নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সাহসী কন্ঠ

মুহাম্মাদ শোয়াইব

সম্পাদক, মাসিক আরবি ম্যাগাজিন ‘আলহেরা’

মুহাম্মাদ শোয়াইব › বিস্তারিত পোস্টঃ

ভারত কেন যুদ্ধ করবে না

১২ ই অক্টোবর, ২০১৬ সকাল ৮:৪৩

সালীম সরফী
আরো হুমকিÑধমকি দেবে। আরো চাপাবাজি করবে। কূটনৈতিক চাপ আরো বৃদ্ধি করবে। কিন্তু পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধে জড়াবে না ভারত। পাকিস্তানের সঙ্গে লড়াই করা ভারতের জন্য খুব সহজও নয়। নরেন্দ্র মোদী চরম ধর্মান্ধ ও মুসলিম বিদ্ধেষী; তবে পাগল নয়। হালকা হিসাব-কিতাব তিনি জানেন। এতটুকু তো তিনি জানেন যে, পাকিস্তান এখন একাত্তর বা পয়ষট্টির পাকিস্তান নয়। বরং পাকিস্তানের পারমাণবিক বোমা, ক্ষেপণাস্ত্র ও প্রযুক্তি তার দেশের তুলনায় কয়েক ধাপ এগিয়ে। (বিস্তারিত জানার জন্য দেখুন ২৪ সেপ্টেম্বও জিও নিউজে প্রকাশিত ড. তমর মুবারকের আলাপচারিতা)। যুদ্ধের ধ্বংসলীলা সম্পর্কেও তিনি গাফেল নন। যুদ্ধ লেগে গেলে পড়শী দেশগুলোও প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করবে। তারা নিশ্চয় একটি পক্ষকে বেছে নেবে। পড়শী রাষ্ট্রগুলোও প্রভাবিত না হয়ে পারে না। (বিস্তারিত জানার জন্য দেখুন ২৪ সেপ্টেম্বও জিও নিউজে প্রকাশিত ড. পারভেজ হুদভাই এর আলাপচারিতা)। এই হাকিকত সম্পর্কে মোদীও অবহিত থাকার কথা। পাকিস্তান এখন চীনের সঙ্গে মিলে জে এফ-১৭ থান্ডার তৈরি করছে। পাকিস্তান এখন চীনের পাশাপাশি রাশিয়া থেকেও অস্ত্র কিনতে শুরু করেছে। যা কিনা তার সামরিক শক্তির প্রদর্শনের সক্ষমতা বড় মাত্রায় বৃদ্ধি করবে। প্রচলিত যুদ্ধবিগ্রহের ক্ষেত্রে দেখা যায় বিমানবাহিনীর ভূমিকা সবচেয়ে থাকে। সবচেয়ে বড় পরিবর্তন যা ভারতকে যুদ্ধ থেকে বারণ করবে তাহলো কাশ্মীরের হালত। ১৯৯৯ সালের কার্গিল যুদ্ধের সময়ও ‘ভূস্বর্গ’ খ্যাত কাশ্মিরের জনগণ এভাবে জ্বলে ওঠেনি যেভাবে জ্বলে উঠেছে আজ। অসহায় মানুষের আহাজারির শক্তি যে কত প্রচন্ড হয়, ভারত তা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে। ভারত তার সর্বশক্তি ব্যয় করেও বুরহান মুজাফ্ফর ওয়ানি নামে এক তরুণ ভারতীয় বাহিনীর হাতে নিহত হওয়াকে কেন্দ্র করে জ্বলে উঠা আন্দোলন বন্ধ করতে পারছিল না। রেকর্ড ৫৩ দিন টানা কারফিউ জারি করেও শান্ত করা যায়নি। এমনকি ইতিহাসে এই প্রথমবারের মতো ঈদের দিনেও কারফিউ বলবৎ রাখা হয়। ইন্টারনেট, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। কাশ্মিরি নেতাদের গণহারে গ্রেফতার করা হয়। হামলায় অন্তত ৭০ কাশ্মিরি নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে ১১ হাজার। এদের মধ্যে সাত হাজার বেসামরিক লোক। ১৭ লাখ ছররা গুলি ব্যবহার করেছে ভারতীয় বাহিনী। এই গুলিতে হাজার হাজার কাশ্মিরি সারা জীবনের জন্য অন্ধ হয়ে গেছে। বিষয়টি এতই নির্মমতা ছিল ভয়াবহ। এমনকি সেখানকার চিকিৎসকরাও পর্যন্ত সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে স্বীকার করেছেন যে, কাশ্মিরে ‘যুদ্ধাবস্থা’ বিরাজ করছে। যা নয়া দিল্লি ভিত্তিক অল ইন্ডিয়া প্রকাশ করেছে।
১৯৯৯ সালের মে-জুলাই মাসে কাশ্মীরের কার্গিল জেলায় ভারত ও পাকিস্তান রাষ্ট্রের মধ্যে সংঘটিত সশস্ত্র কার্গিল যুদ্ধ। সেটি ইতিহাসের কথা। পাকিস্তানি ফৌজ ও কাশ্মীরি বিচ্ছিন্নতাবাদীরা উভয় রাষ্ট্রের মধ্যে ডি ফ্যাক্টো সীমান্তরেখা হিসেবে পরিচিত নিয়ন্ত্রণ রেখা বা লাইন অফ কন্ট্রোল পেরিয়ে ভারতে ঢুকে পড়লে এই যুদ্ধ অনিবার্য হয়ে ওঠে। কার্গিল যুদ্ধের সময় যুদ্ধের নেতৃত্ব দানকারী জেনারেল পারভেজ মোশাররফের আশার বাণী ছিল এতটুকু যে, অধিকৃত কাশ্মিরের জনগণ উত্তপ্ত হয়েছেন ঠিকই। কিন্তু তাদের আভ্যন্তরিণ অবস্থা ভালো ছিল। কিন্তু আজ কাশ্মিরের জনগণ এমনভাবে উত্তপ্ত হয়েছে যে, সারা দুনিয়া পেরেশান। গত কয়েকদিনে কাশ্মিরের কয়েকজন যুবকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করি। কত শতাংশ মানুষ ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ চায় জানতে চেষ্টা করি। তারা বিস্ময়কর জবাব দিল যে, নব্বই শতাংশ মানুষই যুদ্ধের জন্য শুধু উৎসকই নন বরং তাদের অন্তরে এই অভিযোগও রয়েছে যে, পাকিস্তান কেন যুদ্ধ করছে না। মোদির নিশ্চয় উপলব্ধি হয়েছে যে, যুদ্ধ করলে তার বিরুদ্ধে পাকিস্তানের লাখ লাখ সৈন্যই যুদ্ধ করবে না বরং কাশ্মিরের লাখ লাখ মানুষ পাকিস্তানিদের পাশে থাকবে। পাকিস্তানের জন্য চীন এখন শুধু বন্ধু রাষ্ট্রই নয়; বরং অর্থনৈতিক কৌশলগত মিত্র।
এখন ভারত পাকিস্তানের মাঝে গতানুগতিক যুদ্ধের আশংকা করা হচ্ছে। অথচ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারত আগে থেকেই ভিন্ন এক যুদ্ধ শুরু করেছে। যে যুদ্ধের নকশা ভারতীয় উপদেষ্টা অজিত ডোল তার এক ভিডিও বার্তায় পেশ করেছিলেন। যা ইউটিউবে এখনও পাওয়া যায়। সেটা হলো ভারত আসলে সামরিক যুদ্ধ নয় কূটনৈতিকভাবেই পাকিস্তানকে চাপে ফেলতে চায়। এটাকে অবশ্য লোকজন বলিউডি ফিল্মি হুমকি হিসেবেই নিচ্ছে। তবে সামরিকভাবে সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে উস্কানিমূলক বা সরগরম বক্তব্য দুই দেশের তরফেই প্রতিনিয়ত মিডিয়াতে প্রচার হচ্ছে। কিন্তু চরম বাস্তবতা হচ্ছে ভারত গতানুগতিক যুদ্ধ ছেড়ে কূটনৈতিক যুদ্ধের রাস্তা খুঁজছে। কারণ ভারত এই মূহূর্তে যুদ্ধের জন্য মোটেও প্রস্তুত নয়। তাছড়া কাশ্মিরের মুক্তিকামী জনতা এই যুদ্ধে পাকিস্তানকেই সমর্থন দেবে এবং কাশ্মিরের দুর্গম পার্বত্য এলাকায় জনসমর্থনহীন এই যুদ্ধে ভারতের পক্ষে সুবিধা করে ওঠা মোটেই সহজ হবে না। যুদ্ধের ইতিহাসে পাকিস্তানের অভিজ্ঞতা ভারতের চেয়ে বেশ দীর্ঘ ও অগ্রগামী। তাছাড়া ফিদায়ী আক্রমণের এই যুগে কনভেনশনাল যুদ্ধ করে ভারতের পক্ষে সুবিধা করা মুশকিল। তুরুস্ক একটি বিশাল শক্তিশালী দেশ। এ যুদ্ধে তুরস্ককেও পাচ্ছে পাকিস্তান। রাশিয়ার সাথে ভারতের মনস্তাত্ত্বিক দূরত্ব তৈরি হয়েছে বিভিন্ন কারণে। সে সুযোগে চীন ও তুরস্কের সাথে রাশিয়াকেও লুফে নিচ্ছে পাকিস্তান। ইতিমধ্যেই ভারতের অনুরোধ উপেক্ষা করে প্রথমবারের মতো যৌথ সামরিক মহড়ায় অংশ নিয়েছে রুশ বাহিনী। সাম্প্রতিক সময়ে সৌদি আরবের নেতৃত্বে সুন্নি মুসলিম দেশগুলোর একটি সামরিক জোট গঠিত হয়েছে। এর গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার পাকিস্তান। সুতরাং স্বাভাবিকভাবেই পাকিস্তান এই জোটের সমর্থন লাভ করবে। ইতিমধ্যেই ওআইসি সমর্থন জানিয়েছে পাকিস্থানকে। ওআইসির এই সমর্থন বস্তুত সৌদি আরবের সমর্থন পাকিস্তানের প্রতি। এমনকি প্রতিবেশী নেপালের প্রধানমন্ত্রী প্রচন্ডভাবে পাকিস্তানের প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করেছেন। তা ছাড়া কৌশলগত অবস্থানের কারণে পাকিস্তানের ভেতরে ভারত তুলনামূলক বেশি শক্তি দিয়েও তেমন কিছু করতে পারবে না। ১৯৬৫ ও ১৯৭১ সালে বিষয়টি ভালোভাবেই দেখা গেছে। ওআইসি ভারতকে কাশ্মিরে সেনা অভিযান বন্ধ করতে বলেছে। কাজেই এইসব বিবেচনা করে ভারত এই মূহূর্তে কাশ্মির ইস্যুতে পাকিস্তানের সাথে যুদ্ধে ন জাড়ানোর সম্ভাবনাই বেশি।
পাকিস্তানের দৈনিক জঙ্গ (উর্দু) অবলম্বনে মুহাম্মাদ শোয়াইব

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.