নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মাঝে মাঝে মনে হয় জীবনটা অন্যরকম হবার কথা ছিল!

শেরজা তপন

অনেক সুখের গল্প হল-এবার কিছু কষ্টের কথা শুনি...

শেরজা তপন › বিস্তারিত পোস্টঃ

এভাবেই প্রিয়-অপ্রিয় মানুষগুলো চলে যায়!

২২ শে আগস্ট, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৯


পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, চট্টগ্রাম থেকে ঢাকার দিকে যাচ্ছিলো একটি কাভার্ডভ্যান। পথে নুরজাহান রেস্টুরেন্টের বিপরীত পাশে হানিফ পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাস ইউটার্ন নিচ্ছিলো। এ সময় সামনের কাভার্ডভ্যান নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে যায় এবং এর নিচে চাপা পড়ে একটি প্রাইভেটকার ও সিএনজি। প্রাইভেটকারটিতে করে একই পরিবারের চারজন কুমিল্লার দিকে যাচ্ছিলেন। বাবা-মা ও দুই সন্তান ছিল কারটিতে। ঘটনাস্থলেই তাদের মৃত্যু হয়।
শুক্রবার (২২ আগস্ট) দুপুরে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার পদুয়ার বাজার বিশ্বরোডে পল্লি বিদ্যুৎ সমিতির সামনে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

নিহতরা হলেন- কুমিল্লা বরুড়া উপজেলার হোসেনপুর গ্রামের মোহাম্মদ ওমর আলী (৮০), তার স্ত্রী নুরজাহান বেগম (৬৫), তার বড় ছেলে আবুল হাশেম (৫৩) ও ছোট ছেলে আবুল কাশেম (৪৫)। প্রাইভেটকারটি চালাচ্ছিলেন আবুল হাশেম।
~ কি অদ্ভুত আকস্মিক মৃত্যু!!!!
***
প্রতিদিন এমন কত দুর্ঘটনার খবর বিভিন্ন নিউজ মিডিয়াতে আসে। একবার আধবার চোখ বুলিয়ে 'আহা উহু' বলে এড়িয়ে যাই কিংবা ভুলে যাই। ব্যাপারটা আজকেও তেমন ছিল। কিন্তু এই শেষ বিকেলে একটা ফোন পেয়ে শুরু হল বুকের ভেতর চাপা কষ্ট আর সেই সাথে একটা অদ্ভুত শুন্যতা অনুভব হচ্ছে।
প্রাইভেট কার যিনি চালাচ্ছিলেন তার সাথে মাস কয়েক আগে প্রফেশনালভাবে পরিচয়। তিনি একটা ব্যাঙ্কের ব্রাঞ্চ ম্যানেজার। লম্বা হ্যাংলা পাতলা চাপা গায়ের রঙ। আমাদের কাছাকাছি বয়স। ভদ্রলোক প্রচুর কথা বলেন- কথা শুনতে শুনতে মাথা ধরে যেত। কথার ফাঁকে ফাঁকে একটু বিরতি দিয়ে বলতেন, ভাই বসেন একটু- আমার আবার বাজে অভ্যাস আছে। এই একটা সিগারেট টেনে আসছি।

ওই ব্যাঙ্কের এক উর্ধ্বতন কর্মকর্তা আমার ভুজম ফ্রেন্ড।
একটা ক্যাশ ক্রেডিট লোনের জন্য এই ম্যানেজারের সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল। আমার সেই বন্ধুর সাথে তার দারুন দহরম; যেন উস্তাদ শিষ্যের সম্পর্ক! সেজন্য আমাকে পেলে সে সহজে ছাড়ে না।
ক'দিন আগে মেয়ে এইচ এস সিতে জিপিএ ফাইভ পাওয়াতে দারুন ফুর্তিতে ছিল সে। আমাকে বলল, আপয়ানাকে তো খালি মিষ্টি খাওয়াব না- একদিন আয়োজন করে খাব। ( উল্লেখ্য সেদিন আমার লোন এপ্রুভ হয়েছিল)

এরপর কথা হয়েছে ফোনে কিন্তু দেখা আর হয়নি।
যদিও জীবনে তার কোন উচ্চাশা কিংবা বাড়তি কোন চাহিদা ছিল না তবুও তিনি চাকরির বাইরে ব্যাবসা করতেন,সেটা ওপেন সিক্রেট। গত মঙ্গলবারে তার বিজনেস প্রমোশনের জন্য আমার কাছ থেকে কিছু গিফট বক্স নিয়েছিলেন।
বক্সগুলো হাতে পেয়ে তার প্রশংসা করে ও আমাকে পেমেন্ট নিতে অনুপ্রাণিত করার জন্য প্রচুর ম্যাসেজ পাঠিয়েছিলেন। ম্যাসেজের বারবার নোটিফিকেশনের টুং টাং শব্দে আমি কিছুটা বিরক্ত হয়েছিলাম। কারো অতি প্রশংসা ও অতি আহ্লাদ আমি খুব বেশি উপভোগ করিনা। তবে কে জানত সেগুলোই তার শেষ ম্যাসেজ- আর কোনদিন তিনি আর অতি বাগ্মীতায় গল্প জুড়ে দিবেন না, এই নম্বর থেকে কেউ আর কোনদিন ম্যাসেজ পাঠাবে না।
ওপারে ভাল থাকুন প্রিয় হাশেম ভাই।

মঙ্গলবার শেষ বিকেলে তার শেষ ম্যাসেজ। ~ মঙ্গলবার শেষ বিকেলে তার শেষ ম্যাসেজ।

আত্মকথনঃ
* প্রতিদিন অযথাই কত ঝগড়া করি বিবাদ করি তুচ্ছ কারনে কত মানুষকে শত্রু বানাই। কখনো কাউকে শাপ-শাপান্ত করি। ভাবি যে, লোকটা মরে গেলে বিশ্ব সংসারের সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে চট জলদি। কত মানুষের সামান্য কথায় বিরক্ত হই। অথচ ভাবিনা কেউ একটু আবেগে দু'দন্ড গল্প করতে চায়-একটু ভালবাসা পেলে ডানা মেলে ফড়িং এর মত উড়াল দেয়। প্রতিরাতে ভাল একজন মানুষ হাবার সদিচ্ছা নিয়ে ঘুমাতে যাই আর পরদিন আগের থেকে ভয়ঙ্কর দানব হয়ে জেগে উঠি!
অথচ এভাবে চোখের নিমিষে আমিও হয়তো হারিয়ে যাব একদিন যেভাবে পরিচিত অপরিচিত, প্রিয়জন আর অপ্রিয় মানুষগুলো চলে যায় প্রতিদিন।

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ২২ শে আগস্ট, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:১০

করুণাধারা বলেছেন: শেষ মেসেজ কী দিলেন!! মনে হয় খুব বিপর্যস্ত অবস্থায় পোস্টটি লিখেছেন! পড়ার পরে আমারও মন খারাপ হয়ে গেল। একটি পুরো পরিবার শেষ হয়ে গেল।

২২ শে আগস্ট, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:২৩

শেরজা তপন বলেছেন: আহ্‌ বাজে একটা ব্যাপার হয়ে গেল!!
পালটে দিয়েছি। অনেক ধন্যবাদ আপু।

২২ শে আগস্ট, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৩৪

শেরজা তপন বলেছেন: আত্মকথন হিসেবে আরেকটু যোগ করেছি।

২| ২২ শে আগস্ট, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৩১

কামাল১৮ বলেছেন: দুঃখজনক ঘটনা।শুনে মন খারাপ হয়ে গেলো।মৃত্যু একটি চিরন্তন সত্য বিষয়।আমরা সবাই মেনে নিই।কিন্তু স্বাভাবিক মৃত্যু হলে দুঃখবোধ একটু কম হয়।

২২ শে আগস্ট, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৩৭

শেরজা তপন বলেছেন: মন খারাপ হবার মতই ঘটনা। এটা হোক পরিচিত কিংবা অপরিচিত কারো। আপনি গাড়ি চালাচ্ছেন আর একটা লরি উল্টে এসে পড়ল আপনার উপরে- কি অদ্ভুত ভয়ঙ্কর মৃত্যু!!!

৩| ২২ শে আগস্ট, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৩৭

সৈয়দ কুতুব বলেছেন: বাংলাদেশে ৫০ হাজার লোক হতে পারে বছরে সড়কে মারা যায়। পংগু হয় আরো বেশি । কত মানুষ তার আপনজন কে হারায় ভাবলেই মন খরাপ হয়ে যায় । বিচার আড়ালে দাড়িয়ে কাদে ।

২২ শে আগস্ট, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৩৮

শেরজা তপন বলেছেন: ঠিক বলেছেন। যখন কেউ নিজের কাউকে হারায় তখন সে-ই অনুভব করতে পারে হারানোর যন্ত্রনা।

৪| ২২ শে আগস্ট, ২০২৫ রাত ৯:১৯

শায়মা বলেছেন: সেদিন আমারও এমন করেই নুরুভাইয়াকে মনে পড়ছিলো।

৫| ২২ শে আগস্ট, ২০২৫ রাত ১০:০১

গিয়াস উদ্দিন লিটন বলেছেন: দুঃখজনক

৬| ২২ শে আগস্ট, ২০২৫ রাত ১০:৩৮

জুল ভার্ন বলেছেন: মানুষের মৃত্যু অবধারিত- এটাই জীবনের নির্মম সত্য। কিন্তু সেই মৃত্যু কবে, কোথায়, কীভাবে আসবে- তা জানার ক্ষমতা কারও নেই। তাই মৃত্যু নিয়ে আতঙ্কিত না হয়ে, আমাদের উচিত প্রতিটি মুহূর্তকে মূল্যবান করে তোলা, ভালোবাসা ছড়িয়ে দেওয়া, অন্যের জীবনে আলো জ্বালিয়ে যাওয়া। কারণ শেষ নিশ্বাসের আগে আমরা যে ভালো কাজগুলো রেখে যাবো, সেটাই হবে আমাদের প্রকৃত পরিচয় ও অমরত্বের পথ।

আপনার বন্ধু অকাল প্রয়াত হাসেম সাহেব আমার ব্যাংকার বন্ধু বুলবুল সাহেবের কলিগ ছিলেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.