নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শ্রেষ্ট হওয়ার জন্য শেষ হচ্ছি।।সেই ছোট থেকেই বেড়ে চলেছি আমি তাও জানি এই বেড়ে উঠার ফলেই এক সময় নিংশ্বেষ হয়ে যাব।আকাশে চাঁদ দেখে অবাক হই না, কিভাবে জুলে আছে ঐ শূন্যে! আমি অবাক হই চাদটাকে কে এত সুন্দর নিয়মে বেধে দিয়েছে।

ব্লগার শান্ত

শ্রেষ্ট হওয়ার জন্য শেষ হচ্ছি

ব্লগার শান্ত › বিস্তারিত পোস্টঃ

____#_অবশ_অনুভূতি

০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সকাল ৮:৪৪

লোকটার চুল উশখো খুশকো। মাথায় অনেক দিন আগের পুরান
একটা কাউবয় স্টাইলের হ্যাট। গায়ে ময়লা একটা কোট।
হাতে একটা হাত নষ্ট ঘড়ি। পায়ে চামড়ার বুট জুতা।
লোকটা চায়ের দোকানে বসে আছে গত ৩ ঘন্টা যাবৎ। ৩
ঘন্টায় সে দুই কাপ চা খেয়েছে। কেউ লোকটাকে পাগল
বলে ভাবলে ভুল হবে না। দেয়ালে হেলান দিয়ে উদাস
ভঙ্গিতে আকাশের দিকে মুখ করে তাকিয়ে আছে।
আমি প্রতিদিন সন্ধ্যায় স্টুডেন্ট পড়াতে এ
রাস্তা দিয়ে যাই। যাওয়ার আগে দোকানে চা খেয়ে যাই।
আসার সময় আবার চা খাই। আগে সিগারেট খেতাম। এখন আর
খাই না। ছেড়ে দিছি। সিগারেট খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য খুব
ক্ষতিকর। আর প্রিয় মানুষের অনুরোধ গুলো রাখাটাও
একটা দায়িত্ব কিনা,? তাই হয়তো।
স্টুডেন্ট পড়াতে যাবার সময় লোকটাকে উদাস
ভঙ্গিতে তাকিয়ে থাকতে দেখেছি। এসেও দেখি একই
ভঙ্গিতে আকাশে তাকিয়ে আছে। দোকান
ওয়ালা লোকটাকে পাগল ভেবে কিছু বলতেছে না। ভীরু ভীরু
চোখে লোকটার দিকে তাকাচ্ছে। পাগলের সাথে কথা বলার
সাহস খুঁজে পাচ্ছে না।
লোকটাকে দেখে ব্যাপাক আগ্রহ জমেছে আমার।
উঠে গিয়ে তার পাশে গিয়ে বসলাম। কিছু জিজ্ঞেস করার
আগে একটা ভারী হাত আমার কাঁধে। গম্ভীর
একটা কন্ঠে লোকটা বললো_
~ কিছু বলবে আমাকে.?
দাঁত বের করে একটা হাসি দিলো। দাঁত গুলো হলুদ। অনেক
দিন ব্রাশের ঘষা লাগে নি।
~ কাউকে খুঁজতে এসেছেন.?
~ হুম।
~ কাকে, জানতে পারি.?
~ তৃণা কে।
~ এখানেই থাকে.?
~ এইতো এ বিল্ডিং এ থাকতো।
~ তো এখানে উদাস ভঙ্গিতে বসে আছেন যে.?
~ তৃণা বারান্দায় এসে আমাকে সেদিনের মত ইশারা দিবে।
ভেতরে আসতে বলবে। ছাদে গিয়ে কথা বলবো আমরা।
~ আপনার ভালোবাসা টা তো দারুণ মিষ্টি।
~ হেঁহেঁ, এইতো।
~ ভালো লাগলো আপনাদের ভালোবাসা দেখে।
~ ওই তো তৃণা ডাক দিয়েছে ছাদে যাবার জন্য। ওই যে চার
তলায়। দেখেছো তুমি.?
~ দেখতে পাই নি ঠিকই। তবে পাগলের সাথে তর্ক করার কোন
ইচ্ছা আমার ছিলো না। নীরবে সাঁই দিয়ে দিলাম।
লোকটা আমাকে ছাদে যাবার অনুরোধ জানালো।
পেছনে পেছনে লোকটাকে অনুসরন করছিলাম।
হাটতে হাটতে বিল্ডিং এর ছাদে গিয়ে উঠলাম। দারোয়ান
টা চুপ করে ছিলো। লোকটাকে দেখে সালাম দিলো।
ছাদ টা বিশাল বড়। ছাদের কর্ণারে একটা দোলনা। বিভিন্ন
ফুলের গাছ যত্ন সহকারে টবে লাগানো রয়েছে।
লোকটা দোলনায় গিয়ে বসলো। আমি পাশে একটা টুলের উপর
বসে থাকলাম। লোকটার কথা গুলো শুনবো বলে।
গলা খাকারি দিয়ে বলতে শুরু করলেন :
আমি আকাশ । ৬ বছর আগে এ বাসাতে থাকতাম। তখন ইন্টার
পাশ করে ভালো ভার্সিটি তে ভর্তি হয়েছি।
বাসাটা আমাদের নিজস্ব। আমরা দোতলায় থাকতাম। তিন
তলায় ইন্টার পড়ুয়া এক মেয়ের ফ্যামিলি থাকতো। মেয়েটির
নাম ছিলো তৃণা।
লোকাল এরিয়া থেকে কিছুটা দূরে বাসা।
মেয়েটাকে প্রাইভেট পড়াতাম আমি। সপ্তাহে ৪ দিন। ২
ঘন্টা করে।
পড়াতে পড়াতে কবে যেন নিজেই পড়ে গেলাম। হ্যাঁ,
মেয়েটির প্রেমে পড়ে গেলাম।
মেয়ের আড়চোখে তাকানো। মাঝে মধ্যে বইয়ের
মধ্যে অথবা ছোটখাটো চিঠি খুঁজে দিতো আমার শার্টের বুক
পকেটে।
মাঝেমধ্যে আমরা ছাদে গিয়ে দেখা করতাম।
একসাথে শীতল বাতাসে বসে থাকতাম। রাতের বেলায় চাঁদ
দেখতাম। খুব ভালোবাসতাম তাকে। খুব খুব
বেশি ভালোবাসতাম।
আমাদের ছাদে রেলিং ছিলো না। এখনকার মত এত
পরিপাটি ছিলো না ছাদ টা।
নতুন বিল্ডিং এর নতুন ছাদ। পুরোপুরি কমপ্লিট হয়নি।
সেখানে দুজনে গা ঘেষে দাড়িয়ে থাকতাম। আকাশে চাঁদ
দেখতাম, সন্ধ্যায় শুকতারা দেখতাম।মৃদুবাতাসে হালকা গুন
গুন করতাম। যদিও আমার গলা তেমন
ভালো না তবে তৃণা আমার গান শোনার জন্য সবসময় ব্যাকুল
হয়ে থাকতো।
শ্রাবনের এক সন্ধ্যায় তৃণার সাথে ছাদে বসে বসে গল্প
করতেছিলাম । আকাশ মেঘলা ছিলো।
হালকা বৃষ্টি হচ্ছিলো আর সাথে মনমাতানো শীতল হাওয়া।
শরীরের রন্ধ্রে রন্ধ্রে মিশে গিয়েছিলো শীতল বাতাসের
ছোঁয়া। বাতাসের সাথে একাকার হয়ে ছিলো আমার তৃণা।
হঠাৎ, ঝুম বৃষ্টি নামতে শুরু করলো। দুজনেই বৃষ্টিতে ঠায়
দাঁড়িয়ে ছিলে। এক সাথে বৃষ্টি বিলাসিত হচ্ছিলাম।
সে দিন টা খুব আনন্দের ছিলো।
মাথার এই কালো হ্যাট টা সেদিন মাথায় ছিলো।
বাতাসে হ্যাট টা দূরে চলে গিয়েছিলো। কি মনে করে যেন
তৃণা হ্যাট টা তুলতে গেলো। দীর্ঘদিনের
জমে থাকা শেওলাতে ফস করে একটা শব্দ হলো :
আকাশশশশ………… বলে চিৎকার তৃণা শেওলাতে পেছল
খেয়ে ৪ তলা বিল্ডিং থেকে নিচে পড়ে গেলো। আমার
তৃণা আমার চোখের সামনে লাশ হয়ে গেলো।
নিচে তৃণার রক্তাক্ত নিথর দেহ পড়ে ছিলো।
হাতরাতে লাগলাম তৃণার হাত, চোখ,মুখ। তৃণা শুয়ে ছিলো।
তার মাথার দুধার দিয়ে অনেক রক্ত ঝড়ছিলো।
চুপ করে আছে আকাশ। আর কিছু বলতে পারছে না। তার দুচোখ
দিয়ে পানি ঝড়ছিলো। চাঁদের মৃদু আলোতে আকাশের
কান্না ভেজা করুন নিঃশব্দের আর্তনাদ শোনা যাচ্ছিলো।
চোখ দুটো ভিজে এলো আমার। কি বলে আকাশ
কে শান্তনা দিবো সে ভাষা আমার জানা নেই। শান্তনার
কোন সঠিক ভাষা ও নেই হয়তো।
আকাশের ঘাড়ে হাত রেখে তাকে শান্তনা দিচ্ছিলাম।
নিচের দিকে মুখ করে চোখের অশ্রু বিসর্জন দিচ্ছিলো সে।
দমকা হাওয়ায় আকাশের হ্যাট টা উড়ে নিচে পড়ে গেলো।
ওটা ধরতে গিয়ে ইটের সাথে হোঁচট খেয়ে ধপ করে চোখের
সামনে চার তলা থেকে মাটিতে পড়ে গেলো আকাশ।
রেলিং এ মাথা ঝুকিয়ে দেখি, আকাশের রক্তাক্ত নিথর
দেহ পড়ে আছে।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সকাল ৯:০৭

নিলু বলেছেন: লিখে যান

২| ০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সকাল ১১:২৫

ব্লগার শান্ত বলেছেন: ধন্যবাদ নিলু…………
তোমার নামটা অনেক সুন্দর ©

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.