![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বর্তমানে সমগ্র পৃথিবীতে সম্পদ উপার্জনের যে পদ্ধতিগুলো চালু আছে তার অধিকাংশই সুদভিত্তিক। সুদি বিনিয়োগ পদ্ধতির সবচেয়ে বড় ক্ষতি হলো সুদভিত্তিক সিস্টেমে সম্পদের প্রবাহ থাকে উপরের দিকে। সম্পদশালীদের হাতেই ঘুরপাক খায় সম্পদ। আর দরিদ্র্ররা হতে থাকে ক্রমেই হতদরিদ্র। ইসলামে ইন্টারেস্টের এই সিস্টেমের বিকল্প হিসেবে মুশারাকা ব্যবস্থা চালু আছে। ইন্টারেস্ট পদ্ধতিতে সম্পদের অতি সামান্য অংশ ডিপোজিটারদের হাতে যায়। কিন্তু অংশীদারিত্বের তাত্ত্বিক দিকটি হলো, অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে পুঁজি বিনিয়োগ (ফাইন্যান্সিং) করা হলে মুনাফার একটি যৌক্তিক অংশ বিনিয়োগকারীদের হাতে যাবে। আর এই পদ্ধতিতে সম্পদের বণ্টন (ডিষ্ট্রিবিউশন অপ ওয়েল) উপরের দিকে সুদি বিনিয়োগের আদর্শ বিকল্প বাইয়ে মুশারাকা (Partnarship)যাওয়ার পরিবর্তে নিচের দিকে আসবে। কাজেই ইসলাম সুদি বিনিয়োগ ব্যবস্থার যে সর্বোত্তম বিকল্প ব্যবস্থা (Intrest Best Model of Financind) উপস্থাপন করেছে, সেটি হলো, মুশারাকা বা ‘অংশীদারিত্বের ব্যবস্থা’। কিন্তু অর্থনীতির অনেক গবেষক মনে করেন ইন্টারেস্টের পরিবর্তে সমাজে ব্যাপকভাবে করজে হাসানার প্রচলন হওয়া উচিত। ইসলাম কিন্তু সেটা মনে করে না। কারণ করজে হাসানার সুফল ব্যক্তিপর্যায়ে সীমাবদ্ধ থাকে। আর মুশারাকার সুফল সর্বজনীন।
বাইয়ে মুশারাকা একটি বহুল প্রচলিত ইসলামী বিনিয়োগ পদ্ধতি। এর শাব্দিক অর্থ হচ্ছে অংশীদার হওয়া। শরিয়তের পরিভাষায় যে কারবারে দুই বা ততধিক ব্যক্তি লাভ-লোকসানের ঝুঁকি বহন করার শর্তে কোনো ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলে কারবার পরিচালনা করেন তাকে বাইয়ে মুশারাকা বলা হয়। ২ থেকে সর্বোচ্চ ২০ জন দ্বারা এই কারবার পরিচালিত হতে পারে। একটি চুক্তিপত্রের মাধ্যমে এটি শুরু হবে এবং এতে লেখা থাকবে অংশীদারদের প্রদেয় মূলধনের পরিমাণ, দায়-দায়িত্ব, প্রয়োজনে অধিক মূলধন সংগ্রহের প্রক্রিয়া, লভ্যাংশ বন্টনের হার ও প্রক্রিয়া এবং নতুন অংশীদার গ্রহণের শর্ত ইত্যাদি। অংশীদারী কারবারে দেনা পরিশোধের ক্ষেত্রে সব অংশীদারের দায়িত্ব সমান থাকে। সব সদস্য সম্মিলিতভাবে অথবা সবার পক্ষ থেকে একদজন কারবার পরিচালনা করে।
রাসুল সা. এর যুগে সমগ্র আরব জুড়েই বাইয়ে মুশারাকা বিস্তৃত ছিল। হাদিস শরিফে রাসুল সা. ইরশাদ করেন, “হাদিসে কুদসিতে আল্লাহ রব্বুল আলামীন বলেন, দুই অংশীদারের মাঝে আমি তৃতীয় হই, যতক্ষণ তারা একে অন্যের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা না করে। যখন বিশ্বাসঘাতকতা করে তখন আমি তাদের মধ্য হতে সরে পরি।
বাইয়ে মুশারাকায় উভয় পক্ষের মূলধন ও লাভ সমান সমান অথবা কমবেশি হতে পারে। তবে প্রাপ্ত মুনাফা বন্টন পদ্ধতি মূলধন ভিত্তিক হতে পারবে না; বরং মুনাফা ভিত্তিক হবে। চুক্তির সময়ই লাভের হার নির্ধারণ করে নেবে; কিন্তু মাসিক বা সাপ্তাহিক কোনো নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ নির্ধারণ করা যাবে না। যেমন মাসে বা সপ্তায় পাঁচ হাজার বা সাত হাজার টাকা নির্ধারণ করা যাবে না।
বাইয়ে মুশারাকার প্রকারভেদ:
বাইয়ে মুশারাকা প্রথমত দুই ভাগ ভাগে বিভক্ত।
১. শিরকাতুল মিলক বা মালিকানায় অংশীদারিত্ব।
২. শিরকাতুল আকদ বা চুক্তিভিত্তিক অংশীদারিত্ব।
শিরকাতুল মিলক বা মালিকানায় অংশীদারিত্ব:
কোনো বস্তুর ক্রয়সূত্রে বা মিরাসসূত্রে মালিকানায় অংশীদার হওয়াকে শিরকাতুল মিলক বলে। যেমন কোনো ব্যক্তি মারা গেলে তার উত্তরাধিকারীগণ তার সমুদয় সম্পত্তির মালিক হয়। অথবা কোনো পূর্ব চুক্তি ছাড়াই দুই বা ততধিক ব্যক্তি কোনো কিছু কিনে তার মালিকানায় অংশীদার হয়। মনে রাখতে হবে, যদি পূর্ব থেকে মালিকানায় বা লাভ-লোকসানে অংশগ্রহণ করার শর্তসাপেক্ষে কোনো জিনিসের মালিকানা হাসিল হয় তাহলে তা শিরকাতুল মিলক থাকবে না; বরং শিরকাতুল আকদ হয়ে যাবে।
শিরকাতুল আকদ বা চুক্তিভিত্তিক অংশীদারিত্ব মোট চার প্রকার। যথা,
১. শিরকাতুল মুফাওয়াদা
২. শিরকাতুল ইনান
৩. শিরকাতুস্ সানায়ে
৪. শিরকাতুল উজুহ
শিরকাতুল মুফাওয়াদা (সম অংশিদারিত্বের ভিত্তিতে শরিকানা কারবার):
যে কারবারে সব পক্ষ সমান পুঁিজ, সমান দায়-দায়িত্ব ও সমান ঝুঁকি বহন করে তাকে শিরকাতুল মুফাওয়াদা বলা হয়। এ কারবারে চুক্তিপত্রে ব্যবসায়িক সব ক্ষেত্রে সম দায়িত্ব ও অধিকারের কথাটি উল্লেখ থাকতে হবে।
এই কারবারটি বিশুদ্ধ হওয়ার জন্য কিছু শর্ত রয়েছে। যথা,
১. সব অংশীদারদেরকে আজাদ সুস্থমস্তিস্ক সম্পন্ন বালেগ ও মুসলমান হতে হবে।
২. মূলধন টাকা-পয়সা স্বর্ণ-রৌপ্য ইত্যাদি হতে হবে।
৩. চুক্তিপত্রে শিরকাতুল মুফাওয়াদা বা সম অংশীদারিত্ব কথাটি উল্লেখ থাকতে হবে।
৪. অংশীদারগণ মাসিক বা বাৎসরিক মুনাফা নির্ধারণ করতে পারবে না। বরং লভ্যাংশ অনুপাতে মুনাফা বন্টন করতে হবে।
৫. চক্তিপত্রে শিরকাতুল মুফাওয়াদা উল্লেখ থাকতে হবে।
৬. সব অংশীদার সমান হারে লাভ লোকসানের ঝুঁিক বহন করতে হবে।
৭. মূলধন সমান দেয়ার পর কেউ যদি শ্রম বেশি দেয় তাহলে তার জন্য আলাদা পারিশ্রমিক নির্ধারণ করতে হবে।
৮. নিজের পারিবারিক প্রয়োজনে কেউ কোনো জিনিস নিলে তার মূল্য পরিশোধ করে দিতে হবে।
৯. সব অংশীদার একে অন্যের প্রতিনিধি ও জামিনদার হিসেবে গণ্য হবে। বিনিয়োগকৃত অর্থের জন্য আমানতদার হিসেবে গণ্য হবে।
১০. ব্যবসায় লোকসান হলে প্রত্যেকে আপন মূলধন অনুপাতে লোকসান বহন করবে।
১১. কোনো অংশীদার একা কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারবে না, যদি নেয় এবং তাতে ক্ষতি হয় তাহলে অন্য অংশীদারদেরকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
১২. দুই জনের যে কোনো একজন মারা গেলে অংশীদারী কারবার বিলুপ্ত হয়ে যাবে। কিন্তু কারবারে যদি দুইয়ের অধিক লেকা থাকে তাহলে কারবার বিলুপ্ত হবে না।
শিরকাতুল ইনান (অসম অংশিদারিত্বের ভিত্তিতে শরিকানা কারবার):
যে কারবারে সব অংশীদারদের মূলধন এক নয়; তবে সকলের শ্রমদান সমান সে কারবারকে শিরকাতুল ইনান। লভ্যাংশ বন্টিত হয় মূলধন অনুপাতে অথবা ব্যবসায়ীক দক্ষতা বিবেচনায় আলোপ-আলোচনার মাধ্যমে।
শিকাতুস সানায়ে (পেশাজিবীদের শরিকানা কারবার):
যে কারবারে একাধিক পেশাদার এই মর্মে একত্রিত হয় যে, সবাই মিলে সম্মিলিতভাবে কাজ করে যা উপার্জন হবে তা সংশ্লিষ্ট কাজের ব্যয় নির্বাহের পর নিজেদের মাঝে সমহারে বা পূর্ব নির্ধারিত অনুপাতের ভিত্তিতে ভাগ করে নেবে। এ ধরনের পেশা সংক্রান্ত কারবারকে শিরকাতুস সানায়ে বলে।
শিরকাতুল উজুহ (ব্যবসায়ী সুনামের অংশিদারিত্বের ভিত্তিতে শরিকানা কারবার):
সমাজে এমন অনেক ব্যক্তি থাকেন যাদের মূলধন থাকে না। কিন্তু ব্যবসায়ীক এড়ড়ফ রিষষ বা ব্যবসায়ী সমাজে তার এমন সুনাম ও বিশ্বস্ততা আছে যে, সে পাইকারী বিক্রেতাদের কাছ থেকে বাকিতে এনে নগদ বিক্রি করতে পারে। এ ধরনের একাধিক ব্যক্তি যদি এই মর্মে চুক্তিবদ্ধ হয় যে, তারা পাইকারী বিক্রেতার কাছ থেকে বাকিতে পণ্য এনে নগদ বিক্রি করার পর এতদসংক্রান্ত ব্যয় বাদে যা থাকবে তা তাদের মাঝে পূর্ব নির্ধারিত হারে বন্টন করে নেবে তাহলে তাকে শিরকাতুল উজুহ বলে।
উল্লেখ্য, এই অংশীদারিত্বের ব্যবস্থা যেহেতু বর্তমান পৃথিবীতে এখন পর্যন্ত কোথাও পূর্ণাঙ্গভাবে চালু হয়নি এবং অর্থনৈতিক অঙ্গনে এর অনুসরণ পূর্ণাঙ্গভাবে শুরু হয়নি, তাই এর বরকতও মনুষের সম্মুখে আসছে না। সাম্প্রতিককালে মুসলমানদের বিভিন্ন অঞ্চলে এই পদ্ধতিটি চালু করার চেষ্টা চালানো হয়েছে যে, এমন কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হবে, যেটি ‘ইন্টারেস্ট’ পদ্ধতির পরিবর্তে ইসলামি আইন অনুযায়ী মুদারাবা-মুশারাকা ভিত্তিক পরিচালিত হবে। বর্তমানে সারা পৃথিবীতে কমপক্ষে ৮০ থেকে ১০০টি ব্যাংক ও বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান আছে, যেগুলোর দাবি হলো, আমরা ইসলামি নিয়ম-নীতি অনুসারে কারবার পরিচালনা করছি এবং সুদমুক্ত ব্যবসা করছি। তাদের এই দাবি শতভাগ সঠিক না মানলেও এবং তাতে কিছু ভুল-ত্রুটি থাকলেও; কিন্তু একথাটি সত্য যে, বর্তমান পৃথিবীতে প্রায় একশ প্রতিষ্ঠান ও ব্যাংক সুদবিহীন ব্যবস্থার উপর কাজ করছে। উক্ত ব্যাংক ও প্রতিষ্ঠানগুলো অংশীদারিত্ব পদ্ধতির বাস্তবায়ন শুরু করে দিয়েছে। আর যেখানেই অংশীদারিত্বের পদ্ধতিটিকে গ্রহণ করা হয়েছে, সেখানেই ভালো সুফল পাওয়া গেছে
সম্পাদক, মাসিক আরবি ম্যাগাজিন ‘আলহেরা’
©somewhere in net ltd.
১|
১২ ই অক্টোবর, ২০১৬ সকাল ৯:১৭
আজিব দুনিয়ার মানুষ। বলেছেন: আপনার লেখা দেখে মনে হল, আপনাকে প্রশ্নটি করা যেতে পারে। আমি যদি একটি ষ্টেশনারী ব্যাবসার দোকান দিতে যাই, তাহলে কি আমি মুনাফা বন্টন পদ্ধতিতে (অর্থাৎ যা লাভ হবে পূর্বে নির্ধারিত হারে বন্টন) কোন ব্যাংক থেকে লোন নিতে পারব, যেটা সূদি প্রক্রিয়ার থেকে ভিন্ন হবে? এরকম কোন লোন কেউ/কোন আর্থিক প্রতিষ্ঠান যদি দিয়ে থাকে তাহলে আমাকে জানাবেন প্লিজ। ধন্যবাদ।