নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
জাপানে ময়লার ব্যাগ কে "গমি ফুকুরো" বলে। তাদের নানান রং আর বাহার। সব্জি মাছ মাংসের অবশেষ; ফেলে দেয়া আরও যা আছে তা হলুদ ব্যাগে, বোতল আর ক্যান যাবে সবুজে (এই সবুজ আবার নীল জটিলতা আক্রান্ত, মানে ঔ যে কালার ব্লাইন্ড লোকেরা সবুজ আর নীল গুলিয়ে ফেলেন, সেরকম আরকি)। এছাড়াও বেগুনী, লাল কত তার বাহার। কীভাবে "গমি ফুকুরো" ব্যবহার করতে হবে তার একটা নিয়মিত প্রশিক্ষণ হয় বিদেশীদের, জাপানীদের জন্য সেটা শৈশব থেকেই। সেটা এক শিল্প, এক মহাযজ্ঞ। এই দেশকে বোঝার জন্য খুব গুরুত্বপূণর্ সূত্র। এরা এত সু-ব্যাবস্থাপনায় ময়লাকে "নাই" করে দেয়, দূর পাহাড়ের বাথরুমও ঝকঝকে চকচকে রাখে যেমন তা বিস্ময়কর ও প্রশংসনীয়, তেমনি আবার ভীতিকরও।
কেন ভীতিকর? আমার মত বাঙালী যার ছোটবেলা থেকে ময়লার সাথে নিত্য বসবাস। চোখে, নাকে, কানে ময়লাকে দেখে শুনে ঘ্রাণে বড় হয়েছে তার কাছে ময়লা, দূরত্বের নয় বরং কাছের। ময়লা মানে সমগ্র, আলাদা আলাদা বাছাইয়ের কিছু নেই, একতাল দলা। চিন্তাহীন, যত্নহীন, ভাবনাহীন ফেলে যাওয়া শুধু। লাশটা, মরে যাওয়া কুকুরটা, পথের ধারে মলস্তুপটা কিংবা সেইন্টামাটর্িনে ফেলে যাওয়া প্লাস্টিক আর র্যাপার। কিংবা টক শো, গণমাধ্যম, ফেইসবুক সবখানে আমাদের নিয়মিত ময়লা নির্গমন। ময়লার সাথে আমাদের সহবাস এবং বসবাস যেখানে, সেখানে কিনা জাপানে ময়লা ম্যানেজম্যান্ট নিয়ে এত্তকিছু! বিশাল বিশাল সব জরিমানা। নজরদারি। যেমন ছোট্ট একটা নদীর ধারে লেখা ছিল, “এখানে ময়লা ফেলিলে ১০ মিলিয়ন ইয়েন জরিমানা”।
ময়লা ভীষণ শ্রেণীভিত্তিকও। মাছের আঁশটে ময়লাটা, মুরগীর রক্ত গিলা কলিজাটা, মল হাতে ধরতে হয় নাই বহুদিন। কোরবানীর মাংস কাটতে যেয়ে আধ্যাত্মিক পরিশুদ্ধতা অনেকে পেলেও রক্তে সয়লাব করে দিয়েছেন শহর। সেটাও আরেক ঘনিষ্টতা, আরেক মাগর্। হয়তো পরিচ্ছন্ন নাগরিকগণ তাই পরিষ্কার করে কাটা মাছ মাংসের জন্য বাজার এড়িয়ে যান সুপার স্টোরে।
জাপান হয়ত অতি পরিষ্কার। ময়লার সাথে তার সম্পকর্ আপাত নির্মোহ এবং ভীষণ দক্ষ ম্যানেজমেন্টের। প্রশ্ন জাগে, এখানে কি মানুষ লাশ দেখতে যায়? লাশ ছোঁয়? গোসল দেয়? পোড়ায়? এখানে সেটার জন্য সংস্থা রয়েছে। খুবই দক্ষ সংস্থা। এই দক্ষ সংস্থা ভীষণ দক্ষতায় ময়লাকে “নাই” করে দেয়। দেশে আবার একই ধরণের দক্ষতা দেখি লাশ গুম, হত্যা, ধর্ষণ, টাকা পাচার, ইস্যু ইত্যাদি ক্ষেত্রে। তবে তারা বিশেষ সংস্থা না, তারা সম্মিলিত সংস্থা। একটা স্বীকৃতি নিলেই পারে। তাহলে দুটো দেশই নানান পদ্ধতিতে ময়লাকে ডিফাইন করে এবং “নাই” ও করে ।
কিন্তু এত কথা বলতে যেয়ে আসল কথা বলতেই তো ভুলে গেলাম। গত দুই দিন ধরে মাছ কাটবো করে গত রাতে যেই মাছ বের করেছি তখন খেয়াল হল, আরে! মাছ তো তার সুপারস্টোর অবস্থায় নেই (মানে মাছ আছে কিন্তু সাথে পেটের নাড়িভূড়িও আছে)। অগত্যা ঈমানী দায়িত্ব নিয়ে মাছ কাটা যখন শেষ হল, ততক্ষণে আমার কক্ষ কাওরান বাজার। রাতে যে আর ঘুম হবে না সে বিষয়ে আমি নিশ্চিত হয়ে গেছি ততক্ষণে । একদিকে জাপানী শাসন, অন্যদিকে প্রতিবেশীর অভিযোগের ভয় সব মিলিয়ে আতংকে আমার কাটা মাছ দশা। গমি ব্যাগে সব ঢুকিয়ে, শক্ত করে মুখ বন্ধ করে বাইরে রেখেছি। গন্ধ যাতে সরে যায়। এরপরই লিফটে করে নেমে রেখে আসবো। কিন্তু হায়! রাতে আর যাওয়া হল না। তাই সকালে ঘুম থেকে উঠে দরজা খুলে যখন ময়লা রাখতে যাবো, দেখি, সবর্নাশ যা হবার তা হয়ে গিয়েছে। লুকানোর যা ছিল আমার, মাছের ভূড়িটা, কলার ছালটা, ডিমের খোসাটা বিপুল আনন্দে শানের মেঝেতে গড়াগড়ি খাচ্ছে। আর কি সুবাতাস!
উইসাইন বোল্টের ক্ষীপ্রতায় এবং মাদাম কুরীর দক্ষতায় আমি যখন ময়লাকে ব্যাগে তুলছি তখন মনটা ভরে গেল গভীর বিষন্নতায়। দুর্গন্ধে এবং ঝাড়ুতে আমার চোখে শাকিব খানের মত পানি চলে আসলো। পড়িমড়ি করে ব্যাগ যখন ময়লার স্টেশনে রেখে ফিরে আসলাম ততক্ষনে সকালের আলো আমার আটতলার ব্যালকনিতে ঠিকমতই জাঁকিয়ে বসেছে। কফির পেয়ালা হাতে নিয়ে গবেষণার প্রোপোজাল পুনঃলিখনে বসেছি। কিন্তু এক লাইনও লিখতে পারছি না। মাথা জুড়ে শুধু একটাই চিন্তা, কে করলো কে করলো আমার এই সর্বনাশ। এটা কি কোন বাচ্চার কাজ? নাকি রাতের বেলা কোন বড় মানুষ...কিন্তু কেন? ঠিক সেই সময়টায় বাম দিকটায় একটা শব্দ হল। দরজা খোলাই ছিল। আর আমি সেই কালপ্রিটটাকে দেখতে পেলাম। আমার সর্বনাশের কারণ। সে আমার দিকে সরাসরি তাকালো আর তিনবার চিৎকার করে উঠলো কা কা কা।
হায়! সকালের কাক, ব্যাগ করে গেলে ফাঁক।
শরৎ চৌধুরী, হিগাশি হিরোশিমা, জাপান।
০১ লা জুন, ২০১৭ সকাল ৮:১৮
শরৎ চৌধুরী বলেছেন: আরো প্রশ্ন করলেই বের করে ফেলতে পারবেন।
২| ০১ লা জুন, ২০১৭ সকাল ৮:২৪
চাঁদগাজী বলেছেন:
পরে সময় মতো প্রশ্ন করবো, এখন মনে হচ্ছে, অন্য মনস্ক আছেন
৩| ০১ লা জুন, ২০১৭ সকাল ৮:২৯
তাতিয়ানা পোর্ট বলেছেন: @চাঁদগাজী,
৪| ০১ লা জুন, ২০১৭ সকাল ১০:১০
রাজীব নুর বলেছেন: মোটামোটি ভালোই লিখেছেন।
৫| ০১ লা জুন, ২০১৭ দুপুর ১২:১২
ঢাকাবাসী বলেছেন: ভালই লিখেছেন।
৬| ০১ লা জুন, ২০১৭ দুপুর ১২:২৯
মানবী বলেছেন: "এই দক্ষ সংস্থা ভীষণ দক্ষতায় ময়লাকে “নাই” করে দেয়। দেশে আবার একই ধরণের দক্ষতা দেখি লাশ গুম, হত্যা, ধর্ষণ, টাকা পাচার, ইস্যু ইত্যাদি ক্ষেত্রে। তবে তারা বিশেষ সংস্থা না, তারা সম্মিলিত সংস্থা।"
- সাবাশ!!!
ময়লার ব্যাগের মুখ বন্ধ করে/বেঁধে রাখলে তো কাক বা বিড়ালদের জন্য তা ছড়িয়ে ফেলা কঠিন হয়ে যায়।
মাছ বা তীব্র গন্ধযুক্ত কাঁচা খাবার হ্যান্ডেল করার পর ডিসইনফেক্টিং ওয়াইপ(যদিও তা স্বাস্ধ্য সন্মত নয় কেমিকেলের কারণে) দিয়ে কাউন্টার সহ জায়গাটা উছে দিলে আর দুর্গন্ধ হয়না। ওয়াইপ ব্যবহার করতে না চাইলে লেবুর রস অথবা কিচেন টাওয়েলে ভিনেগার নিয়ে স্থানটি মুছে দেয়া যায়।
মাছ রান্ন ভালো হয়েছিলো আশা করি।
পোস্টের জন্য ধন্যবাদ।
৭| ০১ লা জুন, ২০১৭ দুপুর ২:৪৭
সেলিম আনোয়ার বলেছেন: হায়! সকালের কাক, ব্যাগ করে গেলে ফাঁক।
৮| ০১ লা জুন, ২০১৭ বিকাল ৩:১১
নাঈম জাহাঙ্গীর নয়ন বলেছেন: ভালো তো লাগলো। ময়লার বদ্ধ মুখ কাকে খুলে ফেললো!!
৯| ০১ লা জুন, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:১৪
এডওয়ার্ড মায়া বলেছেন: মূলভাব বোঝি নাই
১০| ০১ লা জুন, ২০১৭ রাত ১১:৪০
ধ্রুবক আলো বলেছেন: ভালো লিখেছেন
১১| ০২ রা জুন, ২০১৭ রাত ২:৩১
সচেতনহ্যাপী বলেছেন: এখানে কি মানুষ লাশ দেখতে যায়? লাশ ছোঁয়? গোসল দেয়? পোড়ায়? এখানে সেটার জন্য সংস্থা রয়েছে। খুবই দক্ষ সংস্থা। এই দক্ষ সংস্থা ভীষণ দক্ষতায় ময়লাকে “নাই” করে দেয়। দেশে আবার একই ধরণের দক্ষতা দেখি লাশ গুম, হত্যা, ধর্ষণ, টাকা পাচার, ইস্যু ইত্যাদি ক্ষেত্রে। তবে তারা বিশেষ সংস্থা না, তারা সম্মিলিত সংস্থা। একটা স্বীকৃতি নিলেই পারে। তাহলে দুটো দেশই নানান পদ্ধতিতে ময়লাকে ডিফাইন করে এবং “নাই” ও করে ।[/sb
অর্থাৎ জাপানের এবং আমাদের দেশের ময়লা, দুই ক্য্যাটাগরির।। আসলেও আমজনতা ভোটশেষে "ময়লাই"।।
১২| ০২ রা জুন, ২০১৭ ভোর ৪:১৮
ফেরদৌসা রুহী বলেছেন: ভালো লেগেছে পড়তে। ভেবেছিলাম আপনার পাশের ফ্ল্যাটের আমাদের কোন দেশি লোকের কাজ এটা। যাক সব দোষ তাহলে এই কাকের।
১৩| ০২ রা জুন, ২০১৭ দুপুর ১২:১১
আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: ভালো লাগলো। আপনার হিউমার অসাধারণ!
ধন্যবাদ ভাই অন্যমনস্ক শরৎ।
১৪| ০২ রা জুন, ২০১৭ রাত ৯:৪৩
তারছেড়া লিমন বলেছেন: ভালো লাগা রইলো.................................
১৫| ০৩ রা জুন, ২০১৭ রাত ১২:৪৭
স্বপ্নবাজ অভি বলেছেন: কঠিন!
১৬| ০৪ ঠা জুন, ২০১৭ রাত ১১:২৭
আরিফ রুবেল বলেছেন: আর আমাদের এখানে ঠিক অফিস ছুটির সময় একটা তেরপল ঢাকা ময়লার ট্রাক প্রতিদিন গুলশান বনানী এলাকার আবর্জনা নিয়ে আমিন বাজারে উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়। কি শীত কি বর্ষা! কি কুরবানী কি রমজান তার কোন বিকার নেই। অফিস ফেরত মানুষগুলোকে নাজেহাল করে ময়লা আর পচা পানি ছড়াতে ছড়াতে রাজপথে চিহ্ন ফেলতে ফেলতে যায় আমাদের মেয়রের ময়লার ট্রাক।
©somewhere in net ltd.
১| ০১ লা জুন, ২০১৭ ভোর ৫:২০
চাঁদগাজী বলেছেন:
লেখায় মুল বক্তব্য কোনটি: জাপানীরা পরিস্কার, আপনি অলস, বা আপনি গবেষণার কাজে জাপানে আছেন? অথবা সবগুলো?