নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মাঝে মাঝে মনে হয় জীবনটা অন্যরকম হবার কথা ছিল!

শেরজা তপন

অনেক সুখের গল্প হল-এবার কিছু কষ্টের কথা শুনি...

শেরজা তপন › বিস্তারিত পোস্টঃ

কি ভয়াবহ অমানবিকতা!!!

১০ ই অক্টোবর, ২০২৫ সকাল ১১:৩৯


✦✦✦✦ভুল ঠিকানার গ্লানি: সুস্থ রোগীরা ঘরে ফিরতে পারছে না✦✦✦✦

✦এরা কারা?
✦তাদের অপরাধ কী?
✦উত্তর একটাই—ভুল ঠিকানা।

পাবনা মানসিক হাসপাতাল—দেশের সর্ববৃহৎ মানসিক স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র। দীর্ঘ ৬৮ বছরের ইতিহাসে অসংখ্য অসুস্থ মানুষ এখান থেকে ফিরে গেছেন নতুন জীবনে, নতুন আশায়। কিন্তু হাসপাতালের লাল ভবনের পেছনের নীরব বাগান আর বাতাসে ভেসে বেড়ায় কিছু নামহীন কণ্ঠস্বর—যারা সুস্থ হয়েও বাড়ি ফিরতে পারেনি।

হাসপাতালের সোনালি রূপ, আর এক লুকানো অন্ধকার;
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এডুকেশনাল অ্যান্ড কাউন্সেলিং সাইকোলজি বিভাগের একদল শিক্ষার্থী ২০১৩ সালে হাসপাতালটি পরিদর্শনে গিয়েছিল। তাদের চোখে ধরা পড়ে আধুনিক চিকিৎসা, পরিপাটি পরিবেশ, প্রশিক্ষণের সুযোগ, বিনোদন, খেলাধুলা—সবই।
রোগীদের জন্য টিভি, পুষ্টিকর খাবার, এমনকি কাঠের কাজ ও কম্পিউটার শেখার সুযোগ পর্যন্ত আছে।

হাসপাতালের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট মেজবাহ-উল-হক বলেছিলেন—
“আমরা চাই রোগীরা সুস্থ হোক, আর সুস্থ হওয়ার পর যেন ঘরে ফিরে যেতে পারে। কিন্তু অনেক পরিবার ভর্তি সময় ভুল ঠিকানা দিয়ে যায়। সুস্থ রোগীর ঘরে ফেরার পথ তখনই বন্ধ হয়ে যায়।”

ভুল ঠিকানার ভয়াবহ বাস্তবতা;
রোগী ভর্তি করার সময় পরিবারের পক্ষ থেকে নাগরিক সনদপত্র ও একটি জামানত জমা দিতে হয়। নিয়ম ছিল, রোগী সুস্থ হলে পরিবারের সদস্যরা এসে নিয়ে যাবে।
কিন্তু দেখা যায়, অনেক ক্ষেত্রে পরিবারের লোকজন রোগীর নাম, ঠিকানা এমনভাবে দেয় যাতে হাসপাতাল পরবর্তীতে তাদের খুঁজে না পায়।

✦ফলাফল:সুস্থ মানুষটি আর কখনও বাড়ি ফিরে যেতে পারে না।
২০১৪ সালে একটি রিটের পর হাইকোর্ট নির্দেশ দেয়, “শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ রোগীদের স্বজনদের কাছে পৌঁছে দিতে হবে।”
তবুও গত এক দশকে হাসপাতাল সর্বোচ্চ চেষ্টা করেও মাত্র ১০ জন রোগীকে পরিবারের কাছে ফেরাতে পেরেছে।
এখনও কমপক্ষে ৭ জন সুস্থ রোগী হাসপাতালেই আটকে আছেন, কারণ তাদের ঠিকানা আর মেলে না।

একজন চিকিৎসকের কণ্ঠে ব্যথা; হাসপাতালের পরিচালক ডা. শাফকাত ওয়াহিদ বলেন—
অনেক পরিবার মনে করে মানসিক রোগী মানে বোঝা। কেউ লজ্জা থেকে, কেউ সম্পদ ভাগাভাগির ভয় থেকে মিথ্যা ঠিকানা দেয়। সুস্থ হওয়ার পরও তাই কেউ নিতে আসে না।

তিনি আরও বলেন,
কিছু রোগীর মৃত্যু হয়েছে, কিন্তু ঠিকানা ভুল থাকায় লাশও পরিবারের কাছে পৌঁছানো যায়নি। ভাবতে পারেন, একজন মানুষ বেঁচে থাকলেও পরিত্যক্ত, মরে গেলেও নিঃসঙ্গ?

✦একজন রোগীর চোখে ‘বাড়ি’ শব্দের মানে
হাসপাতালের নারী ওয়ার্ডের এক রোগী—নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক—নরম স্বরে বলেন,

আমি এখন ভালো আছি। ওষুধ খাই, কাজ করি। কিন্তু কেউ নিতে আসে না। আম্মা কি বেঁচে আছে জানি না।
তার চোখের কোণে জমে থাকা অশ্রু সাক্ষ্য দেয়—সুস্থতার চেয়েও বড় কষ্ট হলো অবহেলা।

মানসিক রোগী নয়, মানুষ;
পাবনা মানসিক হাসপাতাল এখন আর আগের মতো অন্ধকার গারদ নয়।
লাল ভবন, ফুলের বাগান, মুক্ত বাতাসে পরিপূর্ণ এই হাসপাতাল আজ অনেকটাই মানুষবান্ধব।
কিন্তু যে ৫০০ শয্যার মধ্যে কিছু শয্যা দখল করে আছে সেই “ভুল ঠিকানার মানুষগুলো”, তারা যেন সমাজের এক বিবেকের আয়না।

তারা বলে না, কিন্তু তাদের নীরবতা চিৎকার করে—
“আমরা পাগল নই, আমরা ভুলে যাওয়া মানুষ।”

✦প্রশাসনিক ও সামাজিক দায়;
প্রযুক্তির যুগে এনআইডি, ফোন নম্বর, ডিজিটাল ঠিকানা—সব কিছু থাকলেও বহু বছর আগে ভর্তি হওয়া রোগীদের তথ্য আপডেট করা হয়নি।হাসপাতাল চেষ্টা করছে, কিন্তু সমাজের সহমর্মিতার ঘাটতি এখানেই সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা।

✦একজন নার্স বলেন—
“আমরা যখন ফোন দিই, আত্মীয়রা বলে—‘ভাই, সে তো অনেক আগেই মারা গেছে।’ অথচ লোকটা আমাদের সামনেই বসে হাসছে!!!

মানুষকে ফেরানো মানুষের কাছেই;
সুস্থ মানসিক স্বাস্থ্যের শেষ ধাপ হচ্ছে পুনর্বাসন, আর পুনর্বাসনের প্রথম শর্ত ভালোবাসা ও গ্রহণযোগ্যতা।
চিকিৎসা যতই আধুনিক হোক, যদি পরিবার রোগীকে বর্জন করে—তবে হাসপাতাল আর সমাজের মাঝখানে এক অদৃশ্য প্রাচীর থেকেই যায়।
পাবনা মানসিক হাসপাতালের এই গল্পটি শুধু কয়েকজন রোগীর নয়—এটি বাংলাদেশের এক গভীর সামাজিক সংকটের প্রতিচ্ছবি।
যেখানে রোগীর অসুস্থতা নয়, বরং আমাদের অসহানুভূতিই তাদের বন্দি রাখে।

✦শেষ কথা;
পাবনার হাসপাতাল চমৎকার পরিবেশে দাঁড়িয়ে আছে—সবুজে ঘেরা, পরিচ্ছন্ন, যত্নে ভরা।
কিন্তু সেই সুন্দর ভবনের ভেতরে আজও কিছু চোখ প্রতিদিন জানালার বাইরে তাকিয়ে থাকে,
বাড়ি ফেরার অপেক্ষায়...
যে বাড়ির ঠিকানাটাই হয়তো কখনও ছিল না।

ওরা যা বলে সত্যিই হয়তো; “আমরা পাগল নই, আমরা ভুলে যাওয়া মানুষ।”
*****
তথ্যগত সহায়তাঃ অরুণ শীল, সাংবাদিকঃ গ্রামের কাগজ
ও ফৌজিয়া সারমিন টুকটুক Admin of Mental Health, Mymensingh
নিবন্ধন লিখনে ও ভাষাগত ত্রুটি সংশোধনঃ চ্যাট জিপিটি
✦ছবি স্বত্বঃ শেরজা তপন

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ১০ ই অক্টোবর, ২০২৫ দুপুর ১২:১৫

সৈয়দ কুতুব বলেছেন: ২০১৩/২০১৪ সালের ইনফরমেশন দিয়েছেন । এরপরের কোনো ইনরমেশন নেই ? মানসিক হেলথ নিয়ে বাংলাদেশে তেমন গবেষণা হয় না বললেই চলে। মানুষজন ভাবে এটা কোনো রোগ নাকি , আবার কেউ বলে আছর করেছে । ২০২৩ সালের দিকে আমার এক্সপেরিনেস হয়েছে মানসিক হাসপাতালের রোগি সরাসরি দেখার ।

২| ১০ ই অক্টোবর, ২০২৫ দুপুর ১২:৩৮

রাজীব নুর বলেছেন: পাবনা মানসিক হাসপাতালে সাধারনত গরীব রোগীরা থাকে।
আমি পরিদর্শন করেছি। নিজের চোখে দেখেছি এইসব মানসিক রোগীদের সাথে দশনার্থীরা মজা করছে। বিষয়টা আমার মোটেও ভালো লাগেনি।

ভালো একটা বিষয় নিয়ে লিখেছেন। এজন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

৩| ১০ ই অক্টোবর, ২০২৫ বিকাল ৪:৩৯

বিজন রয় বলেছেন: বাংলাদেশে প্রতিদিন এমন কিছু ঘটনা ঘটছে যা সব ভয়াবহ অমানবিকতা।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.