নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
যাকাত ব্যবস্হা ইসলামের এক অনন্য বৈশিষ্ট । সমাজে অর্থনৈতিক ভারসাম্য সৃষ্টির ক্ষেত্রে যাকাত সবচাইতে কার্যকর ব্যবস্হা । ইসলামী শরীয়তে যাকাত প্রদান না করা একদিকে যেমন চরম অপরাধ, ঠিক তেমনি যাকাত অর্থশালীদের সম্পদে অভাবীদের অভাবীদের অধিকার হবার কারণে যাকাত পরিশোধ না করলে সমাজের একটি বিরাট অংশ তাদের অধিকার থেকে বন্চিত হয় এবং আর্থ-সামাজিক অবস্হা ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ে ।
যাকাত ইসলামের অন্যতম প্রধান বাধ্যতামূলক ইবাদত । ঈমানের পর সালাত আর সালাতের পর যাকাতের স্হান । সালাতের গুরুত্ব ও বিধি বিধান জানা না থাকলে যেমন সঠিকভাবে সালাত আদায় করা যায়না , ঠিক তেমনি যাকাতের শরয়ী গুরুত্ব ও বিধি-বিধান জানা না থাকলে এ গুরুত্বপূর্ণ ইবাদতটিও সঠিকভাবে পালন করা যায় না ।
ইসলামী শরীয়ার সমস্ত উৎস অনুযায়ী যাকাত ফরজে আইন । যাকাত অস্বীকারকারী কাফির । আল-কুরআনে যাকাত প্রদানের অকাট্য নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে । রসূলে করীম (সাঃ) যাকাত প্রদানের নির্দেশ প্রদান করেছেন, যাকাত উসূল করেছেন এবং উসূল করার নির্দেশ দিয়েছেন । অপরিহার্য ফরজ হিসেবে সাহাবায়ে কিরাম যাাকাত আদান প্রদান করেছেন । যাকাত অস্বীকার কারীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছেন। কুরআন শরীফে আল্লাহ পাক বলেছেনঃ
"তোমাদের পবিত্র উপার্জন থেকে একটা অংশ খরচ করো আর যমীন থেকে আমি তোমাদের জন্য যা উৎপন্ন করেছি তার একটা অংশ।" (২ঃ২৬৭)
আল্লাহপাক অনেক বার বলেছেনঃ
"সালাত কায়েম করো এবং যাকাত আদায় করো ।
হাদীসে এসেছে, রাসূল (সাঃ) বলেছেনঃ
"ইসলাম পাচটি স্তম্ভের উপর প্রতিষ্ঠিত ।সেগুলো হলো, এই সাক্ষ্য দেয়া যে, আল্লাহ ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই এবং মুহাম্মদ আল্লাহর রাসূল, সালাত কায়েম করা, যাকাত প্রদান করা, রমাযানের রোজা রাখা এবং সামর্থ থাকলে আল্লাহর ঘরে হজ্জ্ব করা ।" (বুখারী ও মুসলিম)
বস্তুত যাকাত প্রদান করা মুমিনদের বৈশিষ্ট্য । কুরআন শরীফে আল্লাহ পাক উল্লেখ করেছেনঃ
"ঈমানদার লোকদের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে যে, তারা সালাত কায়েম করে, যাকাত পরিশোধ করে এবং আল্লাহর সম্মুখে মাথা নতকারী হয়ে থাকে ।" (সূরা আল-মায়েদাঃ ৫৫)
কুরআন মজীদে এ কথাও ঘোষণা করা হয়েছে যে, যাকাত না দেয়া মুশরিকদের কাজঃ
" আর মুশরিকদের জন্য ধ্বংস, যারা যাকাত দেয় না ও পরকালকে অস্বীকার করে " । (সূরা হামীম সেজদাঃ ৬-৭)
যাকাত না দেয়ার পরকালীন শাস্তি অত্যন্ত ভয়ংকর। কুরআনে আল্লাহ পাক বলেছেনঃ
"যারা সোনা রূপা পুন্জিভূত করে রাখে এবং তা আল্লাহর পথে খরচ করে না, তাদের যন্ত্রাণাদায়ক শাস্তির সুসংবাদ দাও । এমন একদিন আসবে, যেদিন সেসব সোনা-রূপা জাহান্নামের আগুনে উত্তপ্ত করা হবে , তারপর তা দিয়ে তাদের মুখমন্ডল, পার্শ্বদেশ ও পৃষ্ঠদেশে দাগ দেওয়া হবে এবং বলা হবেঃ এই হলো তোমাদরে সেসব অর্থ সম্পদ যা নিজেদের জন্য জমা করে রেখেছিলে । অতএব এখন নিজেদের জমা করে রাখা সম্পদের স্বাদ গ্রহণ করো । (সূরা তওবাঃ ৩৪-৩৫)
রাসূলে করীম (সাঃ) বলেছেনঃ
"আল্লাহ যাকে অর্থ সম্পদ দিয়েছেন, সে যদি সে অর্থ সম্পদের যাকাত প্রদান না করে, তবে তা কিয়ামতের দিন একটি বিষধর অজগরের রূপ ধারণ করবে , যার দু চোখের উপর দুটি কালো চিহ্ন থাকবে । সে বলবেঃ আমিই তোমার অর্থ সম্পদ, আমিই তোমার সন্চয় । এতটুকু বলার পর নবী করিম (সাঃ) নিম্নোক্ত আয়াতটি পাঠ করলেনঃ "যারা আল্লাহর দেয়া অর্থ সম্পদে কার্পণ্য করে, তারা যেন মনে না করে যে, এটা তাদের জন্য মঙ্গল বরং এটা তাদের জন্য অত্যন্ত খারাপ । তারা যে অর্থ সম্পদ নিয়ে কার্পণ্য করছে তাই কিয়ামতের দিন তাদের গলার বেড়ী হবে ।" (সূরা আল-ইমরানঃ১৮০) [বুখারী]
যাকাত দিলে ব্যক্তির সম্পদ কমে না, বরন্চ বাড়ে । যারা গভীর নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সাথে আল্লাহর নির্দেশ মতো তার পথে ব্যয় করে, পরম করুণাময় আল্লাহ এর বিনিময়ে কেবল পরকালে নয় , দুনিয়াতেও ব্যাপক বরকত, স্বচ্ছলতা ও উন্নতি দান করেন । পবিত্র কুরআনে আল্লাহ বলেছেনঃ
"পক্ষান্তরে, আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় পবিত্র অন্তরে যারা দিয়ে থাকে, অতএব, তারাই দ্বিগুণ লাভ করে।" (সূরা রুমঃ ৩৯)
কৃপণ ও লোভী লোকেরা যাকাত দিতে পারেনা । লোভ ও কৃপণতা মানুষের অন্তরাত্নাকে সংকীর্ণ ও সংকোচিত করে দেয় । পক্ষান্তরে যাকাত মানুষের এ সংকীর্ণতাকে ধূয়ে মুছে পরিচ্ছন্ন করে দেয় । আর যারা কৃপণতা ও সংকীর্ণতা থেকে মুক্ত হতে পারে তারাই সফলকাম ।
"যারা মনের সংকীর্ণতা থেকে মুক্ত হতে পারবে , তারাই কল্যাণ লাভ করবে । (সূরা হাশরঃ৯)
আসুন আমরা সঠিক ভাবে যাকাত আদায় করি এবং নিজেদের সম্পদকে পবিত্র করি । যাকাত আদায় করে ইহকালীন দুর্ভোগ ও পরকালীন ভয়াবহ শাস্তি থেকে নিজেেদের রক্ষা করি ।
©somewhere in net ltd.