নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি এক অপরাজিতা। কোন বাঁধাই আমার চলার পথে বাঁধা হয়ে থাকেনা। সব বাঁধা কে অতিক্রম করে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়াই হচ্ছে আমার জীবনের মূলমন্ত্র

শারলিন

শারলিন › বিস্তারিত পোস্টঃ

বর্তমান সময়ের যাকাত ও আমার ভাবনা....................।।

০৮ ই জুলাই, ২০১৫ সকাল ১০:২৬

যাকাত ইসলামের পাঁচটি ফরযের একটি। কালিমায়ে শাহাদাত ও সালাতের পর যাকাতের স্থান। যাকাতের ফলে অভাবীদের অভাব দূর হয়। যাদের মধ্যে যাকাত যাকাত বণ্টন করতে হবে তারাই যাকাতের হকদার।
আল্লাহ তা‘আলা নিজে এদের বর্ণনা দিয়েছেন। তিনি বলেন:
﴿إِنَّمَا ٱلصَّدَقَٰتُ لِلۡفُقَرَآءِ وَٱلۡمَسَٰكِينِ وَٱلۡعَٰمِلِينَ عَلَيۡهَا وَٱلۡمُؤَلَّفَةِ قُلُوبُهُمۡ وَفِي ٱلرِّقَابِ وَٱلۡغَٰرِمِينَ وَفِي سَبِيلِ ٱللَّهِ وَٱبۡنِ ٱلسَّبِيلِۖ فَرِيضَةٗ مِّنَ ٱللَّهِۗ وَٱللَّهُ عَلِيمٌ حَكِيمٞ ٦٠﴾ [سورة التوبة: 60]
“নিশ্চয় সদাকা হচ্ছে ফকীর ও মিসকীনদের জন্য এবং এতে নিয়োজিত কর্মচারীদের জন্য, আর যাদের অন্তর আকৃষ্ট করতে হয় তাদের জন্য; (তা বণ্টন করা যায়) দাস আযাদ করার ক্ষেত্রে, ঋণগ্রস্তদের মধ্যে, আল্লাহর রাস্তায় এবং মুসাফিরদের মধ্যে। এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত, আর আল্লাহ মহাজ্ঞানী, প্রজ্ঞাময়”। ]সূরা তওবা: (৬০)]
যাকাতের খাত আটটি:
১. ফকির: যাদের নিকট তাদের প্রয়োজনের অর্ধেকও নেই। বছরের ছয় মাস যে নিজের ও পরিবারের খরচের বহনে অক্ষম সেই ফকির। তার ও তার পরিবারের এক বছরের প্রয়োজন মোতাবেক তাকে যাকাত দেয়া হবে।

২. মিসকিন: যাদের নিকট তাদের প্রয়োজনের অর্ধেক বা তার চেয়ে অধিক রয়েছে, কিন্তু পূর্ণ বছরের খোরাক নেই, এদেরকে যাকাত থেকে অবশিষ্ট বছরের খাদ্য দেয়া যাবে।
যদি কোন ব্যক্তির নিকট নগদ অর্থ নেই, কিন্তু তার অন্য উৎস, অথবা চাকুরী অথবা সামর্থ রয়েছে, যা তার প্রয়োজন পূরণে যথেষ্ট, তাকে যাকাতের অর্থ দেয়া যাবে না। কারণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«لا حظَّ فيها لغني ولا لقوي مكتسب»
“ধনী ও কর্মঠ ব্যক্তিদের জন্য যাকাতে কোন অংশ নেই”।[24]

৩. যাকাত উসুলে নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গ: যাদেরকে সরকার যাকাত উত্তোলন, যাকাত বিতরণ ও যাকাত সংরক্ষণের জন্য নিয়োগ দেয়, তাদেরকে তাদের কর্ম মোতাবেক যাকাত থেকে পারিশ্রমিক দেয়া যাবে, যদিও তারা ধনী হয়।

৪. ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট করার জন্য বিশেষ ব্যক্তিবর্গ: যারা কোন সম্প্রদায়ের সরদার, যাদের ঈমান দুর্বল, তাদের ঈমানের দৃঢ়তা বৃদ্ধির জন্য যাকাত থেকে তাদেরকে দেয়া যাবে, যেন তারা ইসলামের প্রতি আহ্বানকারী ও তার আদর্শ ব্যক্তিরূপে গড়ে উঠে। আর যদি দুর্বল ঈমানদার ব্যক্তি সরদার না হয়ে সাধারণ হয়, তার ঈমানের দৃঢ়তা বৃদ্ধির জন্য যাকাত দেয়া যাবে কি-না?
কতক আলেম বলেন তাকে যাকাতের অর্থ দেয়া যাবে, কারণ দ্বীনের স্বার্থ শরীরের স্বার্থের চেয়ে অধিক গুরুত্বপূর্ণ। অর্থাৎ ফকিরকে যখন তার শরীরের প্রয়োজনে খাদ্যরূপে যাকাত দেয়া বৈধ, তাহলে তার অন্তরের খাদ্যরূপে ঈমান অধিক উপকারী। কতক আলেম বলেছেন তাকে যাকাত দেয়া যাবে না, কারণ তার ঈমানের দৃঢ়তা বৃদ্ধিতে শুধু ব্যক্তি স্বার্থ বিদ্যমান, যা শুধু তার সাথেই খাস।

৫. গর্দান মুক্ত করা: অর্থাৎ যাকাতের অর্থে গোলাম খরিদ করা ও আযাদ করা, চুক্তিবদ্ধদের মুক্ত হতে সাহায্য করা এবং মুসলিম বন্দীদের মুক্ত করার জন্য যাকাতের অর্থ ব্যয় করা।

৬. ঋণগ্রস্ত: যাদের নিকট তাদের ঋণ পরিশোধ করার অর্থ নেই, তাদের ঋণ পরিমাণ অর্থ কম/বেশী যাকাত থেকে দেয়া যাবে, যদিও তাদের খাদ্যের অভাব না থাকে। ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি যদি এমন হয়, যার নিজের ও পরিবারের খাদ্যের ব্যবস্থা আছে, কিন্তু ঋণ পরিশোধ করার সামর্থ তার নেই, তাকে ঋণ পরিমাণ যাকাত দেয়া যাবে। কিন্তু ঋণী ব্যক্তি থেকে ঋণ মৌকুফ করে যাকাতের নিয়ত করলে যাকাত শুদ্ধ হবে না।
যদি পিতা-মাতা অথবা সন্তান ঋণগ্রস্ত হয়, তাদেরকে যাকাতের অর্থ দেয়া যাবে কি না, এ ব্যাপারে আলেমদের দ্বিমত রয়েছে, বিশুদ্ধ মত অনুযায়ী তাদেরকে যাকাত দেয়া বৈধ।
যাকাত আদায়কারী ঋণদাতার কাছে গিয়ে ঋণগ্রস্তের পক্ষ থেকে তার হক আদায় করে দিতে পারবে যদিও ঋণগ্রস্ত তা না জানে। তবে শর্ত হচ্ছে যাকাত আদায়কারীকে নিশ্চিতভাবে জানতে হবে যে, ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি ঋণ পরিশোধে অক্ষম।

৭. ফি সাবিলিল্লাহ বা আল্লাহর রাস্তা: অর্থাৎ আল্লাহর রাস্তায় জিহাদের জন্য যাকাত দেয়া যাবে। অতএব মুজাহিদদেরকে তাদের প্রয়োজন মোতাবেক যাকাতের অর্থ দেয়া জায়েয। যাকাতের অর্থ দিয়ে জিহাদের অস্ত্র খরিদ করাও বৈধ।
আল্লাহর রাস্তার একটি হচ্ছে, শর‘য়ী ইলম। সুতরাং শর‘য়ী জ্ঞান অন্বেষণকারীকে তার প্রয়োজন মোতাবেক কিতাব ইত্যাদি ক্রয় করার জন্য যাকাতের অর্থ দেয়া বৈধ, তবে সে সচ্ছল হলে ভিন্ন কথা।

৮. ইবন সাবিল: অর্থাৎ মুসাফির, যার পথ খরচ শেষ হয়ে গেছে, তাকে যাকাত থেকে বাড়িতে পৌঁছার অর্থ দেয়া যাবে।
এরা সবাই যাকাতের খাত ও হকদার। আল্লাহ স্বয়ং কুরআনে এদের উল্লেখ করেছেন। এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত ফরয, যা তিনি স্বীয় জ্ঞান ও প্রজ্ঞা থেকে তার বান্দাদের উপর ফরয করেছেন।
এ খাতসমূহ ব্যতীত অন্য কোন খাতে যাকাত ব্যয় করা যাবে না, যেমন, মসজিদ নির্মাণ অথবা রাস্তাঘাট তৈরী বা মেরামত; কেননা আল্লাহ যাকাতের খাত সুনির্দিষ্ট করে দিয়েছেন। নির্দিষ্ট করার পরার পর তা আর অনির্দিষ্ট খাতে দেয়া যায় না।
আমরা যাকাতের এসব খাত নিয়ে চিন্তা করলে দেখতে পাই, এদের কেউ যাকাতের মুখাপেক্ষী, আবার কেউ আছে যার মুখাপেক্ষী মুসলিম উম্মাহ। এখান থেকে আমরা যাকাত ওয়াজিবের হিকমত বুঝতে পারি। অর্থাৎ এর মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে একটি সুশৃঙ্খল ও সুন্দর সমাজ গঠন করা। ইসলাম সম্পদ ও সম্পদের উপর ভিত্তি-করা স্বার্থকে গৌণভাবে দেখে নি। আবার ইসলাম লোভী, কৃপণ আত্মাকে তার প্রবৃত্তি ও কৃপণতার উপর ছেড়ে দেয় নি, বরং ইসলাম হচ্ছে, সর্বোত্তম কল্যাণের পথ-প্রদর্শক এবং জাতিসমূহের সর্বোৎকৃষ্ট সংশোধনকারী।


আমরা বর্তমান সময় এসে যাকাতের এই খাত গুলোর কথা খুব একটা ভাবি না। আমরা যারা যাকাত দেই তারা এখন অনেকাংশে কাপড় বণ্টন করা কেই যাকাতের অন্যতম কার্যক্রম হিসেবে বিবেচনা করি। বর্তমানে গরীবদের মধ্যে কাপড় বিলি করা এক ধরনের একমাত্র নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমার মনে হয় আমরা যারা যাকাত দেই তাদের উচিত যাকাত দেওয়ার আগে যাকাত সম্পর্কে ভালভাবে জ্ঞান অর্জন করে তারপরে যাকাত দেওয়া উচিৎ। তা না হলে হয়ত বা যাকাতের আসল উদ্দেশ্যেই অর্জন করা হবে না।
আর একটা ব্যাপার যেতা না বললেই নয় সেটা হল রোযা শুরু হওয়ার সাথে সাথে কাপড়ের দোকান গুলোতে আলাদা করে লেখা থাকে এখানে যাকাতের কাপড় পাওয়া যায়। দোকান গুলোতে গেলে দেখা যাবে এখানে খুব সস্তায় কিছু নিন্মমানের কাপড় বিক্রি করা হয়। যেগুলো ধনী শ্রেণীর লোকজন কিনে গরীব দুঃখীদের দিয়ে থাকেন।
আমার কথা হচ্ছে যাকাতের জন্য আলাদা কেন কাপড় হবে। যাকাতের জন্য আলাদা কাপড়ের কথা কোন হাদিস কোরআনে লেখা আছে বলে আমার জানা নেই। এমন কোন জিনিস যাকাত হিসেবে দেওয়া উচিৎ নয়, যেটা খুবই নিন্মমানের। বরং এমন কিছু দেওয়া উচিৎ যেটা দীর্ঘস্থায়ী হবে, অনেকদিন ব্যবহার করা যাবে, এবনহ যেটা পেয়ে তারা খুশি হবেন। কারন যাকাতের মুল উদ্দেশ্য হচ্ছে ধনী গরীবের বিভেদ কমিয়ে আনা। আমি নিজে যেটা ব্যাবহার করি না সেটা যাকাত হিসেবে অন্যকে দেওয়াও আমার মনে হয় ঠিক না। আমি বিশ জনকে সস্তা মানের কাপড় না দিয়ে পাঁচ জনকে ভাল মানের কাপড় দেই যেটা পেয়ে তারা খুশি হবেন এবং অনেকদিন ব্যবহারও করতে পারবেন। যে যার মত এলোপাথাড়ি ভাবে যাকাত না দিয়ে আমারা এলাকা বা মহল্লা অনুযায়ী যাকাত ফান্ডের ব্যাবস্থা করতে পারি। যে ফান্ডের কাজ হবে এলাকার গরীব ও অসহায় মানুষকে চিহ্নিত করে তাদের প্রয়োজন তা চিহ্নিত করা। তারপরে সে অনুযায়ী তাদেরকে সাহায্য করা। আমার মনে হয় এভাবে যাকাত দেওয়া গেলে যাকাতের আসল উদ্দেশ্যে অর্জন করা সম্ভব হবে।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.