![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমাদের নামাজ যেন হয় জীবন্ত
মুহাম্মাদ শোয়াইব
নামাজ ইসলামের একটি মহান ইবাদত। ঈমানের পরই এর গুরুত্ব। কেয়ামতের দিন সর্বপ্রথম এই নামাজের হিসাব নেয়া হবে। হাদিস শরীফে আছে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, কেয়ামতের দিন সর্বপ্রথম বান্দার নামাজের হিসাব হবে। সেদিন যার নামাজ ঠিক থাকবে তার অন্যান্য হিসাব সহজ হবে। সুতরাং এমন একটি ইবাদত খুশু-খুযুসহ আদায় করার গুরুত্ব কতটা অপরিসীম তা বলার অপেক্ষা রাখে না। আমাদের নবীজি অত্যন্ত খুশু-খুযুর সঙ্গে নামাজ পড়তেন। হাদিস শরীফে আছে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এত লম্বা সময় নামাজে দাঁড়িয়ে থাকতেন যে, তার পা মোবারক ফুলে যেত। সাহাবায়ে কেরাম এত খুশু-খুযুর সঙ্গে নামাজ পড়তেন যে, তাদের পা থেকে তীর খুলে ফেলা হলেও নামাজে বিন্দুমাত্র বিঘ্ন সৃষ্টি হতো না। হাদিস শরীফে আছে, এক সাহাবি নামাজে দাঁড়িয়ে এত তন্ময় হয়ে গেলেন যে, কাফেররা বারবার তাকে লক্ষ্য করে তীর ছুড়ল, আর সেই তীর এসে তার বুকে আঘাত করল, তবুও তিনি নামাজ ছাড়লেন না। কিন্তু অত্যন্ত আফসোসের বিষয় হলো, আমরা নামাজ পড়ি, অথচ আমাদের নামাজ সাহাবায়ে কেরামের নামাজের মতো জীবন্ত নামাজ হয় না। আমরা নামাজ পড়ি, পরক্ষণেই বলতে পারি না কোন রাকাতে কোন সুরা পড়েছি।
এর প্রধান কারণ হলো, সাহাবায়ে কেরাম যে মনোভাব নিযে নামাজ পড়েছেন আমরা সে মনোভাব নিয়ে নামাজ পড়ি না। হাদিস শরিফে আছে, এমনভাবে নামাজ পড় যেন এটাই তোমার জীবনের শেষ নামাজ। আমরা এই মনোভাব নিয়ে নামাজ পড়ি না। আমরা কখনও এই চিন্তা করি না যে, এটাই আমরা জীবনের শেষ নামাজ হতে পারে। সুতরাং আমার শেষ নামাজটা যেন নিবিষ্ট চিত্তে ও খুশু-খুযুর সঙ্গে হয় বরং আমরা নামাজ পড়ি অনেকটা গতানুগতিকভাবে। প্রতিদিন নামাজ পড়ি। তাই নামাজের সময় হলে মসজিদে যাই, নামাজ পড়ি। আমাদের এই চিন্তা থাকে না যে, আমার নামাজটা খুশু-খুযুর সঙ্গে হওয়া উচিত। আগের ওয়াক্তের চেয়ে সুন্দর নম্র ও শালীন হওয়া উচিত।
নামাজে খুশু-খুযু সৃষ্টি করার জন্য আমাদের বেশ কয়েকটি কাজ করতে হবে। (ক) সাহাবায়ে কেরাম যে মনোভাব নিয়ে নামাজ পড়েছেন আমাদেরকেও সেই মনোভাব নিয়ে নামাজ পড়তে হবে। মনে মনে এই চিন্তা রাখতে হবে যে, এটাই আমার জীবনের শেষ নামাজ। সুতরাং অত্যন্ত মনোযোগ ও খুশু-খুযুর সঙ্গে নামাজ পড়তে হবে। (খ) সুন্নত তরিকায় নামাজ পড়তে হবে। আর তা শুরু করতে হবে অজু থেকে। যখন অজু করার নিয়ত করব তখন অজুর সুন্নতগুলো একবার খেয়াল করে নেয়া ভলো যাতে কোনো সুন্নত না ছুটে যায়। অজু শেষ হলে অন্য কোনো কাজে লিপ্ত হওয়া উচিত নয়। এতে নামাজের মনোযোগ বিনষ্ট হতে পারে। বরং সোজা মসজিদে চলে যাওয়া উচিত। জামাতের আগ পর্যন্ত সময়টা দুনিয়াবি কোনো কাজ বা কথায় লিপ্ত হওয়া উচিত নয় বরং নিবিষ্টচিত্তে আল্লাহর প্রতি মনোযোগী হয়ে নামাজের অপেক্ষা করা উচিত। মসজিদে প্রবেশের পর মসজিদের আদাবের প্রতি খেয়াল রাখতে হবে। মসজিদে যতক্ষণ অবস্থান করা হয় ততক্ষণ ইতিকাফের নিয়ত করতে হবে। মসজিদে আমার কথা বা কাজ দ্বারা কোনো নামাজির যেন কষ্ট না হয় সেদিকে খুব খেয়াল রাখতে হবে। মসজিদে প্রবেশের সময় ও বের হওয়ার সময় সুন্নতের প্রতি খেয়াল রাখতে হবে। অনেক সময় দেখা যায় যে, মসজিদে প্রবেশের যে সুন্নত তা আদায় করতে মনে থাকে না। যেমন ডান পা দিয়ে মসজিদে প্রবেশের স্থলে বাম পা দিয়ে প্রবেশ করা হয়। সেক্ষেত্রে নিয়ম হলো, অভ্যাস সৃষ্টির জন্য বের হয়ে আবারও ডান পা দিয়ে প্রবেশ করা ও মাসনূন দোয়া পড়া।
নামাজের সুন্নত, মুস্তাহাব ইত্যাদির প্রতি খেয়াল করে নামাজ পড়তে হবে। তাকবির কেরাত ও বিভিন্ন তাসবিহাত স্পষ্ট উচ্চারণে সহিহ-শুদ্ধভাবে আদায় করতে হবে। শুধু মনে মনে উচ্চারণের কল্পনা করা যথেষ্ট নয়। নামাজে এ কল্পনা করতে হবে যে, আমি আমার প্রভুর সামনে দণ্ডায়মান। আমার ওঠাবসা, রুকু-সিজদা সবকিছুই তিনি দেখছেন। ফেরেস্তারা এগুলো আমার আমলনামায় লেখছেন। এর ওপর ভিত্তি করেই আমার জান্নাত-জাহান্নামের ফয়সালা হবে। হাদিস শরিফে আছে, “এমনভাবে ইবাদত করো যেন তুমি তোমার প্রভুকে দেখছ, আর যদি তুমি তাঁকে না দেখ তাহলে তিনি অবশ্যই তোমাকে দেখছেন।”
নামাজে খুশু-খুযু আনার জন্য আমাদের আরও অতিরিক্ত কিছু কাজ করতে হবে। নামাজে দাঁড়ানোর আগে নামাজের জন্য কয়েক মিনিট সময় বরাদ্দ করতে পারলে ভাল। এ সময় দুনিয়াবি কোনো কাজ বা চিন্তা করা যাবে না। এই পূর্ণ সময়টা নিবিষ্টচিত্তে আল্লাহর প্রতি মনোযোগী হয়ে কাটানোর চেষ্টা করতে হবে। তাছাড়া নিজের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র যেমন জুতা, মোবাইল, ছাতা ইত্যাদি এমনভাবে রাখতে হবে যাতে এগুলো নামাজের মধ্যে মনোযোগ বিচ্ছিন্ন করতে না পারে। মোটকথা, পরিকল্পনা ও দৃঢ় সংকল্প থাকলে নামাজে খুশু-খুযু সৃষ্টি করা খুব সহজ। আল্লাহতায়ালা আমাদেরকে আমল করার তাওফিক দিন। আমিন।
©somewhere in net ltd.