![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ইরান-ইরাক যুদ্ধের সূচনা ১৯৮০ সালের সেপ্টেম্বরে। সীমান্ত বিরোধ এবং ইরাকের অভ্যন্তরে শিয়া জঙ্গিদের ইরানি মদদ দেয়ার অভিযোগে ১৯৮০ সালের ২২ সেপ্টেম্বর প্রয়াত প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেন যখন তার বাহিনীর মাধ্যমে পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই অবৈধভাবে ইরানি ভূখ- আক্রমণ এবং অনুপ্রবেশ চালায়। সাবেক ইরাকি প্রেসিডেন্ট বিজয়ের আত্মবিশ্বাসের কারণে যুদ্ধ বন্ধের আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সব প্রস্তাবকে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। আর তিনি এ যুদ্ধকে ‘ব্যাটল অব কাদেসিয়াহ’ নামে অভিহিত করেছিলেন। কিন্তু কার্যত সে চেষ্টা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়।
এর পরের ৬ বছর ইরানি বাহিনী যুদ্ধে অগ্রসরের ভূমিকায় ছিল। ইরানিরা নেতৃত্ব ফিরে পায়। তারা পশ্চিম ইরান থেকে ইরাকিদের তাড়াতে সক্ষম হয়। আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতাকারী দলগুলো যুদ্ধ বন্ধের প্রস্তাব নিয়ে সামনে অগ্রসর হলেও এবার কিন্তু তেহরানই যুদ্ধ বন্ধে অস্বীকার করে বসে। ৫ বছরে পুরোদমে যুদ্ধের আগুন জ্বলতে থাকে এবং তা যন্ত্রণাদায়ক ও ব্যাপক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এতে ইরানিরা মানবিক ও বৈষয়িক ক্ষতির শিকার হয়। তা সত্ত্বেও ইরানের ধর্মীয় কর্তৃপক্ষ যুদ্ধ বন্ধের প্রস্তাবকে এ ধারণায় প্রত্যাখ্যান করেছিল যে, বিজয়ের জন্য আরও মানুষের ত্যাগ ও কোরবানির প্রয়োজন।
ইরান আজ ইরাকের সঙ্গে যুদ্ধে দ্বিতীয় পর্বে অবস্থান করছে। আজ তেহরান তার প্রতিবেশীর ওপর আধিপত্য বিস্তার করতে চাচ্ছে। এখন আবার আইএস থেকে মুক্ত করার অজুহাতে ইরাকে প্রবেশ করে জেনারেল কাসেম সোলাইমানির বাহিনী। যিনি আল কুদস ফোর্সের কমান্ডার। এখন ইরাকি বাহিনীর মাঝে তাদের সঙ্গে তুমুল লড়াই শুরু হচ্ছে। ইরাকের আভ্যন্তরীণ বিষয়ে ইরানি শাসকদের হস্তক্ষেপকে ঝুঁকিপূর্ণ তা তারা জানে। যেমন নুরি আল মালিকি ইরাকের সাবেক প্রধানমন্ত্রী যে কোনো মূল্যে আবার ক্ষমতায় ফিরতে চান। হায়দার আল আবাদি ২ বছর আগে শপথ নেয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত তার প্রধানমন্ত্রিত্ব পাননি। কারণ নুরি আল মালিকির মতো তিনিও দুর্ভাগ্যবান। তাছাড়া ইরান বিক্ষোভ মিছিল করে সরকারকে অচল করে দেয়ার মাধ্যমে দেশকে অস্থিতিশীল করে তুলছে। ইরান সবচেয়ে ভয়ংকর যে কাজটি করছে তা হলো, তারা একটি মিলিশিয়া সেনাবাহিনী তৈরি করছে। যার নাম ‘আলহাশাদ আল আশাবি’, যা চরমপন্থী দলগুলোর চেয়ে কোনো অংশে কম নয়।
ইরাকে আমেরিকার আগ্রাসনের পর এ এলাকার নিয়ন্ত্রণ নেয়ার প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে ইরান প্রথমে ইরাকে এবং সম্প্রতি সিরিয়ায় চরমপন্থী শিয়া সোভিনিস্টদের লালনপালন করছে। আর এটা করতে গিয়ে তেহরান বৈশ্বিক পরাশক্তি আমেরিকা, ইসরাইল ও উপসাগরীয় রাজতান্ত্রিক আরব দেশগুলোর বিরুদ্ধে যৌথ প্রতিরোধের ব্যানারে সুন্নিদের কাছে শিয়াবাদ গ্রহণযোগ্য করার আগের সব প্রচেষ্টা সম্পূর্ণরূপে ত্যাগ করেছিল।
ইরাকে তেহরানের আস্থাভাজন নেতা প্রধানমন্ত্রী নুরি আল মালিকির সরকার অন্ধভাবে একপক্ষীয় এবং চরমভাবে কর্তৃত্ববাদী যা দেশটিতে শুধু শিয়াদের স্বার্থ রক্ষা করেছে। ইরানের সুন্নিবিরোধী মনোভাব আরও প্রকটভাবে প্রকাশ হয়ে পড়ে যখন দেশটি দামেস্কের আসাদ সরকারকে পৃষ্ঠপোষকতা করতে থাকে। তেহরান আসাদ সরকারকে টিকিয়ে রাখতে হিজবুল্লাহর মতো প্যারামিলিটারি শিয়া সৈন্যসহ তাৎপর্যপূর্ণ আর্থিক সাহায্য, আদর্শগত সমর্থন এবং সামরিক সরঞ্জাম দিয়ে সাহায্য করে। আর তেহরানের এ সহযোগিতা নিয়ে আসাদ সরকার সিরিয়ার সুন্নি মুসলমানদের নির্মমভাবে হত্যা করতে থাকে।
ফল যা দাঁড়াল তা হচ্ছে, আরব বিশ্বের সুন্নি মুসলমানরা পুরো এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে এবং তাদের কিছু অংশ এখন সুন্নিদের চরমপন্থী বিদ্রোহীগোষ্ঠী আইএসআইএলকে সমর্থন করছে। সুতরাং শিগগিরই হয়তো ইরাকের বুকেই ইরানি শাসকদের সমাধি রচিত হবে
আবদুর রহমান আল রাশেদ
আশশারকুল আওসাত (আরবি) অবলম্বনে
মুহাম্মাদ শোয়াইব
©somewhere in net ltd.