নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শ্রেষ্ট হওয়ার জন্য শেষ হচ্ছি।।সেই ছোট থেকেই বেড়ে চলেছি আমি তাও জানি এই বেড়ে উঠার ফলেই এক সময় নিংশ্বেষ হয়ে যাব।আকাশে চাঁদ দেখে অবাক হই না, কিভাবে জুলে আছে ঐ শূন্যে! আমি অবাক হই চাদটাকে কে এত সুন্দর নিয়মে বেধে দিয়েছে।

ব্লগার শান্ত

শ্রেষ্ট হওয়ার জন্য শেষ হচ্ছি

ব্লগার শান্ত › বিস্তারিত পোস্টঃ

নীরব পরাজয়……………

০৩ রা ডিসেম্বর, ২০১৪ ভোর ৬:৩৫

আকাশটাতে হালকা মেঘ ভাসছিলো। নীল আকাশের মাঝে সাদা কিছু মেঘের ভেলা। সময়টা শরৎ
ছিলো কিনা মনে নেই। তবে সেই মেঘযুক্ত অথবা রৌদ্র বিলাসীত সোনালী বিকেল গুলোর
কথা আজও মনে আছে। জ্বল জ্বল করে জ্বলছে হৃদয়ের মধ্যে।
সেই কত বিকেল একসাথে টিএসসি হয়ে ঘুরে আমাদের প্রিয় জায়গা টিতে একসাথে বসতাম। একটু
হাতধরাধরী। একটু অভিমানী। কিংবা রাগ অথবা খুনসুটি। পরক্ষনে হাসতে হাসতে মিশে যেতাম
একত্রে।
সে আমার সেইম ব্যাচ ছিলো। ভার্সিটির একই ডিপার্টমেন্টের স্টুডেন্ট ছিলাম আমরা।
ও হ্যাঁ, পরিচয়ই তো দেয়া হয়নি। আমি অর্ণব। আর যার কথা বলছি তার নাম হৈমন্তি।
রবীন্দ্রনাথের হৈমন্তি। হ্যাঁ ঠিক ধরেছেন।
হৈমন্তি আমার সেই হৈমন্তি গল্পের মতই শুভ্র, নিশ্চুপ এবং পবিত্র। মেয়েটা আমার একটা অংশ
হয়ে ছিলো। আমার জীবনের একটা অংশ।
খুব লাজুক ছিলো হৈমন্তি। কথা কম বলতো। মুচকি হাসতো। হাসতে হৈমন্তির গালে টোল পড়তো।
মিষ্টি এক লাজুকতা অপরূপ মহিমা ছিলো আমার হৈমন্তি। তার চোখ জোড়া ছিলো দীঘল। চুল
গুলো সিলকি আর ঝকঝকে। এলো বাতাসে তার চুল গুলো যখন আমার মুখে এসে লাগতো মিষ্টি এক
সজীব সুগন্ধে বিলাসীত হতাম। বারংবার।
একই ডিপার্টমেন্টের স্টুডেন্ট আমরা। সেইম ব্যাচ। ভার্সিটির সকলের কাছে আমাদের মধুর
প্রেমের খবর জানা ছিলো। স্যারেরা আমাদের পাশাপাশি দেখে মুচকি হাসতেন। মনে মনে যেন
নীরবে সায় দিতেন।
ভার্সিটির শুরু থেকে আমাদের পরিচয়। পথচলা আর নিত্য দিনের সঙ্গী। প্রতিটা দিন আমি আর
হৈমন্তি সমভাবে উপভোগ করেছি। প্রতিটা মুহূর্ত সাথে থেকেছি। হৃদয়ের ভাষা উপলব্ধি করেছি।
হৃদপিন্ডের প্রতেকটি স্পন্দন সমভাবে শুনেছি। সারাটা ভার্সিটি জীবন আমার হৈমময়
হয়ে কেটেছে।
আমার জীবনের একটি অংশের নাম হয়ে গিয়েছিলো " হৈমন্তি " নামটি।
ভার্সিটির জীবন শেষে হৈমন্তি আর বেরিয়ে এলাম। একসাথে বুড়ো বুড়ি হবার অভিপ্রায়।
চাকরির জন্য হন্য হয়ে খুঁজছি। হৈমন্তির বয়স গড়িয়ে যাচ্ছে। বিয়ে দেবার জন্য তার
বাসা থেকে উঠে পড়ে লেগেছে। হৈমন্তির বিয়ে হয়ে যাবে অতিশীঘ্রই। আমি রাস্তায় রাস্তায়
ঘুরে ঘুরে জুতার তলা ক্ষয়ে ফেলছি।
হৈমন্তির জন্য কিছু করতে হবে। আমি অর্ণব। হৈমন্তির অর্ণব। আমার হৈম অন্য
কারো হবে তা স্বপ্নেও ভাবতে চাইনা।
আর হৈমন্তি নীরবে সব সহ্য করে যাচ্ছে। খুব ভালো ভালো পাত্রপক্ষ আসছে হৈমর জন্য। হৈমর
বাবা ব্যস্ত হয়ে উঠেছেন। মেয়ের বিয়ে ঠিক করার জন্য।
নাহ.. চাকরি আমার জুটলো না। হৈমন্তির বিয়ে হয়ে গেল খুবব বড় এক ধনকুবের সাথে।
বিয়ের আগে হৈমন্তি আমার হাত দুটো ধরে বলেছি
~ অর্ণব। আমি হারাতে চাইনা।
সময় এসে গেলো। হৈমন্তির বিয়ে ঠিক হলো। বিয়েও হয়ে গেলো। আমি ছাপোষা এক ছোট
চাকরি করে দিন যাপন করি।
সামান্য কিছু মাইনে দিয়ে দিন চলে যায়। বিয়ে শাদির কথা চিন্তা করি নি এখনো। করার
ইচ্ছে টাও মরে গেছে।
কত সব সোনালী বিকেলের গল্প আর কত সব বুনিত স্বপ্ন হাওয়ায় মিশে গেছে। আমার হৈমন্তি আর
আমার কাছে নেই। অন্যকারো সংসারে মিশে গেছে। হৈমন্তি আমার হারিয়ে গেছে।
হৈমন্তির বিয়ের ৪ বছর পর মায়ের জোরাজোরি তে আমার বিয়ে হয়। বিয়ে করার পরও
আমি সুখী হতে পারি নি। রাতের অন্ধকারে হৈমন্তি বলে চিৎকার করে ঘুম থেকে উঠি। আমার
বউয়ের মাঝে হৈমন্তির ছায়া অনুভব করি।
শেষে বাস্তবতার কাছে হার মানি। সংসার যুদ্ধে লেগে পড়ি। সকাল ৯ টা হতে বিকেল ৫
টা পর্যন্ত অফিস। বাসায় এসে ক্লান্ত দেহে লুটিয়ে পড়া। আর অবসাদ। যান্ত্রিক জীবনের
চাপাকলে দিন দিন পিষ্ঠ হচ্ছি আমি।
হৈমন্তি কে হারিয়েছি প্রায় ১২ বছর হয়েছে।
এর মাঝে আমার ২ টা সন্তান হয়েছে। দুটো মেয়ে। একজনের নাম তন্দ্রাবতী আরেক জনের নাম
নিশীথিনী।
নাম দুটো খুব পছন্দের। হৈমন্তির পছন্দ করা নাম। জানি না হৈমন্তি কেমন আছে।
আশা করি ভালোই আছে।
সেদিন অফিস শেষে লোকাল বাসের জন্য দাড়িয়ে আছি। স্রোতের মত মানুষ হুমড়ি খেয়ে আছে।
বেশ সময় ধরে বাস এর জন্য দাড়িয়ে থাকার পর একটা সিগারেট জ্বালিয়ে ক্ষোভ মিটাচ্ছি।
তন্দ্রাবতী আর নিশিথীনির জন্য আজকে বারবী ডল আনতে হবে। নাহয় ঘরে ঢুকতে দেয়া হবে না।
একহাতে বাচ্চাদের পুতুল অন্যহাতে জ্বলন্ত সিগারেট আর কাঁধে অফিসগামী ব্যাগ। সময়
কেটে যাচ্ছে।
সিগন্যাল পড়লো রাস্তার মোড়ে। গাড়ি গুলো দাড়িয়ে আছে ঠায়। বেশ দামি একটা গাড়ি। লাল
রংয়ের কালো গ্লাসে ঢাকা। গাড়িটার দিকে তাকিয়ে আছি।
একটু পর জানালার কাঁচ খুলে গেলো। একজন মহিলা আমাকে হাত নেড়ে কিছু বোঝাতে চাচ্ছে। ভদ্র
মহিলার পাশে কোট - টাই পরিহিত এক লোক। হয়তো মহিলার স্বামী হবে।
চোখ টা আটকে গেলো। হ্যাঁ এ তো আমারই হৈমন্তি। অর্ণবের হৈমন্তি। স্বপ্নচারী হৈমন্তি।
রাস্তার সিগন্যাল ছেড়ে দিলো। গাড়ি গুলো শা শা করে ছুটে যাচ্ছে। হৈমন্তি মুখ ফুটে কিছু
বলতে পারছে না। গাড়ির জানালার বাহিরে হাত দিয়ে গোপনে কিছু বোঝাতে চাচ্ছিলো।
গাড়িটি হারিয়ে গেলো দৃষ্টিসীমার বাহিরে।
হৈমন্তি বেশ ভালো আছে। অনেক সুখে আছে। এতটা সুখ কোনদিনও হয়তো তাকে দিতে পারতাম
না। সুখে আছে হৈমন্তি। ভালো থাকুক হৈমন্তি।
সিগারেট টা শেষ হয়ে গিয়েছে। ফিল্টারের শেষপ্রান্তের গরম আগুন ঠোঁটে লেগেছে।
জ্বালা করছে ঠোঁট জোড়া। তার চেঢে বেশি জ্বালা করছে অন্তর টা।
পোড়া ঠোঁটে আরেকটা সিগারেট বসিয়ে দিলাম। ঠোঁটের ক্ষত শুখানোর চেয়ে অন্তরের
ক্ষতটা সারানো বেশি জরুরি।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.