নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি সেলিনা জাহান প্রিয়া , জন্ম পুরান ঢাকা, নাজিরা বাজার , নানা বাড়িতে ।বাবার বাড়ি মুন্সী গঞ্জ , বড় হয়েছি ঢাকা ।স্বামীর বাড়ি কিশোরগঞ্জ ।ভাল লাগে ঘুরে বেড়াতে , কবিতা , গল্প , উপন্যাস পড়তে অজানাকে জানতে । ধর্ম বিশ্বাস করি কিন্তু ধর্ম অন্ধ না ।

সেলিনা জাহান প্রিয়া

পৃথিবির প্রতিটি গল্পের শুরু আছে শেষ নাই শুধু। আমার লিখা কবিতার সাথে গল্পের সাথে আমার জিবনের কোন মিল নেই , আমি লিখি লিখিকা হবার জন্য নয় । ভাল লাগে তাই । অনেকই মনে করে আমি ব্যক্তি জীবনে খুব কষ্টে আছি । আসলে সুখ দুঃখ নিয়েই জীবন ।, অন্য ১০ জন মানুষের মতেই আমার জীবন ।

সেলিনা জাহান প্রিয়া › বিস্তারিত পোস্টঃ

ধারাবাহিক গল্প # অ- মানব # ১২ তম পর্ব ।

২৬ শে জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ৯:৫৫

মিলির ঘর আলো করে মিলি পুত্র এলো । কিন্তু মিলির মায়া লাগছে পাগলটার জন্য । কোথায় গেল না বলে । আসলে ও কি পাগল । মিলি অনেক প্রশ্নের উত্তর অজানা । কিন্তু মিলিকে অল্প সময়ে দিয়ে গেছে অনেক না বলা কথা । আজ মিলির খুব মনে পড়ছে কেমন ছিল ওর মা । বাবা কোন দিন মিলি কে বলে যায় নি তার মায়ের কথা । বাবা সব কিছু আমার নামে করে দিল । এই মা হয়ত আমাকে সব দিয়ে সে তার ভুলের অনুশোচনা করছে । আমি কিন্তু আমার এই মায়ের মত ভুল করব না। পাগলটাই ঠিক বলেছে নিজের বলে কিছুই তার নেই । অনেক ভাবনায় মিলি ঘুমেয়ে পড়ে । জোছনা মিলির মায়ের কাছে বলে নানু আব্বুর গরুটা কি হবে । মিলির মা হেসে বলে হবে । জোছনা খাটে বসে পাগলের শিক্ষা দেয়া চোখ বন্ধ করে দেখতে চায় ও বাবার গরুটা ।জোছনা কিছু ক্ষণ পড়ে দেখে ওর বাবা দুইটা গরুর বাচ্চা কিনেছে । জোছনা একটা হাসি দিয়ে ঘুমেয়ে পড়ে ।
মিলি খুব সকালে ঘুম থেকে উঠে ছাদে যায় । পাগল বোতল কেটে কি সুন্দর করে নাম না জানা পথের ধারের কিছু লতা পাতা লাগিয়েছে । যেন এক দিনেই মনে মত একটা বাগান । কছু গাছ যে এত সুন্দর লাগে মিলি তো অবাক শিশির পড়ে জমে আছে তাতে । মিলি অনেক বছর পড় এই শহরে নিজের হাতে শিশির নিল ।
জোছনার বাপ সকালে হোটেল থেকে নাস্তা নিয়ে আসার সময় , নাপিত ছেলেটা এক বিশাল হাসি দিয়ে বলল । ভাই ঐ মানুষটা কি বাসায় আছে । জোছনার বাপ বলল কেন? নাপিত বলল – ঐ লোক আমার পাচ বছরের কাজ । পাঁচ মিনিটে করে দিয়েছে ।

পাগল টা কমলা পুর থেকে একটা লোকাল ট্রেনে সারা রাতে চলে এসেছে সিলেটে । এখন কেউ দেখলে তাকে পাগল বলবে না । পড়নে দামী জুতা জামা কাপড় । ট্রেন থেকে নেমে সোজা হাটা দিল শহরের দিকে । শীতের দিন বলে হয়ত শহর একটু নিরব।
দুই জন মহিলা রিক্সা না পেয়ে খুব তারা তাড়ি হাঁটছে । রাস্তার চায়ের দোকানে খুব বেশী ভীর । সকালে সিলেটের মানুষ মনে হয় চা একটু বেশী খাঁয় । পাগল টা চায়ের দোকানে সামনে এসে দাঁড়ালো । ঐ দুই জন মহিলা ঐ চায়ের দোকানের সামনে এসে একজন কে বলল – তোমার কোন আক্কল জ্ঞান নাই । রক্ত মিলে না ।
বাচ্চা বাচাইতে চাইলে রক্ত লাগব । বসে থাকা দু জন মানুষ বলল – ও নেগেটিভ রক্ত তো চাইলে ও মিলে না। পাগল ওদের দিকে তাকিয়ে বলল – চিন্তা করবেন না । আমার রক্তের গ্রুপ ও নেগেটিভ । একজন মহিলা ফোন করে কাকে জানে বলছে – ও মা আল্লাহ্‌ মিলাইয়া দিছে । এর মধ্য পাগল কে চা দিতে বলছে । পাগল চা খেতে খেতে একটা গাড়ি চলে আসলো । মহিলা ও পুরুষ সবাই গাড়িতে উঠল পাগল কে নিয়ে ।
একজন বলল – সিলেটের আঞ্চলিক ভাষায় । ভাইসাব আপনের খুনের গ্রুপ নেগেটিভ কিল্লা ? পাশের মহিলা বলল – আল্লাহ্‌ যারে জিমান দিছে । অগুতা অনেক দামী ।
পাগল হেসে বলল- যখন স্রষ্টা মনে করে তার তাকে বাচাবে তখন তার ব্যবস্থা তিনি করেন । তবে চেষ্টা মানুষ কে করতে হবে ।
একজন বলল- আপনার বাড়ী কোথায় ? পাগল বলল আগমন জানি প্রস্তান হব জানি । তাই বাড়ী নিয়ে কোন চিন্তা নেই ।
— আপনার কথা ঠিক বুঝলাম না।
— এই যে বিশাল সাগর । এত মাছ পোকা জলজ প্রাণী এদের কোন বাড়ী আছে ।
— না , নাই
— তাহালে আমার ও বাড়ী নাই ।
হাসপাতালের সামনে থেকে নেমেই । চলে গেল ল্যাবে । ডাক্তার রক্তের গ্রুপ করে দেখল ঠিক আছে । ইতিমধ্য অনেক মানুষ চলে এসেছে যে রক্ত পাওয়া গেছে শুনে । এই শীতের মধ্য একজন ডাব । একজন হাতে জুস নিয়ে দাড়িয়ে আছে ।
ডাক্তার বলল – আপনি এই কাগজে সাক্ষর করেন । পাগল বলল – আমার টিপ
সই নেন । আমি লিখতে জানি না। ডাক্তার বলল- আপনাকে দেখে মনে হয় না যে আপনি শিক্ষিত না। এই বার পাগল হেসে বলল – আপনি কি শিক্ষিত ?
— হ্যা আমি শিক্ষিত না হলে কি ডাক্তার হতে পারতাম ?
— পাগল বলল – আপনি কিছু বিষয় পড়েছেন যা অন্য লোকের আবিস্কার ।
আপনি হলেন সেই সব অবিস্কারকের অনুসারী । যদি আপনি শিক্ষিত
হতেন তাহালে সব জানতেন । চায়না পড়তে পারেন ডাক্তার ?
— ডাক্তার বলল না
— তাহালে আপনি বলবেন আমি বাংলা ইংলিশ জ্ঞান জ্ঞাত । কিন্তু আপনি শিক্ষিত
না । মানুষ এখনো শিক্ষিত হতে পারে নাই । মানুষ যদি শিক্ষিতই হতো তাহালে
দুনিয়ায় শিক্ষিত মানুষ গুলো এত পাপ জুলুম অত্যচার করত না।
— ডাক্তার চুপ হয়ে গেল ।আর কোন কথা বলল না। সামনে ফরম রেখে বলল
আপনার নাম বলুন লেখি ।
—- পাগল বলল আমি রক্ত দিতে এসেছে নাম দিতে না। যদি হয় একটা টিপ সই দিব
। যা খুশি লিখে নেন ।
—- ডাক্তার বলল টিপ নেয়ার মত কিছু নাই । মানে কালি নাই ।
—- পাগল বলল ঠিক আছে আমি দেখছি বলে একটা মেয়ের ব্যাগ হাতে নিল । মেয়ের
ব্যাগ থেকে একটা আই লাইনার নিয়ে বুড়ো আঙ্গুলে লাগিয়ে কি সুন্দর টিপ
দিল । রক্ত দিতে দিতে বলল – ডাক্তার আপনার এই হাসপাতালে আপনি
সহ ১১ জন ও নেগেটিভ রক্তের লোক আছে । কিন্তু ডাক্তার আপনি শুধু রক্ত
নিয়েই গেলেন । কিন্তু আপনি আজ পর্যন্ত কাউকে এক ব্যাগ রক্ত দেন নাই ।
— ডাক্তার বলল আমার রক্ত ও নেগেটিভ আপনাকে কে বলল ।
— ডাক্তার আমি তো আপনার মত না । আমি কিন্তু শিক্ষিত তবে আমি চলে যাবার
পড় । আমার টিপ সই দেখে নিবেন ।
পাশ থেকে একজন বলল এই ডাক্তারের রক্ত ও নেগেটিভ ? পাগল বলল হ্যাঁ কিন্তু
তোমার রক্তের গ্রুপ কি ? জি আমার জানা নেই ? আগে নিজের টা জানতে চেষ্টা কর
তার পর অন্যের টা জানিও ।। পাগল তার রক্ত দেয়া শেষ করলো ।
বাচ্চা বলতে একজন ১৪ বছরে মেয়ে অপারেশনে প্রচুর রক্ত ঝরেছে । ডাক্তার ভাবতেও পারে নাই । এত ছোট একটা টিউমার অপারেসানে রক্ত লাগবে ।
যে চার জন সাত সকালে পাগল কে নিয়ে এসেছে এদের একজনের মহিলার নাম নাজু । অন্য জনের নাম নাদিয়া । তাদের বোনের মেয়ে হল শিলা । শিলার মায়ের নাম নাজু । নাজু ডাক্তারের সাথে কথা শেষ করে । দুই বোন কে ডেকে বলল – রক্ত দেয়া মানুষ কোথায় । নাজু বলল – আপা লোকটা জানি কেমন । কারো দিকে তাকায় না। কিন্তু খুব চমৎকার কথা বলে । এই হাসপাতালে নাকি ১১ জন মানুষের ও নেগেটিভ রক্ত আছে কিন্তু তারা নাকি কেউ রক্ত দেয় না।
— ওরা ডাক্তার । আর ডাক্তার মানেই মমতা কম । তুই দেখ লোকটা কোথায়
আমার সাথে দেখা না করে যেন যায় না। শিলা রক্ত নেয়া শেষ হলে হয়ত
আল্লাহর রহমতে ভাল হবে ।। যা যেয়ে দেখ মানুষটা কোথায় ।
পাগল শীতের মধ্য একটা ডাব খেল । ডাক্তার বলল – ভাই আপনার নামটা যদি
বলতেন । পাগল এবার বলল আজ পর্যন্ত কেউ আমাকে নাম দেয় নাই । যাযাবর আর
পাগলদের নাম কেউ মনে রাখে বলে জানি না। পাশ থেকে একজন নার্স হাসছে । পাগলটাও নার্সের দিকে চেয়ে হেসে বলে – যারা কষ্ট পেতে জন্ম হয় তারা অল্পতে হাসতে পারে । নার্স বলল – আপনি কি মনে করেন আমি কারো দারা কষ্ট পাব ।
পাগল বলে কারো দারা না । বিশ্বাস দারা মানুষ কষ্ট পায় ।
পাগল কে লক্ষ্য করে বলল ভাই নাদিয়া বলল – আপনি আমার বোনের সাথে দেখা না করে কোথাও যাবেন না । পাগল বলল – কে আপনার বোন । ডাক্তার বলল – যেই রোগী কে রক্ত দিলেন সেই রোগীর মা। পাগল বলল – আপনার বোন বলবেন – আমি দেখা না করে কোথাও যাব না। নাদিয়া বলে আসুন আমার সাথে । পাগল কে নিয়ে
নাদিয়া হাসপাতালে হেটে শিলার রুমের দিকে যাচ্ছে । নাদিয়া বলল – আপনি নাকি খুব অদ্ভুত মানুষ । নাম বলেন না। আমার বোন বলল । আমার তিন বোন কোন ভাই নাই । বড় বোনের বিয়ের সাত দিন পর বাবা মারা যায় । আমাদের দুলাভাই মানে যাকে আপনি রক্ত দিলেন তার বাবা আমাদের ছোট বেলা থেকে লালন পালন করেছে । আমরা গত কাল বিকাল থেকে রক্ত পাগলের মত খোঁজতে ছিলাম । আমি
এই সকালে গিয়েছিলাম একজনের কাছে তার রক্তের কথা শুনে । কিন্তু সে নাকি ঢাকা গিয়েছে । আমাদের একটা মাত্র বোনজি । ওর কিছু হয়ে গেলে আপা দুলাভাই কে মনে হয় বাচাতে পারতাম না। আপনি কোথায় থেকে আসলেন । এ যেন আল্লাহ্‌ আমার দুলাভাইরের জন্য নিজের হাতে আপনাকে পাঠাইছে । পাগল বলল- দেখুন সব ভাল কাজের একটা পুরষ্কার আছে । এটা হয়ত তাই । আমি কি মনে করে মিলি খালা কে না বলে হাঁটতে হাঁটতে কমলা পুর চলে আসি । আর কি মনে করে ট্রেনে উঠি আমি নিজেই জানি না। সব চেয়ে মজার কথা সারা ট্রেনে আমি ঘুমিয়ে আসি আমার কাছে কেউ টিকেট পর্যন্ত চায় নাই । আসল কথা কি জানেন । এদেশের মানুষ সুন্দর চেহারা আর ভাল পোশাক দেখলে মনে করে , না জানি কত বড় অফিসার ।। আর ভয় পাওয়ার
কারন হল । যে টিকেট চাইবে সে তো সরকার কে প্রতিদিন দশ বিশ টাকায় কিনে ।
এটাই আজব দেশ যে খানে সত্য দেখার পর চশমা পড়ে মানুষ বলে কিছুই দেখি নাই ।।
পাগলের কথায় নাদিয়া একটু হাসে । যেন অনেক দিন পর নাদিয়ার মুখে সূর্য উঠেছে……..।

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ২৬ শে জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১০:০৭

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন:
প্রথম ভালো লাগা।

++++++

২| ২৭ শে জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১:১২

মাহমুদুর রহমান সুজন বলেছেন: এই পর্বটা বেশে ভাল লেগেছে ।

৩| ০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ৯:১২

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: বেশ লাগছে পর্ব গুলো :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.