![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বছর ঘুরে আবার এলো বিশ্ব ইজতেমা। বিশ্ব মুসলিমের দি¦তীয় বৃহত্তম মিলন মেলা। এ ৪৬তম ইজতেমায় বাংলাদেশসহ বিশ্বের প্রায় ১৫০ টি দেশের ৪০ লাখ মুসল্লি শরিক হবেন বলে আসা করা হচ্ছে। ঈমানী আবেগে উদ্দিপ্ত হয়ে নিজের জানÑমাল খরচ করে বাংলাদেশে আসবেন তারা। তাদের সকলের একই উদ্দেশ্য। কিভাবে আল্লাহভোলা মানুষকে আল্লাহমুখী করা যায় ? কিভাবে সারা বিশ্বের মানুষ ইসলামের সুশীতল ছায়ায় একত্রিত হয়ে যায় ? কিভাবে দুনিয়ামুখী মানুষকে দ্বীনমুখী করা যায় ?
বস্তুত দাওয়াত ও তাবলীগ একটি অতিব গুরুত্বপূর্ণ কাজ। এ কাজ আঞ্জাম দেওয়ার জন্য মহান আল্লাহ রব্বুল আলামিন অসংখ্য নবীÑরাসুল দুনিয়াতে প্রেরণ করেছেন। তারা এসে দ্বীনের দাওয়াত ও তাবলিগের কাজ করতেন। তাদের অনুসারীরা ও দাওয়াতের কাজে তাদেরকে সাহায্য করতেন। এক নবী চলে যাওয়ার পর একই মিশন নিয়ে অন্য নবী আসতেন। এভাবে প্রত্যেক উম্মতের মাঝে নবী আগমনের ধারা অব্যাহত ছিল। কিন্তু আমাদের নবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আগমনের মধ্য দিয়ে নবুওয়াতের দরজা চিরতরে বন্ধ হয়ে গেছে। কারণ রাসুল সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আগমনের দ্বারা দ্বীন পূর্ণতা লাভ করেছে। সুতরাং আর কোনো নবী আসবে না। আর কোনো ধর্মের আগমন ঘটবে না। তাই কেয়ামত পর্যন্ত যত লোক আসবে, সকলকেই এই নবীর ও এই ধর্মের অনুসরণ করতে হবে। রাসুল সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুনিয়া থেকে চলে গেছেন। সুতরাং তিনি যে সব দায়িত্ব পালন করতেন, সে সব দায়িত্ব এখন এই নবীর উম্মতের ওপরই বর্তায়। দাওয়াতের এই মহান কাজটি এখন এই নবীর উম্মকেই আঞ্জাম দিতে হবে।
রাসুল সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইন্তিকালের মাত্র কয়েক মাস আগে দাওয়াত ও তাবলিগের মহান দায়িত¡িট আমাদেরকে দিয়ে যান। বিদায় হজের ভাষণে তিনি বলেন, ‘তোমরা উপস্থিতরা আমার পক্ষ থেকে অনুপস্থিতদের কাছে পৌঁছে দাও। যদি একটা কথা ও শিখে থাক, তাও পৌঁছে দাও’। (বুখারি শরিফ, হাদিস নং ১৬৫২, মুসলিম শরিফ, হাদিস নং ১০৮) মূলত এই দাওয়াত ও তাবলিগের কারণেই মহান আল্ল্হ তায়ালা আমাদেরকে অন্যান্য উম্মতের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন। কোরআনে কারিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা উত্তম জাতি, তোমাদেরকে পাঠানো হয়েছে মানুষের কল্যাণের জন্য, তোমরা সৎ কাজে আদেশ করবে, অসৎ কাজে নিষেধ করবে’। (সুরা আলে ইমরান, আয়াত নং ১১০) সুতরাং সৎ কাজের আদেশ অসৎ কাজে নিষেধ করা আমাদের সকলের অপরিহার্য দায়িত্ব। কোরআন ও হাদিসের একাধিক জায়গায় দাওয়াত ও তাবলিগের ফজিলত বর্ণিত হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, তার কথার চেয়ে উত্তম কথা কার হতে পারে, যে মানুষকে আল্লাহর দিকে ডাকে এবং নিজে ও নেক আমল করে এবং বলে আমি মুসলমানদের মধ্য হতে একজন’। (সূরা হা-মীম আস-সিজদা, আয়াত ৩৩) কিন্তু আমরা অবহেলাবশত এই মহান দায়িত্বটি পালন করি না। বরং এক্ষেত্রে আমরা ভুল বুঝের শিকার। আমরা মনে করি দাওয়াত ও তাবলিগ করার জন্য সম্মিালিতভাবে বের হয়ে মানুষের দ্বারে দ্বারে যেতে হবে। জামাতবদ্ধভাবে না গেলে দাওয়াত ও তাবলিগ বিশুদ্ধ হবে না। এটি একটি ভুল ও ভ্রান্ত ধারণা।
বস্তুত দাওয়াত ও তাবলিগের দুটি পদ্ধতি রয়েছে। একটি হচ্ছে একক দাওয়াত ও তাবলিগ, অপরটি হচেছ সম্মিলিত দাওয়াত ও তাবলিগ। একক দাওয়াত ও তাবলিগ হচ্ছে, কাউকে কোনো অন্যায় কর্মে লিপ্ত দেখলে সামর্থ্য থাকলে অন্যায়কারীকে বাধা প্রদান করা। এ ধরণের দাওয়াত ও তাবলিগ করা ফরজে আইন। হাদিস শরিফে আছে, ‘তোমাদের মধ্য হতে কেউ যদি কোনো অন্যায় হতে দেখে, তাহলে সে যেন তা হাত দ্বারা প্রতিহত করে, যদি হাত দ্বারা প্রতিহত করা সম্ভব না হয়, তাহলে যেন জবান দ্বারা প্রতিবাদ করে, যদি জবান দ্বারা প্রতিবাদ করা ও সম্ভব না হয়, তাহলে যেন মনে মনে অন্যায়কর্মকে ঘৃণা করে। আর এটা হলো ঈমানের সবচেয়ে দুর্বল স্তর’। (মুসলিম শরিফ, হাদিস নং ৭৪, আবু দাউদ, হাদিস নং ১১৪০ ও ৪৩৪০) আমরা অবহেলা বশত একক দাওয়াতের দিকে মোটেও লক্ষ করি না। আমাদের পরিবারের সদস্যরা অন্যায়Ñঅপকর্ম করে বেড়ায় অথচ আমরা বাধা দেওয়ার পূর্ণ ক্ষমতা থাকা সত্তেও তাদের ব্যাপারে মাথা ঘামাই না। আমরা মনে করি নিজেরা নেক আমল করলেই চলবে, অন্যের সংশোধনের চিন্তা করতে হবে না। অথচ কোরআন ও হাদিসের অসংখ্য জায়গায় নিজের সংশোধনের পাশাপাশি অন্যের সংশোধনের চিন্তা করার প্রতি জোর তাগিদ এসেছে। সূরা আসরে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘যুগের শপথ, নিশ্চয় সমস্ত মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত। কিন্তু যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে এবং পরস্পরকে সত্যের ও ধৈর্যের উপদেশ দেয়’। এই আয়াতে ঈমান আনা ও সৎকর্ম করাকে যেমনি মুক্তির কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, তেমনি সৎকাজে আদেশ ও অসৎকজে বাধা প্রদান করাকে নাজাতের কারণ হিসেবে দেখানো হয়েছে। এই আয়াতে আল্লাহ তায়ালা যুগের কসম করে বলেছেন যে, সমস্ত মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত তবে যারা চারটি কাজ করবে তারা এই ক্ষতির কবল থেকে মুক্ত। ১ ঈমান আনা। ২ সৎকর্ম করা। ৩ অপরকে সৎকাজের আদেশ করা। ৪ এবং অন্যায়কাজে বাধা প্রদান করা।এই চারটি বিষয়ের প্রথম দুটি বিষয় নিজের সংশোধন সম্পর্কিত, অপর দুটি বিষয় অন্যের সংশোধন সম্পর্কিত। এই আয়াতে নিজের সংশোধনের পাশাপাশি অন্যের সংশোধনের চিন্তা করাকে সমান গুরুত্বপূর্ণ ও জরুরি বিবেচনা করা হয়েছে। অন্যথায় শুধু নিজের আমল নাজাতের জন্য যথেষ্ট নয়। বিশেষত আপন পরিবারÑপরিজন, ও আতœীয়Ñস্বজনের অন্যায় অপকর্ম থেকে চোখ ফিরিয়ে রাখার কোনোই অবকাশ নেই। অথচ এ ব্যাপারে আমরা চরম উদাসীনতায় লিপ্ত। আমি নিজে নামাজ পড়ি, অথচ আমার ঘরের প্রপ্তবয়স্ক ছেলেÑমেয়েরা নামাজ পড়ে না। আমি পর্দা করি , আমার ঘরের সাবালিকা মেয়েটি তার বয়ফ্রেন্ডের সঙ্গে ঘুরে বেড়ায়। কোরআনে কারিমে আল্লাহ তায়ালা নিজেকে ও নিজের পরিবারকে সর্বপ্রথম জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচানোর নির্দেশ দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনগণ তোমরা নিজেদেরকে এবং তোমাদের পরিবার পরিজনকে সেই অগ্নি থেকে রক্ষা কর, যার ইন্ধন হবে মানুষ ও প্রস্তর। যাতে নিয়োজিত আছে পাষাণ হৃদয় ও কঠোর স্বভাবের ফেরেস্তাগণ, তারা আল্লাহ তায়ালা যা আদেশ করেন তা অমান্য করে না। যা করতে আদেশ করা হয় তাই করে’। (সূরা তাহরিম, আয়াত ৬) হাদিস শরিফে আছে, ‘তোমরা তোমাদের সন্তাকে সাত বছর বয়সে নামাজের নির্দেশ দাও। আর দশ বছর বয়সে নামাজ না পড়ার কারণে তাদেরকে প্রহার কর’। (আবু দাউদ, হাদিস নং ৪৯৫) সুতরাং বুঝা গেল নিজে একাএকা নেক আমল করলেই পার পাওয়া যাবে না, বরং সৎ কাজে আদেশ অসৎ কাজে নিষেধ না করার কারণে পাকরাও করা হবে। একটি হাদিসে আছে, প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, আল্লাহ পাক হযরত জিবরাইল (আঃ)কে এই মর্মে নিদের্শ দিলেন যে, অমুক শহরকে উল্টে দাও। হযরত জিবরাইল (আঃ) বললেন, হে আল্লাহ! ওই শহরে তোমার অমুক বান্দা আছে, যে এক মুহূর্ত ও আপনার নাফরমানী করে না। ইরশাদ হলো, আমার ওই বান্দাসহ শহরকে উল্টে দাও। যদি ও সে গুণাহ করেনি কিন্তু সে আমার নাফরমানী হতে দেখেছে, অথচ ঘৃনায় তার ললাটে একটু ও ভাজঁ পড়েনি। (তবরানি, হাদিস নং ৩৩৬)
আরেকটি হচ্ছে সম্মিলিত দাওয়াত ও তাবলিগ। যা ফরজে আইন নয়, বরং কেফায়া। একদল লোক বের হলে সকলের পক্ষ থেকে আদায় হয়ে যায়। সম্মিলিতভাবে সকলের বের হওয়া জরুরি নয়। তবে যদি কেউ এ ধরণের দাওয়াত ও তাবলিগের প্রতি গুরুত্ব না দেয় তাহলে সকলের ওপর তা ফরজ হয়ে যায়। আমরা নিজেরা নামাজ পড়ি, রোজা রাখি, হজ করি ও জাকাত দেই। কিন্তু দাওয়াত ও তাবলিগ করি না। এ ব্যাপারে আমরা ৃপূর্ণ মাত্রায় উদাসীন। আমরা নিজের সংশোধনের চিন্তা করি অন্যের সংশোুধনের চিন্তা করি না। অথচ নিজের সংশোধনের পাশাপাশি অন্যের সংশোধনের চিন্তা করা ও জরুরি। চাই এই সংশোধনচিন্তা নিজের অধীনস্তদের জন্য হোক, যেমন তাদেরকে দৈনন্দিন কাজে দ্বীনের জরুরি মাসঅলা মাসায়েল শিক্ষা দেওয়া, ইসলামি নিয়মÑনীতি শিক্ষা দেওয়া, অথবা সর্ব সাধারণের জন্য হোক, যেমন ওয়াজ নসীহত করা বা দলবদ্ধভাবে বের হয়ে মানুষের দ্বারে দ্বারে গিয়ে মানুষকে দ্বীনের কথা বুঝানো।
মোট কথা, সৎ কাজে আদেশ অসৎ কাজে নিষেধের এই বিধানটি আমাদের থেকে একদম বিলুপ্ত হতে চলেছে। এমনকি বর্তমান যুগে বাপ সন্তানকে, স্বামী স্ত্রীকে, শিক্ষক ছাত্রকে, পীর মুরীদকে পর্যন্ত সৎ কাজের আদেশ অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করে না। প্রত্যেকে স্বাধীন জীবনযাপন করছে। এতে করে সমাজে অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাড়ছে খুন, গুম, ধর্ষণ ও ইভটিজিংয়ের মতো মানবতা বিধ্বংসী অপরাধ। আল্লাহ তায়ালা কোরআনে কারিমে ঘোষণা করেন, ‘তোমার নিকটাতœীয়দেরকে জাহান্নামের আগুন থেকে ভীতি প্র্র্রদর্শন কর। (সূরা আশ শূয়ারা, আয়াত ২১০)
©somewhere in net ltd.