভাল করে ফেলত রোগীকে।
নাস্তার টেবিলে খুব বেশী খেতে পারল না লোকটা,একটা রুটি আর আলুভাজি খেয়ে লোকটা বেড়িয়ে পড়ে শহরের উদ্দেশ্যে।ডাক্তার দেখাতেই হবে,পিঠের ব্যাথাটা এখন অসহ্য ঠেকছে তার কাছে।লোকটা এখনও স্ত্রীকে কিছু বলল না,এই মহিলা দিন দিন কেমন পোকার মত হয়ে যাচ্ছে তার কাছে।মহিলা লোকটাকে কতই না ভালবাসে অথচ লোকটা তাকে সহ্যই করতে পারছে না।মহিলা ঘুণাক্ষরেও জানে না তার স্বামীর ভেতরে অসম্ভব পরিবর্তন এসেছে,বাতাসের ঘ্রান তার কাছে ভাল লাগে,বাঁশঝাড়ের পাতার সড়সড় শব্দে মন আনচান করে ওঠে।বড় ছেলের বিয়ের জন্য জমি বিক্রি করেছিল লোকটা,অনেক টাকা!সব টাকা কোথায় গেল কি হল স্ত্রী ছেলেমেয়েরা কেউ কোন খোঁজ নেয় নাই।লোকটা নিজের মধ্যে নতুন এক পৃথিবীর জন্ম দিয়েছে।
লোকটা গেল খারাপ অবস্থায় ফিরল আরও খারাপ অবস্থায়।একগাদা মানুষ লোকটাকে বাড়িতে নিয়ে এল,এদের মধ্যে লোকটার পুরনো কিছু বন্ধুও ছিল যাদের সাথে সে সবসময় মিশত।
লোকটার পিঠের দুই পাশ ফুঁড়ে দুটো বড় কালো পাখা গজিয়েছে,ঘটনা ঘটেছে শহরের মানুষের সন্মুখে।মানুষগুলো লোকটাকে নিয়ে এল হৈ হুল্লোড় করে,এমন ঘটনা তো কোনদিন ঘটে নাই।নির্বাচনের মিছিলের মত মানুষ লোকটাকে ঘিড়ে রেখেছিল।লোকটাকে তারা বসাল ইজি চেয়ারে,অনেক চেষ্টা করেও চেয়ারের দেয়ালে হেলান দিয়ে বসতে পারল না সে,লোকটা খুব করে চেষ্টা করছে তার এই অবস্থা লুকাতে।তার পায়ের নখগুলোও কেমন লম্বাটে আর হিংস্র আকার নিয়েছে।স্ত্রী,লোকটার অবস্থা দেখে হাউমাউ করে কেঁদে পড়ল হায় হায় কি হল?ভালো মানুষ গেল আর তোমরা কি নিয়ে এলে।আল্লাহ আমার কি হল।
লোকটা যথেষ্ট বিরক্ত হয় স্ত্রীর কান্নায়,আহ এত কান্নার কি আছে!সব ঠিক হয়ে যাবে,দেখছ না বাড়িভর্তি লোকজন!কি মনে করবে সবাই।অগত্যা স্ত্রী কান্না থামিয়ে বড় পাখা নিয়ে স্বামীকে বাতাস করতে শুরু করে।লোকটার এমনিতেই শীত করছিল সবার মাঝখানেই সে চীৎকার করে উঠল,বাতাস করতে হবে না তুমি এখন আমার সামনে থেকে যাও।স্ত্রী ভয় পেয়ে পাশের রুমে চলে গিয়ে উকিঝুকি মেরে দেখতে লাগল।
গ্রামের সব লোক খবর পেয়ে ছুটে এসেছে,শান্ত শিষ্ট ভদ্রলোকটার পিঠ ফুঁড়ে পাখা গজিয়েছে।লোকটার সামনে কেউ কোন মন্তব্য করার সাহস পেল না,শুধু তারা হা করে দাঁড়িয়ে থেকে দেখতে লাগল।লোকটার চোখের পাতা ফেলার ভঙ্গীতেও কেমন অস্বাভাবিকতা ,পিটপিট করে সবার দিকে তাকাচ্ছে।লোকজন চলে যাচ্ছে না,বাড়িতে ভীড় বাড়ছে।বিকেলের পরে রাস্তার পাশে কিছু অস্থায়ী দোকান বসে গেল,বেচা বিক্রিও হতে লাগল বেশ।অবস্থা বেগতিক দেখে লোকটা নিজে থেকেই সবার উদ্দেশ্যে কিছু সান্ত্বনা সূচক কথা বলল,যার মধ্যে ছিল তার নিজের অবস্থা এবং তাকে নিয়ে কেউ যাতে দুশ্চিন্তা না করে সে যাতীয় কথাবার্তা।লোকজন সরল বটে তবে সবার আড়ালে মন্তব্য করতে ছাড়ল না,বেশীরভাগের চিন্তাধারা একটাই নাস্তিকতার ফলস্বরূপ এমনটা হয়েছে।লোকটা জ্ঞানী হলে কি হবে!ধর্মে কর্মে তার একেবারেই মন নাই।মহা প্রলয়ের আর বেশি দেরী নাই।কেউ কেউ চিন্তা করল লোকটাকে স্রষ্ঠার দূত হিসেবে।
রাতে খাওয়ার টেবিলে বসে শুধু ডিমের সালুন দেখে রেগে সব ফেলে দিল,সাথে সাথে স্ত্রী বেচারীকে বেশ বকল লোকটা।এই প্রথম স্ত্রী লোকটার চরিত্রে অস্বাভাবিকতা দেখতে পেল।লোকটার পাখা আরও বড় হয়েছে,ধীরে ধীরে নাড়াতেও পারছে সেগুলো।
পরদিন সকালে লোকটা বাইরে এসে দেখল গতকালের চেয়েও আজ বেশী লোক জমায়েত হয়েছে।বেশীরভাগ লোকই অপরিচিত।আশেপাশের দু চার গ্রাম থেকে এসেছে তারা।এদের মাঝে ক্যামেরা হাতে একজনকে দেখা গেল হয়ত সে পত্রিকা অথবা টিভি চ্যানেল থেকে এসেছে।লোকটা দুলতে দুলতে বাইরে বেড়িয়ে এল।জনগন জায়গা করে দিল তাকে বেড় হওয়ার জন্য।ক্যামেরাওয়ালা লোকটা ক্যামেরা তাক করে মাইক্রোফোন এগিয়ে দিল।লোকটা কিছু বলতে পারল না।কয়েকজন ছেলেমেয়ে আবার বেশী উৎসাহের বশে লোকটার সদ্য গজানো ডানায় টান দিল।লোকটা এবার ব্যাথা পেয়ে চোখ বড়বড় করে তাকিয়ে থাকল কিছুক্ষণ।গ্রামের মসজিদের মাওলানা কি কাজে গতকাল গ্রামের বাইরে ছিলেন আজ খবর পেয়ে ছুটে এসেছেন।লোকটাকে দেখেই চীৎকার করে উঠলেন ইয়া মাবুদ!
সে বেশ কয়েকবার দোয়া পড়ে লোকটার গায়ে ফুঁ ও দিল।তাতে কোন কাজ হল না।
দুপুরের দিকে লোকটার ছেলেমেয়েরা এসে পড়ল।বাবার এই অবস্থা তারা মেনে নিতে পারছিল না,তারা বাবাকে এবং তাদের মাকে ধরে কিছুক্ষণ কান্নাকাটি করল।বড়ছেলে বলল বাবা তোমাকে ঢাকায় নিয়ে চিকিৎসা করাব।উত্তরে লোকটা বলল তোমরা শুধু শুধুই আমার ব্যাপারে চিন্তিত হচ্ছ,আমার কিছুই হয় নাই এটা সৃষ্টিকর্তার উপহারস্বরূপ তোমরা উদ্বিগ্ন হয়ো না।
অগত্যা ছেলেমেয়েরা থামল।
লোকটা কিছুক্ষণ মানুষজনের মধ্যে ঘোড়াফেরা করল তারপর সাবাইকে চমকে দিয়ে ঝট করে উড়ে গিয়ে বসল জলপাই গাছের ডালে।লোকজন হই হই করে উঠল।সবাই ঠাসাঠাসি করে জড়ো হল জলপাই গাছের নিচে।ক্যামেরাম্যান ক্যামেরা তাক করে রাখল অনেকক্ষণ।তারপর লোকটা আলতো করে উড়াল দিল আকাশে,যতক্ষণ না পর্যন্ত সে অদৃশ্য হয়ে গেল সবাই তাকিয়ে রইল তার দিকে।

তারপর দুই দিন লোকটার কোন খোঁজ পাওয়া গেল না।লোকটার ছেলেরা স্থানীয় থানায় জানাল।পুলিশেরা লোকটার হারিয়ে যাওয়ার খবর বেশ গুরুত্ব সহকারে নিল এবং বলল উনি তাহলে আপনাদের বাবা,আই সি।আমিও ঘটনা শুনেছি,কাল টিভিতেও দেখলাম।কি সাংঘাতিক ঘটনা!মানুষের পিঠে পাখা ও মাই গড!
থানার ওসি লোকটার বড় ছেলেকে একপাশে আড়ালে ডেকে নিলেন।আচ্ছা আপনাকে কিছু প্রশ্ন করতে চাই যদি কিছু মনে না করেন!
আপনার বাবা কি কালোজাদুর প্র্যাক্টিস করত?আই মীন ব্ল্যাক ম্যাজিক।
ছেলেটা খানিকক্ষণ নিশ্চুপ থেকে বলল,তেমন তো কোনদিন দেখি নাই।তবে বাবা প্রচুর বই পড়ত।আমরা অনেকদিন হল বাইরে থাকি এসব বিষয়ে স্পষ্ট ধারনা মা দিতে পারবে।
আমার কেন জানি মনে হচ্ছে এসব ব্ল্যাক ম্যাজিকেরই ফল।যাই হোক আমরা আপনাদের কেসটাকে খুব গুরুত্ব সহকারে নিচ্ছি।
ছেলেরা বাড়িতে ফিরে গিয়ে দেখল তাদের মা, স্বামীর শোকে পাগলের মত হয়ে পড়েছে,মহিলা তার স্বামীকে অত্যধিক ভালবাসত।মাকে তারা সান্ত্বনা দিল।কিন্তু মহিলা কিছুতেই লোকটার হারিয়ে যাওয়া মানতে পারছিল না।
লোকটার খোঁজ পাওয়া গেল দুপুরের পরে।বাহাদুরপুরের বড় বটগাছে তাকে দেখা গেছে।লোকটার সাথে একটি কমবয়েসী মেয়েও আছে যার পিঠ ফুঁড়ে প্রজাপতির পাখা গজিয়েছে।মূল ঘটনা আবিষ্কার করতে খুব বেশি সময় লাগল না।
কমবয়েসী মেয়েটার স্বামী কিছুদিন আগে ক্যানসারে মারা গেছে।মেয়েটা স্বামী মারা যাবার পর খেতে পড়তে পারত না কোন আয় রোজগার ছিল না।মেয়েটার দুটো বাচ্চাও আছে।সবার দৃষ্টির অন্তরালে লোকটা আর মেয়েটা গভীর পরিনয়ে মেতেছে।
ঘটনা লোকটার ছেলেরা খুব ভালোভাবে নিতে পারল না।এই শেষ বয়সে সে যে কাজ করেছে তা প্রচলিত আইন বিরোধী।সবচেয়ে বেশী মর্মাহত হল লোকটার স্ত্রী,বারবার জ্ঞান হারাতে লাগল,যে কিনা অন্ধের মত ভালোবেসেছিল অসুস্থ বৃদ্ধ স্বামীকে।জ্ঞান ফেরার পর মহিলা সবচেয়ে ভয়ংকর আর কঠিন রুপ ধারন করল।ছেলেমেয়েদের নির্দেশ দিল কঠিন হাতে লোকটাকে আর মেয়েটাকে দমন করতে হবে যারা সদ্য গজানো ডানা নিয়ে উড়ে বেড়াচ্ছে আর ভালোবাসাবাসি করছে।
এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে ছেলেরা বসল কি করা যায় এ বিষয়ে।অনেকেই অনেক ধরনের মত দিল।তার মধ্যে বেশীরভাগই কৌশলমিশ্রিত।

সন্ধ্যার আগে তারা বেড়িয়ে পড়ল বাহাদুরপুরের উদ্দেশ্যে।সবার হাতে লাঠি,ফলা,বল্লম,দা,কুড়াল।লোকটার ছেলেরা দলটাকে নেতৃত্ব দিচ্ছে।এলাকার গন্যমান্য ব্যাক্তিরা কিছুটা পেছনে পড়েছেন ইচ্ছে করে।এরা সবসময়ই গা বাঁচিয়ে চলে,এরা বুদ্ধী দেবে কিন্তু হাত লাগাবে না।উঠতি বয়েসের ছেলেরা বেশ আগ্রহ নিয়ে দলটার সাথে চলেছে কি হয় দেখার জন্য।ছেলেটার অন্য কোন আত্মীয় স্বজনকে দলে দেখা গেল না।শহরের মাঝখানে এসে থামল তারা।দু একজন পুলিশ এগিয়ে এল কি হয়েছে জানার জন্য,পুলিশকে খুব একটা গা করল না তারা।ছেলেদের রক্ত টগবগ করে ফুটছে।তাদের সন্মানিত বাবা কি না এই ধরনের গর্হিত আর সমাজবিরোধী কাজ করেছে।

দলটা যখন বটগাছের কাছে পৌছল সন্ধ্যা নামি নামি করছে।সবাই দেখল বটগাছের সবচেয়ে উঁচু ডালে দুজন,বসে আছে।দলটাকে দেখে খুব একটা ভয় পায় না তারা।লোকটার বড় ছেলে হঠাত চীৎকার করে ওঠে এই কাজ আপনি কেন করলেন?
ওপর থেকে কোন আওয়াজ আসে না,উপরন্তু মেয়েটার দীঘল হাসিতে চারদিক বিমোহিত হয়ে পড়ে।দলটা কিছুক্ষণের জন্য দিকভ্রান্ত হয়।লোকটার ছেলেরা বদ্ধমূল হয় যে মেয়েটা একটা ডাইনী,সেই তাদের বাবাকে জাদুটোনা করেছে।
ছেলেটা আবার চীৎকার করে ওঠে বাবা আপনি নীচে নেমে আসুন,আমরা জানি এই ডাইনীটা আপনাকে মন্ত্র করেছে,আপনাকে আমরা ফিরে পেতে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি।
লোকটা এবার মুখ খুলল,তোমরা চলে যাও।আমাকে আর ফিরে পাবে না,আমি অনেক দূরে চলে এসেছি।
দলটা এবার মরিয়া হয়ে ওঠে,লোকটার ছেলেরাও।সবাই বলে ওঠে ওই ডাইনীটাকে শেষ না করলে,লোকটার মন্ত্র কাটবে না।
সবাই একসাথে হাতে যা ছিল ছুঁড়ে মারতে থাকে,ডানা ঝাপটানোর শব্দ পাওয়া যায়,দুইজন ঝট করে একসাথে আকাশে উড়াল দেয় অন্ধকারে তারপর থেকে তাদের আর কেউ দেখে নাই,দিনটা ছিল ২৩ অক্টোবর।

শামসুদ্দীন হাবিব
মাওনা(২৮.১০.২০১৪)

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.