নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অপ্রিয় সত্য

সামান্য সজীব

সামান্য সজীব › বিস্তারিত পোস্টঃ

রাতের আবরণ

১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ৮:৩২

রাত এগারটা। কমলাপুর রেলওয়ে ষ্টেশন। একা বসে আছি। লালমনি একপ্রেস থেকে মিনিট দশেক হলো নামলাম। নানান পদের হকার আছে। যাত্রীরা ট্রেনের অপেক্ষায় বসে আছে। আমার ডান পাশে একটা কোলের বাচ্চা তার মায়ের কোলে ঘুমাচ্ছে। ছেলের বুকে মা বারবার দোয়া পড়ে ফুক দিচ্ছে। বাম পাশে বৃদ্ধ আর বৃদ্ধা। বৃদ্ধর হাতে বই। বৃদ্ধা মনে হয় তার স্বামীর প্রতি মহা বিরক্ত হচ্ছে। শুধু তার বইয়ের দিকে তাকাচ্ছে। এদিক ওদিক ছিন্নমূল মানুষগুলো কুন্ডলী পাকিয়ে শুয়ে আছে। প্লাটফর্মের বাইরে পূর্ব দিকে দুইটি বিড়াল ঝগড়া করছে। সম্ভবত কোনো খাবার নিয়ে। পূর্বদিকের পরিত্যক্ত বগীগুলো থেকে ধোয়া বেরিয়ে আসছে। টিউবলাইট ও সোডিয়ামের মৃদু আলোর সাথে পূর্ণিমার চাঁদের আলো মিলেমিশে একাকার।
- স্যার, চা খাইবেন?
পিচ্চি একটা ছেলে। দশ এগারো বছরের বেশী হবেনা। এক হাতে ফ্লাস্ক। আরেক হাতে ছোট বালতি। ঘুমে চোখ ঢলোমল। কপালে কাটা দাগ। গায়ে ঘিয়া কালারের স্যান্ডো গেঞ্জি। গেঞ্জিটা পুরাতন রাবারের মত বলে গেছে। হাফ প্যান্ট পড়া। বাম পাশের পকেটটা ছিড়া। নিষ্পাপ চাহনি। ঠোঁটগুলো লাল। খুব বেশী লাল। বোধহয় পান খেয়েছে।

- রং চা?
- হু।
- দে, কি নামরে তোর?
- রতন।
- তোর বাপ মা কই?
- মইরা গেছে।
- থাকছ কই?
- থাহি এহানেই । স্যার, বিস্কুট দিমু?
- না। কেউ নাই তোর?
- নানী আছে। দ্যাশে থাহে। ময়মনসিংহ।
- রাতে খাইছস?
- না।
- কত বিক্রি হইলোরে?
- সাড়ে তিনশ।
- এই সব কি তোর নিজের?
- হু। স্যার, ট্যাকা দেন।
পাঁচ টাকার একটা নোট দিলাম। দুই টাকা ফেরত দিয়ে রতন চলে গেল।

সাড়ে এগারটা বেজে গেছে। পরপর দুইটা ট্রেন আসলো। প্লাটফর্ম আবার গরম। ট্রেন গেছে একটা। বৃদ্ধ-বৃদ্ধা আর বাচ্চাসহ মা-টা চলে গেছে। ষ্টেশন থেকে বেরিয়ে এলাম।
- এই রিক্সা পল্টন যাবে?
- আসেন, ৩০ ট্যাকা।
চাঁদটা পরিপূর্ণ। ভরা পূর্ণিমা। রিক্সার টুংটাং শব্দ। মায়াবী একটা পরিবেশ।
- কি নাম আপনার?
- বাবুল।
- বাড়ি কোথায়?
- শেরপুর, নালিতাবাড়ি।
- ভালোই আছেন?
- মুখ ফিরিয়ে, হে হে আছি ভালোই।
- কে আছে বাড়িতে?
- মা, বউ আর এক মাইয়া।
- ডেলি কত থাকে?
- থাকে... চারশ, পাঁচশ, ঠিক নাই।
- নেশা পানি করেন নাতো নাকি?
মুখ ঘুরিয়ে; সন্দেহের চোখে,
- মাঝে মধ্যে শইলডা চাবাইলে....।
- ও, রাখেন। ত্রিশ টাকা দিয়ে বিদায় করলাম।

পল্টন মোড়। রাত বারটা। ফুটপাত ধরে হাটছি। গাছের ছায়ায় এদিকটা খানিক অন্ধকার। প্রেস ক্লাবটা পার হতেই।
- ভাইজান ভালো আছেন?
অচেনা এক লোকের জিজ্ঞাসা। সাথে একটা ছুড়ি বের করলো। রুপালী রং। চকচক করছে।
- আ.... আ.... আছি...। দম বন্ধ হবার অবস্থা।
- মানিব্যাগটা বাইর করেন। পৈশাচিক একটা হাসি। কত আছে? তিনশ? ভাই, মনে কিছু নিয়েন না। মাইয়াডার অসুখ। জ্বর। ঔষধ নেয়া লাগবো। ক্লাস টুতে পড়ে। ছাত্রী ভালো।
ট্যাকা নাই। নেশা কইরা সব শেষ কইরা দিছি। দুইশই নিলাম। মাফ কইরা দিয়েন।

মানিব্যাগটা হাতে ধরিয়ে লোকটা রাস্তা পার হয়ে গেল। হারিয়ে গেল নিমিষেই। ধরে পানি ফিরে এলো। ভাগ্যভালো প্যান্টের গোপন পকেটে পাঁচশ টাকা রেখেছিলাম। অদ্ভুত ইনসান! লোকটার কি আসলেই মেয়ে আছে? নাকি নেই? অরিজিনাল ছিনতাইকারীতো এতো ভদ্রতা দেখানোর কথা না। মানিব্যাগ ফিরিয়ে দিল। হাত ঘড়ি, মোবাইল তাওতো নিলোনা। হতে পারে তার মেয়ে আছে। হতে পারে মেয়েটার জ্বর। আজব দুনিয়া। হাটছি। মৎস ভবন পার হলাম। এদিকটা ভালোই অন্ধকার। একপাশে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। আরেক পাশে রমনা পার্ক। আমি রমনা পার্কের পাশে। হঠাৎ একটা শক্ত চিকন হাত আমার ডান হাত ধরে বসলো। চুড়ির শব্দ আসছে।
- আইসো, ভিতরে যাই। হালকা হাসির শব্দ।
ঝটকা টানে হাত ছুটিয়ে দৌড় লাগালাম। এক দৌড়ে শাহবাগ। একটা চায়ের দোকানে বেঞ্চে বসলাম। দম যায় আর আসে।
- ভাই... ই... ই... পানি...হ...হ।
- কি মিয়া ভাই, ধরছিল নাকি? বেঞ্চে বসা এক লোকের সকৌতুক জিজ্ঞাসা।
- আরে, শালা বুঝস না? তোর মত নাকি? ভদ্রলোক। দোকানদারের তীব্র প্রতিবাদে লোকটা চুপসে গেল।
কাপা কাপা হাতে গ্লাসটা নিলাম। এক নিঃশ্বাসে শেষ করলাম। এখানে হাজার হাজার লোক। মাইকের প্রচন্ড শব্দ। এতক্ষণ ঘোরের মধ্যে থাকায় বুঝতে পারিনি। ক তে কাদের মোল্লা। তুই রাজাকার তুই রাজাকার। ফাসি ফাসি ফাসি চাই। কাদের মোল্লার ফাসি চাই। ভুলেই গিয়েছিলাম এই নরকের কথা। থুঃ থুঃ। চুপচাপ কতক্ষণ বসে থেকে আবার হাটা দিলাম। উদ্দেশ্য টিএসসি। রাত একটা বাজে। এখানেও আড্ডা। কোথাও গিটার। কপোত কপোতি। নেশায় বুদ বিপদগামী তারুণ্য। ব্যাক করলাম। হাটতে হাটতে ফার্মগেট। রিক্সা নিলাম। গন্তব্য মিরপুর- ১। বন্ধুর নাম্বারটা এখনো বন্ধ। একটা গলির মুখে নামলাম। হাটছি। একটা প্রাচীর পার হচ্ছি। কান্নার শব্দ পেলাম। ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদছে। আগ্রহ জাগলো। দেখিনা কি হয়। প্রাচীরের উচ্চতা বেশী না। সাড়ে ছয় ফুট হবে। হাত লাগালাম দেয়ালের উপরে। কুকুরের ডাক। পুলিশের সাইরেন। ভড়কে গেলাম। উঠেছি। একটু সামনে পেয়ারা গাছের নিচে বসে একটা মেয়ে কাঁদছে। টিনএজ। চশমা চোখে। হাতে দড়ি। টুলের উপর দাড়িয়ে দড়ি হাতে আরেকবার কান্না। চোখ মুছলো। দড়িটা ডালে লাগালো শক্ত করে। গলায় দিতে যাচ্ছে। চিৎকার দিয়ে বলে উঠলাম। এক থাপ্পড় খাবি। ভু....ত বলে মাটিতে পড়ে গেল। মনে হয় অজ্ঞান হয়ে গেছে। থাকুক পড়ে। নেমে গেলাম। পুলিশের গাড়ির সাইরেন। একটা নেড়ি কুকুর আমাকে দেখে ঘেউ ঘেউ করে যাচ্ছে।

রাত তিনটা। কোনো বাড়ি থেকে গানের শব্দ ভেসে আসছে। আমি প্রতি রাতে জেগে থাকি তোমার আশায়....। পাশের মসজিদে একটা কিশোর ছেলে অযু করছে। সম্ভবত ছেলেটা ঐ তিন শ্রেণীর যারা জান্নাতে যাবেই। যার এক শ্রেণী হচ্ছে, গভীর রাতে আল্লাহর ভয়ে যে অশ্রু বিসর্জন দেয়। ঢুকে গেলাম মসজিদে। দুনিয়ার সবচেয়ে পবিত্রতম স্থানে। এগিয়ে গেলাম মহান রবের দিকে।

আর হ্যা, আমি রফিক। এসেছি লালমনিরহাট থেকে। রসায়ন থেকে অনার্স শেষ করেছি। রেজাল্ট হায়ার সেকেন্ড ক্লাস। বেকার মানুষ। অনেকগুলো ইন্টারভিউ দেয়া শেষ। কাল আরেকটা। এতোদিন মামার বাসায় উঠেছি। এখন লজ্জা লাগে। আর কত। বন্ধুর মেসে উঠার কথা। ঠিকানাটা ঠিকমত দিলোনা। নাম্বারটাও বন্ধ। একটা চাকরীর খুব প্রয়োজন। মায়ের যে বেজায় অসুখ। বাবার বয়স হয়েছে ক্ষেতে আর বর্গা দিতে পারছেনা। চাকরীটা আমার বড় প্রয়োজন।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ৯:৪৬

ভবোঘুরে বাউল বলেছেন: ভালো লেগেছে। কিন্তু কপি করতে গিয়ে ২ বার পেস্ট হয়েছে। :)

২| ১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ৯:৫৩

সামান্য সজীব বলেছেন: হায় হায়! এডিট অপশনতো খুজে পাই নাই।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.