নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কাট ইয়োর বডি এর্কোডিং টু ইয়োর ইমেজ

শরৎ চৌধুরী

তুমি তোমার ইমেজ মতইপ্রোফাইল বানাওকি ব্লগেকি জীবনে

শরৎ চৌধুরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

সোশ্যাল মিডিয়া এংজায়িটি: একটি গোপন মহামারি

০৬ ই আগস্ট, ২০২২ সকাল ৮:৫০

ফেইসবুক গ্রুপ
প্রিয় ক্যামেলিয়া- Dear Camelia
গ্রুপে ৩রা আগস্ট এর একটা পোষ্টে জনৈক সদস্য লিখেছেন:


"সমস্যাটা হলো আমি আমার ফ্রেন্ড লিস্ট নিয়মিত মনিটর করি। হঠাৎ ফ্রেন্ড সংখ্যা কমে গেলে খুবই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ি। বার বার ফ্রেন্ড লিস্ট চেক করে খুঁজতে থাকি কে আমাকে আনফ্রেন্ড করলো? কে ব্লক দিলো? কেন দিলো? আমি কি খারাপ কিছু করেছি? অন্যায় কিছু করেছি?এসব ভাবতে ভাবতে প্রচন্ড মন খারাপ হয় পাশাপাশি উদ্বেগ বাড়তে থাকে। দিনটাই মাটি হয়ে যায়। মনে হতে থাকে আমিতো কারোর সাথে জানামতে খারাপ কিছু করিনি,খারাপ ব্যবহার করিনি, তাহলে কেন কেউ আমাকে আনফ্রেন্ড করবে অথবা ব্লক দিবে?"

আমার মনে হল এটা নিয়ে লেখা দরকার। আপনাদের জানানো দরকার। কমেন্ট আকারে যা লিখলাম, তা এখন পোস্ট আকারে দিচ্ছি।

-প্রথমত আপনাকে ধন্যবাদ একটা গুরুত্বপূর্ণ ক্রাইসিস শেয়ার করার জন্য। এই ক্রাইসিস আমাদের অনেকেরই। ফলে আপনি একাই আক্রান্ত বিষয়টা এমন নয়। ফলে, নিজেকে একা ভাববেন না।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে আর কেবলই যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবে দেখবার সুযোগ নেই। এই বিষয়টি আমি বলে আসছি প্রায় পাঁচ বছর ধরে। বিশেষত আমার পিএইচডি গবেষণা এই বিষয়ের সাথে সর্ম্পকিত ছিল বলে। ফলে একটু লম্বা উত্তর করছি।

এটি আপনার নতুন সমাজ এবং আপনি সেই সমাজের সদস্য। এই নতুন সমাজ; যেটাকে আমরা হাইব্রিড সমাজ বলতে পারি যা অনলাইন এবং অফলাইন উভয়ের সমন্বয়ে গঠিত। যদিও আপনার ভুলে গেলে চলবে না যে আপনার প্রথম এবং প্রাথমিক সামাজিকতা যেমন যোগাযোগ, বন্ধুত্ব, পরিচিতি, আড্ডা, অভিমান, সাপোর্ট পাওয়া এবং দেয়া এগুলোর সবই কিন্তু শুরু হয়েছে অফলাইন থেকে। আপনার আবেগও কিন্তু সেভাবেই নির্মিত।
যদিও আপনার এটিও মনে রাখতে হবে যে অনলাইন সমাজের নিজস্ব কিছু কৌশল আছে আপনাকে ধরে রাখার এবং এনগেজ রাখার।
ফলে যে নতুন সমাজে আপনি আছেন সেটাকে বুঝতে পারতে হবে।

১. ফেইসবুকের ডিজাইনই এমনভাবে করা যাতে আপনি সারাক্ষণ এনগেজ থাকেন। (বন্ধু কি করে, কোন ছবি আসলো, খবর কি, লেটেস্ট কি, রাজনীতি কেমন, কোন পোশাক কিনবো, কে বেড়াতে গেল, খেয়াল করে দেখবেন এন্ডলেস)।

২. সে আপনাকে একই সাথে নিজেকে কীভাবে বাকীদের কাছে দেখাবেন সেটার সুবিধা দেয় এবং ফাঁদে ফেলে। ( সমাজে আমরা কেই বা নিজের খারাপটা দেখাতে চাই? কে-ই বা নিজেকে অবমূল্যায়ণ করতে চাই? তাই দেখবেন নিজেদের ভালো থাকার ছবি আর গল্প দিয়ে ফেইসবুক ভরা থাকে)।

৩. ফেইসবুক অন্যদের মনিটর করার এবং নজরদারীতে রাখারও সুযোগ দেয়; আসলে উৎসাহিত করে (ফলে, আপনি যেমনটা বললেন যে, "সমস্যাটা হলো আমি আমার ফ্রেন্ড লিস্ট নিয়মিত মনিটর করি।" এটা শুধু আপনার নিজের বৈশিষ্ট্য না, ফেইসবুক চায় আপনি এটি করুন, আরো বহু মানুষই করে)।
উপরের তিনটা পয়েন্ট যদি ভালোভাবে খেয়াল করেন তাহলে দেখবেন যে ফেইসবুকের এই সাজানো সমাজে আপনাকে সূক্ষভাবে গাইড করা হচ্ছে। এবং আমরা অধিকাংশরাই এ বিষয়ে অসচেতন। কিন্তু আপনার আবেগ এবং যুক্ত থাকাটা তো রিয়েল।
ফলে শুধু আপনার একার মানসিক বিশ্লেষণে এটা বোঝা যাবে না। এই হাইব্রিড সমাজের সবগুলো দিক মাথায় রাখতে হবে। একটু জটিল মনে হবে প্রথমে পরে শিখে যাবেন। শিখতেই হবে, শেখাটা খুব জরুরি।

৪. এই সামাজিকতাই ফেইসবুকের পুঁজি তাই সে আপনার মধ্যে আসক্তি তৈরি করতে চেয়েছে এবং সফল হয়েছে।
(ঘুম থেকে উঠেই ফেইসবুকে ঢোকেন ক'জন? নোটিফিকেশন চেক না করে থাকতে পারেন? বাসা থেকে বের হলে বিদায় বলেন না কিন্তু মোবাইল এর বিষয়ে সবচেয়ে সতর্ক থাকেন, মিটিং এ বারবার ফেইসবুক চেক করেন কতজন?) এই প্রশ্নগুলো আমরা নিজেদের করতে পারি। কেন এগুলো করেন? কারণ এটা কোন না কোনভাবে আপনাকে সুখ দেয়, ডোপেমিন দেয়।

৫. আবারও বলছি মানুষ সামাজিক জীব। বন্ধুত্ব মানুষকে স্বস্তি দেয়, নিজের গুরুত্ব বাড়ায়। একইসাথে বন্ধুত্বের লিস্ট এবং সংখ্যা নিজেকে এই হাইব্রিড সমাজে ক্ষমতাবানও করে। (কার কত ফলোয়ার, পোষ্টে লাইক কত, শেয়ার হয়েছে কতগুলো, ভাইরাল হলো কিনা)।

৬. যখন আপনি বলেন, " হঠাৎ ফ্রেন্ড সংখ্যা কমে গেলে খুবই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ি। বার বার ফ্রেন্ড লিস্ট চেক করে খুঁজতে থাকি কে আমাকে আনফ্রেন্ড করলো? কে ব্লক দিলো? কেন দিলো?"
সেই উদ্বেগ তো ন্যাচারাল। সমাজে একা হবার ভয়। এই হাইব্রিড সমাজে ইররিলেভেন্ট হবার ভয়।

৭. যেই জায়গাটা আমরা গুলিয়ে ফেলি সেটা হল, নানা কারণেই আপনি আনফ্রেন্ড হতে পারেন, ব্লকও খেতে পারেন। কেউ ফ্রেন্ডলিস্ট ছোট করতে চায়, তারকাছে আপনি ততটা গুরুত্বপূর্ণ না। যতটা তিনি আপনার কাছে। তার হয়ত মাথাতেই আসেনি কে থাকলো কি থাকলো না।
কিন্তু সেটা নিয়ে আপনি অফলাইনের আবেগ নিয়ে যদি ভাবতে বসেন, "আমি কি খারাপ কিছু করেছি? অন্যায় কিছু করেছি?" তাহলে কিন্তু বিপদ। কারণ অনলাইনের আর অফলাইনের সম্পর্কের বিন্যাস কিন্তু এক না। গুলিয়ে ফেলা যাবে না।

৮. তাহলে আপনি যদি অসচেতন হন তাহলে এই উদ্বেগ, উৎকন্ঠার ফাঁদ কিন্তু সবখানে পাতা।

৯. আমার ছোট্ট অনুমান; হয়ত অনলাইনে আপনার যুক্ত হওয়া শুরু হয়েছিল নিজের মত একটা জগৎ খুঁজে পেতে, হয়ত আপনি অফলাইনের জীবনের বাইরের কিছু খুঁজছিলেন। হয়ত সেটাই খুব ট্রেন্ড ছিল।

১০. শেষ বিশ্লেষণ হল, আমাদের সামগ্রিক সামাজিকতার মধ্যে '"এলিয়েনেশন" বা এক, আলাদা-র বোধ খুব তীব্র হচ্ছে। এটা পুরো বিশ্বের একটা কমন ট্রেন্ড। এটাকে আমাদের মোকাবেলা করতে হবে।

সমাধান কি?
১. আপনার অনলাইন এবং অফলাইন সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা থাকতে হবে। গুলিয়ে ফেলা যাবে না।
২. নিজেদের হারানো বা ভুলে যাওয়া সামাজিকতার ক্ষমতা আবার ফেরত আনতে হবে। মোবাইল, ডিভাইস ফেলে রেখে মানুষ যে মানুষের সাথে সরাসরি আড্ডা দেয় পরিচিত হয়, অপেক্ষা করে, সেগুলো আবার শক্ত করতে হবে।
৩. সংখ্যা না, বরং কোয়ালিটি সম্পর্কে মনোযোগ দিতে হবে। আপনার ১০ লাখ ফলোয়ার থাকতে পারে কিন্তু বন্ধুত্ব আপনি আপনার সেই পুরাতন স্টাইলেই বানাবেন।
৪. অনলাইনের দুনিয়াতে সহযোগী, উপকারী, মানবিক সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে হবে।

আপনার এবং আপনাদের মঙ্গল হোক।
ধন্যবাদ
ড. শরৎ চৌধুরী, নৃবিজ্ঞানী ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম গবেষক।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই আগস্ট, ২০২২ সকাল ৯:০৮

বিটপি বলেছেন: ফেসবুকে কে কি বলল, কে কাকে আনফ্রেন্ড করল, তা আমি ুুুু দিয়েও মুছিনা।

০৬ ই আগস্ট, ২০২২ সকাল ৯:৪১

শরৎ চৌধুরী বলেছেন: ভালো স্ট্র্যটেজি। তবে অনেকের কাছেই গল্পটা অনেক গভীরের।

২| ০৬ ই আগস্ট, ২০২২ সকাল ৯:৪০

ইমরোজ৭৫ বলেছেন: সোসাল মিডিয়া একটি ভয়ংকর বিষ।

০৬ ই আগস্ট, ২০২২ সকাল ৯:৪২

শরৎ চৌধুরী বলেছেন: অসচেতন থাকলে।

৩| ০৬ ই আগস্ট, ২০২২ বিকাল ৩:০৯

মোহাম্মদ গোফরান বলেছেন: একসময় কেউ আনফ্রেন্ড করলে খুবই চিন্তায় পড়ে যেতাম। এখন কে আনফ্রেন্ড করছে এটা দেখি না পর্যন্ত।আমাকে ১০০ জনের মত আনফ্রেন্ড করছে। কেউ করছে ছাগু মোল্লা বিরোধি পোস্টের জন্য, কেউ হিংসা করে, কেউ কেন করসে নিজেই জানেনা।স্কুল কলেজ ইউনি পরিবার পরিজন আত্নীয়, সহব্লগারদের সাথে একই স্থানে থাকা যায়, কে কি করসে দেখা যায়। ফোনের দরকার পড়েনা, মেসেঞ্জারে কল করা যায়।

একসময় মারাত্নক ছিল ফেক আই ডি বা ছাইয়া নিক। ছেলেরা মেয়ে সাঁজত। মানসিক রোগী। অনেক কে মিস গাইড করত। প্রেম করার নামে ফাঁদে ফেলত। তবে এখন সেগুলো পারা যায়না। প্রোপার ইনফো না থাকলে, ছবি না থাকলে, কেউ এখন ফ্রেন্ড রিকুয়েষ্ট একসেন্ট করে না।

ব্লগে অনেকে বাংলাদেশের কোন এক গলিতে থেকে বলেন জো বাইডেন এর সাথে ডিনার করেছেন গত রাতে। ফেসবুকে সেটা বলার সুযোগ নেই। মাল্টি ও ছাইয়া গিরী করারও সুযোগ নেই।একটিভিটিস বলে দিবে ফেক নাকি অরজিনাল।

ছাগুদের গালি আর ল্যাদানির জন্য ফেসবুক কম ব্যবহার করসে অনেকেই। একটু যারা স্মার্ট ওরা ইনস্টাগ্রামে।


কিছু আই ডি এক্টিভেট বা ডিজেবল হয়ে যায় প্রতি মাসে। এজন্যও ফ্রেন্ড লিস্টে ফ্রেন্ড সংখ্যা ডিক্রিজ করে। আপনার পোস্টটি ভাল লাগল।

৪| ০৬ ই আগস্ট, ২০২২ বিকাল ৩:৩৯

ককচক বলেছেন: ফেইসবুক এমন একটা জায়গা, যেখানে আপনার আশেপাশে সেইসব মানুষ থাকবে যাদের আপনি পছন্দ করেন। ফলে ফ্রেন্ডলিস্টে ভিন্নমতের মানুষ বা বৈচিত্র পাওয়া কঠিন হয়ে যায়।
কেউ ফেইসবুকে আসক্ত হয়ে গেলে, ফেইসবুক তারে দুনিয়াটারে ওভাবেই দেখাবে যেভাবে সে দেখতে চায়। এবং তার রিয়েল লাইফ ক্রমশ জটিল হয়ে উঠবে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.