![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
--এই চকলেট খাবা?
কথাটা শুনে একটু ঘুরে দাড়ায় মিতু।ওর
বয়সী একটা ছেলে দাড়িয়ে আছে হাসিমুখে।
মিতু মাথা নাড়িয়ে বলে,
--খাব।
--তুমি আবার বন্ধু হবে?বন্ধু হলে রোজ
চকলেট খাওয়াব।
--হ্যা,হব।কিন্তু
তোমাকে তো আগে দেখি নি?
--আমি নতুন স্কুলে ভর্তি হয়েছি।তাই
দেখে নি।
--তোমার নাম কি?
--শুভ্র,তোমার?
--মিতু।
শুভ্র পকেটে হাত ঢুকায়।তিনটা চকলেট
বের করে পকেট থেকে।একটা মিতুর
হাতে দিয়ে বলে,
--এই নাও।
মিতু হাসিমুখে নতুন বন্ধুর দেওয়া চকলেট
গ্রহন করে।তারপর
দুজনে বসে মজা করতে থাকে।কলম
দিয়ে সাদা পাতায় আকিবুকি আকে।
একটা চকলেট বাকি আছে আর।শুভ্র বলে,
--আর একটাই চকলেট বাকি আছে।
এটা তুমিই খাও।
--না,তুমিই খাও।
--না,এটা তোমাকে খেতে হবে।
শুভ্রর জোরাজুরিতে চকলেটটা নেয়
মিতু।তারপর
অর্ধেকটা কামড়ে নিয়ে বাকি অর্ধেকটা শুভ্রর
দিকে বাড়িয়ে দেয়,
--আমি অর্থেক নিলাম,তুমি অর্ধেক নাও।
--না,পুরোটাই তুমি খাও।
--বন্ধুত্বের মাঝে সব সমান হয়।তাই এ
অর্থেকটা তোমাকে নিতে হবে।
এবার নেয় শুভ্র।তারপর আবার
চলে সাদা পাতায় আকিবুকি আকার
খেলা
.
কিছুক্ষণ পর ক্লাস স্কুল ছুটি হয়।ক্লাসরুম
থেকে নতুন বন্ধুটির সাথে বের হয় শুভ্র।
--মিতু,আমার সাইকেল আছে।
তুমি যাবে আমার সাথে?
--হুমম।কিন্তু আজ তো আম্মু
আমাকে নিতে আসবে।
--ও,তাহলে কাল
থেকে আম্মুকে আসতে মানা করে দেবে।
আমরা দুজন এক
সাথে স্কুলে যাওয়া আসা করব।
--ঠিক আছে।
শুভ্র সাইকেলে করে বাসায় আসা শুরু
করে।মিতু অপেক্ষা করে ওর আম্মুর জন্য।
.
শুভ্র আর মিতু দু জনেই তৃতীয়
শ্রেনিতে পড়ে।কয়েকদিন হল শুভ্রর
পরিবার এখানে এসেছে।ভাড়া বাসায়
উঠেছে মিতুদের বাসার পাশের
বাসায়।স্কুল থেকে বাসার দুরুত্ব এক
কিলোমিটার। শুভ্রর কোন বন্ধু
এখানে নেই,তাই মিতুর সাথে বন্ধুত্ব
করল।
.
পরদিন স্কুলে এসেই মিতু বলে,
--চকলেট এনেছ?
--হুমম।
--তাহলে দাও।
শুভ্র পকেট থেকে তিনটা চকলেট বের
করে।আগের মতই ভাগ করে চকলেট খায়।
ছুটি হলে ছোট্ট সাইকেলটা নিয়ে বের
হয়। মিতু এর আগে সাইকেলে চড়ে নি।
তাই ভয় পায় খুব।শুভ্র
ওকে সাইকেলে বসিয়ে নিজে চড়ে বসে।
পেছন থেকে শক্ত
করে জড়িয়ে ধরে মিতু।সাইকেল
চলতে থাকে,কিন্তু মিতু
শুভ্রকে ছাড়ে না।
.
আজ এভাবে কেটে গেছে প্রায় সাত
বছর।কিন্তু মিতু এখনো ছাড়ে নি শুভ্রকে।
এখনো রোজ তিনটে চকলেট ভাগ
করে খায় ওরা দুজন।দু জন
এসএসসি পরীক্ষা দেবে এবার।কিন্তু
ওদের ঘনিষ্ঠতা দেখলে মনে হয়
ওরা এখনো সেই তৃতীয় শ্রেনিতে পড়ে।
.
দু জনে এসএসসি পরীক্ষা দেয়।এখন
মোটামুটি ফাকা।কোন ব্যস্ততা নেই।
সারাদিন চলে ওদের খুনসুটি।
ঘনিষ্ঠতা আরো বাড়ে দু জনের মধ্যে।
.
আজ এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ হবে।
সকাল হতেই চিন্তিত
মুখে বসে আছে মিতু।শুভ্র আসে এমন সময়,
--কি ব্যাপার মিতু,মন খারাপ
করে বসে আছিস কেন?
--ভয় করছে শুভ্র।
--দুর,ভয়ের কি আছে।
তারপরও মিতুর ভয় দুর হয় না।শুভ্র বলে,
--তুই বসেই থাক,আমি রেজাল্ট
নিয়ে আসছি।
বলেই চলে যায় শুভ্র।মিতু আগের মতই
বসে থাকে।নড়াচড়া যেন
ভুলে গেছে ভয়ে।কিছুক্ষণ পরেই
হাফাতে হাফাতে শুভ্র এসে হাজির।
--মিতু,তুই এ প্লাস পেয়েছিস।
--নিজের রেজাল্ট শুনে খুশি হয়
না মিতু।দ্রুত জিজ্ঞেস করে,তোর
রেজাল্ট কি শুভ্র?
--আমারটা বাদ দে।
তুই এ প্লাস পেয়েছিস,এতেই আমি খুসি।
--বল না শুভ্র,তোর রেজাল্ট কি?
--আমি ফেল করেছি মিতু।
কথাটা শুনেই হাউমাউ
করে কেদে ওঠে মিতু।ওর
কান্না শুনে বাড়ির সবাই বের
হয়ে আসে।শুভ্র দাড়িয়ে শুধু মিতুর
কান্না দেখে।সবাই
সান্ত্বনা দেয়,কিন্তু মিতুর
কান্না থামে না।এমন সময় শুভ্রর
বাবা মা মিষ্টির প্যাকেট
হাতে হাজির হয় ওখানে।
এমন অবস্থা দেখে শুভ্রর বাবা জিজ্ঞেস
করে,
--কি হয়েছে মা,কাদছ কেন?
কাদতে কাদতে মিতু বলে,
--শুভ্র ফেল করেছে।তাই
শুভ্রর বাবা অবাক হয়ে বলে,
--কে বলেছে শুভ্র ফেল করেছে?ও তো এ
প্লাস পেয়েছে।
কথাটা শুনে কান্না থামায় মিতু।
দেখে মুচকি হাসছে শুভ্র।আচমকা সবার
সামনেই শুভ্রর গলাটা জড়িয়ে ধরে মিতু।
কাদতে কাদতে বলে,
--বান্দর,তুই মজা করেছিস আমার সাথে??
--শুভ্র বলে,হ্যা...
মিতু
এলোপাতারি মারতে থাকে শুভ্রকে।
ওদের কান্ড
দেখে হো হো করে হেসে ওঠে সবাই।
.
শুভ্র ভাবে,মিতু কত ভালোবাসে ওকে।
ফেল করার কথা শুনে কি কান্নাই
না করল।এই মেয়েকেই ওর চাই।তারপর
আবার ভাবে,মিতু তো ওকে বন্ধু
হিসেবে ভালোবাসে।তারপরও মিতুর
প্রেমে পরে শুভ্র।
.
এসএসসির পর এইচ এইচএসসি।তারপর
দুজনে ভর্তি হয় অনার্সে।এখন ওরা দু
জনে বেশ বড় হয়েছে।কিন্তু ওদের
সম্পর্কটাও আগের মত আছে।শুভ্র মিতুকে খুব
ভালোবাসে।কিন্তু কোনদিন বলে নি।
দুজনে কলেজের
মাঠে বসেসে আড্ডা দিচ্ছিল।হঠাৎ শুভ্র
জিজ্ঞেস করে,
--মিতু,তুই কাউকে পছন্দ করিস?
--কেন রে?হঠাৎ এই প্রশ্ন?
--এমনিই।বল না?
--না,কাউকে পছন্দ করি না।
--ও আচ্ছা।
--তুই কাউকে পছন্দ করিস?
--হুমম।
--কে মেয়েটা?
--এখন বলব না।সুযোগ পেলে তোকে বলব।
--ঠিক আছে।এখন চল, বাসায় যাই।
--চল।
দুজনে বাসায় চলে আসে।শুভ্র
বাড়িতে আসতেই দেখে মিতুর
বাবা মা ওদের বাসায়।শুভ্র সালাম দেয়
ওদের।তারপর নিজের রুমে চলে যায়।
একটু পরে,শুভ্রর মা ওর রুমে আসে।
--শুভ্র,একটা খুশির খবর আছে।
--কি খবর মা?
--মিতুকে বিয়ে দিয়ে এই বাড়িতেই
আনতে চাই।
মায়ের
কথা শুনে আনন্দে লাফিয়ে ওঠে শুভ্র।
উত্তেজনা লুকিয়ে রেখে বলে,
--আমাকে কি মিতু বিয়ে করবে?
--তোকে কেন বিয়ে করতে যাবে?
বিয়ে তো তোর বড় ভাই অভ্ররের সাথে।
কথাটা শুনে বুকে একটা মোচর
দিয়ে ওঠে।কোন রকমে শুভ্র বলে,
--তাই নাকি,খুব ভালো তো।
--হুমম।বলে মা চলে যায়।
শুভ্র দরজাটা বন্ধ করে কাদতে থাকে।
কি ভাবল, আর কি হলো।এক মুহুর্তে ১০
বছরের
ভালোবাসাটা ভেঙ্গে যাওয়ার
কষ্টটা সহ্য করা শুভ্রের কাছে খুব কঠিন
মনে হল।
.
সন্ধ্যায় মিতুদের বাড়িতে যায় শুভ্র।
দেখে মিতু
দুহাতে মেহেদী দিয়ে বসে আছে।শুভ্র
গিয়ে পাশে বসে,
--কি রে শুভ্র,তোর মন খারাপ?
--না তো।
--দেখ তো মেহদীটা কেমন হয়েছে?
--খুব সুন্দর।
--খাবি?
--কি?
--চকলেট।
--কোথায় পেয়েছিস?
--তোর
ভাইকে কিনে আনতে বলেছিলাম,তাই
একটু আগে দিয়ে গেল।
--ও,তুই খেয়ে নে।আমি খাব না।
--তোর ভাবি হলে তুই
আমাকে কি বলে ডাকবি শুভ্র?
--আমি থাকলে তো ডাকব।
--থাকবি না মানে?কই যাবি তুই?
--এমনি বললাম।থাক,বিয়ের আগে বোধহয়
আর দেখা হবে না।
বলেই চলে আসে শুভ্র।
.
একটু আগে শুভ্রর ভাই অভ্রের
সাথে বিয়ে হয়েছে মিতুর।মিতু বাসর
ঘরে বসে আছে।শুভ্র
আচমকা ঘরে এসে ঢোকে।
--কি রে শুভ্র,কোথায় ছিলি তুই?
--মিতু,এই নে চকলেট।বলে তিনটা চকলেট
মিতুর হাতে দেয় শুভ্র। দিয়েই
ফিরে আসার জন্য পা বাড়ায়,পেছন
থেকে ডাকে মিতু,
--শুভ্র,তুই চকলেট খাবি না?
--না।আজ থেকে ভাইয়ার সাথে চকলেট
খাবি,ভাগ করে।
বলেই চলে আসে শুভ্র।পরদিন
সকালে মিতু সারা বাড়ি খুজেও পায়
না।ওর ঘরে এসে বালিসের
নিচে একটা চিরকুট পায়,লেখা,'মিতু,
আমি চলে গেলাম।
আমাকে খুজতে মানা করিস,তুই ও খুজিস
না।আর হ্যা,তোকে বলেছিলাম
না,আমি একজনকে ভালোবাসি,ওকে দেখতে চাস?
একটা ডানদিকে তাকও।
মিতু ডানদিকে তাকায়,আয়নায় নিজের
ছবিটা দেখতে পায়।বিছানায়
বসে পরে ধপ করে।চোখ
দুটো জলে ভিজে যায় মিতুর।
ফুপিয়ে ফুপিয়ে কান্নার শব্দ বাইরের
কেউ শুনতে পায় না...!
২| ২১ শে জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ১০:১৮
ব্লগার শান্ত বলেছেন: সবকিছুই কোন না কোন একটা আবেগের বশিবূর্ত হয়ে…………
©somewhere in net ltd.
১|
২১ শে জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ১০:০৩
নূসরাত তানজীন লুবনা বলেছেন: মানুষ যে কেন এমন ভুল করে কেনই বা ভয় পায় এত !