নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

FACEBOOK : shawkat.somc

সৈয়দ শওকত আলী

একদিন আমি হব অস্তিত্বহীন। কিন্তু আমার মানসসন্তানেরা চুপটি করে ঘাপটি মেরে পড়ে থাকবে আমার লেখনীর মাঝে। হয়তো কেউ দেখবে না তাদের, হয়তোবা কেউ কৌতুহলী হয়ে দেখবে কখনো। আর আমার সন্তানেরা, হয়তো অপাংক্তেয়, হয়তো কুলাঙ্গার, তবে তারা ঠিকই চিরকাল তাদের শরীরে বহন করে চলবে তাদের পিতার নাম- একদা অস্তিত্ববান যার মস্তিষ্কে বিদ্যুত্‍ স্পন্দন খেলে খেলে জন্ম হয়েছিল তাদের।

সৈয়দ শওকত আলী › বিস্তারিত পোস্টঃ

ক্লিনিক অভিজ্ঞতা

১৭ ই অক্টোবর, ২০২১ দুপুর ১:৩২

কিছুদিন আগে এক প্রাইভেট ক্লিনিকে আমার এক রোগী দেখতে গিয়েছিলেম; এক শিশু, আমার গ্রামের এক বড়ভাইয়ের পুত্র, শ্বাসনালীর সংক্রমণে ভুগছিল।

ক্লিনিকের নাম ধরি ঝন্টু-মন্টু হাসপাতাল। বর্তমানে যেমন এক ফ্ল্যাটে একটি বিশ্ববিদ্যালয় হয় এরও হয়েছে সে দশা। এক ফ্ল্যাটেই দিব্যি হাসপাতাল সেজে বসে আছে।

আমি উনাদের ফোন দিয়ে রুমনং জেনে নিই। রুমের সামনে গিয়ে ছোটখাট ধাক্কা খাই, দরজার ওপর লেখা- ICU.

রুমে ঢুকে গণ্ডদেশে চপেটাঘাত পড়ে। কেননা রুমে ১টি প্রমাণ সাইজের যৌথ পরিবার গাদাগাদি করে বসবাস করছে মনে হল। এখানে বাসন, ওখানে কোসন, সেখানে কাপড় শুকোচ্ছে। ৪-৫টে আণ্ডাবাচ্চা ক্যাওক্যাও করছে। রুমে দুটো রোগী, তিনটে বেড আর স্যালাইন ঝোলানোর স্ট্যান্ড একটি।

কোথায় বসব বুঝে পাই নে। কারণ কোন চেয়ার নেই। জানলার পাশের বেডটা খালি দেখে ওটাতেই বসতে যাই। ভরদুপুরেই রুম অন্ধকার হয়ে আছে। আলোবাতাস নেই। অবস্থা দেখে যেই না জানলার পর্দা সরিয়েছি, অমনি দেখি বিছানা আসলে খালি না, একটি ছাই রঙের হুলো বেড়াল ওটাতে বেঘোরে ঘুমুচ্ছে।

হুলোবেড়ালরা মেনিবেড়ালের মতো আহলাদি বা ইমোশনাল হয় না, তারা হয় অনেক পোড়খাওয়া এবং নির্লিপ্ত। একদা আমি একটি হুলোবেড়ালকে লাথি মারার চেষ্টা করলে সে বিচলিত না হয়ে উল্টো আমার পা শুঁকে বোঝার চেষ্টা করেছিল এটা ভক্ষণযোগ্য কিনা। এমনই নির্ভীক হয় হুলো মশয়রা।

এই হুলোটিও দেখি এর ব্যতিক্রম নয়। আমার আগমনে সে বেড থেকে গাত্রোত্থানের ন্যূনতম অভিলাষ দেখায় না। একটা হাত উঠিয়ে এনে চোখ দুটো ঢেকে রেখে দেয় যাতে আলোতে ঘুমের ডিসটার্ব না হয়।

এমন সময় রুমে নার্স আসেন। আমি বলি- সিস্টার আপনাদের আইছিইউর বেডে ১টা বিলাই সুখনিদ্রা দিচ্ছে।

নার্স কর্তৃত্বের সুরে বলেন- ওমা ঘুমোচ্ছে ঘুমোক না। এটা তো ঝন্টু-মন্টুরই নিজস্ব বেড়াল। এর জম্মকর্ম সবই যে এই ঝন্টু-মন্টুতে।

নার্সের জবাব আমার কাছে খুবই সন্তোষজনক মনে হল। কাজেই আর কথা বাড়াই নে।

নার্স যাওয়ার পর আমি আত্মীয়দের শুধোই- কোন্ বলদা আপনেগো এইখানে নিয়া আইছে?

জবাবে তারা যা বলে, তাতে বুঝি ওরা কঠিন দালালের খপ্পরে পড়েছে। উনাদের বোঝাই ক্লিনিক থেকে অবিলম্বে নিকটস্থ হাসপাতাল নিয়ে যেতে। কিন্তু আমার কথা নিশ্চয় দালালের কথার মতো কনভিনসিং ও মনোহর হয় না। দালালদের কথায় গভীর ও কঠিন আবেদন থাকে। তাছাড়া এক শ্রেণীর পাবলিকের কাছে হাসপাতালের ওয়ার্ডের চিকিৎসার চেয়ে ক্লিনিকের ঘরোয়া পরিবেশ অধিক বাঞ্ছনীয়, যাতে নিশ্চিন্তে জনসমাবেশ রান্নাবাড়া হাগামোতা করা যায়। আমি ব্যর্থ কাউনসেলিং করে চলে আসি।

দুদিন পর বাচ্চাটা মারা যায়। কাজেই নটে গাছটি মুড়োল আমার গপ্পোও ফুরোল।

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ১৭ ই অক্টোবর, ২০২১ দুপুর ২:১১

গফুর মিয়া১৯১ বলেছেন: হাসপাতাল এর নাম ঠিকানা প্রকাশে এত ভয় কেন?

২| ১৭ ই অক্টোবর, ২০২১ দুপুর ২:৪৮

মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: আমাদের দেশের বেশীরভাগ প্রাইভেট হাসপাতালের (কিছু ব্যতিক্রম বাদে ) ছবি মনে একই রকম । আর দালাদের মুখে যতটা মধু ততটাই তাদের আয়-রোজগার। তাইতো দালাল যতটা মুখের মধু দিয়ে রোগীকে সন্তুষ্ট করতে পারবেন সেটা আম জনতা কখনো পারবেনা।

৩| ২০ শে অক্টোবর, ২০২১ বিকাল ৫:২১

সৈয়দ শওকত আলী বলেছেন: বাংলাদেশের অধিকাংশ ক্লিনিকের অবস্থাই এরকম। একটি ক্লিনিক এর নাম নেয়া দরকার মনে করি না।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.