![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
গৌরীকে দেখে শওকত চমকে উঠলো।
ভাল করে আবার তাকালো – হ্যাঁ, গৌরীই তো। শওকতের শরীরে শিহরণ খেলে গেলো। গৌরী কী শওকতকে চিনতে পারছে না?
গৌরী ছিল শওকতের জীবনের প্রথম স্বপ্ন, প্রথম নারী, প্রথম প্রেম। প্রথম স্বপ্ন অপূর্ণ থেকে যায়, প্রথম নারী হারিয়ে যায়, প্রথম প্রেম শুধুই স্মৃতি হয়ে যায়। শওকতের জীবন থেকে গৌরীও চিরতরে হারিয়ে যায়। কিন্তু যে গৌরীর কাপড়ের ভাজ কখনো ভাংতো না, মাথার সিঁথি কখনো বাঁকা হতো না, পায়ের আলতা কখনো মুছত না, সেই গৌরীর আজ একি দশা। গৌরবর্ণ অনুপস্থিত, চোখ কোঠরে, চুল এলোমেলো। মলিন একটা শাড়ি পরা। তাহলে কি গৌরী ভাল নেই?
শেষ দেখা হাওয়ার কথা ছিলো ভবানিপুর কলেজের দীঘির পাড়ে। শওকত সারাদিন ধরে অপেক্ষার পর জানতে পারে গৌরীকে পার্বতীপুর বড় ভাইয়ের কাছে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। শওকতের সাথে গৌরীর আর কখনো দেখা হয়নি। মুসলমান ছেলের সাথে মেয়ের প্রেমে ঠেকাতে গৌরীর বাবা ঘোষাই দাশ মেয়েকে পার্বতীপুর থেকে কলকাতায় গৌরীর মাসীর কাছে পাঠিয়ে দেয়। গৌরীর মাসী একরকম তাড়াহুড়া করেই হুগলীর এক ব্যবসায়ীর সাথে গৌরীর বিয়ে দেন। পরে জানা যায় গৌরীর স্বামীর ছিল অবৈধ মাদক ব্যবসা। বিয়ের কিছুদিন পর গৌরীর স্বামী এক গোলাগুলিতে মারা পড়ে। গৌরী তখন সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা। গৌরী আর বিয়ে করেনি। বরং পড়াশুনা শেষ করে ভাল কি এক চাকরিতে ঢুকে। শওকত লোকমুখে এসব কথা জানতে পারে অনেক অনেক পরে।
শওকত যখন গৌরীর প্রেমে পড়ে তখন সে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের ছাত্র। বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরো সময়টা কেটেছে গৌরীর ধ্যানজ্ঞাণে। গৌরী সেকথা ভালই জানতো। শওকত জীবনে একটাই কবিতা লিখেছিল, তাও গৌরীকে নিয়ে। গৌরীর বইয়ের মধ্যে ঢুকিয়ে দিয়েছিলো। উত্তরের আশায় ছিল অনেক দিন। উত্তর না দিলেও ভবানিপুর কলেজের দীঘির পাড়ে গৌরী দেখা করতে চেয়েছিলো শওকতের সাথে। কী বলতে চেয়েছিল গৌরী সেদিন?
অপেক্ষায় অপেক্ষায় শওকতের বিশ্ববিদ্যালয় কেটে যায়। ততদিনে প্রেম পরিণত হয়। আবেগের সাথে বাস্তবতার যোগ হয়। গৌরী চাইলে শওকত অবশ্যই গৌরীকে বিয়ে করতে পারত। শওকতের সে প্রস্তুতিও ছিল মনে মনে। ধর্ম শওকতের জন্য কোনো বাধা না। শওকত যে মাপের ছাত্র ছিল তাতে একটা চাকরি যোগাতে খুব বেগ পেতে হতো না। কিন্তু বাস্তবে যা ঘটেছে তা ছিল শওকতের কল্পনাতীত। পাশ করার এক বছরের মধ্যে পি এইচ ডির একটা স্কলারশীপ নিয়ে জার্মানী চলে যায়। কিছুদিনের মধ্যে বিয়েও করে। কিন্তু ছোট্ট একটা দুর্ঘটনা তার জীবনকে পুরোপুরি উল্টে দেয়। অথচ গৌরীর সাথে বিয়ে হলে দুইজনের জীবনই হয়তো হতে পারত পুরো অন্যরকম।
প্লেনে বোর্ডিং এর ঘোষণা শোনা গেল,
- ফ্লাইট বিএ১৫ এর সন্মানিত যাত্রীদের ফ্লাইটে আরোহণের জন্য অনুরোধ করা যাচ্ছে...
শওকত ঘুরে তাকিয়ে দেখল, যাত্রীরা লাইনে দাড়িয়ে গেছে।
গৌরী আস্তে আস্তে উঠে শওকতের সামনে কাচের দেয়ালের ওপাশে এসে দাঁড়ালো। গৌরী তাহলে শওকতকে চিনতে পেরেছে। শওকতের দিকে সে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। গৌরীর চোখে পানি। শওকতও নিস্পলক ভাবে তাকিয়ে রইলো।
- এখানে বসে ঝিমাচ্ছ কেন? চল, চল। প্লেন ছেড়ে দেবে।
শওকতের স্ত্রী রুবি শওকতের হুইল চেয়ার ঘুরিয়ে ধাক্কাতে ধাক্কাতে প্লেনের দিকে ছুটল।
- মহিলাটা কে? চেন?
শওকত উত্তর দেয় না, শুধু নিঃশব্দে একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে।
প্লেনে ঢোকার আগে শওকত একবার পেছন ফিরে তাকায়। গৌরী কাঁচের দেয়ালের ওপারে ওভাবেই দাড়িয়ে আছে।
২৩ শে অক্টোবর, ২০১৪ রাত ৮:৪২
শিমুল শিকদার বলেছেন: প্রথমে পার্বতীপুর এবং পরে সেখান থেকে কলকাতায় পাঠানো হয়েছে। তারপরও বুঝতে সমস্যা হলে জানাবেন।লাইনটাকে পুরো বদলাবো। ধন্যবাদ।
২| ২৩ শে অক্টোবর, ২০১৪ সকাল ৯:০৬
অপূর্ণ রায়হান বলেছেন: ভালোই লাগলো ।
শুভেচ্ছা ।
©somewhere in net ltd.
১|
২৩ শে অক্টোবর, ২০১৪ রাত ১২:৫১
নিষ্কর্মা বলেছেন: একবার পড়ে দেখবেন, আমার খটকা লেগেছেঃ
গৌরীকে পার্বতীপুর বড় ভাইয়ের কাছে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। . . . . . মুসলমান ছেলের সাথে মেয়ের প্রেমে ঠেকাতে গৌরীর বাবা ঘোষাই দাশ মেয়েকে পার্বতীপুর থেকে কলকাতায় গৌরীর মাসীর কাছে পাঠিয়ে দেয়।
হয়তো বা আমারই ভুল।