নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
গতকাল বানিজ্যমেলা শেষ হয়েছে। আমি ভাবছি এই হাইপার কমোডিফিকেশনের কালে দুই মেলার যে প্রথাগত গুণগত পার্থক্য ছিল বা আছে বলে আমরা অনুমান করি সে বিষয়টা কেমন?
১. ঐতিহাসিক ও রাজনৈতিক তাৎপর্যের দিক থেকে দুটোর জিনিওলজি আলাদা হলেও-
২. বই পড়া বই কেনা গোষ্ঠীর রাজনৈতিক শক্তি আর আত্ম-পরিচয় নির্মাণের ক্ষেত্রে বই-মেলার যে ভূমিকা সেটা কি ক্রমশ শঙ্কুচিত? নাকি পুরোপুরি শেষ?
৩. মধ্যবিত্তের আত্মপরিচয় আর সমাজের সুপারস্ট্রাকচারে নিজের জায়গা তৈরির ক্ষেত্র তো এই বইমেলা। ইকোনোমিক ও সোশ্যাল ক্যাপিটালেরও, সেটা আসলে এখন কতটা ফাংশনাল?
৪. তাহলে বুক ইন্ডাস্ট্রীর যে মিথোজীবিতা__ স্টেট, নিওলিবারেল ইকোনোমি, পাবলিশার আর ক্রেতার সাথে, সেটার কনফিগারেশন এখন কেমন?
৫. সেই যে বইমেলা "আবেগ আর চেতনা" সেটা কি একই রকম? এখন কোনটা ডমিনেন্ট? এই মিথোজীবিতার সাথে পেরে উঠছে? কোথায় পারছে? কোথায় পারছে না?
৬. এই যে মডার্ণ স্টেটে দাবীকৃত গণতন্ত্র আর ইন্ডিভিজুয়াল চয়েসের মিথ সেটা তো অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কেবল ক্রেতার "স্বাধীনতায়" পর্যবসিত হয়েছে।
৭. তবে আবার আপনার স্টেট এমন যে ক্রেতা হিসেবেও আপনার ক্ষমতা ও অধিকার অন্যান্য নিওলিবারেল স্টেটের তুলনায় সামন্যই। ফলে ক্রেতা হিসেবেও আপনি দুর্বল।
৮. আপনার স্টেট কেমন?
তবে এতসব সামান্যের মাঝেও---
ক. বই পড়ুয়া তৈরি করার দীর্ঘ ও গুরুত্বপূর্ণ প্রোজেক্ট কাজ করছে। (বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্র)।
খ. ঘরেঘরে বই পৌছে দেবার প্রোজেক্ট (বই বাড়ী)।
গ. হাইব্রীড সমাজে বই এর কনজুমারশিপ (রকমারি)।
ঘ. বই-কেন্ত্রীক আড্ডা আর বুদ্ধীজীবিতার চর্চা (বাতিঘর, পাঠক সমাবেশ)।
ঙ. মান, (ভাষা, সাহিত্য, সংগ্রহ....) প্রকাশক, পাঠক, স্থান, স্বীকৃতি ইত্যাদির অফিশিয়াল নিয়ন্ত্রক, প্রভাবক ও স্টেটের সাথে নিগোসিয়েশনের কেন্দ্র এবং আরো অনেক কিছু, বাংলা একাডেমি।
চ. প্রকাশনা ইন্ডাস্ট্রি, নিজেদের মধ্যকার দ্বন্দ, প্রতিযোগিতা, সহযোগিতা।
ছ. হাইব্রিড সমাজে পাঠ, পুনঃপাঠ, পাঠাভ্যাস, রিভিউ, শেয়ার, ভিডিও, পোস্ট, কমেন্ট এর মাধ্যমে তৈরি হওয়া সোশ্যালিটি
সচল রয়েছে।
এইসব অগোছাল পর্যবেক্ষণে পাঠকের, ক্রেতার, লেখকের, প্রকাশকের আত্মসত্তাকে কর্তা হিসেবে খুব খুব ছোট মনে হলেও দুই মেলার মাঝে একটা সুস্পষ্ট বিভাজন কিন্তু এখনো রয়েছে। নিজেদেরকে ছোট, আমাদের অনেকদিন ধরেই মনে হচ্ছে। আপনাদের হয় না?
২. বই পড়া বই কেনা গোষ্ঠীর রাজনৈতিক শক্তি আর আত্ম-পরিচয় নির্মাণের ক্ষেত্রে বই-মেলার যে ভূমিকা সেটা কি ক্রমশ শঙ্কুচিত? নাকি পুরোপুরি শেষ?
স্থানীয় স্টেট মেকিং প্রসেসের সাথে, আত্ম-পরিচয় নির্মাণের সাথে ভাষা আন্দোলন ন্যারেটিভ যুক্ত। এমনকি একপেশে ডমিনেন্ট ন্যারেটিভও সাহস দেয়, বা খুব সন্দেহ নিয়ে নিহিলিস্টিক হয়েও যদি বলেন; অন্তত বেদনা দেয়; মনে করিয়ে দেয় কোন এক সোনালী অতীতের। তাই বাংলা একাডেমি স্টেটের তরফ থেকে জরুরি প্রতিষ্ঠান। আমি মনে করি স্টেট এই প্রতিষ্ঠানের কর্মকান্ড গুরুত্ব দিয়ে দেখে, রাখে। স্থান হিসেবে বইমেলা প্রাঙ্গন গুরুত্বপূর্ণ।
বইমেলা প্রাঙ্গণ বাস্তব স্থান হিসেবে রাজনৈতিক। বহুবার এই রাজনৈতিক স্থানের গুরুত্ব আপনারা টের পেয়েছেন। খেয়াল করে দেখবেন প্রচলিত অর্থে, “মুক্তবুদ্ধির” চর্চার কেন্দ্র এবং আশ্রয়স্থল হিসেবে এটার যে পরিচিতি সেটা বুদ্ধিমানরা খুব ভালোভাবেই বোঝেন। ফলে লেখকের উপর আক্রমণের এবং বিভৎস (দৃশ্যগতভাবে অসহনীয়ও) হত্যার জায়গা হিসেবে এটার ব্যবহার হয়েছে। বিষয়টা অনেকটা, “যা; তোগো কলিজার মধ্যে গিয়া কোপাইয়া আসলাম”। অন্যদিকে “আমাদের” বইমেলায় এই বই রাখতে দেবোনা এই চর্চাও আপনারা করেছেন। আবার, যতই বিপদজনক হোক আমার প্রাণের বইমেলায় আমি যাবোই, এই প্রতিবাদও করেছেন।
স্থান থেকে নাম ও কর্মকান্ড হটিয়ে দেবার মধ্য দিয়েও কিন্তু চিন্তাগত দখলের জায়গাটা চলে। যেমন এই যে ২০১৪ এর পর থেকে “ছবির হাট” নাই করে দেওয়া। এটার সুদূর প্রসারি প্রভাব রয়েছে। রিজিমকে আমি অত্যন্ত সম্মানের সাথে দেখি, তার বুদ্ধিমত্তার জন্য। যেমন একটা গুরুত্বপূর্ণ খবর হয়তো আপনাদের চোখ এড়িয়ে গেছে তা হল, প্রথম আলোর একটি খবর,
শিরোনামঃ “অতি উৎসাহীদের কারণে বাংলা একাডেমির এ সংকট”। ২৯ শে জানুয়ারি ২০২৩।
বাংলা একাডেমিতে স্টেট ইন্টারেভেনশন নিয়েই তো মূল আলাপ। ভাষাবিদ, শিক্ষক ও গবেষক
“অমর একুশে বইমেলা ২০২৩–কে কেন্দ্র করে বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষ এবং সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিবের মধ্যকার কথোপকথন নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। প্রশ্ন উঠেছে প্রতিষ্ঠানে মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপের সীমা নিয়ে। সেসব প্রসঙ্গে জানতে প্রথম আলো কথা বলেছে সৈয়দ মোহাম্মদ শাহেদের সঙ্গে।“
আমার মনে হয় প্রথম আলো আসলে অন্যভাবে “আদর্শ”-কে যে স্টল দেয়া হল না, সেটার একটি মিহি প্রতিবাদ হিসেবে এই ইন্টারভিউকে সামনে আনলেন। অবশ্য আমি ভুল হতেই পারি।
বাংলা একাডেমির প্রধান কে হবেন সেটিও একটি স্টেট সিদ্ধান্তও। কে মঞ্চে যাবেন, কে বক্তৃতা দেবেন কে দিতে পারবেন না, সেগুলোও রাজনৈতিক ক্ষমতার সাথে বদলে যায়, যেমনঃ
প্রথম আলো থেকে
“বাংলা একাডেমি সব সময়ই বাঙালির মননচর্চার একটা প্রধান কেন্দ্র। বাঙালির সংস্কৃতি ও সাহিত্য বিকাশের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছে। তবে এমন চাপ তৈরির ঘটনা এখনই প্রথম নয়। একাডেমির ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখবেন, একাডেমি প্রতিষ্ঠার পর পূর্ব পাকিস্তান আমল বা স্বাধীন বাংলাদেশ বলুন, অনেকবার নানা রকম প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়েছে। ১৯৫৮ সালে সামরিক শাসনের সময় বাংলা একাডেমির ওপর বিচিত্র সব চাপ তৈরি হয়েছিল। ১৯৬১ সালে ঢাকা শহরে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মশতবার্ষিকী পালন করা গেলেও বাংলা একাডেমি তা উদ্যাপন করতে পারেনি।
আশির দশকের আরেকটি ঘটনা বলি। একাডেমি কর্তৃপক্ষ আহমদ শরীফকে একটি বিশেষ বক্তৃতা দিতে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল। যে ভাষণটি তিনি দেবেন, সেটা আগে ছাপা হচ্ছিল প্রেসে। সেই ভাষণে বাঙালির রাজনৈতিক ইতিহাস বর্ণনা করতে গিয়ে আহমদ শরীফ দুজন বাঙালি নেতাকে বিশেষ সাহসী বলে মন্তব্য করেছিলেন। সুভাষ বসু ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ছাপার সময় মন্ত্রণালয় জানতে পারে সেটি এবং ওই বক্তৃতা আর আহমদ শরীফের দেওয়া হয়নি।“
“২০০২ সালে সরকারের কারও মাথায় ঢুকেছিল যে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী অথবা প্রতিমন্ত্রী একুশে বইমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করবেন।“
এগুলো জানা কথা। তবে মনে রাখা দরকার। যদিও যেটা আমার সবচেয়ে বেশি নজর কাড়লো সেটি হল,
“কিন্তু ২০১৩ সালে পাস হওয়া বাংলা একাডেমি আইনের ৩ নম্বরে একাডেমি প্রতিষ্ঠার ধারায় বলা আছে, সংবিধিবদ্ধ সংস্থা হবে। প্রসঙ্গটি সহজ করে বলুন আমাদের জন্য। এই আইন দিয়ে কী বোঝাচ্ছে?”
আমার প্রশ্ন হল স্টেট কেনো ২০১৩ তে দরকার মনে করলেন যে সংবিধিবদ্ধ হওয়া দরকার? একটা আরো দূরদর্শী সিদ্ধান্ত মানতেই হবে। কিসে দূরদর্শী?
আমি মনে করি বই পড়া বই কেনা গোষ্ঠীর রাজনৈতিক শক্তি আর আত্ম-পরিচয় নির্মাণের ক্ষেত্রে বই-মেলার যে ভূমিকা সেটাকে একটি বিশেষ কাঠামোতে রূপ দেবার জন্য এই আইন পরিবর্তন দরকারী ছিল। কোন সে কাঠামো? ভাবতে থাকেন।
আমার প্রশ্ন হল তখন আপনারা এটা নিয়ে কোন উচ্চবাচ্চ করেন নাই কেন?
৩. মধ্যবিত্তের আত্মপরিচয় আর সমাজের সুপারস্ট্রাকচারে নিজের জায়গা তৈরির ক্ষেত্র তো এই বইমেলা। ইকোনোমিক ও সোশ্যাল ক্যাপিটালেরও, সেটা আসলে এখন কতটা ফাংশনাল?
আমি মনে করি খুবই ফাংশনাল। তবে যে গুরুত্বপূর্ণ মাত্রাগত পরিবর্তনটা এসেছে সেটা হল সামগ্রিক একটা বিশেষ ন্যারেটিভের বাইরে যাবার অন্যভাবে বললে বইমেলার নিজস্ব যে স্বাধীনতা ও সম্ভাবনা তা ছোট হয়ে এসেছে ভীষণ। ফলে তিনটি ঘটনা,
খ. ঘরেঘরে বই পৌছে দেবার প্রোজেক্ট (বই বাড়ী)।
গ. হাইব্রীড সমাজে বই এর কনজুমারশিপ (রকমারি)।
ঘ. বই-কেন্ত্রীক আড্ডা আর বুদ্ধীজীবিতার চর্চা (বাতিঘর, পাঠক সমাবেশ)।
অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে পরিবর্তনে যতটা প্রভাব তৈরি করতে পেরেছে আত্মপরিচয়ের ক্ষেত্রে তা করেনি। ফলে ইকোনোমিক ও সোশ্যাল ক্যাপিটালের ক্ষেত্রে কলেবর ও বিস্তারের পরিবর্তন ঘটলেও মধ্যবিত্তের গঠনে ও আত্মপরিচয় গঠনে খুব কার্যকর আর নয়। মধ্যবিত্ত নিজের কাছে সেই শক্তি আর ধরে রাখতে পারেনি। বলা যেতে পারে নাচতে নাচতে দিয়ে দিয়েছে। সে এপলিটিকাল হতে চেয়েছে, বানিজ্য বাড়াতে চেয়েছে দুটোই পেয়েছে। আর কিছু মৃদু প্রতিবাদ করে চুপ মেরে গেছে। প্রতিবাদের যে কোন রাজনৈতিক ধার নেই সেটার ফেইসবুক ব্যাখ্যা পেয়ে আরো খুশি মনে অপরাধবোধ কাটিয়ে দিয়েছে। তবে বইমেলা নিয়ে সেই ঐতিহাসিক গুরুত্ব কিন্তু কমেনি, নানান বিষয়ে বই প্রকাশ হয়েছে। বই প্রকাশের মধ্য দিয়েই আরো প্রতিষ্ঠিত যে হওয়া যায় সেই বিশ্বাস বেশ বহালই রয়েছে। বই ব্যান, প্রকাশনা সংস্থাকে অনুমতি না দেয়া তাই বড় ঘটনা আবার না-ও।
৪. তাহলে বুক ইন্ডাস্ট্রীর যে মিথোজীবিতা__ স্টেট, নিওলিবারেল ইকোনোমি, পাবলিশার আর ক্রেতার সাথে, সেটার কনফিগারেশন এখন কেমন?
ভীষণ কনজুমারের। নিরাপদ কনজুমারের। আপনি ফ্যান পাবেন প্রচুর। দলের ও মতের লোকও পাবেন প্রচুর। তবে ক্রিটিকাল ডিসকোর্সের জায়গা ক্রমশ শংকুচিত হয়ে এসেছে। পাঠক কিন্তু ভেতরে ভেতরে তীব্রভাবে অপেক্ষা করছে তার প্রমাণ হল আপাত ক্রিটিকাল কোন বইয়ের শিরোনাম দেখলেই গোগ্রাসে ঝাঁপিয়ে পড়ছে। স্টেটের সাথে একটা সহনীয় আপোস কিন্তু পাবলিশারের রয়েছে। মিউচুয়ালি বেনিফিশিয়াল। আর বই বিক্রীর ইকোনোমিতে নিওলিবারেল আচরণ বেশি ডমিনেন্ট। ভাই আগে বই বিক্রি হওয়া দরকার। ঠিকই তো। ফলে সম্প্রতি আলোচিত তিন বই নিয়ে লেখক ও প্রকাশক সমাজেও যে ঈর্ষা থাকবে না, তা- কি করে বলি? বিশেষ করে যদি উনাদের ব্রিক্রী/ থুক্কু বইয়ের বিক্রী যদি হুহু করে বেড়ে যায়।
ফলে বিশেষ স্টেট আর নিওলিবারেলের মিথোজীবিতাতে কোন প্রকাশকের কি আর সেই দায় আছে? যেই দায় আমরা কোন এক সময়ে দেখতে পেতাম? যদিও খুব গভীরে আসলে প্রকাশকদের সেই শক্তি ও আত্মবিশ্বাসও সংকুচিত হয়েছে বলে মনে হয়। যারা হয়ত দাঁড়িয়ে বলবেন আমার লেখকের পাশে আমি আছি। দাঁড়িয়ে থাকা মানুষগুলোর গড় সংখ্যা কি বেড়েছে?
আরো যে একটা কান্না দেখি প্রায়ই এদেশের মানুষ বই পড়েনা, বই কেনেনা এই কথাটার ব্যাখ্যা আমার আছে আরেকরকম। যারা এই দাবী করেন তাদের হয় বই মার্কেটিং পদ্ধতি নব্বই দশকের অথবা তারা সেই পুরোনো বইমেলার বাবলে আছেন। সম্ভবত বই মার্কেটের পদ্ধতির আপডেটেড ভার্শনে উনাদের যেতে হবে। এটা দক্ষতার সাথে প্রচুর বিক্রী হওয়া সব লেখকেই করছেন।
৫. সেই যে বইমেলা "আবেগ আর চেতনা" সেটা কি একই রকম? এখন কোনটা ডমিনেন্ট? এই মিথোজীবিতার সাথে পেরে উঠছে? কোথায় পারছে? কোথায় পারছে না?
শুনতে অদ্ভুত শোনালেও আমি মনে করি লেখক পাঠকদের একটা বিরাট অংশ আমার দেখা দু দশক আগের "আবেগ আর চেতনা"-র সাথে এখনো যুক্ততা বোধ করেন। সেটার আরো বহুরকমের বিকাশ ঘটেছে বলেই মনে করি। আর আমি সেটার উপরই বাজি ধরছি আরকি। এই দশকে মানুষ প্রচুর পড়ছে, ফেইসবুক অনলাইন ছাড়াও প্রচুর পড়ছেন। ইসলাম ও আইডেন্টিটিটি অনুসন্ধান এবং প্রথাগত সেক্যুলার আর রিলিজিয়াস এই বিষয়ক আত্মপরিচয় ফয়সালার জন্যও বিশেষ পাঠক গোষ্ঠীকে পাওয়া গেছে যাদের আগে দেখা যেতোনা। মিথোজীবিতা; বুক ইন্ড্রাস্ট্রী যেহেতু মার্কেট ড্রিভেন, সে এটার পুরোপুরি সুবিধা নিচ্ছে সেই সাথে লেখকেরাও। যেখানে পেরে উঠছে না তার একটি আপাত দৃশ্যমান কেইস হল তিন বইয়ের ব্যান। তবে সেটা অর্থনৈতিকভাবে অলাভজনক কিনা সেটা ভেবে দেখার অবকাশ আছে। সামনেই বোঝা যাবে।
যদিও আমার কাছে মূল যে সমস্যা তা হল স্টেট গাইডেড বা অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক এর বাইরে বইমেলার একটা নিজস্ব স্পেস আর স্বর সমূহ ছিল। আপনি হয়ত আর্গু করবেন এই বইমেলাতেও কত মানুষ সেই আবেগেই নিজের টাকা দিয়ে বই ছাপিয়ে চলেছেন। আমি বলব, ঠিক আছে, তবে সেই মানুষেরাও লেখকেরাও এখন অনেক সতর্ক আর হোমোজেনাস হতে বাধ্য হয়েছেন। এখানে তারা টাকা দিয়েও ক্রমশ পেরে উঠছেন না। নিজের নিজের বাবলে রয়েছেন। লেখকেরা আর প্রতিবাদ করছেন না। তার নিওলিবারেল সেল্ফ তাকে শুধু নেগোশিয়েট করতে বলছে। তাতে সবদিক দিয়েই লাভ। তবে বইমেলার স্পিরিটের যে বড় ক্ষতি।
৬.+৭. এই যে মডার্ণ স্টেটে দাবীকৃত গণতন্ত্র আর ইন্ডিভিজুয়াল চয়েসের মিথ সেটা তো অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কেবল ক্রেতার "স্বাধীনতায়" পর্যবসিত হয়েছে। তবে আবার আপনার স্টেট এমন যে ক্রেতা হিসেবেও আপনার ক্ষমতা ও অধিকার অন্যান্য নিওলিবারেল স্টেটের তুলনায় সামন্যই। ফলে ক্রেতা হিসেবেও আপনি দুর্বল।
মার্কেট তো এখন আপনার চেয়েও আপনাকে ভালো বোঝে, চিন্তা ভাবনার ক্ষমতাতো দেখি অনেক ক্ষেত্রেই দূর্বল। সেই প্ররিপ্রেক্ষিতে “বই কিনে কেউ দেউলিয়া হয়না” র দরকার নেই। ক্রেতার বোধ জাগালেই দেখা যাবে প্রচুর মানুষ বই কিনছেন। যদিও এখানে ক্রেতার অধিকারও নাগরিকের মত সামান্যই। কোথাও যে একটু বিতর্কিত বই নিয়ে হল্লা করবে নিরাপদ স্পেসে সেটারও জো নেই। সবদিক দিয়েই নজরদারির মধ্যে আছি এটা মার্কেটের জন্য ক্ষতিকর। আশাকরি প্রকাশকরা সেটা বুঝতে পারবেন। সেটা আপনার বিক্রীর স্বার্থেই ক্রেতাকে শক্তিশালী করে তুলতে হবে। এই দায়টা আপনাদের।
৮. আপনার স্টেট কেমন? আশা করি এর উত্তর আপনারা নিজেরাই বের করে ফেলেছেন।
নুক্তাঃ ২০২৩ এর বইমেলা নানান দিক দিয়ে পরিবর্তন আনা শুরু করবে বলে আমার আস্থা। আপনারা নিশ্চয়ই যূথবদ্ধতার প্রয়োজন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন।
এই যে সারাক্ষণ আমার পুরষ্কার তার পুরষ্কার, আমার লেখাই ভালো বাকীদের কিছু হয়না। আমার দল, ভক্ত শ্রেণী বানাবো। জনপ্রিয়তাবাদের পুরো ফল নিবো আবার প্রতিবাদী বলেও নিজেরে বেচবো। এসব আত্মঘাতী হয়েছে।
অচিরেই দেখবেন গত দশকে পাওয়া জনপ্রিয়তা হঠাৎ করে অজনপ্রিয় হতে শুরু করেছেন। বাজার হারাচ্ছেন। ক্রেতারা একটু শক্তিশালী হয়ে উঠলেই দেখবেন এমনটা ঘটছে। তবে আমি শুধু ক্রেতা হিসেবে শক্তিশালী হতে বলছি না, বুঝবেন আশাকরি। পাঠক হিসেবে শক্তিশালী হন, স্পিরিটকে উচ্চ করুন, এই কামনা রইল। সেই পাঠকের জন্য লিখেও মজা লাগবে। একুশ মানে মাথা নত না করা, সেই ডাক তো ভীষণ উচ্চ এক স্পিরিট।
শরৎ চৌধুরী, ঢাকা ১লা ফেব্রুয়ারি ২০২৩।
সূত্র: Click This Link
২| ০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ বিকাল ৩:৩৫
রাজীব নুর বলেছেন: বাংলা একাডেমিটা ঢেলে সাজানো দরকার। সেখানে দক্ষ ও যোগ্য লোক নিয়োগ করা দরকার।
©somewhere in net ltd.
১| ০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ১২:০২
মহাজাগতিক চিন্তা বলেছেন: একুশ মানে মাথা নত না করা এ চেতনা চির জাগ্রত থাকুক আমাদের মনে।