নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সাহসী কন্ঠ

মুহাম্মাদ শোয়াইব

সম্পাদক, মাসিক আরবি ম্যাগাজিন ‘আলহেরা’

মুহাম্মাদ শোয়াইব › বিস্তারিত পোস্টঃ

বস্তিবাসীরা ও মানুষ

১৪ ই মার্চ, ২০১৩ বিকাল ৩:৪২



বাংলাদেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে বস্তির সংখ্যা। ডেমক্রিসিওয়াচের ২০১০ সালের চালানো জরিপ অনুযায়ী শুধু রাজধানী ঢাকায় বস্তির সংখ্যা রয়েছে প্রায় পাঁচ হাজার। তবে এ সংখ্যা এত দিনে আরো বেড়েছে-এতে কোনো সন্দেহ নেই। এসব বস্তিতে প্রায় ৪০ লাখের বেশি মানুষ মানবেতর জীবনযাপন করছে। নাগরিক সুযোগ-সুবিধা বঞ্চিত এসব লোকেরা বস্তির নোংরা ঘিঞ্জি পরিবেশে বসবাস করছে। অধিকাংশ বস্তিতে গ্যাস, বিদ্যুৎ ও বিশুদ্ধ পানির সুব্যবস্থা নেই। নেই স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা ও উন্নত পয়োনিষ্কাশনব্যবস্থা। ভালো বা পুষ্টিকর খাবার তো দুরের কথা, জঠর জালা নিবারণের জন্য দুবেলা খাবার জোটাতেই তাদের হিমশিম খেতে হয়। ক্ষুধার দুর্বিষহ যন্ত্রণা সইতে না পেরে নিরুপায় হয়ে আবর্জনাগার থেকে কুড়িয়ে পাওয়া ময়লাযুক্ত পচা খাবার গলাধঃকরণ করে। এতে অধিকাংশ বস্তিবাসী চরম অপুষ্টিতে ভোগে। সেভ দ্য চিলড্রেনের গত বছর প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, পৃথিবীতে চরম অপুষ্টির শিকার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান চতুর্থ। প্রতিবেদনটির হিসাব অনুযায়ী আরো জানা যায়, প্রতি বছর বাংলাদেশে প্রায় পাঁচ লাখ শিশু চরম অপুষ্টির শিকার হচ্ছে এবং এদের মধ্যে প্রায় ৫০ হাজার শিশুর মৃত্যুর প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ কারণ হচ্ছে এই অপুষ্টি।

তাছাড়া বস্তির ছেলে-মেয়েরা যখন তাদের থাকার কথা ছিল মায়ের কোলে, আদরে আহাদে, জীবন ও জীবিকার তাগিদে তখন তাদের যেতে হচ্ছে মানুষের বাসায় গৃহকর্মীর কাজে বা পোশাক কারখানায় শ্রমিক হিসেবে। সেখানে তারা শিকার হচ্ছে শারীরিক ও যৌন নিপীড়নের। গার্মেন্টসকর্তা বা গৃহকর্তারা তাদের সাথে জোরপূর্বক অবৈধ যৌন সর্ম্পক গড়ে তুলছে। এতে তারা ভিবিন্ন যৌন রোগে ও আক্রান্ত হচ্ছে এবং তাদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। সব মিলিয়ে তারা প্রতিনিয়ত বেঁেচ থাকার জন্য লড়ই করে টিকে আছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, সমাজের এসব করুণ চিত্র এখন আর কাউকে শিউরে ওঠায় না। কার ও অন্তরে দয়ার উদ্রেক করে না, অথচ আমাদের সামাজে এমন লোকের অভাব নেই, যারা ফাইভস্টার হোটেল, চাইনিজ রেস্টুরেন্ট ও কমিউনিটি সেন্টারে দামি-দামি বিলাসী খাাবার অর্ধ আহারান্তে ফেলে দেয়। কোটি টাকার গাড়ি হাঁকিয়ে সদম্ভে চলাচল করার, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে আয়েশি জীবনযাপন করার লোক এ দেশে কম নয়। হাদিস শরিফে আছে ‘ভালোবাসা ও সহমর্মিতায় মুমিনরা পরষ্পর ভাই ভাই । আর দেহের কোনো অঙ্গে কষ্টের ছায়া লাগলে গোটা দেহ জ্বর ও নিদ্রাহীনতায় আক্রান্ত হয়। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো আমরা সমাজের গরিব-দুঃখী ও অসহায়দের প্রতি কোনো রূপ দায়িত্ব বোধ করি না। তাদের প্রতি সামান্যতম সহমর্মিতা দেখাই না। ইসলাম কখনো এমন সমাজ চায়নি। ইসখলাম চায় পরস্পর হৃদ্যতাপূর্ণ সহানুভূতিশীল এক সমাজব্যবস্থা। যেখানে সবলরা দুর্বলদের সাহায্য-সহযোগিতা করবে। সম্পদশালীরা দরিদ্র-অনাহারীকে আহার দান করবে। তাই ইসলাম অসহায় গরিবদের সাহায্য-সহযোগিতার প্রতি উৎসাহিত করেছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘সৎকর্ম শুধু পূর্ব কিংবা পশ্চিম দিকে মুখ করার নাম নয়, বরং সৎকর্ম হলো আল্লাহ তায়ালা, পরকাল, ফেরেশতা, আসমানি কিতার ও সব নবী-রাসুলের ওপর ঈমান আনয়ন করা। আর আল্লাহর মহব্বতে আত্মীয়স্বজন, এতিম-মিসকিন, মুসাফির, ভিক্ষুক ও মুক্তিকামী ক্রীতদাসদের জন্য সম্পদ ব্যয় করা’। (সুরা বাকারা ১৭৭)। হাদিস শরিফে আছে, ‘রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ‘আবুজর! যখন তুমি ঝোল-তরকারি রান্না করো তখন কিছুটা পানি বাড়িয়ে দাও । অতঃপর সেখান থেকে কিছু অংশ তোমার প্রতিবেশীর ঘরে পাঠিয়ে দাও’। (মুসলিম শরিফ, হাদিস নং ২৬২৫)।

বস্তিবাসীর উন্নয়নে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হলে ও বস্তিগুলোর তেমন উন্নয়ন চোখে পড়ে না। এর অন্যতম কারণ হলো বাস্তগুলোর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। ঝড়-বন্যা, দরিদ্রসহ বিভিন্ন কারণে মানুষ শহরে এসে বস্তিগুলোতে ঠাঁই নিচ্ছে। অথচ বস্তির সংখ্যা বৃদ্ধির তুলনায় সাহায্যের হার একেবারেই উল্লেখ করার মতো নয়।

আমাদের দেশে গরিবদের সংখ্যা বেশি হলো ও ধনীদের সংখ্যা ও কম নয়। তারা যদি অনর্থক অপচয় কমিয়ে অন্তত সে টাকাটা গরিবদের দান করেন, তাহলে গরিবরা অনায়াসেই খেয়ে-পেরে বাঁচতে পারে। এতে তাদের বিলাসিতায় ও বড় ধরণের প্রভাব পড়ে না। অন্তত ফরজ জাকাতটা ও যদি আদায় করে দেন তাহলে ও গরিব-দুঃখীদের জীবনযাত্রার মান কিছুটা হলে ও উন্নত হয়। এই জন্যই ইসলামি শরিয়ত জাকাতের বিধান রেখেছে। সাইয়্যেদুনা হযররত আলী ইবনে আবী তালিব (রাঃ) বলেন, ‘আল্লাহ তায়ালা ধনীদের সম্পদ থেকে ঠিক ততটুকু জাকাত আদায় করা আবিশ্যক করে দিয়েছেন, যাতে দরিদ্রদের জন্য যতেষ্ঠ হয়, যদি কেউ ভূখা-নাঙ্গা থাকে তাহলে তো মূলত সম্পদশালী ব্যক্তির জাকাত আদায় না করার কারণে’। আমাদেরকে মানে রাখতে হবে ,বস্তিবাসীরা ও মানুষ। তাদের ও আছে আমাদের মতো বাঁচার অধিকার। তাই তাদের দান-দক্ষিণা করা আমাদের ঈমানি নৈতিক দায়িত্ব। সুতরাং এদায়িত্ববোধ থেকেই আমাদেরকে সমাজের গরিব মিসকিনদের সহযোগিতায় এগিয়ে আসা উচিত।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.