![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
হানাফি ফিকহের ইতিহাস ও পরিচয়:
-মুফতি মাউলানা আব্দুর রউফ
==================
Hanafi Fiqher Itihash o Porichoy
বিসমিল্লাহির রাহমানির রহিম।
ভূমিকা :
সকল প্রশংসা সেই মহান রাব্বুল-আলামিনের জন্যে যিনি সকল কিছুর স্রষ্টা, অতপর তার প্রেরিত রাসুলের(সাঃ) প্রতি অসংখ দরুদ ও সালাম বর্ষিত হোক।
কিছুলোক প্রশ্ন করে থাকেন "ইমাম আবু-হানিফার বর্ণিত হাদিস ও তার মাজহাব আপনারা গ্রহণ করেন না বরং তার পরিবর্তে সিহাহ-সিত্তার হাদিস মেনে চলেন, অথচ সিহাহ সিত্তা সংকলিত হয়েছে ইমাম আবু-হানিফার বহুপরে।
ইমাম আবু-হানিফার বর্ণনা ১২০ হিজরী হতে ১৫০ হিজরীর মধ্যে আর সিহাহ-সিত্তার সংকলন হলো ২৫৬ হতে ৩০৩ হিজরীর মধ্যে। সিহাহ-সিত্তার সংকলন ও ইমাম আবু-হানিফার মধ্যে বেবধান হলো (২৫৬-১৫০)=১০৬ হতে (৩০৩-১৫০)=১৫৩ বত্সর।
বিষয়টি বুঝবার জন্যে প্রথমে একটি কথা বলে রাখি, তা-হলো আমরা কেবল সিহাহ-সিত্তার হাদীসই মেনে চলি, অন্য কোনো সংকলনের হাদিস মেনে চলিনা, কথাটি সত্য নয়। আমরা বিশুদ্দু সনদে বর্ণিত সকল হাদিস মেনে চলার চেষ্টা করি। তবে বিশুদ্ধুতার ক্ষেত্রে মানের দিক হতে সকল সহিহ হাদিসকে সমান মনে করি না। যেমন খেজুর বা আখের গুড় এবং চিনি। গুড়ও মিষ্টি এবং চিনিও মিষ্টি। ধরুন, কোনো বাজারে উভয়টার মুল্য সমান, এক্ষেত্রে কেও সমান মুল্য দিয়ে গুড় কিনলেন, কেউ চিনি কিনলেন। এক্ষেত্রে আমরা গুড়ের পরিবর্তে চিনিকে গ্রহণ করলাম। এটাই হলো পার্থক্য। মানের তারতম্য হিসেবে গ্রহণ ও বর্জনের পার্থক্য উসুলে হাদিসের বহু পরাতন বিষয়। উসুলে হাদিসের কোনো কিতাব মনোযোগ দিয়ে অধ্যায়ন করলে বিষয়টি পরিস্কার হয়ে যাবে- (পাঠ করুন মাদ্রাসার পাঠঠ মুকাদ্দামা মিশকাত)। এবার পূর্বের কোথায় ফিরে যাই। হাদিস গ্রহনের জন্যে বর্ণননাকারিগনের বিশুদ্দুতা অপরিহার্য। অর্থাৎ বর্ণনাকারীগণ সকলে বিশুদ্ধ হলে হাদিস বিশুদ্ধ হয়। ইমাম আবু-হানিফা তাবী-তাবিই। তাই তার মধ্যে ও সাহাবাদের মধ্যে একজন বর্ণনাকারী তাবিই অবশ্যই থাকবেন। ঐ তাবিই যদি বিশুদ্দ হয় তাহলে হাদিস আবু-হানিফা পর্যন্ত সহিহ হবে, তেমন আবু হানিফার বর্ণিত হাদিস যাদের মাধ্যমে পরবর্তী লোকেরা পাবেন সেই সুত্রগুলোও ধারাবাহিক ও বিশুদ্দ হলে তার হাদিস বিশুদ্দ হবে। তাবিইদের মধ্যে বিশ্বাসযোগ্য যেমন ছিল, বিশ্বাস করা হয়নি এমনও ছিল। দু:খের বিষয় ইমাম আবু-হানিফা যদি কোনো হাদিসের কিতাব সংকলন করে যেতেন তাহলে আমরা যেমন সিহাহ-সিত্তাহ হতে সহিহ হাদিস গ্রহণ করি, তেমন তার সংকলন হতেও সহিহ হাদিস গ্রহণ করতাম। ইমাম আবু-হানিফা নিশ্চয়ই বয়সে সিহাহ-সিত্তার ইমামগণ হতে প্রবীন, কিন্তু কেবল প্রবীনন্ত গ্রহণ ও বর্জনের নীতি নয়।
ইব্রাহিম(আ হতে তার পিতা অবশ্যই প্রবীন ছিলেন, কিন্তু ইব্রাহিম(আ
-এর উম্মত কি নবীন ইব্রাহিম(আ
-এর কথা বর্জন করে তার প্রবীন পিতার কথা শুনলে ভালো করতেন?
রাসুল(স-এর চাচা অবশ্যই রাসুল(স
হতে প্রবীন ছিলেন। মক্কাবাসিগন কি নবীন মুহাম্মদ(স
-এর কথা বর্জন করে তার প্রবীন চাচার পথ অবলম্বন করলে হেদায়াত পেত?
ইমাম আবু-হানিফার জন্ম ৮০ হিজরীতে। ইমাম বুখারীর জন্ম ১৯৪ হিজরীতে। অর্থাত ইমাম আবু হানিফা ইমাম বুখারী হতে (১৯৪-৮০)=১১৪ বত্সরের প্রবীন. অতএব, সহিহ-বুখারির বহুপূর্বে সহিহ-আবু-হানিফা সংকলিত হওয়া প্রয়জন ছিল। ইমাম মুসলিম ইমাম আবু-হানিফা হতে (২০২-৮০)=১২২ বত্সরের নবীন। অতএব, সহিহ-মুসলিমের মতো সহিহ-আবু-হানিফা সহিহ-মুসলিমের পূর্বেই সংকলিত হবার কথা ছিল।
তিনি ইমাম আবু-দাউদের জন্মের (২০২-৮০)=১২২ বত্সর পূর্বে, ইমাম তিরমিজি জন্মের (২০৯-৮০)= ১২৯ বত্সর পূর্বে, ইমাম ইবনু মাজাহর (২৯০-৮০)=২১০ বত্সর পূর্বে, ইমাম নাসাইর (২২৩-৮০)=১৪৩ বত্সর পূর্বে জন্মগ্রহণ করেন। কিন্তু সুনানু আবু-হানিফা পৃথিবীর মুসলমান পেলো না। সিহাহ-সিত্তার সংকলনকারী ইমামগণ ভুবন বিখ্যাত। তারা ইমাম আবু-হানিফার কোনো বর্ণনা গ্রহণ করেননি। কেনো গ্রহণ করেননি? কেউ যদি বলেন তারা কেবল হিংসার বশবর্তী হয়ে ইমাম আবু হানিফার বর্ণনা তেগ করেছেন, তাহলে বলব হিংসুকের বর্ণিত হাদিস সহিহ হয় কি করে? হানাফি মাজহাবের মাদ্রাসা সমূহে সিহাহ-সিত্তাহ সহিহ সংকলন হিসেবে পড়ানো হয় কেনো? কেন তারা ইমাম আবু হানিফার বর্ণনা গ্রহণ করেননি সে আলোচনা ভিন্ন বিষয়, তবে এটাই সত্য যে তারা ইমাম আবু হানিফাকে বর্জন করেছেন। আমরা যদি আবু হানিফার বর্ণিত হাদিস মান্য করতে চাই, তাহলে তার কোনো সংকলন কোথায় পাবো? (তার কোনো হদিস নেই.. তার পরও) কিন্তু একদল মানুষ বলেই চলেছেন ইমাম আবু-হানিফাকে কেন মানেন না?
আমরা এই প্রশ্নের জবাব দিলাম অত্র পুস্তকে। আমরা আমাদের পুস্তকে যে সকল তথ্য পেশ করেছি, যদি কেউ বরাত মত না পেয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই মেহেরবানী করে লিখে পাঠাবেন। আমরা পরবর্তী সংস্করণে বরাত ছাপিয়ে দিব ইনশা-আল্লাহ। কোনো পাঠক যদি কোনো ভুল পান তাহলে মেহেরবানী করে আমাদিগকে লিখিতভাবে অবহিত করবেন। বাস্তবিক পক্ষেই যদি ভুল হয় তাহলে অবশ্যই পরবর্তী সংস্করণে সংশোধন করে নেবো।
ইমাম আবু হানিফার কিতাব:
---------------
হাদিস, তাফসির, ফিকাহ কোনো বিষয়েই ইমাম আবু হানিফা কোনো কিতাব লিখে যাননি। তিনি বিভিন্ন লোককে বিভিন্ন বিষয়ে, কিছু পত্র লিখেছিলেন, তার মৃত্যুর পর ঐ সকল পত্রসমূহ বিভিন্ন নামে প্রকাশিত হয়; যেমন- ফিকহুল আকবার, আল-আলিমু আল-মুতাআল্লিমু, আর-রদ্দু-আলাল-কাদরিয়াহ প্রভৃতি। [রাদ্দুল মুহতার, মুকাদ্দামা, নাকলু মাজহাবী আবু হানিফা ১ম খন্ড, ৩৮ পৃষ্টা।
* ইমাম আবু হানিফা তার শিষ্যদিগকে মৌখিক শিক্ষাদান করতেন, তিনি তার কিছুই লিখিয়েও যান নাই। [ইসলামী সংস্কৃতির ইতিহাস- ১৯৬ পৃষ্ঠা, সামসুদ্দিন, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ]
* ইমাম আবু হানিফা আলোচনা মৌখিক করতেন, লেখাতেন না। তিনি বলতেন "আমি একজন মানুষ, আজ একটি মত প্রকাশ করছি। পরের দিন বিবেচনা করে দেখছি আমার গতকালের মত ঠিক ছিলনা। তাই গতকালের মত পরিবর্তন করি। তাই আমার মতামত কেউ লিখে রাখবে না। [তাবিলু মুখ্তালিফিল হাদিস- ৬২-৬৩ পৃষ্ঠা, মুহাম্মদ বিন কুতাইবা, সিফাতু সালাতিন্নবী- ২৫ পৃষ্ঠা। মুহাম্মদ নাসিরুদ্দিন আলবানী)
* ইমাম আবু হানিফার কোনো প্রামান্য লেখা বর্তমান নাই, হয়ত আদৌ ছিলনা। [সংক্ষিপ্ত ইসলামী বিশ্বকোষ-২৮ পৃষ্ঠা, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, প্রকাশকাল ১৯৮২, জুন]
ইমাম আবু হানিফা নিজে কোনো কিতাব লিখেননি, তাই তার কোনো কিতাব নাই। লিখতে নিষেধ করেছেন তার কারণ হলো তার মতামত ছিল চিন্তা প্রসূত। প্রথমবার চিন্তা করে যা বলতেন, আবার চিন্তা করে অন্য কিছু বলতেন। প্রথম মত লেখা হলো সকাল বেলায়, কিন্তু সে মতামত বাতিল করলেন দুপুরে। সকালের মতামত লিখে নিয়ে কোনো ভক্ত চলে গেল, সে বিকালে থাকলো না। বিকালে আবু হানিফা ভিন্নমত প্রকাশ করলেন তাও লেখা হলো। দেখা গেল দুটি ভিন্ন ভিন্ন মত; দুটাই তার। কিন্তু কোনটা সর্বশেষ তা জানা গেল না। ফলে তার মত নিযে জটিলতার সৃষ্টি হলো। (যেন) এই জটিলতার সৃষ্টি না হয় তার জন্য তিনি তার মতামত লিখতে নিষেধ করেছিলেন। অন্য আর একটি কারণও ছিল। যারা তার মতামত লিখতেন তারা ইমাম আবু হানিফার মতামত লিখার সাথে সাথে ঐ একই পান্ডুলিপিতে নিজের মতামতও লিখতেন। একবার তার প্রধান ছাত্র ইমাম আবু ইউসুফ একটি পান্ডুলিপি হতে ইমাম আবু হানিফার মতামত পড়ে শুনাতে লাগলেন। পড়তে পড়তে এমন একটি কথা পড়ে শুনালেন যা ইমামের (আবু-হানিফার) মত ছিলনা। ইমাম আবু হানিফা বললেন এ মততো আমার নয়। আবু-ইউসুফ বললেন এটা আপনার পড়ে নয়, এটা আমার মত। আপনার মতের পার্শে আমি আমার মতটাও লিখে রেখেছি। ইমাম আবু হানিফা তখন আবু ইউসুফকে বললেন- "আবু ইউসুফ! তুমি আমার কোনো মতামত লিখে রাখবে না। " [মানাকিবুল ইমাম আজম, ইমাম ফারদারি-১০৯ পৃষ্ঠা, ১ম খন্ড, প্রকাশক দায়েরাতুল মায়ারিফ, হায়দারাবাদ)
এই ঐতিহাসিক উদ্রিতিতে প্রমান হয় :
১। ইমাম আবু-হানিফার লিখিত কোনো কিতাব নাই।
২। তিনি তার মতামত নিজে লিখেননি, (অন্যকে) লেখার অনমতিও দেননি। এটাই হলো ইমাম আবু হানিফার লিখিত কিতাবের সত্য ইতহাস।
ফিকহুল-আকবর:
---------
উসমান বাত্তি নামক ইমাম আবু-হানিফার একজন বন্ধু ঈমান ও আকীদা সম্পর্কে কিছু প্রশ্ন করেছিল, ইমাম আবু-হানিফা তার প্রশ্নের জবাবে একটি পত্র লিখেন। ইমাম আবু-হানিফার মৃত্যুর বহুবছর পর পত্রটি পাওয়া যায়। হানাফি অনেক আলেম পত্রটি ইমাম আবু -হানিফার বলে মেনে নিতে চান না। কারণ বিভ্রান্ত দলসমূহের মধ্যে মুর্জিয়া একটি দল, পত্রে মুর্জিয়া দলের কোনো সমালোচনা করা হয়নি। কঠোর সমালোচনা করা হয়েছে কাদরী, মোতাজেলাদের। তাই কেউ কেউ বলেন, ইমাম আবু হানিফা মুর্জিয়া। কারণ পত্রে মুরজিয়াদের সমর্থনে কিছু-কিছু কথা পাওয়া যায়, তাই অনেক হানাফি আলেম পত্রটা ইমাম আবু হানিফার বলেই মানেন না। কিছু-কিছু আলেম মুরজিয়াদের সমর্থনে বলা কথাগুলির বেক্ষা করে বুঝাতে চেয়েছেন যে, ঐ একই কথাগুলি মুর্জিয়াগন এক অর্থে বলেছে এবং আবু হানিফা ভিন্ন অর্থে বলেছেন। যারা পত্রটি ইমাম আবু-হানিফার বলে বিশ্বাস করেন তারা পত্রটির নামকরণ করেছেন "ফিকহুল আকবর". ইমাম আবু-হানিফা পত্রের এ নাম দেননি বরং বেক্খাকারিগন দিয়েছেন। বেক্খাগুলির মধ্যে মোল্লা আলী কারীর বেক্ষা সমধিক সমাদৃত। মোদ্দা কথা হলো; ফিকহুল-আকবর কেউ বলেন ইমাম আবু হানিফার লিখিত নয়, কেউ বলেন তার লিখিত পত্র। তবে লেখাটিতে অনেক বিষয় জানবার আছে বলে আমরা মনে করি।
---------
১.) আল-মুখ্তাসারুল-কুদুরি:
---------------
গ্রন্থ-পরিচয়: এ গ্রন্থখানি বর্তমান বিশ্বে হানাফি মাজহাবের কিথাব নামে পরিচিত। হানাফি ফিকাহ অথবা হানাফি ফিকাহর কোনো গ্রন্থে কিতাবে আছে বলে উল্লেখ থাকলে বুঝে নিতে হবে কিতাব অর্থ আল-মুখ্তাসারুল-কুদুরি। অতএব, গ্রন্থখানি হানাফি মাজহাবের গ্রন্থ বলে নির্ধারিত। [মাদ্রাসার পাঠঠ দাখিল নবম ও দশম ভূমিকা, ৭ পৃষ্ঠা গ্রন্থাকারের সংক্ষিপ্ত জীবনী, আরাফাত পাবলিকেশন। ফিকর ক্রমবিকাশ পৃষ্ঠা ১১২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন।]
এই গ্রন্থে ১২ হাজার মাস-আলাহ আছে। (এটি) হানাফি ফিকাহ সাশ্রের নির্ভরযোগ্য গ্রন্থ। গ্রন্থখানি উপমহাদেশের সকল হানাফি মাদ্রাসার পাঠঠভুক্ত।
গ্রন্থকার পরিচিতি: নাম: আবুল হাসান, পিতার নাম আহমাদ। কুদুরি নামেও পরিচিত। হাড়ি-পাতিলকে বলা হয় কুদুর। হাড়ি-পাতিলের বেব্সায়িকে বলা হয় কুদুরি। সম্ভবত গ্রন্থকার হাড়ি-পাতিলের বেব্সায়ি ছিলেন বলে তাকে কুদুরি বলা হত।
তিনি জন্মগ্রহণ করেছেন ৩৬২ হিজরীতে। মৃত্যুবরণ করেন ৪২৮ হিজরীতে। গ্রন্থখানি তিনি নিজ হাতে লিখেন নাই। কিতাবের শুরুতে লিখিত আছে যে, আবুল হাসান বলেছেন-"। এতে প্রমান হয় যে, আবুল হাসান ১২ হাজার মাসআলাহ বলেছেন, অন্য যে কেউ তা লিপিবদ্ধ করেছেন। অতপর ঐ লিপিবদ্ধ গ্রন্থকে আল-মুখতাসারুল-কুদুরি নামকরণ করা হয়েছে। কে লিখেছেন, তার নাম, ঠিকানা কিছুই জানা যায় না। অতএব, সংকলোনকারীর নাম ও ঠিকানা বিহীন এই গ্রন্থখানাই হলো হানাফি মাজহাবের নির্ভরযোগ্য কিতাব।
আবুল হাসানের মৃত্যুর দিন যদি গ্রন্থ লেখার শেষ দিন ধরা যায় তাহলে গ্রন্থ লেখা হয় ৪২৮ হিজরীতে। হানাফি মাজহাব অর্থ ইমাম আবু-হানিফার মাজহাব। ইমাম আবু-হানিফার জন্ম ৮০ হিজরীতে, মৃত্যু ১৫০ হিজরীতে। অর্থাত ইমাম আবু-হানিফার মৃত্যুর (৪২৮-১৫০)=২৭৮ বত্সর পর গ্রন্থটি সংকলিত হয়। আবুল-হাসানের সাথে ইমাম আবু-হানিফার কোনো দিন সাক্ষাত হয়নি। তিনি আবু হানিফার কথাগুলি কার নিকট পেলেন তার কোনো সুত্র বর্ণনা করেন নাই। অতএব, ইমাম আবু হানিফার নামে বর্ণিত কথাগুলির কোনো সুত্র নাই। তেমন বহুকথা আছে যা ইমাম আবু হানিফারও নয়, তাও হানাফি মাজহাব বলে পরিচয় দেয়া হয়। যেমন-"আবু হানিফার মতে মাটি জাতীয় সমস্ত বস্তু দ্বারা তায়াম্মুম জায়েজ। যেমন- বালি, পাথর, চুন, সুরকি, সুরমা, হরিতাল। [কুদুরি ৪২ পৃষ্ঠা] এ কথাটা ইমাম আবু হানিফার নাম বলা হলো। কিন্তু ইমাম আবু হানিফার মৃত্যুর ২১২ বত্সর পর জন্ম নিয়ে কোন সুত্রে আবু হানিফার কথাটা পেলেন লেখক তা বললেন না। অতএব, কথাটা আবু হানিফার তা বিশ্বাস করার কোনো প্রমান নেই।
কুদুরিতে লেখা আছে- "যদি কোনো বেক্তির শরীরে বা কাপড়ে এক দিরহাম পরিমান (এক তোলা অর্থাত রিয়াদ মিউজিয়ামে রক্ষিত দির্হামকে নমুনা ধরা হয়েছে) রক্ত, মলমূত্র, মদ লেগে থাকে তাহলে তা সহ নামাজ পড়া জায়েজ হবে। " [কুদুরি ৫২ পৃষ্ঠা]। এ মাসআঁলাটা কে রচনা করেছেন, তার নাম নাই। অথচ এটা কোরানে নাই, হাদিসে নাই, কার কথা তারও নাম নাই। আর এটাই হানাফি মাজহাব।
এ মাজহাব চালু হয়েছে ইমাম আবু হানিফার মৃত্যুর (৪২৮-১৫০=২৭৮ বত্সর পর। বিশ্বের সকল সহিহ হাদিসের সংকলনের বহু বছর পর। যেমন :
১. পৃথিবীর সর্বপ্রথম সহিহ হাদিসের সংকলন হয় মুয়াত্তা মালিক। মুয়াত্তা মালিক সংকলিত হয় ১৭৯ হিজরীতে। আর কুদুরি লিপিবদ্ধ ৪২৮ হিজরীতে। অতএব, কুদুরি মুয়াত্তা মালিকের (৪২৮-১৭৯)=২৪৯ বত্সর পর রচিত হয়।
২. সহিহ-আল-বুখারীর (৪২৮-২৫৬)=১৭২ বত্সর পর।
৩. সহিহ-মুসলিমের (৪২৮-২৬১)=১৬৭ বত্সর পর।
৪. সুনান-আবুদাউদের (৪২৮-২৬১)=১৬৭ বত্সর পর।
৫. সুনান-তিরমিজির (৪২৮-২৭৯)= ১৪৯ বত্সর পর।
৬. সুনান-ইবনুমাজার (৪২৮-২৭৩)=১৫৫ বত্সর পর।
৭. সুনান-নাসাঈর (৪২৮-৩০৩)=১২৫ বত্সর পর।
অর্থাত সিহাহ সিত্তার সংকলনের বহুবছর পর আল-মুখ্তাসারুল-কুদুরি হানাফি মাজহাবের কিতাব লিপিবদ্ধ হয়। এই কিতাবে সিহাহ-সিত্তার কোনো বরাত নাই।
অতএব, হানাফি মাজহাবের সাথে হাদিসেরও কোনো সম্পর্ক নাই। তেমন আবু হানিফারও কোনো সম্পর্ক নাই। আবু-হানিফার নামে সম্পূর্ণ এ একটি বানানো মাজহাব।
কেউ বলতে পারেন সিহাহ-সিত্তার পূর্বে যে সকল হাদিসের সংকলন ছিল আবুল হাসান কুদুরি তার বরাতে মাসআলা লিখেছেন। তার জবাবে বলব, তাহলে ঐ সকল হাদিসের সংকলনের নাম ঠিকানা বলুন পরীক্ষা করে দেখা যাক। আমরাতো কিতাবে কোনো হাদিসের সংকলনের নাম ঠিকানা পাই না।
২.) আল-হিদায়া:
----------
গ্রন্থ-পরিচয়: এ গ্রন্থখানি মুখ্তাসারুল-কুদুরীর বেক্ষা। লেখক হলেন আলী বিন অবি-বকর। বেক্ষাগ্রন্থ খানি লেখা হয় ৫৯৩ হিজরীতে। মুখ্তাসারুল-কুদুরীর (৫৯৩-৪২৮)= ১৬৫ বত্সর পর। মুখ্তাসারুল কুদুরীর লেখকের সাথে হিদায়ার লেখকের কোনো দিন সাক্ষাত হয় নাই। তিনি কোন দলিলের ভিত্তিতে কোন মাসআলাহ বলেছেন তা কোনো প্রকারে তার নিকট জানতে পারেন নাই। তবুও মুখ্তাসারুল কুদুরীর বিরাট বেক্ষা তিনি লিখেছেন।
এই বেক্ষার মূল্যায়ন হানাফিদের নিকট কুরআনের মতো। হিদায়া ৩ম খন্ড, ২ম ভলিউম- পৃষ্ঠা ৪ আরবি। মাদ্রাসার পাঠঠ হিদায়া: ফজেল ক্লাসের পাঠঠ, ভূমিকা পৃষ্ঠা ৬, আরাফাত পাবলিকেশন্স। গ্রন্থখানি কওমী মাদ্রাসায় ও উচু শ্রেণীতে পড়ানো হয়।
গ্রন্থকার পরিচিতি: হিদায়ার লেখক কোনো হাদীসবিদ ছিলেন না। ফলে তিনি জাল, জইফ সকল শ্রেনীর হাদিস নির্বিচারে দলিল হিসেবে পেশ করেছেন। তিনি ৫১১ হিজরীতে তুর্কি অঞ্চলের কারগান নামক প্রদেশের মুরগিনান নামক শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি সমরকন্দ (তুর্কিঅঞ্চল) নামক শহরে ৫৯৩ হিজরীতে মৃত্যু বরণ করেন। ঐ শহরে মুসলমানদের কবরসথান ছিল আলাদা, খ্রিস্টানদের ছিল আলাদা, ইহুদিদের আলাদা। ঐ অঞ্চলে মুসলমানগণ কেবলমাত্র কোরান হাদিস মেনে চলতেন। কোনো মাজহাব কেউ মানত না। ঐ অঞ্চলে মুসলমানগণকে বলা-হতো মুহাম্মাদী, খ্রিস্টানদের কে বলা-হতো ইসায়ী, ইসরাইল দেরকে বলা-হতো ইহুদি। খ্রিস্টানদের কবরস্থানের নাম ছিল ইসায়ী-কবরস্থান। মুসলমানদের কবরস্থানের নাম ছিল মুহাম্মাদী-কবরস্থান। হিদায়ার লেখক মারা যাবার পর মুহাম্মাদী কবরস্থানে দাফন করতে নিয়ে যাওয়া হলে মুসলমানগণ মুহাম্মাদী কবরস্থানে তাকে দাফন করতে বাধা দেয়। লেখকের ভক্তগণ তাকে অন্যত্র দাফন করেন। কিতাবখানি আরবি ভাষাভাষী অঞ্চলের কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে, কিংবা পাঠাগারে পাওয়া যায়না। রিয়াদ বিমান বন্ধরে কিতাবখানি আমার নিকট হতে পুলিশ জভ্দ করে। কিছুক্ষণ পর তারা বললেন এ কিতাব এদেশে সাধারণের জন্য নিষিদ্ধ, তাই কিতাব দেয়া হবে না।
হিদায়া ইমাম আবু হানিফার মৃত্যুর (৫৯৩-১৫০)=৪৪৩ বত্সর পর (মৃত্যুর বছরকে লেখার বত্সর ধরা হয়েছে) লেখা হয়েছে। ইমাম আবু হানিফার নাম বহুকথা বলা হয়েছে কিন্তু তার কোনো সুত্র বলা হয়-নাই। হিদায়ার লেখক ইমাম আবু হানিফার মৃত্যুর (৫১১-১৫০)=৩৬১ বত্সর পর জন্ম নিয়ে কিভাবে ইমাম আবু হানিফার মতামত অবগত হলেন তার কোনো সূত্রই বলেন নাই। অতএব, সূত্রবিহীন কারো কোনো কথা মান্য করা ইসলামে জায়েজ নাই। (সহিহ মুসলিম বাংলা ১ম খন্ড)
এ কিতাব্খানিতে সিহাহ সিত্তার কোনো বরাত নাই। অথচ সিহাহ সাতার সংকলন হয়েছে তার বহু বছর পূর্বে। হিদায়া লেখা হয় হাদিসের সর্ব প্রথম সংস্করণ-
১. মুয়াত্তা-মালিকের (৫৯৩-১৭৯)=৪১৪ বত্সর পর।
২. সহিহ-আল-বুখারী সংকলনের (৫৯৩-২৫৬)=৩৩৭ বত্সর পর।
৩. সহিহ-মুসলিমে সংকলনের (৫৯৩-২৬১)=৩৩২ বত্সর পর।
৪. সুনান-আবুদাউদের (৫৯৩-২৬১)=৩৩২ বত্সর পর।
৫. সুনান-তিরমিজির (৫৯৩-২৭৯)= ৩১৪ বত্সর পর।
৬. সুনান-ইবনুমাজার (৫৯৩-২৭৩)=৩২০ বত্সর পর।
৭. সুনান-নাসাঈর (৫৯৩-৩০৩)=২৯০ বত্সর পর।
হাদিসের সংকলনগুলিতে রাসুল(স-এর উপর অবতীর্ণ ইসলাম লিপিবদ্ধ ছিল। মানুষ তার উপর আমল করে আসছিল। মক্কা ও মদিনা সহ গত হেজাজে ইমাম মালিক, ইমাম, সাফিই, ইমাম আহমদের বহু ভক্ত ছিলেন।
মক্কা ও মদিনার সাথে কোনো বিরোধ ছিল না। কারণ ঐ তিন ইমাম ছিলেন মুহাদ্দিস আর মক্কা ও মদিনায় রাসুলের(স হাদিস ছাড়া কেউ কোনো কথা মানত না। তাই ঐ তিন ইমামের সাথে মক্কা ও মিদিনার কোনো বিরোধ ছিল না। মক্কা ও মদিনার মধ্যে মক্কা মদিনাকে অনুসরণ করত। কারণ রসুল(স
- এর জীবনের শেষ সময় তিনি মদিনায় অতিবাহিত করেন। কিন্তু মদিনার বাইরে দিনের ইলম ছিলন না। মদিনা হতেই বাইরে ইলম পৌছেছে। যারা ইসলামকে বিকৃত করতে চেয়েছে তারা অনারব মুসলমান দেশগুলি বেছে নিয়েছে। তাতে সুবিধা ছিল দুটা।
১। একটা হলো সত্ততা যাচাইয়ের জন্যে মদিনা যাওয়া সকলের জন্য সম্ভব নয়। বিক্রিতকারিগন যা বলবেন তাই মেনে নিতে হবে।
২। অন্যটা হলো ভাষা। অনারব দেশের মানুষের ভাষা আরবি নয়। তাই তারা কোরান-হাদিস বুঝতে পারে নাই। তাদের দেশের অনারব যারা আরবি জানত তারাই ছিল তাদের নিকট বড় আলেম। যেমন বাংলাদেশ। এদেশের মুসলমানগণ আরবি জানেন না। তাই এদেশের যারা আরবি ভাষা জানতেন তারাই ছিলেন আলেম।
এই আলেম নামের প্রানিগন কোরান-হাদিসকে কতো অমান্য করে চলতেন তারা তা জানত না। এমনি অনারব দেশে ষড়যন্ত্র করে ইসলামের শত্রুরা কোরান ও হাদিস শিক্ষার মাদ্রাসা খুলে বসলো। কিন্তু বহু-মুসলমান বিষয়টি বুঝলনা। এরা কোরান হাদিসের পরিবর্তে মানুষের মতামত মাদ্রাসায় পড়াতে শুরু করলো। মতামতের ক্ষেত্রে মুসলমান সমাজের বিখ্যাত ইমামদের মতামত পড়াতো। এদের মধ্যে একজন হলেন ইমাম আবু হানিফা। মক্কা ও মদিনায় বহিরাগত ছাড়া ইমাম আবু হানিফার অনুসারী ছিল না। বহু-কথা অনারব জগতে প্রচার হয়েছে যা শিক্ষিত আরব পন্ডিত ও হাদিসের ইমাম দিগকে বিক্ষব্ধ করেছে। অথচ ঐ মতামত যে ইমাম আবু হানিফার তার সনদ (সুত্র) ভিত্তিক কোনো প্রমান নাই। তবুও যেহেতু মতামতগুলি আবু হানিফার নামে তারই ভক্তরা প্রচার করেছেন, তাই আরবগণ কথাগুলি আবু হানিফার বলে ধরে নিয়েছে। তাই আবু হানিফার প্রতি তারা বিরূপ। ভাষার অজ্ঞতার জন্য অনারব দেশগুলিতে হানাফি মাজহাবের লোক বেশি। অন্যদিকে অনারব দেশে হানাফি ফিকার কিতাবগুলি চতুর লোকেরা কোনো কালেই স্হানীয় ভাষায় ভাষান্তর করত না যাতে মানুষ ইমাম আবু-হানিফার ফিকাহ সম্পর্কে অবগত হতে না পারে। ওরা বলতো এবং আজও বলে ইমাম আবু হানিফা কোরান ও হাজার হাজার হাদিস মন্থন করে মতামত দিয়েছেন, মাজহাব তৈরী করেছেন, তার মতামত অর্থই হলো আসল কোরান হাদিস। মুর্খ মুসলমানগণ তাই বিশ্বাস করত এবং আজও করে, অথচ প্রচলিত হানাফি মাজহাবের সাথে ইমাম আবু হানিফার কোনো সম্পর্কই নাই তা তারা কোনো দিনই জানতে পারে নাই, আর অধিকাংশ মানুষ আজও জানে না। ইসলাম বিরুধিগন এতই চতুর যে, ছাত্রগণ ইমাম আবু হানিফা সম্পর্কে জানতে পারে এমন কোনো ইতিহাসের কিতাব পড়ায় না। আসমাউর-রেজাল হতে ইমাম আবু হানিফার প্রামান্য কোনো জীবনী পড়ায় না। শুধু তাই না, তারা ইসলামের কোনো ইতিহাসই পড়ায় না। কারণ পড়তে পড়তে তারা আবু হানিফার ইতিহাস জেনে যাবে এবং তারা ইমাম আবু হানিফার নামে মিথ্যা, বানোয়াট কাহিনী সম্পর্কে অবগত হলে প্রতারণা ধরা পড়ে যাবে বলেই তারা ইসলামের ইতিহাস পড়ায় না। হিদায়ার লেখকের মাতৃভাষা তুর্কি, তার অঞ্চলের (মুরগিনা) ভাষাও তুর্কি। কিন্তু কিতাব লেখা হয়েছে আরবিতে, আরবগণ হিদায়া লেখার পূর্বেও হানাফি ফিকাহ মেনে নেই নাই, আর আজও নিচ্ছেনা। মদিনার মসজিদে হানাফি মাজহাব মুতাবিক এক ওয়াক্ত নামাজ পড়ানো হয় নাই। অথচ হানাফি ফিকাহ আরবিতে। এর একমাত্র কারণ অনারব দিগকে হানাফি ফিকাহ সম্পর্কে অজ্ঞ রাখা। আরবদের জন্য আরবিতে পূর্বে যে কুদুরীর কথা বললাম সেই বাগদাদে কুদুরি মুতাবিক কোনো দিন নামাজ পড়া হয় নাই, আর আজ হচ্ছে না। অথচ কুদুরি নামাজ পড়া হয় অনারব দেশ সমূহে যেমন তুর্কিস্থান, ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, আফগানিস্তানের এক অংশে।
হানাফি ফিকার ধারক ও বাহকগণ মানুষকে কতটা বিভ্রান্ত করতে চেয়েছে তা বোঝা যায় হিদায়ার প্রশংসার গিত শুনে ও দেখে। মানুষ যেখানে কোরানের আয়াতের মত একটি আয়াত রচনা করতে পারে নাই, সেখানে হিদায়ার লেখক কোরানের মত একটি গ্রন্থই রচনা করে ফেলেছেন বলে গীত গেয়েছেন। কতটা হেয় হলে এমনটা বলতে পারেন কোনো ইমামের দাবিদার। আরবগণ হানাফি ফিকাহ অনুসরণ করতনা, তবে কেন আরবিতে লেখা হয়। ইমাম আবু হানিফার মাতৃভাষা ছিল ফারসি, আরবি নয়। ইমাম আবু হানিফা আরব ও ছিলেন না। [সিরাতে নোমান বাংলা- পৃষ্ঠা ১০৬, ১১৫, ১৩০]
৩. কান যুদ্দাকায়েক :
-------------
গ্রন্থ-পরিচয়: এ ফিকার কিতাবখানি মাদ্রাসার পাঠঠ। লেখকের নাম আব্দুল্লাহ বিন আহমাদ বিন মাহমুদ অন-নাসাফি। তিনি জন্মগ্রহণ করেন ৬৪৫ হিজরীতে এবং মৃত্যুবরণ করেন ৭১০ হিজরীতে।
গ্রন্থ রচনা করেন ৭১০ হিজরীতে। ইমাম আবু হানিফার মৃত্যুর (৬৪৫-১৫০)=৪৯৫ বত্সর পর জন্মগ্রহণ করেন। গ্রন্থ রচনা করেন ইমাম আবু হানিফার মৃত্যুর (৭১০-১৫০)=৫৬০ বত্সর পর।
অতএব, লেখকের কোনো প্রকারে ইমাম আবু-হানিফার সাথে সাক্ষাত হয় নাই। ইমাম আবু-হানিফার মাজহাব অবগত হবার কোনো সনদ বা লোক পরস্পরা বর্ণনা করেন নাই। তার বর্ণিত মতামত যে ইমাম আবু হানিফার তার কোনো প্রমান নাই।
হানাফি ফিকার এ গ্রন্থখানি লেখা হয়-
১. মুয়াত্তা-মালিকের (৭১০-১৭৯)=৫৩১ বত্সর পর।
২. সহিহ-আল-বুখারী সংকলনের (৭১০-২৫৬)=৪৫৬ বত্সর পর।
৩. সহিহ-মুসলিম সংকলনের (৭১০-২৬১)=৪৪৯ বত্সর পর।
৪. সুনান-আবুদাউদের (৭১০-২৬১)=৪৪৯ বত্সর পর।
৫. সুনান-তিরমিজির (৭১০-২৭৯)= ৪৩১ বত্সর পর।
৬. সুনান-ইবনুমাজার (৭১০-২৭৩)=৪৩৭ বত্সর পর।
৭. সুনান-নাসাঈর (৭১০-৩০৩)=৪০৭ বত্সর পর।
গ্রন্থখানিতে যেমন আবু হানিফার বক্তব্যের কোনো সুত্র নাই, তেমন তার পূর্বের সংকলিত সিহাহ-সিত্তার বা অন্য কন হাদিসের কিতাবের বরাতে হাদিসেরও দলিল নাই। অথচ বলা হচ্ছে কিতাবখানি হানাফি মাজহাবের জির্ভরযোগ্য ফিকাহর কিতাব।
হানাফি ফিকাহর কোনো কিতাবের এভাবে কোনো সুত্র ইমাম আবু হানিফা হতেও প্রমানিত নয়, তেমন কোনো হাদিসের কিতাব হতেও প্রমানিত নয়।
৪. শরহে বিকায়া:
----------
গ্রন্থ-পরিচয়: এ কিতাবখানি মাদ্রাসার পাঠঠ। কিতাবখানি একটি কিতাবের বেক্ষা। "বিকায়া" নামক একখানা কিতাব যা হিদায়ার সারসংক্ষেপ। তারই বেক্ষা শরহে বিকায়া। বিকায়ার লেখক ছিলেন মাহমুদ বিন আহমাদ। তার জন্ম-তারিখ পাওয়া যায় না। তবে তিনি ৬৭৩ হিজরীতে মারা যান। ইমাম আবু হানিফার সাথে তার সাক্ষাতের প্রশ্নই ওঠে না। অথচ তার কিতাব হানাফি মাজহাবের প্রামান্য কিতাব সমূহের একটি।
এই কিতাবের বেক্ষা লিখেছেন উবায়দুল্লাহ-বিন-মাসউদ-বিন-মাহমুদ। জন্ম-তারিখ পাওয়া যায় না। তবে মৃত্যু বরণ করেন ৭৪৭ হিজরীতে।
কিতাবটি লিখিত হলো ৭৪৭ হিজরীতে। (মৃত্যু তারিখ লেখার শেষ তারিখ ধরা হলে)
ইমাম আবু-হানিফার মৃত্যুর (৭৪৭-১৫০)=৪০৭ বত্সর পর।
১. মুয়াত্তা-মালিকের (৭৪৭-১৭৯)=৫৬৮ বত্সর পর।
২. সহিহ-আল-বুখারী সংকলনের (৭৪৭-২৫৬)=৪৯১ বত্সর পর।
৩. সহিহ-মুসলিম সংকলনের (৭৪৭-২৬১)=৪৮৬ বত্সর পর।
৪. সুনান-আবুদাউদের (৭৪৭-২৬১)=৪৮৬ বত্সর পর।
৫. সুনান-তিরমিজির (৭৪৭-২৭৯)= ৪৬৮ বত্সর পর।
৬. সুনান-ইবনুমাজার (৭৪৭-২৭৩)=৪৭৪ বত্সর পর।
৭. সুনান-নাসাঈর (৭৪৭-৩০৩)=৪৪৪ বত্সর পর।
সিহাহ-সিত্তার সকল সহিহ হাদিস তার সম্মুক্ষে থাকার পরও লেখক ঐ হাদিসের কিতাবের কোনো বরাত দেন নাই। এতে একটা বিষয় স্পষ্ট হয় যে, তারা সহিহ হাদিসের বিকল্প শরীয়াত প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা করেন।
৫. মুসনাদ ইমাম আজম:
-------------
রাসুল(স ও সাহাবা(রা
এবং তবেইন ও আবু হানিফা(র)-এর বক্তব্য দ্বারা সংকলিত। সংকলক হলেন মুহাম্মদ বিন আলী বিন মুহাম্মদ। তিনি ১০২৫ হিজরীতে দামেশকে জন্মগ্রহণ করেন এবং ১০৮৮ হিজরীতে দামেশকেই মৃত্যু বরণ করেন। সংকলক আলাউদ্দিন হাসকাফি উপনামেও ক্ষেত ছিলেন। ইমাম আবু হানিফার মৃতুর (১০২৫-১৫০)=৮৭৫ বত্সর পর তার জন্ম হয়। এই হাসকাফি ইমাম আবু হানিফার নামে হাদিস বর্ণনা করেছেন। আবু হানিফার বর্ণনা কোন-কোন সুত্রে পেলেন তা কোথাও বলেন নাই। সুত্র গোপন করে হাদিস বর্ণনাকে উসুলে-হাদিসে "তাদলিস" বলা হয়। হাদিস বর্ণনায় "তাদলিস" হারাম। [দেখুন মাদ্রাসা পাঠঠ মুকাদ্দামাতুশ শায়েখ ১ম পরিচ্ছেদ।
মুসনাদে ইমাম আজোমে ইমাম আবু হানিফার নাম অনেক মিথ্যে বর্ণনা স্থান পেয়েছে।
(১) মুসনাদে ইমাম আজমের ১৩ নম্বর পরিচ্ছেদের ৩৩ নম্বর বর্ণনা লক্ষ্য করুন। বর্ণনায় বলা হয়েছে, ইমাম আবু হানিফা বলেন আমি ৮০ হিজরীতে জন্ম নিয়েছি। ৯৬ হিজরীতে আমি পিতার সাথে হজ্জ করতে যাই। মক্কার মসজিদে হারামে সাহাবী আব্দুল্লাহ বিন হারিসকে দেখতে পাই। তিনি বলেছিলেন যে, রাসুল(স বলেছেন, যে বেক্তি দিনের গানার্জন করেছে, আল্লাহ তার সকল প্রচেষ্টায় যথেষ্ট। তার রিজিকের বেবস্থা আল্লাহ এমন ভাবে করবেন যে, সে ভাবতেও পারবে না যে, এভাবে রিজিক আসতে পারে।
বর্ণনাটি মিথ্যা হওয়ার কারণ :
সাহাবী আব্দুল্লাহ বিন হারিস ৮৬ হিজরীতে মিসরে মৃত্যু বরণ করেন- [তাক্রিবুত তাহজিব: ক্রমিক নম্বর ৩২৬২: পৃষ্ঠা ২৯৯] . আর ইমাম আবু হানিফা ৯৬ হিজরীতে হজ্জে গিয়েছিলেন। অতএব, (৯৬-৮৬=১০ - আব্দুল্লাহ বিন হারিসের মৃত্যুর ১০ বত্সর পর তার সাথে সাক্ষাত করেছেন। যদি কথাটি ইমাম আবু হানিফা বলে থাকেন তাহলে কথাটা সত্য নয়, আর যদি ইমাম আবু হানিফা না বলে থাকেন এবং হাসকাফি বলে থাকেন তাহলে হাসকাফি সত্যবাদী নন। ইমাম আবু হানিফাকে তাবেই বানাবার জন্যে ইমামের নামে মিথ্যা বলেছেন। মিথ্যা বাদীর সংকলন সত্য বলে গ্রহণ করা যায় না।
(২) মুসনাদে ইমাম আজোমের ১২৬ নম্বর অনুচ্ছেদের ২৭১ নম্বর হাদিসের বর্ণনা কারী হলেন- আবু হানিফা ইবনে উমার হতে- অর্থাত সাহাবী ইবনে উমার হাদিস বর্ণনা করেছেন এবং আবু হানিফা শুনেছেন। সূত্রটি একেবারেই মিথ্যা। কারণ সাহাবী ইবনে উমার মৃত্যু বরণ করে ৭৩ হিজরীতে (তাকরিবুত তাহজিব ক্রমিক: ৩৪৯০ পৃষ্ঠা: ৩১৫) এবং আবু হানিফার জন্ম ৮০ হিজরীতে। মুসনাদে আবু হানিফার সংকলক বলতে চান ইমাম আবু হানিফা তার জন্মের (৮০-৭৩)-৭ বত্সর পূর্বে সাহাবী ইবনে উমার(র) এর সাথে সাক্ষাত করেছেন। ইমাম আবু হানিফা যদি বলে থাকেন তাহলে কথাটা সত্য নয়, আর যদি হাসকাফি বলে থাকেন তাহলে কথাটা মিথ্যে (তাহলে হাসকাফি সত্যবাদী নন)।
(৩) মুসনাদে ইমাম আজমের ২২১ নম্বর অনুচ্ছেদের ৪৭৯ নম্বর হাদিসে বর্ণনা কারী ইমাম আবু হানিফা। তিনি বলেন, আমি ৮০ হিজরীতে জন্ম নিয়েছি। রাসুলের(স সাহাবী আব্দুল্লাহ বিন উনাইস ৯৪ হিজীরতে কুফায় আসেন। আমি তার নিকট হতে হাদিস শ্রবণ করি। সাহাবী আব্দুল্লাহ বিন উনাইস সিরিয়ায় ৫৪ হিজরীতে মৃত্যু বরণ করেন। তাকরিবুত তাহজিব ক্রমিক নম্বর ৩২১৬ পৃষ্ঠা ২৯৬। বর্ণনায় বোঝা যায় যে, ইমাম আবু হানিফার জন্মের (৮০-৬৪)=২৬ বত্সর পূর্বে সাহাবী আব্দুল্লাহ বিন উনাইসকে দেখেছন। বর্ণনাটি একেবারেই মিথ্যে।
মুসনাদে ইমাম আজোম মূলত ইমাম আবু হানিফার বর্ণনাই নয়। মুসনাদে ইমাম আজমের সংকলক ইমাম আবু হানিফার মৃত্যুর ৮৭৫ বত্সর পর জন্ম নিয়ে ইমাম আবু হানিফার বর্ণনা প্রাপ্তির কোনো সুত্র উল্লেখ করেন নাই। তাই সুত্র বিহীন বর্ণনা সত্য হতে পারে না।
ফাতোয়াহ কি? : শরীয়াতের কোনো বিষয় আলেমদের নিকট জিজ্ঞাসা করাকে আরবিতে বলা হয় ইস্তিফতা বা সিতাফতা। জিজ্ঞাসার জবাবকে আরবিতে বলা হয় ফাতোয়াহ। যে বেক্তি ফাতোয়াহ(জবাব) দেন তাকে বলা হয় মুফতি।
মানুষ বিভিন্ন মাদ্রাসা ও আলেমদের নিকট শরীয়াতের অজানা বিষয় জিজ্ঞাসা করে। কিন্তু মুফতিগণ তাদের পরে আসা ফিকার কিতাব -
১. আল-মুখ্তারারুল কুদুরি।
২. হিদায়া।
৩. শরহে বিকায়া।
৪. কান্যুদ্দাকায়েক।
এসব কোন কিতাব হতে কোন ফাতোয়া বা জিজ্ঞাসার জবাব দেন না। অথচ ৮/১০ বত্সর নিয়মিত ভাবে মাদ্রাসায় ফিকাহর এসব কিতাবগুলি পড়ানো হয়। যদি জিজ্ঞাসা করা হয় এ কিতাবগুলি দ্বারা যখন কোনো জিজ্ঞাসার জবাব দেয়া যাবে না তাহলে এ কিতাব গুলি পড়ানো হয় কেন ?
এর কোনো জবাব নাই। কারণ হলো ফিকাহর কিতাব গুলিতে একটি বিষয়ে বিভিন্ন মত পাওয়া যায়। ফলে কোন মতে ফতাওয়া বা জবাব দিতে হবে তা নির্ণয় করা নাই। তাই (এসব) ফিকাহর কোনো কিতাব দ্বারা কারো কোনো প্রশ্নের জবাব দেয়া সম্ভব নয়। যেমন হেদায়ার একটি দৃষ্টান্ত পেশ করছি।
জিজ্ঞাসা: মুকতাদী ইমামের পিছনে সুরা ফাতিহা পাঠ করবে কি না ?
* হিদায়াতে এ বিষয়ে বলা হয়েছে "মুকতাদী ইমামের পিছনে কোরান পাঠ করবেনা" . [আরবি হিদায়া ১ম পৃষ্ঠা ১২০, বাংলা হিদায়া ইসলামিক ফাউন্ডেশন ১ম পৃষ্ঠা ৯৪]
আশ্চর্যের বিষয় হলো,
* ঐ একই পৃষ্টায় উল্লেখিত মাস-আলাহটির দিতীয় লাইনের শেষে বলা হয়েছে "কোরান পাঠ ইমাম ও মুকতাদী উভয়ের উপর ফরজ"।
* আবার লেখা আছে "কোরান পাঠ হারাম (মাকরুহে তাহরিমা)"
অতএব, ফিকাহর কিতাব দ্বারা কোনো জিজ্ঞাসার জবাব দেয়া সম্ভব নয়। জিজ্ঞাসার জবাব দেবার জন্য ফতোয়ার কিতাব। সচরাচর ফতোয়ার কিতাব হতেই জবাব দেয়া হয়। ফিকাহ ও ফতোয়ার কিতাবের মধ্যে খুব সামান্য পার্থক্য রয়েছে। সে পার্থক্য হলো এই যে, বিভিন্ন মতামত উল্লেখ করার পর কোনো একটি মত সম্পর্কে বলা হয়েছে "এই মতের উপর ফতোয়া" - অর্থাত এ মতটাই- গ্রহণযোগ্য। বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান প্রভৃতি দেশে ফতোয়ার কিতাব হিসাবে গ্রহণ করা দু'খানি কিতাব বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। একটি হলো রাদ্দুল-মহতার, অন্যটি হলো ফতোয়ায়ে-আলমগিরি। আমরা ঐ দুটি কিতাবের ইতিহাস তুলে ধরলাম।
ফতোয়ার দুটি কিতাব:
১. রাদ্দুল-মহতার :
----------
এই কিতাবটি হানাফি মাজহাবের সর্ববৃহত ফতোয়ার বা ফিকাহর কিতাব। এ কিতাব খানীতে তিনটি কিতাব রয়েছে। প্রথম হলো "তানবিরুল-আবসার"। লেখকের নাম মুহাম্মদ বিন আব্দুল্লাহ। ৯০৯ হিজরীতে জন্মগ্রহণ করেন।
ইমাম আবু হানিফার মৃত্যুর (৯৩৯-১৫০)=৭৮৯ বত্সর পর জন্মলাভ করেন। ইমাম আবু হানিফার সাথে সাক্ষাতের কোনো প্রশ্নই ওঠেনা। অথচ কিতাব খানি হানাফি মাজহাবের নির্ভর যোগ্য ফতোয়ার কিতাব।
কিতাব খানি লিখিত হয় ১০০৪ হিজরীতে। অর্থাত ইমাম আবু হানিফার মৃত্যুর (১০০৪-১৫০)=৮৫৪ বত্সর পর। কিভাবে এবং কোন কোন সুত্রে ইমাম আবু হানিফার মতামত তিনি প্রাপ্ত হলেন তার কোনো বিবরণ কিতাব খানিতে নাই। লেখকের সম্মুখে তখন ছিল হাদিসের কিতাব সমূহ, তার কোনো কিতাবেরও কোনো বরাত নাই।
কিতাব খানি লিখিত হয়..-
১. মুয়াত্তা-মালিকের (১০০৪-১৭৯)=৮২৫ বত্সর পর।
২. সহিহ-আল-বুখারী সংকলনের (১০০৪-২৫৬)=৭৪৮ বত্সর পর।
৩. সহিহ-মুসলিম সংকলনের (১০০৪-২৬১)=৭৪৩ বত্সর পর।
৪. সুনান-আবুদাউদের (১০০৪-২৬১)=৭৪৩ বত্সর পর।
৫. সুনান-তিরমিজির (১০০৪-২৭৯)=৭২৫ বত্সর পর।
৬. সুনান-ইবনুমাজার (১০০৪-২৭৩)=৭৩১ বত্সর পর।
৭. সুনান-নাসাঈর (১০০৪-৩০৩)=৭০১ বত্সর পর।
সিহাহ-সিত্তার হাদিসগুলি লেখক সম্পুর্নরুপে বর্জন করেছেন। উল্লেখিত কিতাবগুলি যে হাদিসের কিতাব তার উল্লেখ পর্যন্ত নাই (এই কিতাবে)।
২. তানবিরুল-আবসার :
------------
এর বেক্ষা করেছেন মুহাম্মদ বিন আলী। তিনি হাসকাফি উপনামেও পরিচিত। তিনি ১০২৫ হিজরীতে জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি ১০৮৮ হিজরীতে মৃত্যু বরণ করেন।
তানবিরুল আবসারের বেক্ষার নাম আদ-দূর-রুল-মুখতার। তিনি সহিহ আল বুখারীর বর্ণিত হাদিসের বিরূপ সমালোচনায় সংক্ষিপ্ত টিকা (তালিকা) লিখেছিলেন। মুসলিম মিল্লাত তা প্রত্যাখ্যান করায় পৃথিবীতে আজ আর তা
কোনো পুস্তকালয় বা জাদু-ঘরেও পাওয়া যায় না। এ বেক্তিও দূর-রুল-মুখতারে ঐ সিহাহ সিত্তার কোনো ধার ধরে নাই।
এই দূর-রুল-মুখতারের বেক্ষা হলো রাদ্দুল-মুহতার। অর্থাত এতে ৩টি কিতাব আছে।
১. তান-বিরুল-আবসার
২. দূর-রুল-মুখতার।
৩. রাদ্দুল-মুহতার।
এ কিতাবের লেখক মুহাম্মদ আমিন বিন উমার। ১১৯৮ হিজরীতে দামেস্কে জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি আল্লামা শামী বলেও পরিচিত। দামেস্ক নগর (সিরিয়া) শাম দেশের রাজধানী ছিল, যে হিসাবে তিনি শামী। তাই অত্র কিতাবটি তার উপনাম হিসাবে শামি নামেও পরিচিত। অতএব কিতাবের নাম রাদ্দুল-মহতার এবং শামী। লেখক ১২৫২ হিজরীতে দামেস্কে মারা যান।
এই কিতাব খানিতেও সিহাহ-সিত্তার বা কোনো হাদিসের বরাতে কোনো মাসআলাহ বা সমাধান প্রধান করা হয় নাই।
অথচ কিতাবটি লিখিত হয়-
১. মুয়াত্তা-মালিকের (১২৫২-১৭৯)=১০৭৩ বত্সর পর।
২. সহিহ-আল-বুখারী সংকলনের (১২৫২-২৫৬)=৯৯৬ বত্সর পর।
৩. সহিহ-মুসলিম সংকলনের (১২৫২-২৬১)=৯৯১ বত্সর পর।
৪. সুনান-আবুদাউদের (১২৫২-২৬১)=৯৯১ বত্সর পর।
৫. সুনান-তিরমিজির (১২৫২-২৭৯)=৯৭৩ বত্সর পর।
৬. সুনান-ইবনুমাজার (১২৫২-২৭৩)=৯৭৯ বত্সর পর।
৭. সুনান-নাসাঈর (১২৫২-৩০৩)=৯৪৯ বত্সর পর।
৩. ফতোয়ায়ে-আলমগিরি :
--------------
কিতাব খানি ফতোয়ায়ে-আলমগিরি বলে প্রখ্যাত। কিন্তু আসল নাম হলো ফতোয়ায়ে-হিন্দিয়াহ।
কথিত আছে যে, ১০০ হানাফি আলেম কিতাব-খনির সম্পাদনায় অংশগ্রহন করেন। সম্পাদক-মন্ডলীর সভাপতি ছিলেন শায়খ নিজামুদ্দিন। তার জন্ম তারিখ পাওয়া যায় না। তার মৃত্যু ১১০৩ হিজরীতে বলে জানা যায়। কিতাব-খানির নামের নিচে বড়-বড় অক্ষরে লেখা আছে কিতাব-খানি ইমাম আবু-হানিফার মাজহাব। অর্থাত কিতাব-খানি অন্য কিছু নয়, কেবল ইমাম আবু-হানিফার মতামত। কিতাব-খানির পাশে আরো দু-খানি কিতাব আছে। এক-খানির নাম ফতোয়ায়ে-কাজী-খান। লেখকের নাম হাসান বিন-মনসুর। ৫৯২ হিজরীতে মারা যান। জন্ম তারিখ পাওয়া যায়না।
অন্য আর এক-খানি কিতাবের নাম ফতোয়ায়ে-বাজ-জাবিয়াহ। লেখকের নাম মুহাম্মদ বিন মুহাম্মদ। জন্ম তারিখ পাওয়া যায়না তবে মৃত্যু ৮২৮ হিজরীতে। ফতোয়ায়ে-কাজী-খান লেখা হয় ৫৯২ হিজরীতে। অর্থাত ইমাম আবু হানিফার মৃত্যুর (৫৯২-১৫০)= ৪৪২ বত্সর পর। লেখক হাসান বিন মনসুর কোন সুত্রে ইমাম আবু-হানিফার বক্তব্য পেলেন তার কোনো উল্লেখ নেই।
ফতোয়ায়ে-বাজ-জাবিয়াহ লেখা হয় ইমাম আবু-হানিফার মৃত্যুর (৮২৫-১৫০)= ৬৭৮ বত্সর পর। লেখক মুহাম্মদ বিন মুহাম্মদ কোন সুত্রে ইমাম আবু-হানিফার কথা প্রাপ্ত হলেন তার কোনো উল্লেখ করেন নাই।
ফতোয়ায়ে-আলমগিরি লেখা হয় ১১০৩ হিজরীতে অর্থাত ইমাম আবু-হানিফার মৃত্যুর (১১০৩-১৫০)= ৯৫৩ বত্সর পর। এই কিতাবেও ইমাম আবু-হানিফার কথা গুলো প্রাপ্তির কোনো সুত্র নাই।
বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তানে ইমাম আবু হানিফার নামে যে হানাফি মাজহাব চলছে ইমাম আবু হানিফার সাথে তার কোন সুত্রে সম্পর্ক প্রমানিত নাই। অতএব, ইমাম আবু হানিফার নাম উল্লেখিত যত মতামত চলছে তা সবই মিথ্যা ও ভুয়া।
আমরা ফিকাহর কিতাব ও ফতোয়ার কিতাবের যে বিবরণ তুলে ধরেছি, তার মধ্যে কোনো কথা যদি কেউ মিথ্যা পেয়ে থাকেন অবশ্যই জানাবেন। ইনশা-আল্লাহ মিথ্যা পাবেন না। তাই সকল মুসলমান-দিগকে আমরা দাওয়াত দিচ্ছি যে, আসুন! আমরা আল্লাহর কোরান ও সহিহ হাদিস মেনে চলি, ইমাম আবু হানিফার নামে আর প্রতারিত না হই।
ইমাম মালেকের কিতাব মুয়াত্তা আছে। তাতে হাদিস আছে, তেমন ইমাম শাফিইর জামেউশ-শাফিই, আরো ২২ খানা কিতাব আছে, ইমাম আহমাদ বিন হাম্বলের কিতাব মুসনাদে আহমাদ সহ আরো বহু হাদিসের কিতাব আছে। মুসলমান ঐ তিন ইমাম হতে উপকৃত হচ্ছে আরো হবে। আমরা কোনো ইমামের মুকাল্লিদ নই। যার কথা ও মতামত বিশুদ্ধ হাদিস মুতাবেক পাচ্ছি মেনে চলছি। ইমাম আবু-হানিফার বিশুদ্ধ বর্ণনা কেউ উপস্হিত করলে আমরা তা প্রত্যাখ্যান করেছি এমন কোনো দৃষ্টান্ত নাই।
৪। তাহাবী শরীফ:
-----------
কিতাবের আসল নাম হলো শারহু-মায়ানিল-আসার। সংকলকের নাম আবু-জাফর আহম্মদ বিন মোহাম্মদ। তিনি ২২৯ হিজরীতে জন্ম ও ৩২১ হিজরীতে মৃত্যু বরণ করেন। তাতে দেখা যায় সিহাহ-সিত্তার শেষ কিতাব সুনান-অন-নাসায়ী সংকলনের মাত্র (৩০৩-৩২১)= ১৮ বত্সর পর তহবি-শরীফ সংকলিত হয়।
কিন্তু হাদিসের ইমামগণ কিতাব খনিকে সিহাহ সিত্তার মধ্যে গণ্য করেন নাই। (মুকাদ্দামাদুশ-শায়েখ মাদ্রাসার পাঠঠ ত্রয়োদশ পরিচ্ছেদ।)
* হাদিসের ইমামগণ তাহাবিকে সিহাহ সিত্তার মধ্যে গণ্য না করায় এটা সুস্পষ্ট হয়ে গেল যে, তাহাবি কিতাব হিসেবে সহির মধ্যে গণ্য নয়।
* কিতাবটির মধ্যে যে হাদিসটি সনদের দিক হতে বিশুদ্ধ সেটাকে গ্রহণ করা যাবে। যেটা বিশুদ্ধ নয় তা বর্জনীয়।
* তাহাবির ভূমিকায় তার সংকলনের উদ্ধেশ সম্পর্কে বলা হয় হাদিসে গরমিল দেখে অনেক নাস্তিকগণ বলে থাকে গরমিল ভরা ইসলাম মেনে চলা সম্ভব নয়। আবার অনেক কমজোর ঈমানের লোক ও ঐ রকম কথা বলে থাকে। এর কারণ হলো ইসলামের প্রাথমিক অবস্থায় এক প্রকার বিধান ছিল। কিন্তু তাকে রহিত করে আর এক প্রকার বিধান প্রদান করা হয়েছে। তারা কোন বিধান পূর্বে ও কোনটি পরের তা অবগত নয় বলেই এমন কথা বলছে বা ভাবছে। আমার সংকলনের উদ্দেশ হলো কোন বিধান পূর্বের এবং কোনটি পরের তা বর্ণনা করা। অর্থাত কোনটি বহাল কোনটি রহিত (বাতিল) তা চিন্হিত করা।
এ বিষয়টি প্রমান করতে গিয়ে এমন অবস্থার সৃষ্টি করেছেন যা কোনো হাদিসের সংকলকের জন্য অনভিপ্রেত। তিনি যা করেছেন তা হলো :
১. মুত্তাফাক-আলাইহি-হাদিস (বুখারী ও মুসলিমের সহিহ হাদিস)-কে রহিত প্রমান করার জন্য জাল হাদিস তুলে দিয়েছেন।
২. সহিহ-হাদিস রহিত প্রমান করার জন্য জাল ও জইফ হাদিস তুলে ধরেছেন।
৩. রাসুলের(স সহিহ হাদিসকে রহিত প্রমান করার জন্যে সাহাবাদের কথা বা কাজকে তুলে ধরেছেন।
৪. অনেক হাদিসকে কাট-ছাট করে তুলেছেন। এ কারণগুলি ছাড়াও আরো অনেক কারণ আছে যার জন্য হাদিসের ইমামগণ তার সংকলনকে প্রামান্য হিসাবে গ্রহণ করেন নাই। যেমন : মিশকাত, বুলুগুল মারম প্রভৃতি হাদিসের সংকলক-গণ মুয়াত্তা মালিক, মুসনাদে-আহমাদ, বুখারী, মুসলিম, আবু-দাউদ, তিরমিজি, নাসাই, ইবনে-মাজাহ, দর্মী, দার-কুতনি, প্রিভ্রিতি হতে হাদিস তাদের সংকলনে স্থান দিয়েয়্ছেন, কিন্তু তাহাবির কোনো হাদিস তাদের সংকলনে স্থান দেন নাই। এতে প্রমান হয় তাহাবি গ্রহন যোগ্য কোনো হাদিসের সংকলন নয় এবং তা দলিল হিসাবে উত্থাপন করার মত সংকলন নয়।
কোনো সহিহ হাদিসের সমর্থনে তাহাবির কোনো সহিহ-হাদিস(শাহেদ) সমর্থক হিসাবে উপস্থাপিত করা যায়, কিন্তু সিহাহ-সিত্তার কিতাবের মতো মূল দলিলের কিতাব বলে গণ্য করা যায় না। যেমন মূল দলিল হিসাবে বুখারী, মুসলিম ও অন্নান্য সিহাহ-সিত্তার কিতাবকে দলিল বলে গণ্য করা যায়। কারণ তাহাবী মূলত কোনো সহিহ হাদিসের কিতাব হিসাবে হাদিসের কিতাবের মধ্যে কোনো ইমাম গণ্য করেন নাই, সহিহ-আল-বুখারী সতন্ত্র দলিলের কিতাব, সহিহ-মুসলিম সতন্ত্র কিতাব, তেমন অন্য চারখানা তেমন সতন্ত্র দলিলের কিতাব বলে হাদিসের ইমামগণ গ্রহণ করেন নাই। বর্তমানে যদি কেউ তাহাবিকে সতন্ত্র দলিলের কিতাব গণ্য করেন তাহলে বলতে হবে তাহাবী সংকলনের পর হতে তাকে বর্জনকারী সকল হাদিসের ইমামগণ হয় হিংসুক ছিলেন তাই বর্জন করেছিলেন, নতুবা বলতে হবে নিরপেক্ষ নিরিখে বর্জন করেছেন। এতে কোনো মাজহাব বা কোনো দলের কোরেন নাই যা তাদের জন্য সম্ভব ছিল না। তারা ছিলেন সম-সাময়িক অন্নান্য ইমাম ও সাধারণ মুসলমানদের নিকট নিরপেক্ষ বিশ্বাস যোগ্য এবং নির্ভরযোগ্য এবং নির্ভিক ও সকল প্রকার সংকীর্ণতার উর্ধে। যেমন ধরুন ইমাম-বায়হাকী, মিশকাতের সংকলক মুহাম্মদ-বিন-আব্দুল্লাহ-আল-খতিব তাবেয়ী, ইবনে হাজার আসকালানী, ইমাম-দ্বারাকুতনি, ইমাম-নববী প্রভৃতি হাদিসের ইমামগণ কেউই তাদের হাদিসের কিতাবে তাহাবী হতে হাদিস সংগ্রহ করেন নাই। তাহলে কি বলব যে, এরা সংকীর্ণ মনোভাবের লোক ছিলেন ?
কেউ যদি ইমাম আবু-হানিফার নাম জইফ ও জল হাদিস পেশ করেন অথবা তার নাম এমন কোনো কথা পেশ করেন যা সহিহ হাদিস বিরোধী তাহলে তা মেনে নিতে আমরা অপারগ। তাছাড়া ইমাম আবু-হানিফা এমন করেছেন (বা বলেছেন) আমরা তা মেনে নিতে পারছি না।
>>>>>(((সমাপ্ত)))<<<<<
-প্রিয় পাঠক কিতাবটি উপকারে আসবে এই ভেবে গুগল ট্রান্সলেট এর মাধ্যমে কাজের ফাকে-ফাকে কয়েকদিন সময় নিয়ে টাইপ করলাম, সাভাবিক ভাবেই এখানে অনেক বানানগত ভুল-ভ্রান্তি থাকবে দয়াকরে বিবেচনায় রাখবেন। আল্লাহ আমাদের সঠিক পথের উপর প্রতিষ্ঠিত রাখুন। আমিন।
---------------------------
কিতাবটি (PDF) বই আকারে পেতে গোগলে - Hanafi Fiqher Itihash o Porichoy (হানাফি ফিকাহর ইতিহাস) এই নাম খোজ করলে পেয়ে যাবেন (ইনশা-আল্লাহ)
---------------------------
©somewhere in net ltd.