![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
চীন ও ভারত এমন দুইটি উঠতি পরাশক্তির দেশ, যা বিশেষ করে সৌদি আরবের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের ক্ষেত্রে আর সাধারণভাবে উপসাগরীয় দেশগুলোর উন্নয়নে ব্যাপক ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। দেশ দুইটি এমন মুহূর্তে বিশ্বের উদীয়মান বৃহত্তম বাজারগুলোর প্রতিনিধিত্ব করছে, যখন প্রধান মার্কেটগুলো তেল আমদানির প্রেক্ষাপটে সঙ্কুুচিত হচ্ছে।
এটা স্পষ্ট যে, রিয়াদ সে দিকেই অগ্রসর হচ্ছে। যেমনটি আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মুহাম্মাদ বিন সালমান পর পর দুইবার চীন সফরে এ বিষয়েই গুরুত্ব দিয়েছেন। সফর দুইটি সংগঠিতও হয়েছিল অর্থনৈতিক উন্নয়নকে কেন্দ্র করে। সৌদি আরবের অন্যতম শীর্ষ বাণিজ্যিক অংশীদার ও জ্বালানি ক্রেতা চীন। দেশটির সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরও জোরদারের লক্ষ্যে সৌদি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ও ডেপুটি ক্রাউন প্রিন্স মুহাম্মাদ বিন সালমানের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল সম্প্রতি চীন সফর করেছে। এরই অংশ হিসেবে মঙ্গলবার দেশ দুইটির মধ্যে ১৫টি প্রাথমিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। এতে জ্বালানি, আবাসনসহ বিভিন্ন খাত অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। সৌদি যুবরাজ চীনা উপ-প্রধানমন্ত্রী ঝ্যাং গাওলির সঙ্গে বৈঠক করেন। এ বৈঠকে দুই পক্ষের মধ্যে একটি নতুন কৌশলগত সম্পর্ক স্থাপন ও বিদ্যমান সম্পর্ক ভবিষ্যতে আরও জোরালো করার ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে। এর পর দুই দেশের মধ্যে জ্বালানি মজুদ, পানিসম্পদ এবং বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, সাংস্কৃতিক সহযোগিতাসহ বিভিন্ন বিষয়ে ১৫টি সমঝোতা স্মারক (মিউচুয়াল অব আন্ডারস্ট্যান্ডিং-এমওইউ) স্বাক্ষরিত হয়েছে।
এমন বহু শিল্প ও তেল উৎপাদনকারী দেশ রয়েছে, যারা চীন ও ভারতের বাজারের দিকে তাকিয়ে আছে। তারাও ওসব মার্কেটে নিজেদের অংশীদার বানাতে চায়। তারপরও সৌদি আরবের বিশিষ্টতা হচ্ছে এখানে যে, সৌদি আরবই বিশ্বের সবচেয়ে বড় সাশ্রয়ী ও আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর তেল খনির মালিক। তাছাড়া ইরানের মতো তার উন্নয়নের পথে কোনো বাধাও নেই।
এখানে প্রশ্ন হচ্ছে, সৌদি আরব কি পশ্চিমাদের সঙ্গে দীর্ঘদিনের বাণিজ্যিক সম্পর্কের পরও প্রাচ্যের দিকে সফলভাবে মুখ ফেরাতে পারবে? পারবে ভারত ও চীনের দিকে মনোনিবেশ করতে? ভাগ্যক্রমে এ পর্যায়ে এমন কোনো ঝুঁিকপূর্ণ জিনিস নেই, যা কোল্ড ওয়ারের সময় বিদ্যমান ছিল।
চীন ও ভারতীয় বাজারের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করা শুধু রাজনৈতিক ব্যাপার নয়। কারণ পশ্চিমাদের সঙ্গে তো সম্পর্ক রীতিমতো বহাল তবিয়তেই আছে এবং শক্তিশালীই থাকবে। আর এটার প্রয়োজনও আছে। কেননা পশ্চিমারা এখনও বাস্তবিক পক্ষে সবচেয়ে কার্যকর প্রভাব বিস্তারকারী। অন্যদিকে চীন ও ভারতের সঙ্গে বিশেষ সম্পর্কের কারণে প্রাচ্যে ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সৌদি আরবের প্রভাব সৃষ্টি হবে এবং তার কৌশলগত মর্যাদা আরও বৃদ্ধি পাবে।
একটি বড় অর্থনৈতিক প্রকল্পে চীন ও ভারতের ব্যাপক বিনিয়োগের সম্পর্ক কোনো সহজ বিষয় নয়। বরং এটি একটি নতুন ইতিহাস, নতুন বিশ্বের দ্বার উন্মোচন। বিশেষ করে সৌদি আরবের জন্য। এর সঙ্গে মোকাবিলা করার জন্য সৌদি সরকারের বৃহত্তর ক্ষমতার সঙ্গে একটি বড় পদক্ষেপ নিতে হবে। এখানে অনেক কোম্পানি, ব্যাংক ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব রয়েছে। আর রয়েছে, দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য, শ্রমিক, গবেষণা কেন্দ্র, সরকারি প্রতিষ্ঠান ইত্যাদির ভূমিকাও।
সৌদি আরবের পরিকল্পনা বড় বড় ভোক্তা বাজারের সঙ্গে যেমন ব্রিটেন, যুক্তরাষ্ট্র, ইত্যাদি রাষ্ট্রের সঙ্গে প্রাচীন সম্পর্কের প্রেক্ষাপটে তেল বাণিজ্যের ওপর নির্ভর ছিল। আর ভারত ও চীনের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে এটাই প্রধান কারণ। কিন্তু আজ সম্পর্কের ঝুড়ি ভিন্ন রকম করা যায়। আজ বৃহত্তর সম্পর্ক গড়ে তোলা যায়। ঐতিহ্যগতভাবেই সৌদি অর্থনীতি জ্বালানি রফতানির ওপর নির্ভরশীল। তবে মুহাম্মাদ বিন সালমান সম্প্রতি জ্বালানিকেন্দ্রিক অর্থনীতিকে ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনা করেছেন। তিনি সৌদি আরবকে এমন একটি দেশে পরিণত করতে চাইছেন, যেটি বৈশ্বিক লগ্নিকারীদের জন্য বিনিয়োগের আকর্ষণীয় গন্তব্য হয়ে দাঁড়াবে। এ লক্ষ্যে সৌদি যুবরাজ গত এপ্রিলে ‘ভিশন ২০৩০’ শীর্ষক একটি পরিকল্পনা উপস্থাপন করেছেন। নিজের পরিকল্পনাকে বেগবান করতে তিনি বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক স্থাপন করতে চাইছেন। এরই অংশ হিসেবে তিনি পাকিস্তান, চীন ও জাপান সফরে বেরিয়েছেন।
মুহাম্মাদ বিন সালমানের চীন ও জাপান সফরের একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য রয়েছে। ‘ভিশন ২০৩০’ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে দেশ দুইটির ব্যাংক ও কোম্পানিগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এদিকে সৌদি মন্ত্রিপরিষদ জানায়, দেশটির কর্মকর্তারা জাপানের সঙ্গে জ্বালানি সহযোগিতা বাড়ানোর ব্যাপারে আলোচনা করবেন।
সাম্প্রতিক সময়ে রাশিয়া, চীনসহ শীর্ষ কয়েকটি বাজারে বিশ্বের শীর্ষ তেল রফতানিকারক দেশ সৌদি আরবের অবস্থান দুর্বল হয়ে পড়েছে। অন্যদিকে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার পর জ্বালানি রফতানি বাড়িয়ে দিয়েছে ইরান, যা সৌদি অর্থনীতির জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ কারণে দেশটি অর্থনৈতিক পুনর্গঠনের ওপর জোর দিয়েছে। এর অংশ হিসেবে রাষ্ট্রায়ত্ত জ্বালানি কোম্পানি সৌদি আরামকোর আংশিক মালিকানা (৫ শতাংশের কিছু কম) বিক্রির পরিকল্পনা করছে রিয়াদ, যার আর্থিক মূল্য দাঁড়াতে পারে কয়েক হাজার কোটি ডলার। চীনা ও জাপানি বিনিয়োগ প্রক্রিয়াটিকে এগিয়ে নিতে বিশেষভাবে সহায়ক হয়ে উঠতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
চীন ও ভারতই এমন দুইটি দেশ, যা পশ্চিমা বাজারের অভাব দূর করতে পারে। যেমনÑ যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পর্যাপ্ত তেল ফিরিয়ে দিতে পারে। উভয় দেশ সৌদি সরকারের বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক সুযোগ প্রদানের উদ্দেশ্যে একটি ব্যাপক ক্ষেত্রও তৈরি করে রেখেছে। কিন্তু সে সুযোগ গ্রহণ করার জন্য আরও সৃজনশীল চিন্তা ক্রমবর্ধমান বেসরকারি খাতের ওপর নির্ভরতা জরুরি। যাতে তারা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে আগের চেয়ে বেশি অবদান রাখতে পারে। চীন ও ভারত উভয় রাষ্ট্রই বাণিজ্যকে রাজনীতির সঙ্গে গুলিয়ে ফেলে না। চীন বিশ্বের প্রধান অস্ত্র রফতানিকারক দেশগুলোর একটি। ১৯৯০ এর দশকে সৌদি আরবের সঙ্গে চীনের একটি বড় বাণিজ্যিক ইতিবাচক অভিজ্ঞতাও ছিল। সুতরাং সৌদি আরব যদি আঞ্চলিক যুদ্ধে জড়িত ও যুদ্ধ-মিত্রতায় অংশীদার না হতো তাহলে বড় বড় দেশের সঙ্গে নিজের বিশেষ সম্পর্ককে বহাল রাখতে পারত। অর্থনৈতিকভাবে সৌদি আরব আরও এগিয়ে যেত।
আবদুর রহমান আল রাশেদ
আল আরাবিয়া নেট (আরবি)
অবলম্বনে মুহাম্মাদ শোয়াইব
http://www.alokitobangladesh.com/todays/details/193785/2016/09/20
©somewhere in net ltd.