ফেলে আসা ছেলেবেলা

২৬ শে জুন, ২০১৫ রাত ১২:১৪

" বৃষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর নদে এলে বান ,
বানের জলে ভাসল পুকুর ,ভাসল আমার গান . . ."
গ্রামে এসেই মনে হচ্ছে , বর্ষামুখর এই রাতে আমি ছেলে বেলাতে হারিয়ে গেছি ,কয়েক দিন যাবত অবিরাম বৃষ্টির কারনে চারপাশটা কেমন নিস্থব্ধ হয়ে আছে , কোথাও কেউ নেই , টিনের চালে অবিরাম টুং টাং টুং টাং বৃষ্টির শব্দ , ঝিঁ ঝিঁ পোকার অবিশ্রান্ত ডাক , হঠাৎ ঘুম ভাঙ্গা পাখির তীব্র আর্তনাদ , সবমিলিয়ে একটা মাতাল পরিবেশ । এই মূহুর্তে আমি যেন অতীতে ফিরে এসেছি ,আমার কেটে যাওয়া শৈশবে। মনে পড়ে সেই সোনালী ছেলেবেলা, বাবার রক্তচক্ষু এড়িয়ে সারাদিন বৃষ্টিতে ভিজে খেলার মাঠ দাঁপিয়ে বেড়ানো , আম কুড়োনো ,জমির আলে খর কুটোর বাধ দিয়ে চাই পেতে মাছ ধরা , ভর দুপুরে মায়ের হাতের খিচুরি সে তো অমৃত , সন্ধ্যা নামতেই ঠাকুমার গল্পে কথায় কথায় রাত ভোর কাটিয়ে দেওয়া ।আহ্ ,
ফেলে আসা ভালবাসা ,হারিয়ে যাওয়া ভালবাসা ।এই পৃথিবিতে বুঝি যা কিছু হারায় তা আর ফিরে আসে না , নয়তো ফিকে হয়ে যায় ।এ বড় বিচিত্র খেয়ালি জীবন , অদৃশ্য নিয়তির কঠিন বিধান ।হয়তো এই রাতটা আমাকে আবেগী করেছে , তবে এটাও সত্যি বহুদিন পর আজ ছেলেবেলার সেই স্মৃতি আমাকে ভীষন সুখী করেছে । অনুভূতি বলতে গেলে বন্দি পাখি আজ নতুন করে আকাশ দেখেছে ।পবিত্র বৃষ্টির জলে যেন আমি শুদ্ধ হয়ে গেছি । আজব সভ্যতা এই ইট পাথরের শহর থেকে বেরুতে দেয় না বহুদিন । আজকাল কর্ম ব্যস্ততা এতটাই কিংবা অদৃশ্য কারনে খোলা আকাশ দেখার ফুসরত মেলে না । মাঝে মাঝে ভাবি এই শহরটা অথবা এই সভ্যতা আমাদেরকে আর কিছু দিতে পারুক বা না পারুক,একরাশ স্বার্থপরতা ঢুকিয়ে দিয়ে গেছে আমাদের রক্তে ।অনেকের ভীড়েও তাই আমরা ভীষন একা একা ।তবুও আমরা একজন দক্ষ অভিনেতার মত জীবনের রঙ্গ মঞ্চে পাঠ করে যাচ্ছি অনন্তকাল ।এ এক জীবন। অতীত স্মৃতিগুলোর সাথে বর্তমান বাস্তবতা মেলাতে গেলেই বার বার সে কথায় মনে পড়ে ,আমাকে ফিরে যেতে বাধ্য করে সেই সব ভাবনায় । যদি সত্যি কোনদিন ফিরে পেতাম হারিয়ে যাওয়া সেই সব দিনগুলি ।।"

০ টি +০/-০