নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

চিন্তায় মুক্ত - ভাষায় প্রকাশে ভীত , কল্পনার সীমানা মহাকাশ ছাড়িয়ে - বাস্তবতায় পা বাড়াই না সীমানার বাহিরে

শান্তনু চৌধুরী শান্তু

কবিতা লিখি , গল্প লিখি , মুভি রিভিউ লিখি , বুক রিভিউ লিখি , ফিচার লিখি । এই তো আমার লিখিময় জীবন ।

শান্তনু চৌধুরী শান্তু › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্প : ইরামণি

১৮ ই মে, ২০১৭ দুপুর ১২:২৩



আমাদের বাসার ২য় তলার আন্টিটা আমার খুব পছন্দের । প্রতিদিন বিকেলে আম্মুর সাথে আড্ডা দিতে চলে আসে । প্রতিবার সাথে থাকে পুডিং , আমসত্ব , পিঠা , ঘরে বানানো কেক ইত্যাদি । এরপর দুজন মিলে এলাকার বাদবাকি ভাবীদের সাথে দেখা করতে বের হন আর আমি খুব তৃপ্তি নিয়ে আন্টির খাবারগুলো খাই । খাওয়া ছাড়াও আন্টিকে অবশ্য পছন্দ করার আরো একটা কারণ আছে । আন্টি তার মেয়ে ইরামণি'র সাথে আমার বিয়ে দিবেন বলে কথা দিয়েছেন । তবে সমস্যা হলো মেয়ের বয়স মোটে ৮ বছর ।
.
আমার সমস্যা নেই । আন্টিকে বলে দিয়েছি দরকার হলে আরো ১০ বছর অপেক্ষা করবো তবুও ওকে বিয়ে করেই ছাড়বো । তবে ইরামণি আমাকে জামাই হিসেবে মানতে নারাজ । খোঁচাখোঁচা দাড়ি আর ইয়া বড় ভূঁড়িওয়ালা ছেলেকে বিয়ে করতে তার বয়েই গেছে । সে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে সাকিব-উল-হাসানের মত ক্রিকেটার ছেলেকে সে বিয়ে করবে । আমিও কম যাইনি । বলেছি - এই বেটি , আমাকে বিয়ে করবি নাকি তুলে নিয়ে যাবো ? উত্তর 'না' হওয়াতে তাকে রুম আটকে রেখেছি । শাসিয়েছি- যতদিন (!) সে আমাকে 'বিয়ে করবে' বলবে না ততদিন আমি তাকে ছাড়বো না ।
.
অবশেষে অনেক কান্নাকাটি করে আমাকে 'বিয়ে করবে' প্রমিস করে রক্ষা পেলো । হুশিয়ারী দিলাম । প্রমিস না রাখলে তুলে নিয়ে আসবো । এরপর ছোট ছোট টুকরা করে ক্রোকোডাইল বা টি-রেক্সকে খাইয়ে দিবো । বালিকার প্রতি এই অত্যাচারের কারণে আমার প্রতি তার গাল ফুলানো অভিযোগ নিয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরেছে । জাষ্টিস পায়নি । আম্মু হাসে । আন্টি হাসে । হাসে পুরো ঘর । বেচারীকে কেউ পাত্তা দিলো না ।
.
একদিন আন্টি এসে আম্মুকে জানালো ইরামণি এবারের পরীক্ষা দিবে না । যদি তাকে পরীক্ষা দিতে জোর করে তাহলে সে ছুরি দিয়ে হাত কেটে মরে যাবে । আন্টিও কম যান না । মেয়ে ইঁদুর হলে উনি ইঁদুর মারার ফাঁদ । উনি বলে সাফ সাফ বলে দিলেন - রান্নাঘরে আরো বড় ছুরি আছে তা দিয়ে হাত কেটে ফেলতে পারে আর তাতে যদি সে না মরে তাহলে আন্টি নিজেই তার হাতদুটো কেটে দিবে ! আম্মু আঁতকে উঠলো - কি বলেন ভাবী এই মেয়েটাকে একা ফেলে এসেছেন ! কোন অঘটন ঘটিয়ে ফেললে ! আন্টি হাসলেন - সে এই রকম কিছু করবে না আর সবচেয়ে বড় কথা আমি যেভাবে আমার মাকে ব্ল্যাকমেইল করেছি আমার পুঁচকি মেয়েটাও সেভাবে আমাকে ব্ল্যাকমেইল করবে ! কাভি নেহী।
.
আন্টির কথা শুনে আমার রক্ত ঠান্ডা হয়ে গেলো । তাড়াতাড়ি ছাঁদের দিকে দৌড়ে গেলাম । বিকেলে তার এখানেই থাকার কথা । আফটার অল আমার হবু বউ বলে কথা । ইরামণি সিঁড়িঘরে বসে আছে । মুখে কান্নার অবশিষ্টাংশ লেপটে আছে । বললাম -'কিরে আমার রাজকুমারী বউ , তুই নাকি হাত কেটে ফেলবি ?' ইরামণি জবাব দেয় না । পাশে গিয়ে বসতেই হু হু করে কেঁদে দিলো । তাকে কেউ ভালোবাসে না ইত্যাদি ইত্যাদি । আমি সার্টের হাতা দিয়ে তার চোখের পানি মুছে দিলাম । এই প্রথম খেয়াল করলাম তার গালে টোল পরে । বিশেষ করে বাম গালের টোলটা গভীর । তার মন ঠান্ডা করতে একটা গল্পের অবতারণা করলাম ।
.
যার সারমর্ম হচ্ছে - একদিন ঘোড়ায় চড়ে এক প্রিন্স চার্মিং তার কাছে আসবে । হাঁটু গেড়ে আংটি পরিয়ে এই মিষ্টি রাজকুমারীকে প্রোপোজ করবে । এরপর পড়ালেখা থেকে তাকে মুক্ত করবে ঘোড়ার পিঠে চড়িয়ে তেপান্তরের ওপারে নিয়ে যাবে । গল্পের উপস্থাপনা বোধহয় ভালোই ছিল । তার কান্না থেমে গেলো । কি বুঝলো কি জানি । লাজুক হেসে হঠাৎই আমার গালে একটা চুমো দিয়ে দৌড়ে নেমে গেলো !
.
.
.
- - ইরামণির সাথে এটাই আমার শেষ দেখা । পরেরদিন আমাকে কানাডার পথে উড়াল দিতে হয় । টরেন্টোর এক ইউনির্ভাসিটিতে আমার এডমিশন হয়েছিল । বিদায়লগ্নে তার সাথে দেখা হয়নি । মনের ভেতর কি যেন খচ খচ করছিলো । এরপর বহুদিন কেটে গেলো । বছর হিসেবে ৮টি বছর । ইয়ারপোর্ট , ইমিগ্রেশন পেরিয়ে বাসায় যখন পৌছি তখন আশপাশ আত্মীয় স্বজনদের চাপে মিছিলে পরিণত হয়েছে । বাসায় ঢুকতেই দেখি অনেকের সাথে আন্টি আর ইরামণি দাড়িয়ে । আন্টির হাতে নাস্তা । ইরামণির হাতে ফুল । সেদিনের ইরামণিকে এখন আর চেনা যায় না । সে এখন পূর্ণ যুবতী । এক ষোড়শী কন্যা । বহু বছরের পুরানো এক ভুল মনে পড়লো । আমি নিজের অজান্তে এক বালিকার সুপ্ত পদ্মফুলগুলো নাড়া দিয়ে ফেলেছিলাম ।
.
.
ইরিনার সাথে তার পরিচয় করিয়ে দিলাম । ইরিনা হলো আমার ক্লাশমেট কাম আমার এক্স প্রেমিকা কাম আমার স্ত্রী এবং সর্বপরি বর্তমানে আমার সন্তান ঈয়নের মা । ঈয়ন এখন ৭ বছর । হ্যাঁ প্রবাসের জীবনের শুরুতেই একটা অঘটন ঘটিয়ে ফেলেছিলাম । ছেলেটা ইরিনার মতই সুন্দর । ঠিক ছাঁচে ফেলে গড়া পুতুল । ইরামণি হাসলো । সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কল্যাণে এখন কিছুই লুকানো যায় না । সে ধীর পায়ে হেঁটে ঈয়নের সামনে এসে দাড়ালো । এরপর তার গাল টেনে বলল -
.
- এই বেটা , আমাকে বিয়ে করবি নাকি তুলে নিয়ে যাবো ?
.
ঈয়ন নতুন যুগের বালক । সঠিক উত্তরে টিক চিহ্ন দিতে দেরী করেনি । :-)
.
.


.
.
.
সমাপ্ত ।।

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ১৮ ই মে, ২০১৭ বিকাল ৫:৫০

রাতু০১ বলেছেন: ভাললাগা এবং শুভকামনা।

২২ শে মে, ২০১৭ বিকাল ৪:১৭

শান্তনু চৌধুরী শান্তু বলেছেন: ধন্যবাদ :)

২| ১৮ ই মে, ২০১৭ রাত ১০:৫৩

বিচার মানি তালগাছ আমার বলেছেন: কন্যা শিশুদের সাথে বিয়ে নিয়ে মজা করাটা মানসিক দিক থেকে ভালো নয়। আর ছোটদের সামনে বিয়ে ঠিক করার কথা ফান করেও অভিভাবকদের বলা উচিত নয়।

২২ শে মে, ২০১৭ বিকাল ৪:১৯

শান্তনু চৌধুরী শান্তু বলেছেন: মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ :)

৩| ২৫ শে মে, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:০৫

হাসান মাহবুব বলেছেন: :#)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.