নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি সেলিনা জাহান প্রিয়া , জন্ম পুরান ঢাকা, নাজিরা বাজার , নানা বাড়িতে ।বাবার বাড়ি মুন্সী গঞ্জ , বড় হয়েছি ঢাকা ।স্বামীর বাড়ি কিশোরগঞ্জ ।ভাল লাগে ঘুরে বেড়াতে , কবিতা , গল্প , উপন্যাস পড়তে অজানাকে জানতে । ধর্ম বিশ্বাস করি কিন্তু ধর্ম অন্ধ না ।

সেলিনা জাহান প্রিয়া

পৃথিবির প্রতিটি গল্পের শুরু আছে শেষ নাই শুধু। আমার লিখা কবিতার সাথে গল্পের সাথে আমার জিবনের কোন মিল নেই , আমি লিখি লিখিকা হবার জন্য নয় । ভাল লাগে তাই । অনেকই মনে করে আমি ব্যক্তি জীবনে খুব কষ্টে আছি । আসলে সুখ দুঃখ নিয়েই জীবন ।, অন্য ১০ জন মানুষের মতেই আমার জীবন ।

সেলিনা জাহান প্রিয়া › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্প @ নতুন বউয়ের সিনেমা দেখা (১৯৮৪ সালের একটা সত্য ঘটনার ছায়া অবলম্বনে )

১৮ ই মার্চ, ২০১৬ রাত ৮:০০




হাতের বিড়ি টা শেষ টান দিয়া পোস্ত গোলা ডায়না সিনেমা হলের সামনে সন্দু মিয়া
চিৎকার করে বলতে লাগলো এই ডি সি খালি আর মাত্র চারটা টিকেট আছে ।
এই ডি সি । ডি সি । আনসার মিয়া নতুন বউ নিয়া আসছে সিনেমা দেখতে ডায়নায় । ব্ল্যাকে ছাড়া টিকেট নাই । মানুষ আর মানুষ হলের সামনে । শাবান আর আলমগিরের ছবি । আনসার মিয়া টিকেট পায় না । ব্লাকে কিনতে গেলে শুনে চার গুন
দাম । সন্দু মিয়া সাথে দুইটা টিকেট নিয়ে অনেক বার দামা দামি করে কিন্তু সন্দু মিয়া
দাম ছারে না। আনসার মিয়া দেখে হিসাব করে মনেমনে না দাম বেশি হয়ে যায় ।
সন্দু মিয়া কে বলে আপনাদের মত মানুষের জন্য আজ দেশ এই অবস্তা । আপনাকে
পুলিশে দেয়া দরকার । সন্দু মিয়া বলে পুলিশ কে টাকা দিয়েই ব্ল্যাক করি টিকেট ।
অনেক বার কথা কাটাকাটি করে শেষ পর্যন্ত সন্দু মিয়ার দামেই টিকেট কিনে ।
যাই হউক একটু বেশি দামে সন্দু মিয়ার কাছ থেকে টিকেট কিনে বউ কে নিয়ে দু তলায় গেল । নতুন বউ মাথায় কাপড় । হাতে মেহেদি লাগানো । একটা লাজুক লাজুক ভাব আছে যে দেখলেই বুঝা যায় । আনসার মিয়া
বউ কে নিয়ে তার বোনের বাড়ির কথা বলে হলে আসছে । বউয়ের পরনে বোরখা ।
ছয়টা থেকে নয়টা সিনেমা দেখবে । একটু একটু ভয় ও লাগছে আনসার মিয়ার । যদি এলাকার কেউ দেখে ফেলে তাহলে তো ইজ্জত যাবে । যে নতুন বউ নিয়ে হলে আইছে ।
দেশের অবস্তা ভাল না। এরশাদ সাহেব দেশের ক্ষমতায় আইছে । আর্মি নামছে । মার্শাল ল চালু হইছে । নতুন বউয়ের মন রাখতে সে আজ সিনেমা দেখতে আসছে ।
কিছু বাদাম কিনে হলের ভিতরে প্রবেশ করে কেবল সিটে বসছে । বউ হাত দিয়ে দেখায় । দেখ লাল শাড়ি পড়ে আর একজন আসছে । লোকটা বউয়ের কাঁদে হাত দিয়ে
বসে আছে । আনসার বলে লাজ সরম কম । হলের ভিতরে কেউ বউয়ের কাঁদে হাত দেয় । হলের ভিতরে সবাই সোজা হয়ে দাড়ায় । জাতীয় সংগীত হচ্ছে । বউ বলে দাড়ায়ে বলে আমাদের পতাকা কি সুন্দর । আর বাতাস পাইলে ফর ফর করে ঊরে ।
পতাকা দেখলে মনটা শান্তি লাগে । আনসার বলে ঠিক বলেছ । একটা পতাকা আমার
পরিচয় । সিনেমা শুরু হয় । হল নীরব । ছবি যে মানুষ কত ভাল বাসে দেখলে বুঝা যায় । শাবানা আলমগির কে একটা গানে জরিয়ে ধরে । সারা হলের মানুষ সীস দিয়ে উঠে । কেউ চিৎকার করে বলে মার হাবা মার হাবা । নতুন বউ লজ্জায় আরও মাথা নিচু করে ।। সিনেমা বিরতি হয় । ডায়না হলের সামনে থেকে সেভেন আপ কিনে বউয়ের জন্য নেয় । বউ বলে এইটা কি জিনিস । গ্রামের মেয়ে এর আগে দেখে নাই ।
আনসার বলে এটা সেভেন আপ । খুব মজা । বউ বলে গুনা হবে না তো ।আনসার
মিয়া হেসে বলে সিনেমা দেখলে কি গুনা হয় । বউ বলে তুমি যা বল না। আমি একবার বড় আপা আর দুলা ভাইয়ের সাথে দেখছি সিনেমা । তবে আজকের মত পলাইয়া । আনসারের বউ সেভেন আপ মুখে দিয়ে বলে এটা মুখে কেমন জানি লাগে ।
আমি খাব না । তুমি খাও । আনসার বলে আরে খাও বিদেশী শরবৎ অনেক মজা।
সিনেমা শেষ করে হল থেকে বের হয়ে রিক্সা নিয়ে রওনা দিল বাসার দিকে ।
রাত সারে নয়টা বাজে । আর্মি রিক্সা থামায় জুরাইন রেল গেইটের সামনে । রিক্সা চালকে বলে গাড়িতে হ্যারিকেন নাই কেন । রিক্সা ওয়ালা কে লাঠি দিয়ে দুইটা বারি দেয় । রিক্সার চালক বারি খেয়ে স্যার স্যার আর ভুল হবে না বলে মাটিতে গড়িয়ে পড়ে । আবার একটা লাথি দিয়ে বলে হারাম জাদা উঠে দাড়া । কান ধরে ১০১ বার উঠ বস কর । আনসার আলি দিকে এক আর্মি ভাল করে চায় । আনসারের এক হাত তার বউ ধরে রেখেছে ভয়ে । আর্মি বলে
------ এই তোমার সাথে কে
------ আনসার বলে স্যার আমার পরিবার ।
------ পরিবার নাকি অন্য কেউ । রিক্সা থেকে নামে আসো ।
----- আনসার নামে চুপ করে দাড়ায় ।
----- আর্মি বউ কে বলে এই যে ভদ্র মহিলা আপনার শ্বশুরের নাম কি ?
----- আর্মির ভয়ে বউ নিজের বাপের নাম ভুলে গেছে । আর শ্বশুরের নাম কেমনে
বলে । মেয়ে কেঁদে দিয়ে বলে স্যার জানি না।
----- আনসার কে বলল এই তোমার শ্বশুরের নাম কি ?
----- আনসার বলতে পারলো ।
----- আর্মি বলল কোথায় থেকে এসেছ ।
----- স্যার হলে সিনেমা দেখে আসলাম ।
----- বাহ! বেশ তো ! দেশে যে মার্শাল ল তুমি জান ।
----- জি স্যার ।
----- আর্মি আনসারের বউ কে বলে সিনেমা দেখতে আসলেন বাসার সবাই জানে ।
------ আনসারের বউ বলল । না স্যার। মিথ্যা কথা বলে সিনেমা দেখতে আসছি ।
---- আর্মি বলল বাপ মায়ের সাথে মিথ্যা । নাম রিক্সা থেকে । দুই জন মিলে
কান ধরে ১০১ বার উঠ বস কর ।
আর্মি রা সব রিক্সা আর গাড়ি চেক করছে । অনেক কে গাড়িতে তুলছে । কাউকে দু চারটা বারি মেরে ছেড়ে দিচ্ছে । কাউকে চুল বড় রাখার জন্য চুল ধরে মারছে ।
সন্দু মিয়া আর্মি অফিসার কে সালাম দিয়ে বলল স্যার । এরা নতুন বিয়ে করেছে ।
আমাকে স্যার ওদের বদলে সাজা দিন । সন্দু মিয়া বলল স্যার মেয়েটা একদম অল্প বয়স । ভয়ে মারা যাবে । আমার সাথে কোন পরিচয় নাই । উমুক মেজর আমার ছোট ভাই । যাই হউক দুই জন কে ৫ বার কান ধরাইয়ে আর্মি ছেড়ে দিল । আর বলল
অভি ভাবক ছারা ছেড়ে দেয়া যায় না। আপনি যখন বলছেন তাহলে ছারলাম ।
সন্দু মিয়া আনসার কে বলে যাও বাবা । আমার মাকে নিয়ে বাসায় যাও ।
রিক্সায় বসে দুই জন মিলেই কাঁদছে সরমে । কত মানুষের সামনে কান ধরে উঠ বস করলো । রিক্সার চালক বলল আমারে খুব জুরে বারি দিছে । আপনাদের কপাল ভাল
ঐ সন্দু মিয়া আহনে বেঁচে গেলেন । আল্লাহ্‌ নাম নেন । আনসার মিয়া তার পড় যখন
সন্দু মিয়ার সাথে দেখা হয় আনসার তাকে শ্বশুর ডাকে । আর চন্দু মিয়া জামাই
ডাকে । আজ এরশাদ নাই ক্ষমতায় কিন্তু সন্দু মিয়া আর আনসার মিয়া জামাই শ্বশুর
সম্পর্ক আজো আছে ।। আনসারের বউ সন্দু মিয়া কে আব্বাই ডাকে ।।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ১৮ ই মার্চ, ২০১৬ রাত ৮:০৫

আমিই মিসির আলী বলেছেন: হা হা হা!
মজা পাইলাম। =p~

২| ১৮ ই মার্চ, ২০১৬ রাত ৮:১১

সায়ান তানভি বলেছেন: চমৎকার লেখনী।

৩| ১৯ শে মার্চ, ২০১৬ দুপুর ১:০৪

অগ্নি কল্লোল বলেছেন: ভালো লাগলো।

৪| ২০ শে মার্চ, ২০১৬ রাত ১:১০

মহা সমন্বয় বলেছেন: এই ডি সি খালি আর মাত্র চারটা টিকেট আছে ।
এই ডি সি । ডি সি :D

৫| ২০ শে মার্চ, ২০১৬ সকাল ১১:২৯

আরাফআহনাফ বলেছেন: খুব তাড়াহুড়ো হলো যেন।
তারপরও ভালো লাগলো।

ধন্যবাদ জানবেন।

৬| ২৩ শে মার্চ, ২০১৬ রাত ১২:৪৩

এম.এ.জি তালুকদার বলেছেন: লেখা চলুক শ্রাবণ ধারায়।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.