| নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমেরিকায় প্রথম নর্থম্যানদের আগমণ
ইতিহাস একটু অন্যরকম মোড় নিলেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র হতে পারত দরিয়া অতিক্রম করা স্পেনীয় অথবা ফরাসী সম্রাজ্যের অংশ। দেশের আধুনিক বাসিন্ধারা হয়ত বা মেকসিকোর যুক্ত কোনও রাষ্ট্রের নাগরিক হয়ে কথা কইতেন স্প্যানিশে, আবার হয়ত বা কানাডার কুইবেক বা মন্ট্রিয়লের সংগে যুক্ত হয়ে চর্চা করতেন ফরাসী ভাষার।
অথচ আমেরিকায় পা-রাখা আদি পর্যটকেরা কেউই ইংরেজ, ফরাসী বা স্পেনীয় ছিলেন না। আমেরিকা আবিষ্কারের প্রাচীন নথি পাওয়া গেছে স্ক্যান্ডিনেভিয়ান ভাষায়। প্রচীন নর্স পুঁথি ভিনল্যান্ড সাগায় বলা হয়েছে আমেরিকার উত্তর-পূর্ব তীরে সম্ভবত কানাডার নোভা স্কটিয়ার কাছাকাছি ১১ শতকের প্রথম দশকে বেশ কিছু দিনের জন্য আস্তানা গেড়েছিলেন বিখ্যাত অভিযাত্রী লেইফ এরিকসন ও তাঁর সাঙ্গোপাঙ্গোরা। ঘটনাটা ঘটে ইউরোপীয়রা আমেরিকা খুঁজে পাওয়ার ৪০০ বছর আগে।
জেমসটাউন নির্মাণ
তবে ধারাবাহিকভাবে ইউরোপের সঙ্গে আমেরিকার সম্পর্কের সূত্রাপাত ঘটান ইতালীর বিখ্যাত অভিযাত্রী ক্রিস্টোফার কলম্বাস। আমেরিকা আবিষ্কারে তাঁর সেই বিখ্যাত অভিযানে অর্থ সাহায্য করেছিলেন স্পেনের রাজা ফার্দিনান্দ ও রাণী ইসাবেলা। ১৪৯৩ সালে ছাপা কলম্বাসের জর্নাল 'এপিসটোলা'য় রয়েছে সেই অভিযানের টানটান নাটক। অকূল অজানা দরিয়ায় সর্বনেশে দানবের পাল্লায় পড়ার ভয় ছিল সহযাত্রীদের। কেউ ভেবেছিলেন পৃথিবীর কিনারা থেকেই জাহাজসুদ্ধ পড়বেন অতল কোন খাদে! অজানা গন্তব্যের সন্ধানে দীর্ঘ সফরের পর মাঝদরিয়ার শুরু হয়েছিল ত্রস্ত, ক্লান্ত, ক্রুদ্ধ খালাসীদের বিদ্রোহ। সত্যিই কতটা কতটা পথ পাড়ি দিয়েছেন তা গোপন রাখতে জাহাজের লগবুকে কারচুপি করতেন কলম্বাস। এবং শেষে রয়েছে আমেরিকার কাছে পৌঁছে কলম্বাসের কলমে তটরেখা দৃশ্য দেখার বর্ণনা।
একেবারে গোড়ায় আমেরিকান-ইন্ডিয়ানদের সঙ্গে ইউরোপীয়দের বিশদ বিবরণ পাওয়া যায় বার্তোলোমে দ্য লাস কাসা-র লেখায়। তরুণ যাজক হিসেবে তিনি কিউবা দখলে সাহায্য করেছিলেন। পরে কলম্বাসের জার্নাল লিপিবদ্ধ করা ছাড়াও লেখেন ইন্ডিয়ানদের বিস্তারিত ইতিহাস। দ্বিতীয় বইটিতে স্পেনীয়দের দাসপ্রথার, বিশেষ করে ইন্ডিয়ানদের তারা যাভাবে দাস করে রেখেছিল তার সমালোচনা রয়েছে।
জেমসটাউনে প্রথম থ্যাংকসগিভিং ডে পালন
উপনিবেশ গড়ায় ইংরেজের প্রাথমিক চেষ্টাগুলি ছিল একেবারেই ব্যর্থ। নর্থ ক্যারোলাইনার সমুদ্র তীরবর্তী রোয়ানোকে ইংরেজের প্রথম উপনিবেশ তৈরি হয় ১৫৮৫ সালে। কিছুদিনের মধ্যে সেটি নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। আজও ওই েলাকায় নীলচক্ষু ক্রোটান ইন্ডিয়ানদের নিয়ে নানা কিংবদন্তী শোনা যায়। জেমসটাউনে ১৬০৭-এ স্থাপিত দ্বিতীয় উপনিবেশটি কিছুদিন স্থায়ী হলেও ছিল দুর্ভিক্ষ, নির্যাতন, অপশাসনে পর্যুদস্ত। তবে ওই সময়ের সাহিত্যে আমেরিকার ছবি আঁকা হয়েছে জ্বলন্ত ভাষায়। মহাদেশটিকে বলা হত অফুরন্ত সম্পদের ভাণ্ডার এবং সুযোগসন্ধানীদের সোনার খণি। উপনিবেশ গড়ার খবর ছড়িয়ে পড়েছিল বাকি দুনিয়ায়। রোয়ানোকে অভিযানের কাহিনীর অনুপুঙ্খভাবে লিপিবদ্ধ করেছেন টমাস হ্যারিয়েট তাঁর আ ব্রিফ অ্যান্ড টু রিপোর্ট অব দি নিউ-ফাউন্ড ল্যান্ড অব ভার্জিনিয়া (১৫৮৮) বইতে। হ্যারিয়েটের বইটি দ্রুত লাতিন, ফরাসী ও জার্মান ভাষায় অনূদিত হয়। কাহিনী এবং ছবির খোদাই পরবর্তী ২০০ বছর ধরে অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিল।
ভিনল্যান্ডের পুঁথি
জেমসটাউন উপনিবেশের মূল নথি, সেই লেখাটি তার অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ক্যাপ্টেন জন স্মিথ লিখেছিলেন। কিন্তু হ্যারিয়টের চেয়ে একেবারেই আলাদা। হ্যারিয়টের নিঁখুত, বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি স্মিথের ছিল না। আগাগোড়া রোমান্টিক মানুষটির বর্ণনার অনেকটাই কাল্পনিক মনে হয়। তাঁর লেখাতেই আমরা ইন্ডিয়ান রমণী পোকাহন্তাসের বিখ্যাত গল্পটি পেয়েছি। সত্যিমিথ্যের উর্ধ্বে উঠে কাহিনীটি আজ আমেরিকার ঐতিহাসিক কল্পনার অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে গেছে। উপজাতি প্রধান পাওটানের হাতে ধরা পড়েছিলেন ক্যাপ্টেন স্মিথ। প্রধানের প্রিয় কন্যা পোকাহন্তসই তাঁকে বাঁচান। পরে লড়াই জিতে ইংরেজরা বন্দী হিসেবে পোকাহন্তসকে দাবি করে। রূপেগুণে মুগ্ধ হয়ে ১৬১৪ সালে তঁকে বিয়ে করেন জন রলফ নামে এক ইংরেজ ভদ্রলোক। সেই বৈবাহিক সম্পর্কের জেরেই ইন্ডিয়ানদের কাছ থেকে ৮ বছরের শান্তিচুক্তি আদায় করে ইংরেজরা। নতুন উপনিবেশ বাঁচিয়ে রাখতে এছাড়া আর উপায় ছিল না।
জেমসটাউনে ইন্ডিয়ান ভিলেজ
১৭ শতকে আমেরিকায় উপনিবেশ গড়ার আরেকটি ঢল নামে জলদস্যু, ঘরছাড়া ও পর্যটকদের মাধ্যমে। বউ, বাচ্চা, কাজের লোক, খামারের জিনিস, যন্ত্রপাতি সবকিছু নিয়ে এখানে বাসা বাঁধতে আসে দলে দলে ভাগ্যসন্ধানী। পর্যটনের আদি সাহিত্যে পুরোটাই রোজনামচা, চিঠি, ভ্রমণ বিবরণ, জাহাজের লগবুক ও পর্যটকদের আর্থিক সাহায্যকারীদের কাছে পাঠানো রিপোর্ট (ইউরোপে রাজা বাদশা ও বাণিজ্যরাষ্ট্র ব্রিটেন বা হল্যান্ডে জয়েন্ট স্টক কোম্পানি)। পরবর্তীকালে উপনিবেশের বাসিন্দাদের লেখা তাঁদের অভিজ্ঞতার বিশদ বিবরণ কখনও সরাসরি সাহিত্য, কখনও বা সাহিত্যের উপাদান হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ। উত্তর আমেরিকার উপনিবেশগুলো যেহেতু ক্রমে ইংরেজদের দখলে আসে তাই সবথেকে বিখ্যাত ও অধিক সংকলনভুক্ত ঔপনিবেশিক সাহিত্যের বেশিটাই ইংরেজীতে। ২০ শতকে আমেরিকার সংখ্যালঘু সাহিত্যের বিস্তার ও আমেরিকার জনজীবন বহুসংস্কৃতিভিত্তিক হয়ে ওঠায় বিশেষজ্ঞদের কাছে মহাদেশের মিশ্র ঐতিহ্যের ধারটি নতুন করে মর্যাদা পাচ্ছে। সাহিত্যের ধারটি এখন মূলত ইংরেজির হাত ধরে এগোলেও গোড়ার সমৃদ্ধ, বহুসংস্কৃতিনির্ভর পদক্ষেপগুলিও খেয়াল রাখা উচিত।
তথ্যসূত্র: উইকিপিডিয়া, মার্কিন বিদেশদপ্তর আন্তর্জাতিক তথ্য কর্মসূচি ব্যুরো।
০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১:৩০
শিরিষ গাছ বলেছেন: ধন্যবাদ মেহেদি হাসান মানিক....... ইতিহাস থেকে অনেক কিছুই নতুন করে উপলব্ধি করা যায়।
২|
১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ৩:১৪
ইকবাল পারভেজ বলেছেন: সুন্দর পোস্ট। পোস্টে ভাল লাগা জানিয়ে গেলাম।
১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ ভোর ৫:২২
শিরিষ গাছ বলেছেন: ধন্যবাদ ইকবাল পারভেজ।
©somewhere in net ltd.
১|
০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১২:৪৫
মেহেদী হাসান মানিক বলেছেন: তথ্যমূলক পোস্ট। ইতিহাসের অনেক কিছুই আমাদের অজানা।