![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আদনান। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া একজন ছাত্র। দুই সপ্তাহ ধরে মাথার ভেতর কেমনটা যেন করছে। মনে হচ্ছে আশে-পাশেই কেউ একজন আছে। কিছু করতে গেলেই মনে হচ্ছে যেন মেয়েটি এসে সব কিছু করে দিচ্ছে। অথচ আদনান নিজের হাতেই সব কাজ করছে। কিন্তু তার মনে হচ্ছে, মেয়েটি নিজে এসেই এসব করছে। মেয়েটিকে আদনান চেনে না। পাগল হয়ে যাচ্ছে বোধ হয় ছেলেটি। যে মেয়েটিকে সে কল্পনা করছে সবসময় মেয়েটির নাম দেবলীনা।
একটা ব্যচেলর বাসায় একটা রুম নিয়ে থাকে আদনান। রাতের খাবার শেষ করে বিছানায় শুয়ে আছে সে। ওপাশ ফিরে বিছানায় গল্পের বইটা খুলে রেখে কানে হেডফোন গুঁজে দিয়ে পড়তে থাকে সে। হঠাৎ দেবলীনা এসে তার কান থেকে হেডফোনটি খুলে রেখে দিলো। কি হলো কিছু বুঝতে পারলো না আদনান। সে খুব খেয়াল করে দেখলো, হেডফোনের দুটি প্রান্ত তার দুই হাতেই। কিন্তু দেবলীনা কোথায়? এইমাত্র না সে এসে এই কাজটি করলো? না। আর পারা যাচ্ছে না। অনেকদিন ধরে জ্বালাছে মেয়েটি। কে এই মেয়ে? কখনো দেখেছে বলে মনে হয় না এই নামের কোন মেয়েকে। না। মাথাটা কেমন যেন করছে। একটা সিগারেট ধরিয়ে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালো সে। রাস্তায় সারি সারি ট্রাক দাঁড়িয়ে আছে। ভোর হলেই যে যার গন্তব্যে পাড়ি জমাবে। কিছু লোক দেখা যাচ্ছে একটু দূরে। ট্রাক ভর্তি করছে মালামাল তুলে। এই মাঝ রাতে হঠাৎ কেন যেন খুব রবীন্দ্রসঙ্গীত শুনতে ইচ্ছে হচ্ছে। কম্পিউটারটি চালু করে ইউটিউব থেকে তার সবচেয়ে পছন্দের রবীন্দ্রসঙ্গীতটি ছাড়লো সে। আবার বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালো। মৃদু আওয়াজে বাজছে। "বরিষ ধরা মাঝে শান্তির বারি........."
- আমি তোমাকে খুব জ্বালাই। না?
কে? কে? কে কথা বললো? ( হটচকিয়ে উঠলো আদনান) ও! তুমি?
দেবলীনা ঃ- তুমি বেছে বেছে আমার পছন্দের গানটাই ছাড়লে?
আদনান ঃ- এটা তোমারও পছন্দের গান?
= হু!
=আচ্ছা, তুমি কে বলতো! কখনো দেখেছি বলে তো মনে হয় না!
=আমাকে চেন না? হাহাহাহা
=হু। চিনি না। আর শোন! এই রাতের বেলা চুল আঁচড়ানো আমার মোটেই পছন্দ না। এখন চুল আঁচড়াবে না।
=আচ্ছা। ঠিক আছে। আমি তোমাকে খুব জ্বালাই। না?
= তুমি কে বলতো! তোমার কি কোন অস্তিত্ব আছে?
= আমার অস্তিত্ব খোঁজ তুমি? হাহাহা!
আদনান! এই আদনান! কার সাথে কথা বলছিস? আর এসব কি চিরুনি, নারিকেল তেল কেন মেঝেতে?
হঠাত যেন সম্বিত ফিরে পায় সে! রাকিব ভাই! দেবলীনা এসেছিলো।
=কে? দেব...... মাথাটা কি পুরোই গেছে?
=বিশ্বাস করো রাকিব ভাই! সে এসেছে। সবসময় থাকে। আমি গান শুনছিলাম, কান থেকে হেডফোনটি খুলে রেখে দিলো।
= পাগলের প্রলাপ বকার আর জায়গা পাও না? যাও। ঘুমিয়ে যাও।
=রাকিব ভাই!.............................
কেউ বিশ্বাসই করতে চাইছেনা দেবলীনার কথা! দেবলীনা বিছানার ওপর পা গুটিয়ে বসে আছে। আদনানের দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছে। কি এক বিশ্রী অবস্থা! এমন অবস্থাতেও আদনান ভয় পাচ্ছে না। অবশ্য ভয় পাবার কোন যুক্তিগত কারনও নেই। ভুত-আত্মা এইসবে সে বিশ্বাস করে না। সে জানে এটি তার অবচেতন মনের কারসাজি। নিজের ওপর প্রচন্ড রকমের রাগ হচ্ছে তার। মেয়েটি এমন করছে কেন তার সাথে? পকেটে সিগারেটের প্যাকেটটি ভরে বাসা থেকে বের হয়ে গেলো সে। আজ সে সারারাত বাইরে থাকবে। মনে মনে বলছে, দেবলীনা আসলে ভালো হতো। একা একা সারারাত এভাবে রাস্তায় বসে থাকা খুব বিরক্তিকর। ফুটপাত দিয়ে হাঁটছে একমনে। পেছন থেকে ডাক দিলো একজন। "এই! দাঁড়াও!" পেছনে ফিরে সে দেখলো দেবলীনা আসছে। পায়ের স্যান্ডেলটি ছিড়ে গেছে একটু। তাই হাঁটতে কষ্ট হচ্ছে।
©somewhere in net ltd.