![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
একদিন আমি হব অস্তিত্বহীন। কিন্তু আমার মানসসন্তানেরা চুপটি করে ঘাপটি মেরে পড়ে থাকবে আমার লেখনীর মাঝে। হয়তো কেউ দেখবে না তাদের, হয়তোবা কেউ কৌতুহলী হয়ে দেখবে কখনো। আর আমার সন্তানেরা, হয়তো অপাংক্তেয়, হয়তো কুলাঙ্গার, তবে তারা ঠিকই চিরকাল তাদের শরীরে বহন করে চলবে তাদের পিতার নাম- একদা অস্তিত্ববান যার মস্তিষ্কে বিদ্যুত্ স্পন্দন খেলে খেলে জন্ম হয়েছিল তাদের।
১৩ বছর মেডিক্যাল সাইন্স পড়েও যখন নন-মেডিক্যাল ২-৩ জনের প্রশ্নের সম্মুখীন হলেম- 'কিটো ডায়েট' সম্পর্কে তুই কী জানস বল্ শুনি?
তখন আসমান থেকে পড়লুম বৈকী। যদিও মেডিক্যালে পুষ্টি নিয়ে অনেক পড়তে হয়, তবুও keto diet নামটা কভু পড়েছি বলে এয়াদ আসে না।
তারা বলল- সারা দুনিয়ার মাইনষে কিটো ডায়েট ফলো কইরা ২ সপ্তাহে ১০ কেজি উজন কমাই লাইল আর তুই নাম হুইনাই ভিরমি খাইলি।
গুগলে সার্চ দিয়ে ত বেকুব বনে গেলাম- কিটো ডায়েট নাকি এই সময়ের ক্রেইজ, ফিগার সচেতনদের ১ম পছন্দ। আর আমি কিনা এখনো এ ব্যাপারে বকলম। রাগে দুঃখে অভিমানে কিটো ডায়েট নিয়ে গত কয়েকদিন স্টাডি করলেম।
যারা লম্বা লেখা না পড়ে এখুনি সটকে পড়ার পায়তারা কষছেন তাঁদের সুবিধার্থে উপসংহারটাই আগে বলে দিচ্ছি- কিটো ডায়েট অধিকাংশ মানুষের জন্যই ক্ষতিকর। আপনারা এক্ষণে অন্যত্র মজা লুটতে যেতে পারেন।
★ নরমাল ডায়েট ও কিটো ডায়েট :
আমাদের দেহ জ্বালানি হিসেবে প্রধানত ২টি জিনিস ব্যবহার করতে পারে- glucose আর ketone body. স্বাভাবিক অবস্থায় শক্তি বা ক্যালরির মূল উৎস থাকে গ্লুকোজ, যা আসে শর্করা (carbohydrate) থেকে। দেহকে শর্করা সাপ্লাই দেয়া বন্ধ করে দিলে তা চর্বি (fat) ভেঙে ভেঙে কিটোন বডি তৈরি করে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করতে শুরু করে।
কেউ প্রয়োজনের তুলনায় বেশি ক্যালরি গ্রহণ করলে তা দেহে চর্বি আকারে জমা হয় ও ওজন বাড়ে। যেহেতু আমাদের খাদ্যে ক্যালরির প্রধান উৎস শর্করা, বেশি শর্করা গ্রহণ করলে (আমরা যেমন এক বেলায় ৩প্লেট ভাত গিলে ফেলি) অতিরিক্ত অংশ দেহে চর্বি হিসেবে জমা হয়।
তাই কিটো ডায়েটের মূলনীতি হোল দেহে শর্করা সাপ্লাই না দিয়ে তেলচর্বি সাপ্লাই করা, অর্থাৎ দেহকে কিটোন বডি থেকে (গ্লুকোজের পরিবর্তে) শক্তি সংগ্রহের অভ্যাস করানো। যেহেতু কিটোন বডি চর্বি থেকে আসে, সুতরাং খাদ্যের এবং দেহের চর্বি গলিয়ে কিটোন বডি তৈরি হয়ে হয়ে দেহের ক্যালরি চাহিদা মেটাতে থাকবে আর ফলশ্রুতিতে ওজনও কমে যাবে- এই হল আশা।
তাই বলা হচ্ছে কিটো ডায়েটে এমন সব উপাদান থাকবে যাতে ক্যালরির ৭০-৭৫% আসে চর্বি থেকে, ২০% আমিষ (protein) থেকে আর ৫% শর্করা। অথচ স্বাভাবিক খাদ্যে ক্যালরির ৫০-৭০% আসে শর্করা থেকে, বাকিটা তেলচর্বি ও আমিষ থেকে। উল্লেখ্য, অধিকাংশ ফল, ডাল, শস্য ও সবজিতে শর্করা থাকায় কিটো ডায়েটে এগুলো খাওয়া নিষেধ!
★ কিটো ডায়েটের প্রভাব :
১. শিশুদের মৃগীরোগ (epilepsy) উপশম- কিটো ডায়েট শিশুদের মৃগীরোগ ও খিঁচুনি হ্রাস করে। কিটো ডায়েট মূলত এই উদ্দেশ্যেই আবিষ্কৃত হয়েছিল। যদিও কীভাবে তা মৃগীরোগ কমায় তার প্রক্রিয়া এখনো অজানা।
২. টাইপ ২ ডায়াবেটিস, টিউমার, পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম, মেটাবলিক সিনড্রোম, আলজেইমার'স ডিজিজ এসব রোগে কিটো ডায়েট উপকারী বলা হয়। তবে এগুলো এখনো যথেষ্টসংখ্যক নির্ভরযোগ্য গবেষণায় প্রমাণিত নয়।
৩. ওজন হ্রাস- দেহকে শর্করা থেকে বঞ্চিত করলে প্রথমেই লিভারে সঞ্চিত শর্করা (glycogen) ভেঙে গ্লুকোজ তথা ক্যালরি তৈরি হয়। এই শর্করার সাথে সঞ্চিত পানিও বেরিয়ে যায়। দেহের মাংস ক্ষয় হয়ে গ্লুকোজ তৈরির চেষ্টা করে। কিটো ডায়েট শুরুর সপ্তাখানেকের ভেতর যে দ্রুত ওজন হ্রাস হয় তা মূলত ঐ সঞ্চিত শর্করা, পানি ও মাংস ক্ষয়ের কারণে। চর্বি ঝরার কারণে নয়। বোঝাই যাচ্ছে এই ওজন হ্রাস শরীরের জন্য ভালোও নয়। পরবর্তীতে তাই আর এত দ্রুত ওজন কমে না কারণ দেহের সঞ্চিত শর্করা, পানি এবং মাংস ক্ষয়েরও একটা লিমিট আছে। এগুলোর ক্ষয় ঐ লিমিটে পৌঁছে বন্ধ হলে পরে শুরু হয় চর্বি ক্ষয়জনিত ওজন হ্রাস, যা ধীরগতিসম্পন্ন। অধিকাংশ মানুষ দীর্ঘদিন সুকঠিন কিটো ডায়েট ফলো করতে পারে না এবং তখন দ্রুত এসব হারানো ওজন ফিরে আসে।
৪. keto flu- দেহকে গ্লুকোজ থেকে বঞ্চিত করায় দেহ প্রথমে এতদিনের অভ্যস্ত জ্বালানি ছাড়া চলতে পারে না। তখন মাথাব্যথা, দুর্বলতা, নির্ঘুমতা, বমিভাব, বদমেজাজ দেখা দেয়।
৫. ভিটামিন ও মিনারেল (লবণ) এর ঘাটতি- যেহেতু কিটো ডায়েটে অধিকাংশ শস্য, ফল ও সবজি খাওয়া বারণ, তাই দেহে ভিটামিন ও মিনারেলের ঘাটতিজনিত অসুখ দেখা দেয়। কারণ শস্য, ফল ও শাকসবজি আমাদের দেহে ভিটামিন ও মিনারেলের প্রধান উৎস।
৬. কোষ্ঠকাঠিন্য- কিটো ডায়েটে ফলমূল ও শাকসবজি খাওয়ার সুযোগ অতি সীমিত থাকায় ফাইবার কম খাওয়া হয়। ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দেয়।
৭. রক্তের কোলেস্টেরল বৃদ্ধি- কিটো ডায়েটের প্রধান উপাদান তেলচর্বি জাতীয় (৭০-৭৫%)। যার ফলে রক্তে কোলেস্টেরল ৩০% পর্যন্ত বাড়তে পারে। ফলে হৃদরোগ, স্ট্রোক এর ঝুঁকি অনেকাংশে বেড়ে যায়।
৮. হাড় ক্ষয়- শরীরে কিটোন বডি বাড়লে ঐ অবস্থাকে বলে কিটোসিস, যা একটি এসিডোসিস। এসিডিক কন্ডিশনে হাড় ক্ষয় হয় (bone demineralisation)।
৯. কিডনি পাথর- হাড় ক্ষয় হয়ে রক্তে ও প্রস্রাবে ক্যালসিয়াম বেড়ে যায়, যা থেকে কিডনিতে পাথর হতে পারে।
১০. শ্বাস ও প্রস্রাবে গন্ধ- কিটোন বডির উপস্থিতির কারণে অস্বাভাবিক গন্ধ হয়।
১১. লিভারে চর্বি জমা
১২. শারীরিক বৃদ্ধি হ্রাস- কিটো ডায়েট growth hormone, IGF-1 কমায় বলে শারীরিক বৃদ্ধি বাধাপ্রাপ্ত হয়।
★ কাদের জন্য কিটো ডায়েট প্রযোজ্য :
১. মৃগীরোগী শিশু- যাদের মৃগীরোগ কোনো ওষুধে নিয়ন্ত্রণে আনা যায় নি। কিটো ডায়েটের অনেক পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া থাকায় শুরুতেই মৃগীরোগ কমাতে এটা চালু করা হয় না।
২. টাইপ ২ ডায়াবেটিস, টিউমার, পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম, মেটাবলিক সিনড্রোম, আলজেইমার'স ডিজিজ যদি চিকিৎসায় নিয়ন্ত্রণে আনা না যায়, তবে কেবল চিকিৎসকের সাথে পরামর্শক্রমে কিটো ডায়েট ট্রাই করা যেতে পারে। কারণ এসব রোগে কিটো ডায়েটের প্রভাব এখনো বিতর্কিত।
৩. যাদের অতি অল্প সময়ে ওজন হ্রাস করা অতি জরুরী। উদাহরণত- চাকরির জন্য।
★ কাদের জন্য কিটো ডায়েট নিষেধ :
১. টাইপ ১ ডায়াবেটিস- এই রোগীদের এমনিই কিটোসিস ও কিটোএসিডোসিস এর প্রবণতা থাকে। কিটো ডায়েট ওদের গ্লুকোজ কমিয়ে ও কিটোএসিডোসিস বাড়িয়ে মৃত্যু ঘটাতে পারে।
২. যাদের পিত্তথলি (gall bladder) নেই /লিভারের অথবা অগ্ন্যাশয়ের রোগ (pancreatic insufficiency) আছে- পিত্তরস ও অগ্ন্যাশয়ের রস তেল-চর্বি হজমে সহায়তা করে। যাদের অপারেশন করে পিত্তথলি ফেলে দেয়া হয়েছে বা অগ্ন্যাশয়ের এনজাইম কম তারা কিটো ডায়েটের এত তেল-চর্বি হজম করতে পারে না। ফলে বদহজম হয় ও চর্বি-ডায়রিয়া লেগে থাকে।
৩. যাদের থাইরয়েড হরমোন কম- কিটো ডায়েট থাইরয়েড হরমোনকে দমিয়ে রাখে।
৪. binge eating disorder রোগী- এই ধরনের মানসিক রোগে মানুষ গলা অব্দি খায় এবং তারপর ইচ্ছাকৃতভাবে বমি করে। কিটো ডায়েট ফলো করলে এই রোগটা মাথাচাড়া দিতে পারে।
৫. লিভারের রোগী - কিটো ডায়েটের এত তেলচর্বিকে কিটোন বডিতে রূপান্তর করা অসুস্হ দুব্বল লিভারের ঘাড়ে পাহাড় চাপিয়ে দেয়ার মতো।
৬. কিডনি রোগী- কিটো ডায়েটে নরমাল ডায়েটের চেয়ে প্রোটিন বেশি থাকে। তা হজম হয়ে অনেক ইউরিয়া তৈরি হয় যা দেহ থেকে দূর করতে অসুস্হ কিডনি বড়ই নাজেহাল হয়।
৭. যারা বডিবিল্ডিং করছেন- কিটো ডায়েট মাংস ও হাড় ক্ষয় করে।
হুজুগে পড়ে বিতর্কিত কিটো ডায়েট ফলো করার আগে বিষয়গুলো মাথায় রাখা প্রয়োজন। সবচে নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর উপায় হোল নিজের পেশা ও কাজ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ক্যালরি হিসাব করে পুষ্টিবিদ/চিকিৎসকের পরামর্শক্রমে আদর্শ ডায়েট ফলো করা এবং ব্যায়াম করা।
২| ২৪ শে এপ্রিল, ২০২০ বিকাল ৫:৩৫
সৈয়দ শওকত আলী বলেছেন: পৃথিবীর সবচে নির্ভরযোগ্য স্বাস্থ্য বিষয়ক সাইটগুলোতে কিটো ডায়েট সম্বন্ধে পড়তে পারেন
https://www.everydayhealth.com/diet-nutrition/ketogenic-diet/what-are-benefits-risks-keto-diet/
https://www.health.harvard.edu/staying-healthy/should-you-try-the-keto-diet
https://www.webmd.com/diet/ss/slideshow-ketogenic-diet
https://en.m.wikipedia.org/wiki/Ketogenic_diet
https://www.healthline.com/health-news/keto-diet-is-gaining-popularity-but-is-it-safe-121914#1
https://www.mayoclinic.org/healthy-lifestyle/weight-loss/in-depth/the-truth-behind-the-most-popular-diet-trends-of-the-moment/art-20390062
https://www.nytimes.com/2019/08/20/well/eat/the-keto-diet-is-popular-but-is-it-good-for-you.html
৩| ২৪ শে এপ্রিল, ২০২০ বিকাল ৫:৩৭
ডার্ক ম্যান বলেছেন: পেটের ভুরি কমানোর কার্যকরী উপায় তাহলে কি
৪| ২৪ শে এপ্রিল, ২০২০ বিকাল ৫:৫৫
সৈয়দ শওকত আলী বলেছেন: একজন চিকিৎসক বা পুষ্টিবিদের শরণাপন্ন হোন। উনি আপনার দৈনিক ক্যালরি চাহিদা হিসাব করে ডায়েট ঠিক করে দিতে পারবেন। এটা ফলো করুন এবং অবশ্যই প্রতিদিন আধা ঘণ্টা ব্যায়াম করুন। এর চেয়ে ভালো উপায় নেই।
৫| ২৪ শে এপ্রিল, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:১৭
সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: ভবিষ্যতে এই ডায়েট/ এর সংশোধিত রুপ পুষ্টিবিদদের সুনজরে আশার সম্ভাবনা আছে কি? নাকি এটাকে পুষ্টিবিদরা গণনায়ই ধরে না? আমার মনে হয় এটা নিয়ে গবেষণা করা যেতে পারে।
৬| ২৪ শে এপ্রিল, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:৪৮
রুদ্র নাহিদ বলেছেন: পুষ্টিবিদের পরামর্শ ছাড়া শুধুমাত্র ফেসবুক,ইউটিউব দেখে ডায়েট কতটুকু স্বাস্থ্যসম্মত সেটা নিয়ে অনেকদিন থেকেই সন্দিহান ছিলাম। এমনেই আমরা নিজেদের নিয়ে অসচেতন তার উপর এখন মা বোনদের এসব কিটো ডায়েট। নিজের অজান্তেই পুষ্টিহীনতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছি।
৭| ২৪ শে এপ্রিল, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:৫৩
রাজীব নুর বলেছেন: ডায়েট আমার ভালো লাগে না।
আমার ঘরে একজন আছে, সব রকমে রডায়েট করে। খুব বিরক্ত লাগে আমার।
৮| ২৪ শে এপ্রিল, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:৫৩
সৈয়দ শওকত আলী বলেছেন: মূলত শিশুদের দুরারোগ্য মৃগীরোগে কিটো ডায়েট ব্যবহার করা সঠিক। অন্যান্য ক্ষেত্রে মানুষ মূলত হুজুগে ফলো করছে।
৯| ২৪ শে এপ্রিল, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:৫৫
সৈয়দ শওকত আলী বলেছেন: শুধু ইউটিউব ফেসবুক দেখে কোনো ডায়েট ফলো করা কখনোইনিরাপদ নয়।
১০| ২৪ শে এপ্রিল, ২০২০ রাত ৮:২৫
নেওয়াজ আলি বলেছেন: Ramadan mubarek
১১| ২৭ শে এপ্রিল, ২০২০ রাত ১২:০৭
সৈয়দ শওকত আলী বলেছেন:
©somewhere in net ltd.
১|
২৪ শে এপ্রিল, ২০২০ বিকাল ৫:২২
সোনালি কাবিন বলেছেন: একজনের মুখে শুনলাম, নাম সম্ভবত ডাঃ জাহাংগীর কবীর, উনি ওজন কমানোর জন্য এইরকম চর্বি থেরাপীর কথা উনার ফলোয়ারদের কথা বলে থাকেন।