নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি সেলিনা জাহান প্রিয়া , জন্ম পুরান ঢাকা, নাজিরা বাজার , নানা বাড়িতে ।বাবার বাড়ি মুন্সী গঞ্জ , বড় হয়েছি ঢাকা ।স্বামীর বাড়ি কিশোরগঞ্জ ।ভাল লাগে ঘুরে বেড়াতে , কবিতা , গল্প , উপন্যাস পড়তে অজানাকে জানতে । ধর্ম বিশ্বাস করি কিন্তু ধর্ম অন্ধ না ।

সেলিনা জাহান প্রিয়া

পৃথিবির প্রতিটি গল্পের শুরু আছে শেষ নাই শুধু। আমার লিখা কবিতার সাথে গল্পের সাথে আমার জিবনের কোন মিল নেই , আমি লিখি লিখিকা হবার জন্য নয় । ভাল লাগে তাই । অনেকই মনে করে আমি ব্যক্তি জীবনে খুব কষ্টে আছি । আসলে সুখ দুঃখ নিয়েই জীবন ।, অন্য ১০ জন মানুষের মতেই আমার জীবন ।

সেলিনা জাহান প্রিয়া › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্প@ যে কথাটা ট্রেনে বলা হয়নি !!

১১ ই এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১০:৩৭




গাজিপুর জয়দেবপুর থেকে রোজ সকাল ৭ টার ট্রেনে ঢাকা আসে । কমলা পুর থেকে হেঁটে মতিঝিল সেনা কল্যাণ বিল্ডিং ১৮ তলায় যায় একটা অফিসে আসে শ্যামলী ।
অফিস শেষ করে আবার ৭ টায় কমলাপুর থেকে যে কোন ট্রেনে জয়দেবপুর । গত তিন বছর একেই পথে আসা যাওয়া । প্রতিদিন আসাযাওয়া মানে যারা চাকুরী জীবী তাদের সাথে শ্যামলীর একটু একটু পরিচয় হয়ে যায় । শ্যামলী সংসারের বড় মেয়ে । ছোট এক বোন আর এক ভাই আছে । এর মধ্যে সে অনার্স পাশ করেছে । সরকারী চাকুরী পায় নাই । অনেক বার ব্যাংকে চেষ্টা করে কিছুই করতে পারে নাই । আই চাকুরিতা সে নিজে নিজেই চেষ্টা করে পেয়েছে । শ্যামলীর ছোট বোন হটাৎ প্রাইভেট টিচার কে বিয়ে করে ফেল তাই শ্যামলীর মন খুব খারাপ । ভেবেছিল বোনটা পাশ করলে দুই বোন মিলে একসাথে এসে চাকুরী করবে । বি বি এ পাশ না করে , বাবা মায়ের কথা চিন্তা না করে বিয়ে করে ফেলল । এখন ছেলের বাড়ির লোক জন আবার মেনে নিচ্ছে না। শ্যামলী রা থাকে চাচার জায়গায় । বড় চাচা বলে গেছে যদি শ্যামলীর ছোট বোন কাকলী কে বাড়িতে জায়গা দেয়া হয় তাহলে তাদের এই বাড়ি ছারতে হবে । এই দিকে শ্যামলীর বাবা অনেক দিন যাবত অসুস্থ্য ।
মন খারাপ করে বসে আছে অফিসে কি করবে ভাবতে পারছে না । অফিসের বস শ্যামলী কে ডেকে বলল একটা কি শ্যামলী এত মন মরা কেন। কিছু হয়েছে নাকি ।
--- না স্যার কিছু না।
--- না মনে হয় কিছু । আর তুমি তো কিছু বল না। মন খারাপ করে থাকবে না।
শ্যামলী কোন কথা না বলে চুপ থাকে । বস হিসাবে লোকটা কাজ ছাড়া কিছুই বুঝে না।কিন্ত কারো মন খারাপ থাকলে সে চেষ্টা করে একটু কথা বলে সাহস দিতে ।
রোজ ট্রেনে একজন মানুষের সাথে দেখে হয় শ্যামলীর । গত দুই বছরে হয়ত শ্যামলী কোন দিন কথা বলে নাই । টঙ্গি বা বিমান বন্দর থেকে উঠে । আসা যাওয়ার পথে প্রায় দেখা হয় । কিন্তু কোন কথা হয় না। অনেক মানুষ চলার পথে ইচ্ছা করে কত কথা বলে কিন্তু এই মানুষটা একটু অন্য রকম একটা পেরার পড়ে পড়ে যায় আসার সময় সেই পেপার পড়ে চুপ চাপ যায় । কোন যাওয়ার পথে পেপার টা যে কোন সিটের উপর রাখে পরিচিত কেউ আসলে তাকে দেয় । এমন করে শ্যামলী অনেক বার তার জন্য সিট পেয়েছে ট্রেনে ।
বাসায় আসা মাত্র তার চাচা ডেকে বলল শ্যামলী তোমারা আমার বাড়ি ছেড়ে দাও ।
অন্য কোথাও যেয়ে ভাড়া থাক । আর না হয় কাকলী কে বল যেই ছেলে কে বিয়ে করেছে ঐ খানে চলে যেতে । কোন ভদ্রলোকের মেয়ে প্রাইভেট টিচার কে বিয়ে করে না। কাকলী বলল এক সপ্তাহ পড়ে আমি চলে যাব । শ্যামলী কিছুই বলে না।
ব্যাগটা বিছানায় রেখে শুয়ে পড়ে । মাথার কাছে শ্যামলীর মা বসে কাদতে থাকে ।
ছোট ভাইল সজল বোনের কাছে এসে বলে আপু তোমার শরীর ভাল লাগে না। দাড়াও আমি তোমাকে লেবু দিয়ে শরবৎ করে দেই । শ্যামলী বলে নারে লাগবে না। কাকলী
কে ডাক । কাকলী এসে বলে আপা যা হবার হয়েছে চাচা এত বাড়াবাড়ি কেন করছে ।
শ্যামলী কাকলী কে বলে তোর তো লজ্জা সরম নাই । চাচার আছে টাই বলছে ।
---- তুমি কি বলতে চাও । আমি ভুল করেছি । কে আমাকে বিয়ে করবে ।
আমার বাবার কি আছে ?
---- শ্যামলী বলল জিবনে বিয়েটাই সব । মানুষ হিসাবে জন্ম নিলেই বিয়ে করতে হবে।
তোর কি একবার সজল বাবা মা এদের কথা চিন্তা করা দরকার ছিল না।
---- আমি যা করেছি চিন্তা করেই করেছি । আমার কে বুদ্ধি দিয়ে লাভ নাই ।
তোমার মত বোকা আমি না। জীবনের ভাল মন্ধ আমি এখন বুঝি । চাচা কে কি
চাইলে বের করে দিতে পারবে ।
---- কাকলী যা তো আমার সামনে থেকে । সকালে আমার অফিস আছে । বাবার
জন্য মেডিসিন আনতে হবে । সজল বলল আপু আমি যাচ্ছি । তুমি শুয়ে থাক ।
কাকলী একা একা কতক্ষণ কথা বলে অন্য রুমে চলে যায় । সকাল আজ আর অফিস যেতে পারে নাই । অনেক মানুষ সমাজের সবাই সবাই কর্তা । শ্যামলীর চাচা সবাই কে নিয়ে এসেছে । সারা বাড়িতে চিল্লাচিল্লি পড়েগেছে সব দোষ শ্যামলীর মায়ের । কারন শ্যামলী মা এই ছেলে কে ফ্রি পড়াইতে রাখছে । কাকলী তার চাচা কে বলল
কাকা আপনি বলেন আপনি যা বলবেন এটাই আমারদের মানতে হবে । আপনি
বাবার আপন ভাই । আমার বোন ভুল করেছে এটা আমি স্বীকার করে নিচ্ছি ।
চাচা বলল দেখ মা তোমাদের বোনদের জন্য সমাজে আমাদের মুখ দেখাতে পারি না।
তুমি রোজ সকালে যাও আসো রাতে । ঢাকা চাকুরী কর না কি কর আল্লায় জানে । কাকলী তোমার বোন সে কি করে বিয়ে করে একা একা । ছেলের বাড়ি মানুষ বলছে
তারা কোন খারাপ মেয়ে কে মেনে নিবে না। কাকলী বলল চাচা এই কথা গুলো
ছেলের বাড়ির লোক জন কে এসে বলতে বলেন । ছেলে তো বলেছে আগামী সাত দিনের মধ্যে কাকলী কে নিয়ে যাবে এই সাত দিন সময় দিন ।
সাতদিন পড়ে কাকলীর বিষয় নিয়ে কাকলীর স্বামীর বাড়ি লোক জন বসবে । শ্যামলী
আর কাকলী কেউ কারো সাথে কথা বলে না। রাত নয়টায় কাকলীর স্বামী জামান এসে বলে আপা কোন চিন্তা করবেন না।আমার মামা আর বড় দুলা ভাই কাল কর আসবে আপানদের সাথে কথা বলে কাকলী কে আশাকরি নিয়ে যাবে আমাদের বাড়িতে। শ্যামলী তিন দিন পড়ে আজ অফিসে যাচ্ছে । ট্রেনে উঠার পর সেই মানুষটা
আগেই একটা পেপার সিটের উপর রেখেছিল টা সরিয়ে বসতে দেয় ।শ্যামলী অবশ্য একটা নিদিষ্ট জায়গা থেকে উঠে ট্রেনে ঐ মানুষটাও ঠিক শ্যামলীর সাথে উঠবে ।
কেউ কাউকে কিছুই বলে না। শ্যামলী কিছুর বলার আগেই ভদ্রলোক এক বোতল পানি
দিয়ে বলল আজ আপনাকে খুব ক্লান্ত দেখাছে । নিন একটু পানি খান । শ্যামলী পানি নিয়ে অর্ধেক বোতল পানি খেয়ে নেয় । বোতল টা আর ফেরত দেয় না ।
বাসায় এসে দেখে কাকলীর শ্বশুর বাড়ির লোকজন এসেছে । শ্যামলীর চাচাও বসা ।
কিন্তু ছেলের বাড়ি লোক জন কাকলী কে নিতে চায় না। টাকা পয়সা দিয়ে বিষয় টা
শেষ করতে চায় । আজ ছেলে আসে নাই । কাকলীর সাথে সারাদিন যোগাযোগ হয় নাই তার স্বামীর । সবাই মিলে সিদান্ত দেয় যে কাকলী কে লাখ খানেক টাকা দিয়ে দিবে।ছেলের বাবা বলে দিয়েছে এই মেয়ে তার বাড়িতে জায়গা দিবে না। ছেলের বাবা
সবার সামনে বসা সবাই কে ধমক দিয়ে দিয়ে কথা বলছে । অনেক লোক জন নিয়ে এসেছে । শ্যামলী কাকলী কে বলল কি রে জামান কোথায় ?
--- কাকলী বলে ওর ফোন বন্ধ । কেউ বলতে পারে না। আমকে একবার ফোন
করে বলেছে পরিবারের লোকজন ম্যানেজ করতে পারছে না।
----- বিয়ে করার আগে তাহলে এই চিন্তা কেন করে নাই । এখন কি করবি ?
----- আপা আমি মরে যাব । আমি ভাবতে পারি নাই । জামান এমন করবে ।
----- বড়লোকের ছেলেরা কোন দিন কারো ভালবাসা হয় না। টাকা থাকলে
সকাল বিকাল ভালবাসা ওরা কিনতে পারে । আমি তো তোর চেয়ে সুন্দরী
কই আমাকে কে তো কেউ ভালবাসার কথা বলে না। ভালবাসা ৫ দিনে ৫রাতে
শেষ হয়ে গেল ।এদের সাথে কই আমরা পারব । আমরা গরীব মানুষের মেয়ে
আমাদের ভালবাসা ওরা টাকা দিয়ে বিছানা গরম করার জন্য করে । আমি
তোর মায়ের পেটের বোন । আমাকে তো একবার বলতে পারতি ।
---- আপু আমি এখন কি করব । জামান আমাকে শেষ করে দিল ।
---- থাক আর কান্না করিস না। আমি কথা বলি ।
সবাই কে সালাম দিয়ে বলল কাকা আমার বোনের তো কোন দোষ নাই ।
---- ছেলের দুলাভাই বলল , আপনার বোনের ই তো দোষ । কত সাহস একটা মেয়ে
হয়ে একা একা একটা ছেলে কে বিয়ে করে ফেলে ।
---- ঠিক আছে আমার বোনের দোষ । আপনার শ্যালক জমজম পানির গোসল করা
আর আরবের খুরমা খেজুর ।
---- আপনি এভাবে কথা বলছেন কেন । আমরা আসছি এটা সামজিক ভাবে শেষ
করতে । আপনার চাচা তো আছে কথা বলার ।
----- যা বলার আমাকে বলুন । আমারা চাচার খাই না, পড়ি না। আমি বড় মেয়ে এই
সংসার আমি চালাই । আমার বোন ভুল করেছে একটা অমানুষ কে বিশ্বাস
করেছে ।
----এটা তো কোন মিমাংসার কথা না।
---- কি চান আপনারা তাই বলেন ।
---- আমারা এই বিষয় টা শেষ করতে চাই ।
---- কি ভাবে শেষ করতে চান ।
---- আমরা মেয়ে কে কিছু টাকা দিয়ে দিতে চাই ।
---- কত টাকা দিবেন
---- এক লাখ ।
---- আচ্ছা আমার ছোট ভাই এবার এস এস সি পরীক্ষা দিবে । তিন বছর পড়ে
আপনার একটা মেয়ে পাঠিয়ে ৫ দিনের জন্য বিয়ে দিয়েন আর ঐ টাকা টা- ঐ
মেয়ে কে দিয়ে দিয়ে দিয়েন ।। সবাই এই কথা শুনে হাসি দিয়ে উঠে । শ্যামলী বলে
দেখেন আমারা খারাপ না। কাজ করে খাই । কাজের জন্য রাস্তায় নেমেছি । আমি
দেখব এই রাস্তার শেষ কোথায় ।
---- শ্যামলী তুমি কি হুমকি দিচ্ছ আমাদের ।
---- দেখুন যাকে নিয়ে শেষ করবেন সেই জামান কোথায় ?
---- তাকে কি দরকার জামানের বাবা তো আছে ?
---- জামানের বাবা তো আর বিয়ে করে নাই ? বিয়ে জামান করেছে ।
আপনারা যদি মীমাংসা চান জামান কে লাগবে । আমার টাকা লাগবে না। ওরে একটু
দেখতে চাই কেমন মায়ে জন্ম দিয়েছে এমন সভ্য ছেলে ।।
সবাই মিলে বলল এটা কি কোন কথা হল শ্যামলী আমরা তো তোমাকে ভাল জানি ।
শ্যামলী বলল টাকা আমাদের লাগবে না। তবে আমার দেখার আছে ।
জামানের বাবা বলল মেয়ে মানুষের এত পাওয়ার দেখাতে নেই । আচ্ছা দেখা যাক কি হয় । আমিও দেখে নেব । তখন পা ধরে বসে থাকতে হবে। দের টাকার মেয়ে কত বড় কথা ।এই সবাই চলেন । এরা কি করে দেখা যাবে ।
কাকলী কাদতে থাকে । চাচা বলে মেয়ে মানুষদের এত সাহস ভাল না।
শ্যামলী সকালে অফিসের যাওয়ার সময় বোন কে নাস্তা নিজের হাতে খাওয়ে যায় ।
ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করছে ঐ ভদ্রলোক দূরে বসে পত্রিকা পড়ছে । শ্যামলীর বোনের
জন্য বার বার চোখে পানি আসছে । কি হবে বোনের জীবন তাই ভাবছে । কখন যে চোখ দিয়ে পানি পড়ছে টা ভুলে গেছে । পাশের ভদ্রলোক একটা টিস্যু পেপার দিয়ে বলল
চোখের পানি মুছেন । কেন কান্না করছেন । এমন চুপচাপ মানুষটার মনে কি এত দুঃখ।
শ্যামলী আজ মানুষটির দিকে চেয়ে চোখের পানি মুছে বলল - ট্রেন চলে আসছে । একটু
পানি দেন । লোকটি পানি দিল । হাতে বোতল নিয়ে ট্রেনে উঠল সকাল তখন আঁটটা বাজে । একটা সিট খালি শ্যামলী কে বসতে দিল । শ্যামলী জানালার পাশে বসে আছে
আর চোখ দিয়ে পানি পড়ছে । বিমান বন্দর ষ্টেশনে আসার পর শ্যামলীর পাশের সিট খালি হতেই শ্যামলী বলল আপনি বসুন । গত দুই বছরে আজ ই প্রথম তারা পাশাপাশি বসল । ভদ্রলোক বলল কি টিস্যু তো শেষ হয়ে যাবে আর কান্না করলে ।
শ্যামলী এবার বলল কন্যা করা ছাড়া আর কি করার আছে ।
----- আমি কি জানতে পারি কান্নার কারন কি ?
----- সব এই ট্রেনে বলে শেষ করা যাবে না।
----- আচ্ছা ট্রেন থেকে নেমেই শুনা যাবে কেমন !
----- কাকলী বলল আজ অফিস করতে মন চাইছে না।
----- আরে একদিন অফিস না করলে কি হয় ।
----- কিছু হবে না। কিন্তু অফিস কামাই করা ঠিক না।
----- হ্যাঁ এটা ভাল চিন্তা ।
----- আচ্ছা আপনার নাম জান হল না । আমি শ্যামলী ।
----- আমি ইকবাল । কত দিন এই একেই রেল গাড়িতে কিন্তু কোন কথা হয় না।
----- আপনি তো কোন কথা বলেন না।
------ আপনি যে চুপ চাপ থাকেন তার পর মুখ থাকে বাংলার পাছের মতো ।
------ দেখুন ইকবাল সাহেব আপনি হাসাতে চেষ্টা করছেন । কিন্তু আমার পক্ষে
হাসা কিছুতেই সম্ভাব না।
ট্রেন কমলাপুর চলে আসে সকাল নয়টা ১০ মিনিট । শ্যামলী কে বলল চলুন শেষ মাথায়
গিয়ে বসি । প্রথম দিনেই তো কোন চাইনিজ এ আমন্ত্রণ করতে পারি না।
শ্যামলী একটু হেসে বলল আমার এই কপাল নাই । সস্তা চায়ের মাঝে অনেক বিশ্বাস থাকলে সেটা কফির চেয়ে মজা কি বলেন ।।
---- আরে একদম ঠিক কথা । তা শ্যামলী গত দুই বছরের উপরে আমি আপনাকে দেখছি । কোন দিন এমন মন খারাপ দেখি নাই । আমাকে বলেন তো কি সমস্যা ।
আর দাঁড়ান চায়ের কথা বলে আসি । ঐ লোকটার চা খুব ভাল । আপনার আসার দেরি হলে আমি এই খানে বসে চা খাই আর আপনার অপেক্ষা করি ।।
----- আমার জন্য অপেক্ষা করেন ইকবাল সাহেব ।।
------- হ্যাঁ , সত্য । আপনার শান্ত চেহারা টা দেখলে আমার মন ভাল হয়ে যায় ।
------- ভাল তা তো জানতাম না।
------- আজ যে আপনি শ্যামলী আমার সাথে কথা বলছেন এটা বিশ্বাস হচ্চে না।
এখন বলেন তো মন কেন খারাপ ।
------ আসলেই আমার মনটা আজ খুব খারাপ । তাই ভাবছি অফিস না করে কোথায়
একটু বসে সময় কাটাই ।
শ্যামলী বলল বোনের সব কথা । এখন তারা তার বোন কে নিবে না। আরও কত
হুমকি শ্যামলীর পারিবারিক সব কথা বলল ইকবাল কে ।।
----- ইকবাল শ্যামলীর কথা শুনে হাসতে লাগলো । আরে শ্যামলী তুমি তো ভালই
বলেছে তাদের টাকা লাগবে না। আচ্ছা কোন চিন্তা কর না। বিষয় টা আমি
দেখছি ।
----- আপনি দেখবেন মানে বুঝতে পারলাম না। ওরা অনেক টাকা ওয়ালা মানুষ ।
মাস্তান । আমি নিজেই ভয়ে আছি ।।
------ আরে শ্যামলী কোন ভয় নাই । আমার সাথে চল ।
------ কোথায় ।
----- পাগলের হাসপাতালে বোকা মেয়ে । চলো পুলিশ হেডকোয়াটার এ। আমার
আমার আপন মামা ডি এই জি । আমার ছোট ভাই এস পি । কোন কথা নাই
চল আমার সাথে । শ্যামলী কে নিয়ে পুলিশ হেডকোয়াটার আসে । শ্যামলী
খুব অবাক ইকবাল সাহেব কে চিনে সবাই । মামার রুমে যেতেই বলল মামা
ওর নাম শ্যামলী । ডি আই জি মামা বলল - এই মেয়ে কি রেল কন্যা ।
------- হ্যাঁ মামা ।
------ ডি আই জি বলল মা বস । শ্যামলী খুবেই অবাক হল । এত বড় অফিসার কিন্তু
কত সুন্দর করে কথা বলছে ।
------ ডি আই জি বলল আমি পুলিশ মানুষ । ২৪ বছর পুলিশে চাকুরী করি । ইকবাল
দেখেই বুঝে গেছি যে এই মেয়েটি সেই মেয়ে যার জন্য আমার একমাত্র ভাগ্নে
রোজ রেল গাড়িতে চরে । যাই হউক দুপুরে আমার সাথে কিন্তু খাবে মা ।
----- শ্যামলী তো অবাক এই মানুষটা আমার জন্য রোজ ট্রেনে চরে কিন্তু আমিই জানি
না।
------ ইকবাল বলল মামা শ্যামলীর একটা সমস্যা ।
------ কি সমস্যা মা ।
----- শ্যামলী বলল সব কথা ।
----- আরে বল কি মা? ওর বাপ তোমার পায়ে ধরে কুল পাবে না। এই খানে ঠিকানা
লিখো ছেলের ।
----- শ্যামলী ঠিকানা লিখে দেয় । সব কিছু ভাল করে বুঝিয়ে বলে । ডি এই জি মামা
কে । ইকবাল বলে মামা কাজ কখন শুরু হবে ।
----- এখনি শুরু হবে । ডি আই জি বলে মা তোমার মোবাইল নাম্বার টা দাও ।
ডি আই জি নিজ সিট থেকে উঠে অন্য রুমে গেল । এসে বলল মা তোমার ফোন
সন্ধ্যা পর্যন্ত বন্ধু কর ওকে । কাজ করে দিয়েছি । এই নাও আমার নাম্বার
ইকবাল লাগবে না। তুমি বলবে আজ থেকে যে তুমি ডি আই জি আলতাফ
মাহামুদের ভাগ্নি ।
---- দুপুরের খাবার শেষ করে পুলিশ হেডকোয়াটার থেকে বের হয় । একটা রিক্সা নিয়ে
ইকবাল কে বলে আমাকে নিয়ে একটু টি এস তে যাবেন । আপনি একটা রহস্য
মানুষ । এই আমার জন্য রোজ আপনি এত কষ্ট করেন । আচ্ছা আমি যদি বিবাহিত
হতাম ।
---- ইকবাল একটু হেসে বলে তাহলে পুরা কপাল হত ।
---- কবে থেকে আমাকে এভাবে অনুসরণ করছেন ।
---- থাক সে কথা । আমার বাসা উত্তরা । মা আর ছোট ভাই কে নিয়ে থাকি । আমি
একটা ব্যবসা করি । একমাত্র বোনের বিয়ে হয়ে গেছে । বাবা নাই । ছোট ভাইটা
কিন্তু পুলিশের চাকুরী করে । শ্যামলী অনেক দিন আগে হরতালের সময় আমি
একটা ঘাম ভুলে রেল গাড়িতে ফেলে আসি । সেই খামে একটা ওপেন চেক ছিল ।
----- হ্যাঁ আমার মনে আছে ত্রিশ লাখ টাকার । আমি থানায় মতিঝিল থানায় জি ডি
করে জমা দেই ।
---- হ্যাঁ আমি সেই চেকের মানুষ । তার পর তোমাকে খুজে বের করি । আর তোমার
পিছু লাগি ।
---- শ্যামলী বলল অনেক কথা বললাম আজ বাড়ির কি অবস্তা আল্লাহ্‌ জানে ।
----- এখন ৫.৩০ মিনিট চল কমলা পুর যাই ।
--- চল যাই । শ্যামলী আজ বুঝতে পারছে এই মানুষটা তাকে ভালবাসে ।
তার জন্যই এত কষ্ট করে ।
বিমান বন্দর নেমে গেল যাওয়ার সময় ইকবাল তার ভিজিটিং কার্ড টা দিয়ে গেল ।
ট্রেন চলে যায় শ্যামলী জানালা দিয়ে চেয়ে থাকে ।
বাসায় আসা মাত্র ছেলের বাবা মা দুই জন শ্যামলীর পায়ে ধরে বসে পড়ে । অনেক মানুষ । ছেলে ছেলের বোন জামাই মামা চাচা বাড়ির ১১ জন কে ধরে নিয়ে গেছে ।
চাচা এসে বলল - মা শ্যামলী তারা কাকলী কে নিতে চায় । বউ হিসাবে । শ্যামলী
বলে না চাচা । আমাদের মত রাস্তার মেয়ে কারো বউ হতে পারে না।
সজল বলল আপা জামান ভাই রে পুলিশ হেবি মাইর দিচ্ছে । আর ঐ বেটা দুলা ভাই কে আমার সামনে একটা চর যে দিছে । শ্যামলী বলে থাক বলতে হয় না।
------জামানের বাবা বলল মা ভুল হয়েছে ।
------ আমি তোমার বাবার মত ।
শ্যামলী বলল আরে এটা তো আগেই বুঝা উচিৎ ছিল । এখন আমার হাতে কিছুই নাই
আমার মামা ডি আই জি সাহেব বিষয় টা দেখবে । থানা থেকে এস আই এসে বলল
সবাই কে ধরে থানায় রাখা আছে । একটা জি ডি হিসাবে । এখন আপনি আসলেই
থানায় মামলা হবে । ওসি সাব বলছে আপনি আসলেই মামলা হবে । যৌতূক ও নারী
নির্যাতন । সবাই সাক্ষী দিয়েছে । শ্যামলী বলল --
আমি চাই না আমার বোনের জীবন নষ্ট হউক । এখন বলুন আমার বোন কে কিভাবে
নিতে চান ।
---- জামানের বাবা বলল মা তুমি যে ভাবে চাইবে । শ্যামলী বলল একটু অপেক্ষা
করুন । ইকবাল কে ফোন দিল শ্যামলী ।
---- ইকবাল বলল নিতে চাইলে ভাল একটা লিখিত দিয়ে যেন মেয়ে নিয়ে যায় ।
শ্যামলী বলল বউ যে ভাবে নিয়ে হয় এই ভাবে আমার বোন কে নিয়ে যান ।
রাত ১১ টায় কাকলিকে নতুন বউ সাজিয়ে বিদায় দেয় , সবাই তো অবাক । কাকলী
বলে আপু এক মা জন্ম দিয়েছিল আজ তুমি নতুন করে জন্ম দিলে আমায় । বোন কে বুকে জরিয়ে কান্যা করে বলে যার সাথে সততা আছে তার সাথে আল্লাহ্‌ আছে ।
সকাল ৭ টায় শ্যামলী ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করছে । কিন্তু আজ ইকবাল নেই ।
গত তিন দিন ইকবাল নেই । শ্যামলী ফোন করে ইকবাল কে । কি আপনি কোথায় ?
---- আমি অফিসে
---- ট্রেনে নাই কেন ?
----- কারন ট্রেনে আর বলার মত কথা নেই ।
----- তবে আমি কি করব ?
------ যে কথা ট্রেনে বলা হয় নাই তুমি যদি বল তাহলে বলতে পারি ।।
----- থাক সে কথা ট্রেন এসেছে আমি উঠলাম ।
----- বিমান বন্দর নেমে যাও আমি সেই কথাটা বলব ।
------ কি বিমানে চরে বলবে ।
------ দরকার হলে ঢাকা সিলেট বিমানে বসেই বলব ।
----- আচ্ছা তাই কর আমি আসছি । শেষ কথাটা শুনতে হবে............।

মন্তব্য ৯ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৯) মন্তব্য লিখুন

১| ১১ ই এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১০:৪৩

প্রামানিক বলেছেন: ১ম হয়েছি চা দেন। চা খেয়ে ধীরে সুস্থে পড়বো। ধন্যবাদ

১১ ই এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১০:৪৭

সেলিনা জাহান প্রিয়া বলেছেন: লেবু চা । লাকি এলাচি , লং চা হয় , আদা দিলে মন্দ না কি বলেন

২| ১১ ই এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১১:৪৩

মহামানব রেহান বলেছেন: অসাধারন ।
মজার ব্যপার এই যে , আমি জয়দেবপুর থেকে সকালের ট্রেন এ যাই । মাঝে মাঝে একজনের সাথে দেখা হয় ।একটু আধটু কথাও হয়

১২ ই এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১২:০৯

সেলিনা জাহান প্রিয়া বলেছেন: মন দেয়া নেয়া হলে বলবেন আর একটা লিখব

৩| ১২ ই এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১২:০০

মুহা:ওবায়দুল হক বলেছেন: অসাধারন.।.।.।.।.।.।.।.।.।।। আপু

৪| ১২ ই এপ্রিল, ২০১৬ সকাল ১০:২৬

হাদী কুষ্টিয়া বলেছেন: ভালো লাগলো পরে ................................

৫| ১২ ই এপ্রিল, ২০১৬ সকাল ১০:৩৭

মনিরা সুলতানা বলেছেন: ভালো লেগেছে +++

৬| ১২ ই এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ১২:৪৫

আজিজার বলেছেন: অনেক সুন্দর লিখেছেন। অসাধারন ।

@ প্রামানিক ভাই অাপনি সবসময় চা খান কেন, যা গরম পরছে মাঝে মাঝে ঠান্ডা কিছু তো খেতে পারেন।

১২ ই এপ্রিল, ২০১৬ বিকাল ৫:৪৫

সেলিনা জাহান প্রিয়া বলেছেন: আমি ও তাই বলি গরমে নো চা

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.