| নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
শেরজা তপন
অনেক সুখের গল্প হল-এবার কিছু কষ্টের কথা শুনি...
✦✦✦✦ভুল ঠিকানার গ্লানি: সুস্থ রোগীরা ঘরে ফিরতে পারছে না✦✦✦✦
✦এরা কারা?
✦তাদের অপরাধ কী?
✦উত্তর একটাই—ভুল ঠিকানা।
পাবনা মানসিক হাসপাতাল—দেশের সর্ববৃহৎ মানসিক স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র। দীর্ঘ ৬৮ বছরের ইতিহাসে অসংখ্য অসুস্থ মানুষ এখান থেকে ফিরে গেছেন নতুন জীবনে, নতুন আশায়। কিন্তু হাসপাতালের লাল ভবনের পেছনের নীরব বাগান আর বাতাসে ভেসে বেড়ায় কিছু নামহীন কণ্ঠস্বর—যারা সুস্থ হয়েও বাড়ি ফিরতে পারেনি।
✦হাসপাতালের সোনালি রূপ, আর এক লুকানো অন্ধকার;
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এডুকেশনাল অ্যান্ড কাউন্সেলিং সাইকোলজি বিভাগের একদল শিক্ষার্থী ২০১৩ সালে হাসপাতালটি পরিদর্শনে গিয়েছিল। তাদের চোখে ধরা পড়ে আধুনিক চিকিৎসা, পরিপাটি পরিবেশ, প্রশিক্ষণের সুযোগ, বিনোদন, খেলাধুলা—সবই।
রোগীদের জন্য টিভি, পুষ্টিকর খাবার, এমনকি কাঠের কাজ ও কম্পিউটার শেখার সুযোগ পর্যন্ত আছে।
হাসপাতালের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট মেজবাহ-উল-হক বলেছিলেন—
“আমরা চাই রোগীরা সুস্থ হোক, আর সুস্থ হওয়ার পর যেন ঘরে ফিরে যেতে পারে। কিন্তু অনেক পরিবার ভর্তি সময় ভুল ঠিকানা দিয়ে যায়। সুস্থ রোগীর ঘরে ফেরার পথ তখনই বন্ধ হয়ে যায়।”
✦ভুল ঠিকানার ভয়াবহ বাস্তবতা;
রোগী ভর্তি করার সময় পরিবারের পক্ষ থেকে নাগরিক সনদপত্র ও একটি জামানত জমা দিতে হয়। নিয়ম ছিল, রোগী সুস্থ হলে পরিবারের সদস্যরা এসে নিয়ে যাবে।
কিন্তু দেখা যায়, অনেক ক্ষেত্রে পরিবারের লোকজন রোগীর নাম, ঠিকানা এমনভাবে দেয় যাতে হাসপাতাল পরবর্তীতে তাদের খুঁজে না পায়।
✦ফলাফল:সুস্থ মানুষটি আর কখনও বাড়ি ফিরে যেতে পারে না।
২০১৪ সালে একটি রিটের পর হাইকোর্ট নির্দেশ দেয়, “শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ রোগীদের স্বজনদের কাছে পৌঁছে দিতে হবে।”
তবুও গত এক দশকে হাসপাতাল সর্বোচ্চ চেষ্টা করেও মাত্র ১০ জন রোগীকে পরিবারের কাছে ফেরাতে পেরেছে।
এখনও কমপক্ষে ৭ জন সুস্থ রোগী হাসপাতালেই আটকে আছেন, কারণ তাদের ঠিকানা আর মেলে না।
✦একজন চিকিৎসকের কণ্ঠে ব্যথা; হাসপাতালের পরিচালক ডা. শাফকাত ওয়াহিদ বলেন—
“অনেক পরিবার মনে করে মানসিক রোগী মানে বোঝা। কেউ লজ্জা থেকে, কেউ সম্পদ ভাগাভাগির ভয় থেকে মিথ্যা ঠিকানা দেয়। সুস্থ হওয়ার পরও তাই কেউ নিতে আসে না।”
তিনি আরও বলেন,
“কিছু রোগীর মৃত্যু হয়েছে, কিন্তু ঠিকানা ভুল থাকায় লাশও পরিবারের কাছে পৌঁছানো যায়নি। ভাবতে পারেন, একজন মানুষ বেঁচে থাকলেও পরিত্যক্ত, মরে গেলেও নিঃসঙ্গ?”
✦একজন রোগীর চোখে ‘বাড়ি’ শব্দের মানে
হাসপাতালের নারী ওয়ার্ডের এক রোগী—নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক—নরম স্বরে বলেন,
“আমি এখন ভালো আছি। ওষুধ খাই, কাজ করি। কিন্তু কেউ নিতে আসে না। আম্মা কি বেঁচে আছে জানি না।”
তার চোখের কোণে জমে থাকা অশ্রু সাক্ষ্য দেয়—সুস্থতার চেয়েও বড় কষ্ট হলো অবহেলা।
✦মানসিক রোগী নয়, মানুষ;
পাবনা মানসিক হাসপাতাল এখন আর আগের মতো অন্ধকার গারদ নয়।
লাল ভবন, ফুলের বাগান, মুক্ত বাতাসে পরিপূর্ণ এই হাসপাতাল আজ অনেকটাই মানুষবান্ধব।
কিন্তু যে ৫০০ শয্যার মধ্যে কিছু শয্যা দখল করে আছে সেই “ভুল ঠিকানার মানুষগুলো”, তারা যেন সমাজের এক বিবেকের আয়না।
✦তারা বলে না, কিন্তু তাদের নীরবতা চিৎকার করে—
“আমরা পাগল নই, আমরা ভুলে যাওয়া মানুষ।”
✦প্রশাসনিক ও সামাজিক দায়;
প্রযুক্তির যুগে এনআইডি, ফোন নম্বর, ডিজিটাল ঠিকানা—সব কিছু থাকলেও বহু বছর আগে ভর্তি হওয়া রোগীদের তথ্য আপডেট করা হয়নি।হাসপাতাল চেষ্টা করছে, কিন্তু সমাজের সহমর্মিতার ঘাটতি এখানেই সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা।
✦একজন নার্স বলেন—
“আমরা যখন ফোন দিই, আত্মীয়রা বলে—‘ভাই, সে তো অনেক আগেই মারা গেছে।’ অথচ লোকটা আমাদের সামনেই বসে হাসছে!!!”
✦মানুষকে ফেরানো মানুষের কাছেই;
সুস্থ মানসিক স্বাস্থ্যের শেষ ধাপ হচ্ছে পুনর্বাসন, আর পুনর্বাসনের প্রথম শর্ত ভালোবাসা ও গ্রহণযোগ্যতা।
চিকিৎসা যতই আধুনিক হোক, যদি পরিবার রোগীকে বর্জন করে—তবে হাসপাতাল আর সমাজের মাঝখানে এক অদৃশ্য প্রাচীর থেকেই যায়।
পাবনা মানসিক হাসপাতালের এই গল্পটি শুধু কয়েকজন রোগীর নয়—এটি বাংলাদেশের এক গভীর সামাজিক সংকটের প্রতিচ্ছবি।
যেখানে রোগীর অসুস্থতা নয়, বরং আমাদের অসহানুভূতিই তাদের বন্দি রাখে।
✦শেষ কথা;
পাবনার হাসপাতাল চমৎকার পরিবেশে দাঁড়িয়ে আছে—সবুজে ঘেরা, পরিচ্ছন্ন, যত্নে ভরা।
কিন্তু সেই সুন্দর ভবনের ভেতরে আজও কিছু চোখ প্রতিদিন জানালার বাইরে তাকিয়ে থাকে,
বাড়ি ফেরার অপেক্ষায়...
যে বাড়ির ঠিকানাটাই হয়তো কখনও ছিল না।
ওরা যা বলে সত্যিই হয়তো; “আমরা পাগল নই, আমরা ভুলে যাওয়া মানুষ।”
*****
তথ্যগত সহায়তাঃ অরুণ শীল, সাংবাদিকঃ গ্রামের কাগজ
ও ফৌজিয়া সারমিন টুকটুক Admin of Mental Health, Mymensingh
নিবন্ধন লিখনে ও ভাষাগত ত্রুটি সংশোধনঃ চ্যাট জিপিটি
✦ছবি স্বত্বঃ শেরজা তপন
১৯ শে অক্টোবর, ২০২৫ দুপুর ১২:০০
শেরজা তপন বলেছেন: ফৌজিয়া শারমিনের আর্টিকেলটা বের হয়েছিল ২০২২ সালে কিন্তু ঘটনা ১৩/১৮ সালের।
আপনার এক্সপেরিয়েন্সের গল্পটা বইলেন
ধন্যবাদ
২|
১০ ই অক্টোবর, ২০২৫ দুপুর ১২:৩৮
রাজীব নুর বলেছেন: পাবনা মানসিক হাসপাতালে সাধারনত গরীব রোগীরা থাকে।
আমি পরিদর্শন করেছি। নিজের চোখে দেখেছি এইসব মানসিক রোগীদের সাথে দশনার্থীরা মজা করছে। বিষয়টা আমার মোটেও ভালো লাগেনি।
ভালো একটা বিষয় নিয়ে লিখেছেন। এজন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
১৯ শে অক্টোবর, ২০২৫ দুপুর ১২:০১
শেরজা তপন বলেছেন: সেই ঘটনা কি লিখেছিলেন?
হ্যা পাগল বলে অনেকেই মজা পায়!
৩|
১০ ই অক্টোবর, ২০২৫ বিকাল ৪:৩৯
বিজন রয় বলেছেন: বাংলাদেশে প্রতিদিন এমন কিছু ঘটনা ঘটছে যা সব ভয়াবহ অমানবিকতা।
১৯ শে অক্টোবর, ২০২৫ দুপুর ১২:০১
শেরজা তপন বলেছেন: মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ ভাই- সহমত।
৪|
১০ ই অক্টোবর, ২০২৫ রাত ৮:৪৭
অপ্সরা বলেছেন: আহারে জীবন! কত কষ্টেই না মানসিক রোগী হতে হয় তার উপরে আবার ভালো হয়ে যাবার পরেও মানসিক কষ্টের আরেক বোঝা কাঁধে চেপে থাকে!!!
১৯ শে অক্টোবর, ২০২৫ দুপুর ১২:০৪
শেরজা তপন বলেছেন: অনেকে শত্রুটা করে পাগল বানিয়ে তারপরে তার সম্পত্তি ভোগ করে।
খুন না করে পাগল বানিয়ে সবকিছু ভোগ দখল করা সহজ। আবার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বা ব্যাবসায়িক পার্টনাররাও করে। তারাই ঠিকানা দেয় না বা ভুল ঠিকানা দেয়।
৫|
১০ ই অক্টোবর, ২০২৫ রাত ৮:৫০
কামাল১৮ বলেছেন: বাংলাদেশ এমন একটা দেশ, তারা তাদের নাগরিকদের সঠিক পরিচয়পত্র এখনো ঠিকমতো করতে পারলো না।খুব একটা কঠিন কাজ না।
১৯ শে অক্টোবর, ২০২৫ দুপুর ১২:০৪
শেরজা তপন বলেছেন: এখন পরিচয়পত্র তো আছে কিন্তু জায়গামত কামে লাগে না। ভুয়া পরিচয় পত্র বানানো যায় সহজেই।
৬|
১০ ই অক্টোবর, ২০২৫ রাত ১০:০৪
আহমেদ জী এস বলেছেন: শেরজা তপন,
একটি মানবিক বিষয় নিয়ে লেখা।
শেষকথায় যা লিখেছেন তা হৃদয় বিদারক!
আমরা সব সুস্থ্য মানুষেরা সবাই-ই মনে হয় ভুল ঠিকানায় আছি!
১৯ শে অক্টোবর, ২০২৫ দুপুর ১২:০৬
শেরজা তপন বলেছেন: আপনাকে আমার ব্লগে পেয়ে সবসময়ই ভাল লাগে। মন্তব্য দেখেছি কিন্তু উত্তর দেবার সময় পাইনি। দুঃখিত দেরিতে উত্তর দেবার জন্য।
আমরা সব সুস্থ্য মানুষেরা সবাই-ই মনে হয় ভুল ঠিকানায় আছি!
চমৎকার বলেছেন, ঠিক একদম ঠিক।
৭|
১১ ই অক্টোবর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৯
রাজীব নুর বলেছেন: কারো মন্তব্যের উত্তর দেন নি!!!
খুব ব্যস্ত নাকি?
১৯ শে অক্টোবর, ২০২৫ দুপুর ১২:০৭
শেরজা তপন বলেছেন: হ্যা ব্যস্ত ছিলাম- এর পাশাপাশি চরম মানসিক পেরেশানীতে ছিলাম। ভাল লাগছিল না কিচ্ছু।
ফের আসার জন্য ধন্যবাদ।
৮|
১১ ই অক্টোবর, ২০২৫ দুপুর ১:৪৫
মিরোরডডল বলেছেন:
heart-touching story!!!
যদি ইচ্ছাকৃত ভুল ঠিকানা দিয়ে থাকে যেন যোগাযোগ করতে না পারে, this is absolutely brutal!!
এখন কি অবস্থা?
নিয়ম হওয়া উচিত, এডমিট করার সময় কন্টাক্ট পারসনের আইডি তার উপস্থিতিতেই ভেরিফাই করা, যেন পরবর্তীতে স্কিপ করতে না পারে।
১৯ শে অক্টোবর, ২০২৫ দুপুর ১২:০৯
শেরজা তপন বলেছেন: এখন কি অবস্থা?
- এখনকার অবস্থা আমি জানিনা। তবে খানিকটা উন্নতি হয়েছে মনে হয়।
নিয়ম হওয়া উচিত, এডমিট করার সময় কন্টাক্ট পারসনের আইডি তার উপস্থিতিতেই ভেরিফাই করা, যেন পরবর্তীতে স্কিপ করতে না পারে।
নিয়ম তো সবসময়েই ছিল। কিন্তু ওর্থ আর ক্ষমতার কাছে সব নিয়ম বে-নিয়ম হয়ে যায়
আপনাকে পেয়ে চরম পুলকিত ও প্রীত হইলাম।
৯|
২১ শে অক্টোবর, ২০২৫ সকাল ১০:০৬
খায়রুল আহসান বলেছেন: কি ভয়ঙ্কর অবিচার, অমানবিকতা! এসব নিয়ে ভাবতে গেলে মন বিষণ্ণ হয়ে ওঠে। মানুষের মনের অসুখ নিরাময়ের জন্য অন্য যে কোন অসুখের চেয়ে ভালোবাসা দাবী করে থাকে।
সময় সুযোগ পেলে এ প্রসঙ্গে আমার লেখা এই পোস্টটি একবার পড়ে দেখতে পারেনঃ ও যে কেড়ে আমায় নিয়ে যায় রে ....
এ পোস্টের কয়েকটা মন্তব্যেও আপনার কথাগুলো উঠে এসেছে।
০৭ ই নভেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৮
শেরজা তপন বলেছেন: আমি ব্লগে বসতেই পারছি না- কোন কিছু লেখা পড়া মন্তব্য করা আর প্রতিউত্তর দেয়া হচ্ছে না।
আপনার লেখা পড়ে মন্তব্য করে আসলাম। ভাল থাকুন নিরন্তর।
©somewhere in net ltd.
১|
১০ ই অক্টোবর, ২০২৫ দুপুর ১২:১৫
সৈয়দ কুতুব বলেছেন: ২০১৩/২০১৪ সালের ইনফরমেশন দিয়েছেন । এরপরের কোনো ইনরমেশন নেই ? মানসিক হেলথ নিয়ে বাংলাদেশে তেমন গবেষণা হয় না বললেই চলে। মানুষজন ভাবে এটা কোনো রোগ নাকি , আবার কেউ বলে আছর করেছে । ২০২৩ সালের দিকে আমার এক্সপেরিনেস হয়েছে মানসিক হাসপাতালের রোগি সরাসরি দেখার ।