নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ইরানে ১০ বছর
ডাঃ সাদেক আহমেদ ।
১৯৮৪ সাল, ইরান-ইরাক যুদ্ধ চলছে । আমার আবার ভ্রমণ এর শখ খুব বেশী । তাই ছুটির দিনে নতুন নতুন স্হানে ঘুরতে যাই । আমি তখন মসজিদ সুলেমান শহরে NIOC(National Iranian Oil Company) Hospital এ কাজ করতাম । আমি ও ডাঃ শরিফ (Health Dept এর Hospital এ কর্মরত ছিলো) মাঝে মাঝে ঘুরতে বের হতাম । তখন উভয়ে ব্যাচেলর ছিলাম । তাই একদিন প্লান করলাম পাশের শহর আন্দিমেশ্কে ডাঃ রকীব ও ডাঃ শিপারের (বর্তমানে উভয়ে UK তে কর্মরত এবং citizen) বাসায় বেড়াতে যাব । তারাও তখন ব্যাচেলর ছিলো ।
কোন এক শুক্রবারে ওদের বাসায় বেড়াতে যাই । ওরাও খুব খুশী হয় । নিজেরাই যা যা পারে রান্নাবান্না করে আমাদেরকে খাওয়ায়। খাওয়া দাওয়ার পরে যখন বিশ্রাম নিচ্ছিলাম , তখন হঠাৎ যুদ্ধ বিমানের শব্দ পাই এবং এ কারণে সাইরেন বাজতে থাকে । তখন জানতে পারলাম ইরাকী যুদ্ধ বিমান বোম্বিং করতে এসেছে । কারণ আন্দিমেশ্কে একটা ইরানী এয়ার বেইস ছিলো । সেখানে বোম্বিং শুরু হলো । ডাঃ রাকিব ও ডাঃ শিপার ভয়ে আত্নরক্ষার্থে খাটের নিচে ঢুকে পড়ে । আমার আর খাটের নিচে ঢুকার জায়গা নাই । তাই ভয়ে ভয়ে বল্লাম ' ভাই আমার মাথাটা অন্তঃত ঢুকানোর একটু জায়গা দাও, কারণ বুমে আমার হাত পা চলে গেলেও অন্ত্ঃত মাথাটা থাকবে এবং কথা তো বলতে পারব ।' এই কথা শুনে দুজনেই হেসে বের হয়ে এসে আমাকে জায়গা করে দিলো । এর মাঝে প্লেন চলে গেলো এবং বোম্বিংও বন্ধ হয়ে গেল । তাই আমার আর খাটের নিচে ঢুকতে হয়নি ।
১৯৮৫ সাল, ইরাকের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেন ঘোষণা দিয়েই ইরানের বিভিন্ন শহরে বিমান হামলা বা মিসাইল নিক্ষেপ করে অনেক লোক হত্যা করত । এমনি একদিন ইরাকী প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করল - আমার তখনকার কর্মস্হল "মসজিদ সুলেমান' শহরে আগামীকাল ১১টায় মিসাইল নিক্ষেপ করবে । সেদিন আমি আমার ক্লিনিকে রোগী দেখছিলাম । তখন প্রায় সকাল সাড়ে দশটা বাজে । এক রোগীর ব্লাড প্রেশার নিচ্ছি , তাই একটু সময় লাগছিলো । তখন অপেক্ষামান পরবর্তী রোগী এসে ওই রোগীকে চেয়ার থেকে উঠিয়ে দিয়ে নিজেই রোগীর চেয়ারে বসে বলল , ' ডাক্তার আমাকে এখন দেখ , মিসাইল পড়ার সময় হয়ে গেছে । তাই ওই রোগীকে আর বেশী সময় দেয়া যাবেনা ।' যুদ্ধের সময় এই রকম টেনশন নিয়ে আমাদেরকে এমনভাবে চাকুরী করে Foreign Currency দেশে পাঠাতে হয়েছিলো ।
সেইদিন অন্য হসপিটাল এর Emergency তে ডাঃ শিবুদাও ডিউটি করছিলেন । বিপদ সংকেত বেজে উঠলে ডাঃ শিবুদা রোগীর Exam টেবিল এর নীচে নিজকে সেইভ করতে ডুকে পড়ে, তখন এক বুড়ী রোগী তাকে বলল, ডাক্তার মানরে বিবিন, বাদান জিরে মিজে বুরো. (ডাঃ আমাকে আগে দেখ. তারপর টেবিলের নিচে ডুকো ) তখন বেচারা ডাক্তারকে টেবিলের নিচ থেকে বের হয়ে রোগী দেখে পুনরায় টেবেলের নিচে আশ্রয় নিতে হয় ।
অন্য আরেক দিনের ঘটনা। ডাঃ শিবুদা ও অন্য একজন বাংলাদেশী ডাক্তার ইমার্জেন্সিতে ডিউ্টতে ছিলো । ইরাকী প্লেন বোম্বিং এর বিপদ সংকেত বেজে উঠলে, ডাঃ শিবুদা আত্নরক্ষার্থে রোগীর এক্সামিনেশন টেবিলের নিচে ডুকে পড়ল । তখন অন্য ডাক্তার তাকে বলল, দাদা আপনি বের হন । আমি সদ্য বিবাহিত । তাই আমাকে আগে জায়গা দেন । নয়তো আমার নতুন বউ বিধবা হয়ে যাবে । তখন ডাঃ শিবুদা টেবিলের নীচ থেকে বলল : আমার একটা ছোট্র মেয়েও আছে । তাই বউ বাচ্চাকে এতিম হতে দেয়া যাবে না ।'
এমনিভাবেই ওই যুদ্ধের সময় আমরা অনেক বাংলাদেশি ডাক্তার ইরানে কাজ করেছি এবং New Zealand চলে আসি তারপর পুনরায় অষ্ট্রেলিয়া চলে এসে AMC পরীক্ষা পাশ করে কাজ আরম্ভ করি এবং BMS (বাংলাদেশ মেডিকেল সোসাইটি, NSW) প্রতিষ্ঠা করি । BMS এর প্রথম প্রেসিডেন্ট Dr. Shareef Ud Dowla এবং প্রথম জি.এস. Dr. Motiur Rahman (বর্তমান প্রেসিডেন্ট) । Treasurer: Dr. Jesmin Shafiq. (বর্তমান Treasurer) ।
অতঃপর NSW , Victoria, WA, Queensland, SA, Canberra এবং Gold Coast এর মেডিকেল সোসাইটি সমূহ মিলে 2017 সালে ফেডারেশন তৈরী করি । ফেডারেশনের প্রথম প্রেসিডেন্ট Dr. Ayaz Chowdhury.
ইনশাল্লাহ পরবর্তীতে আমার ইরানের অভিজ্ঞতা আরো লিখবো ।
©somewhere in net ltd.