নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সাহসী কন্ঠ

মুহাম্মাদ শোয়াইব

সম্পাদক, মাসিক আরবি ম্যাগাজিন ‘আলহেরা’

মুহাম্মাদ শোয়াইব › বিস্তারিত পোস্টঃ

কেমন হবে ট্রাম্পের বিদেশনীতি? মুসলিম বিশ্ব নিয়ে কী ভাবছেন তিনি?

১৬ ই নভেম্বর, ২০১৬ ভোর ৬:২৮




আমেরিকার নতুন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিদেশনীতি কেমন হবে, এর ফলে বিশ্বজুড়ে কী কী প্রভাব পড়তে পারে- তার হিসেব-নিকাশ শুরু হয়ে গেছে আরো আগেই। চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। বিশ্বের ক্ষমতাধর দেশগুলোর পাশাপাশি বিশ্ব মোড়ল আমেরিকার প্রেসিডেন্টের বিদেশনীতি নিয়ে আলোচনা-পর্যালোচনা করছে ছোট্ট ছোট্ট দেশগুলোও। তাতে যোগ দিয়েছে আমাদের বাংলাদেশও। কারণ, আমেরিকার বিদেশনীতির সঙ্গে আমাদের অনেক কিছুই জড়িত।

বিখ্যাত আরব দৈনিক আশ শারকুল আওসাত-এর সাবেক সম্পাদক ও আল-আরাবিয়া চ্যানেলের মহাপরিচালক আব্দুর রহমান আর রাশেদ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বিদেশনীতি বিষয়ে একটি নিবন্ধ লিখেছেন। সেখানে অনেক খুঁটিনাটি দিক সংক্ষেপে সুন্দর করে আলোচনা করেছেন তিনি। নিবন্ধটি প্রকাশ হয়েছে আশ শারকুল আওসাতে। সেই নিবন্ধের চুম্বক অংশগুলো টোটালবাংলা২৪ ডটকম-এর পাঠকদের জন্য প্রতিবেদন আকারে নিচে তুলে ধরা হলো।

‘শেষ পর্যন্ত চরম ইসলামবিদ্বেষী ট্রাম্প সব হিসাব-নিকাশকে ভুল প্রমাণ করে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হয়েছেন। এতে মুসলিমবিশ্বের মতো ইরানি নেতৃত্বও এক ধরনের অস্বস্তি ও উদ্বেগ অনুভব করছে। তাদের উদ্বেগের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে, মিডিয়ায় বিবৃতি-বক্তব্যেও।

তেহরানের এক মসজিদে জুমার নামাজের খতিব আয়াতুল্লাহ আহমাদ খাতামি ট্রাম্পকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, “সিংহের লেজ” নিয়ে খেলবেন না। তিনি ট্রাম্পকে তাঁর মুসলিমবিদ্বেষী বক্তব্যের জন্য ক্ষমা চাওয়ারও দাবি জানান।

ট্রাম্প তাঁর নির্বাচনী প্রচারকালে ইরানের সঙ্গে পরমাণু সমঝোতার বিরোধিতা করে প্রকাশ্যে বক্তব্য দিয়েছেন। বলেছেন, এটি ‘খারাপ চুক্তি’ এবং এর ফলে ‘একটি পারমাণবিক ব্যাপক হত্যাকাণ্ড’ হতে পারে।

তিনি বলেন, ইলেকশনে জিততে পারলে প্রথম দিনেই পরমাণু চুক্তি ছিঁড়ে টুকরা টুকরা করে ফেলবেন। ডোনাল্ড ট্রাম্পের এই ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্যের জবাবে ইরানের প্রেসিডেন্ট ড. হাসান রুহানি বলেন, ‘এই সমঝোতা জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ অনুমোদন দিয়েছে। একটি সরকারের পক্ষে তা বাতিল করা বা পরিবর্তন আনা সম্ভব নয়’।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক প্রধান ফেডেরিকা মোগেরিনি সিএনএনকে দেওয়া অতিসাম্প্রতিক এক ইন্টারভিউতে বলেন, পরমাণু সমঝোতা কেবল ইরান ও আমেরিকার মধ্যকার দ্বিপক্ষীয় কোনো সমঝোতা নয়। তিনি বলেন, এটি একটি বহুপক্ষীয় সমঝোতা এবং জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে বিষয়টির অনুমোদন হয়েছে। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ জাভেদ জারিফ প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে তার সরকারের নতুন সম্পর্ক সৃষ্টির প্রতি ইঙ্গিত দেন। সেই সঙ্গে প্রথমেই তিনি ট্রাম্পকে সতর্ক করে বলেন, ‘চুক্তি ভাঙলে আমাদের কাছে অন্য উপায় রয়েছে, যা আমরা অবলম্বন করতে বাধ্য হব।’

সউদি আরব অবশ্য কিছুটা ট্রাম্পের সঙ্গে সুর মিলিয়ে ইরানের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে বেশ কিছু পরামর্শ দিয়েছে। সউদি সরকারের সাবেক গোয়েন্দা প্রধান তুর্কি ফয়সাল বলেছেন, ‘বড় শক্তিগুলোর সঙ্গে ইরানের সম্পাদিত পরমাণু সমঝোতা ছিঁড়ে না ফেলে ট্রাম্প সরকারের উচিৎ হবে, তার ভাষায়, মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের অপতৎপরতার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেওয়া। ছয় জাতিগোষ্ঠীর সঙ্গে ইরানের সম্পাদিত পরমাণু সমঝোতার বিরুদ্ধে অসংলগ্ন বক্তব্য দেওয়ায় এখন ওই সমঝোতা আদৌ টিকবে কিনা-তা নিয়ে নানা সন্দেহ ও আশঙ্কা দানা বাঁধছে।’

এখন দেখার বিষয় হলো, এটি ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বী ডেমোক্রেটিক দলের বিরুদ্ধে শুধুই ইলেকশনকেন্দ্রিক বক্তব্য ছিল, নাকি এটাই তাঁর বিদেশনীতি? আমরা এখনও এ সম্পর্কে কিছু জানি না।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্প হয়তো শুধুই নির্বাচনী প্রচারের স্বার্থে পরমাণু সমঝোতা ছিঁড়ে ফেলার কথা বলে থাকতে পারেন। এরপরও তিনি আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে এ ধরনের হুমকি দিয়েছেন বলেই তাঁর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। ট্রাম্প তাঁর হুমকিগুলো আদৌ বাস্তবায়ন করবেন কিনা-তা নির্ভর করে পররাষ্ট্রনীতি নির্ধারণী গ্রুপে তিনি কাদের মনোনীত করবেন, তার ওপর।

ট্রাম্পের রিপাবলিকান পার্টির অনেক নেতার পক্ষ থেকে এ কথা বলা হচ্ছে, তারা পরমাণু চুক্তির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করবেন। তাদের অধিকাংশই কংগ্রেসে বারাক ওবামার পরমাণু চুক্তিবিষয়ক সিদ্ধান্তকে বিফল ও ব্যর্থ করতে ভোট দিয়েছিলেন। তারা একই রকম বিরোধিতা করেছিলেন, বারাক ওবামা ইরানের কাছে বেসামরিক বিমান বিক্রির উদ্যোগ নেওয়ার সময়।

এসব আশঙ্কা ইরানের সর্বোচ্চ নেতার ওই সতর্ক বাণীকে স্মরণ করিয়ে দেয়, যেখানে তিনি বলেছিলেন, আমেরিকাকে বিশ্বাস করা যায় না। সুযোগ পেলেই তারা কেবল নিজেদের অন্যায় দাবি ইরানের জনগণের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করবে।

ফেডেরিকা মোগেরিনির সঙ্গে সুর মিলিয়ে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীও বলেছেন, পরমাণু চুক্তি দ্বিপক্ষীয় চুক্তি নয়। এটি আর্ন্তজাতিক চুক্তি। এই চুক্তি সুইজারল্যান্ডের লুসানে করা হয়েছিল। সেটাও ছিল পাঁচটি দেশের সঙ্গে। সেখানে নেতৃত্বে ছিল আমেরিকার । ইরান তখন সব চুক্তিকে সমর্থন দেয়নি। অনেকাংশেরই বিরোধিতা করেছে। পশ্চিমাদের সব চাওয়া ইরান মেনে নেয়নি।

ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাওয়াদ জারিফ পূর্ব ইউরোপের দেশ সফরকালে বলেছেন, পরমাণু সমঝোতা বাস্তবায়ন করা আমেরিকার দায়িত্ব। তিনি বলেন, সমঝোতার বিষয়ে ইরান তার অংশ বাস্তবায়ন করেছে। চরম নৈরাশ্যের বিষয় হলো, আমেরিকার বর্তমান প্রশাসন পুরোপুরি তার অংশ বাস্তবায়ন করেনি।

ইরানি পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরো বলেন, সমঝোতা বাস্তবায়ন করার বিষয়টি আমাদের কাছে অগ্রাধিকার পাচ্ছে। তার মানে এই নয়, আমাদের হাতে অন্য কোনো ব্যবস্থা নেই। বাস্তবতা বলছে, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ইরানকে কোণঠাসা করার অপচেষ্টা আমেরিকা অনেক দিন থেকেই করে আসছে। জাতিসংঘ তার সেবাদাসরূপে কাজ করে যাচ্ছে। সর্বশেষ ট্রাম্পের জয়ের মধ্য দিয়েও প্রমাণ হলো, পশ্চিমারা জাতিগতভাবে মুসলিমবিদ্বেষী। তাদের কাছে মুসলিমবিশ্বের চাওয়া-পাওয়ার কিছু নেই। পরমাণু সমঝোতার বিষয়ে ট্রাম্প ‘আগের হাল’ বা আরো চরম পথ ধরেই হাঁটবেন। আন্তর্জাতিক দক্ষ বিশ্লেষকদের এটি মত। তাহলে বাস্তবেই কি এমনটি ঘটবে? জানতে হলে অপেক্ষা করতে হবে। সময় নিজেই কথা বলবে।

আবদুর রহমান আর রাশেদ : ব্যবস্থাপনা পরিচালক, আল-আরাবিয়া মিডিয়া নেটওয়ার্ক
সরাসরি আরবি থেকে অনুবাদ : মুহাম্মাদ শোয়াইব সাব-এডিটর, টোটালবাংলা২৪ ডটকম
http://www.totalbangla24.com/কেমন-হবে-ট্রাম্পের-বিদেশনীতি-মুসলিম-বিশ্ব-নিয়ে-কী-ভাবছেন-তিনি/649

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.