নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
প্রত্যেক নবীকে আল্লাহ সুবহানাতা'য়ালা কিছু অলৈাকিক ক্ষমতা দিয়েছিলেন যেন তাদের সে মোজেজা দ্বারা এটা প্রমাণিত হয় যে আল্লাহ সুবহানাতায়ালাই তাদেরকে পাঠিয়েছেন এবং উনারা সত্যিকারের নবী । যেহেতু মহনবী (সাঃ) শেষ নবী ছিলেন এবং কেয়ামত পর্যন্ত যত মানুষ আসবে সবাই উনার উম্মত । এজন্য আল্লাহ সুবহানাতায়ালা মহানবী (সাঃ) কে কুরআনের মত একটি কিতাবকে মোজেজা হিসেবে দান করেছেন যাতে রয়েছে বৈজ্ঞানিক আবিস্কারের মত অবিশ্বাস্য অনেক আয়াত যা প্রমাণ করে মরুবাসী ১৪০০ বৎসর আগের কোন ব্যাক্তির পক্ষে এই কিতাব লেখা সম্ভব নয় । এটা প্রকৃতই মহান স্রষ্টা থেকে আগত বাণী এবং মহানবী (সাঃ) সত্যিকারের নবী ।
কুরআনের ১৮তম সূরা কাহাফ নাজিল হয়ে ছিলো অবিশ্বাসীদের কিছু প্রশ্নের উত্তর প্রদানের জন্য , যেটা দিয়ে তারা মহানবী (সাঃ) কে পরীক্ষার সম্মুখীন করেছিলো । তাদের প্রশ্ন ছিলো - গুহার ঘুমন্ত অধিবাসী কারা ছিলো ? মক্কার অবিশ্বাসীদেরকে বলা হয়েছিলো যে, গুহার ঘুমন্ত অধিবাসাীদের কাহিনী হলো পরজীবনের পরিস্কার নিদর্শন । কারণ এর মাধ্যমে এটা প্রমাণিত হয়েছিলো যে আল্লাহ যে কাউকে পুনরায় অনেক বছর ঘুমিয়ে থাকার পরও (তারা ঘুমিয়ে ছিলো ৩০০ বছর) জীবন দিতে পারেন যেমন করে গুহার অধিবাসীদেরকে জীবন দিয়েছিলেন ।
১.
তখন আমি কয়েক বছরের জন্যে গুহায় তাদের কানের উপর (নিদ্রার) পর্দা ফেলে দেই। (১১)
মানুষ ঘুমিয়ে পড়লে তার কানে শুনার কার্যক্ষমতা বন্ধ হয়ে যায় না । এর ফলে কেউ ঘুমিয়ে পড়লেও সে আশে পাশের কোন আওয়াযে ঘুম থেকে জেগে উঠতে পারে । কানের মধ্যে যে নার্ভ আছে তার দুটো ভাগ আছেঃ এক ভাগ কাজ করে কানে শুনার জন্য আর আরেক ভাগ কাজ হলো মাথার ভারসাম্য রক্ষা করা । গুহার অধিবাসীদের জন্য ধারণা করা হচ্ছে যে, আল্লাহ দুটোই বন্ধ করে দিয়েছিলেন , যেন তাদের ঘুম ভেঙে না যায় । এজন্যই আল্লাহ এই শব্দটা ব্যবহার করেছেন - তাদের কানের উপর পর্দা ফেলে দেই । যার ফলে তারা অনেক বছর ঘুমিয়ে ছিলো- কোন আওয়াজই তারা তাদের কান দ্বারা শুনতে পায়নি যেন তাদের ঘুম ভেঙে না যায় ।
২.
তুমি সূর্যকে দেখবে, যখন উদিত হয়, তাদের গুহা থেকে পাশ কেটে ডান দিকে চলে যায় এবং যখন অস্ত যায়, তাদের থেকে পাশ কেটে বামদিকে চলে যায়, অথচ তারা গুহার প্রশস্ত চত্বরে অবস্থিত। এটা আল্লাহর নিদর্শনাবলীর অন্যতম। আল্লাহ যাকে সৎপথে চালান, সেই সৎপথ প্রাপ্ত এবং তিনি যাকে পথভ্রষ্ট করেন, আপনি কখনও তার জন্যে পথপ্রদর্শনকারী ও সাহায্যকারী পাবেন না। (১৭)
আসহাবে কাহাফের অধিবাসীরা যে গুহায় ঘুমিয়ে ছিলো সূর্যের আলো কখনও সে গুহায় সরাসরি পতিত হয় নি, এর মাধ্যমে আল্লাহর গুহার তাপমাত্রা একটা নির্দিষ্ট মাত্রায় ঠান্ডা করে রেখেছিলেন যেন তাদের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ সমূহ নষ্ট না হয়ে যায় । আমরা জানি বর্তমানে যারা মৃত্যুর পর তাদের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ দান করে তাদের দানকৃত অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সমূহ ঠান্ডা তাপমাত্রায় রাখা হয় যেন পচে না যায় ।
৩.
আমি তাদেরকে পার্শ্ব পরিবর্তন করিয়েছি ডান দিকে ও বাম দিকে। (১৮)
আমরা জানি আমরা ঘুমের মধ্যে পার্শ্ব পরিবর্তন করি, এটা খুবই গুরুত্বপূণ বিষয় । আল্লাহ তাদের দেহকে কিছুক্ষণ পর পর এপাশ থেকে ওপাশ পরিবর্তন করে ছিলেন যেন তাদের শরীর সব সময় এক রকম স্হির থেকে রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে গিয়ে শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সমূহ নষ্ট না হয়ে যায় ।
৪.
তুমি মনে করবে তারা জাগ্রত, অথচ তারা নিদ্রিত। (১৮)
আল্লাহ তাদের চোখগুলোকে নষ্ট হয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করেছিলেন চোখের পাতা সব সময় খোলা এবং বন্ধ করার মাধ্যমে । কারণ কারো চোখ দীর্ঘ সময় বন্ধ থাকলে তার চোখের নার্ভ ছোট হয়ে চোখ নষ্ট হয়ে যাবার সম্ভাবনা থাকে আবার দীর্ঘ সময় খোলা থাকলেও চোখ তার কার্য ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে - এজন্য আমাদের চোখের পাতা ফেলতে হয় । এজন্য আল্লাহ বলেছেন- যদি তুমি তাদেরকে দেখতে তাহলে মনে করতে যে- তারা জাগ্রত কারণ তারা ঘুমিয়ে থাকলেও তাদের চোখের পাতা খোলা ছিলো আর আবার কিছুক্ষণ পর বন্ধও করছিলো ।
যদি তুমি উঁকি দিয়ে তাদেরকে দেখতে, তবে পেছন ফিরে পলায়ন করতে এবং তাদের ভয়ে আতংক গ্রস্ত হয়ে পড়তে। (১৮)
তাদের এই বৈসাদৃশ্য দেখলে যে কেউ ভয়ে পালিয়ে যেত, কারন কেউ যদি দেখে যে একজন লোক চোখের পাতা খুলছে আর বন্ধ করছে আবার ঘুমিয়ে আছে । তবে যে কেউ ভয় পেয়ে যাবে ।
আমি এমনি ভাবে তাদেরকে জাগ্রত করলাম, যাতে তারা পরস্পর জিজ্ঞাসাবাদ করে। তাদের একজন বললঃ তোমরা কতকাল অবস্থান করেছ? তাদের কেউ বললঃ একদিন অথবা একদিনের কিছু অংশ অবস্থান করছি। কেউ কেউ বললঃ তোমাদের পালনকর্তাই ভাল জানেন তোমরা কতকাল অবস্থান করেছ। (১৯)
যেহেতু আল্লাহ তাদের সব কিছু ঠিক রেখে ছিলেন সেহেতু তারা ৩০০ বছর ঘুমিয়ে থাকার পরও তারা বুঝতে পারেনি তারা কতদিন ঘুমিয়ে ছিলো ।
বর্তমান অনেক হলিউড বৈজ্ঞানিক বিষয়ক মুভিতে দেখা যায় যে, মানুষ যখন লম্বা সময় ট্রাভেল করে তারা একটি বিশেষ প্রকোষ্ঠের মধ্যে ঘুমিয়ে ট্রাভেল করে । সেখানে দেখানো হয় যে, এতে করে তাদের শরীর একদম ঠিক থাকে এবং বয়সের কোন পরিবর্তন হয় না । বিজ্ঞানের ভাষায় যাকে বলে হাইবারনেশন ।
গুহাবাসীদের এই অলৈাকিক কাহিনী প্রমাণ করে যে, আল্লাহ কুরআনে যা বর্ণনা করেছেন তা সত্য ঘটনা এবং কুরআন সত্য । আল্লাহ তাদের যেভাবে সংরক্ষণ করেছেন এরকম ছাড়া কারো দেহ দীর্ঘ দিন সংরক্ষণ করা সম্ভব নয় । এই ঘটনা থেকে এই শিক্ষা পাওয়া যায় যে, আল্লাহ আমাদেরকে মৃত্যুর পর আমাদের সবাইকে আবার জীবিত করবেন এবং আমাদের কর্মের ফল প্রদান করবেন ।
"বলুনঃ সত্য তোমাদের পালনকর্তার পক্ষ থেকে আগত। অতএব, যার ইচ্ছা, বিশ্বাস স্থাপন করুক এবং যার ইচ্ছা অমান্য করুক। আমি জালেমদের জন্যে অগ্নি প্রস্তুত করে রেখেছি, যার বেষ্টনী তাদের কে পরিবেষ্টন করে থাকবে। যদি তারা পানীয় প্রার্থনা করে, তবে পুঁজের ন্যায় পানীয় দেয়া হবে যা তাদের মুখমন্ডল দগ্ধ করবে। কত নিকৃষ্ট পানীয় এবং খুবই মন্দ আশ্রয়।
যারা বিশ্বাস স্থাপন করে এবং সৎকর্ম সম্পাদন করে আমি সৎকর্মশীলদের পুরস্কার নষ্ট করি না। তাদেরই জন্যে আছে বসবাসের জান্নাত। তাদের পাদদেশে প্রবাহিত হয় নহরসমূহ। তাদের তথায় স্বর্ণ-কংকনে অলংকৃত করা হবে এবং তারা পাতলা ও মোটা রেশমের সবুজ কাপর পরিধান করবে এমতাবস্থায় যে, তারা সিংহাসনে সমাসীন হবে। চমৎকার প্রতিদান এবং কত উত্তম আশ্রয়। (২৯-৩১)
কাহিনীটা এখানে দেখতে পারেন
https://www.youtube.com/watch?v=98qF0oy08AQ
©somewhere in net ltd.