![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
প্রতিনিয়ত সৎ থাকার চেষ্টার যুদ্ধে লিপ্ত একসৈনিক
১
নামঃআবুল হাসান। দরিদ্র কৃষকের সন্তান। কিন্তু গরীব বলে তার নামের বিকৃতি ও বড় ধরনের। কেউ ঢাকে আবু, কেউবা আবুল্লা। আবার ঝগড়া লাগলে তা কথায় নেই তখন হয়ে যায় আবাল।এই বিকৃত নাম গুলোই যেন তাকে চোখে অাঙুল দিয়ে বলে তুমি গরীব, তোমার সুন্দর নাম হতে পারে না।কিন্তু আবুলেরও যেন এসব নাম সহে গেছে। তাই তো কেউ পিছন হতে আবু, আবুল্ল্যা বা আবাল বলে ডাকলে সে পিছনে ফিরে তাকায়। আজ ঈদ সবার মনেই ঈদের আনন্দ। গরীব বলে আবুলদের পরিবারে ঈদের আনন্দকোন অংশেই কম হচ্ছে না। সকালে নতুন জামা কাপড় পড়ে ঈদের নামাজে যাওয়া, কোলাকুলি করা (বড়লোকদের সাথে করতে না পারতে কি হবে), ঘুরাঘুরি, বাড়িতে সেমাই, গরু পলাও না হলে কি হবে মুরগি ভাত তো হয়। বিকালে আবুলের বড় বোনের মেয়ে সানজিদা, সবাই সানু নামে ডাকে আবুলদের বাড়িতে আসে। মামা আবুল তো বড়ই খুশি। সে সানুকে নিয়ে ঘুরতে যায় মেলাতে , গ্রাম হতে অদুরে ঈদ উপলক্ষে মেলা বসেছে। বাঁশি, সন্দেশ, চকলেট, বাদাম, চুড়ি, খেলনা গাড়ি কিনে দেয় আবুল। এসব খেলনা পেয়ে সানুতো প্রচন্ড খুশি। সানুর আনন্দ দেখে আবুলও আনন্দিত। সন্ধ্যা দিকে আবুল আর সানু বাড়িতে আসে। আবুল সানুকে বাড়িতে রেখে, বাড়ির পাশে দোকানে যায় চা পান করার জন্য। দোকানদার সবুজ মধ্যবয়স্ক এক যুবক। আবুলকে সে দেখে বললো
--ঈদ মোবারক, আবু!!
সারাদিন এত ঘোরাঘুরি করেছে কত পরিচিত মানুষের সাথে তার দেখা হয়েছে অথচ কেউ তাকে এমন বিব্রতকর ঈদের শুভেচ্ছা জানায়নি ফলে সে যখন ঈদ মোবারক বলতে যাচ্ছে তখন যেন তার কন্ঠ রুদ্ধ হয়ে গিয়েছে।
-- আবু, তোকে সারাদিন ধরে আমি খুজতেছি কই ছিলি। মায়ার স্বরেই বললো সবুজ।
-- কেন?? জানতে চাইলো আবুল।
"কেন আবার, আজ কে তো কাস্টমারের ভিড় একটু বেশী, তুই থাকলে আমার কাজ একটু সহজ হত। "একটু থেমে আবার বললেন " এখন তো ফ্রি আছিস। এখন থেকেই না হয় আগামী দুই দিন থাক আমার এখানে " একটু অনুরোধের স্বরেই বলল সবুজ। আবুল কিছুক্ষন চিন্তা করে দেখলো আগামি পাঁচ ছয় দিন তার তেমন কোন কাজ নেই ফলে সে রাজি হয়ে গেল। আবুলের কাজ হলো চা আর পান বানানো। মোটামুটি সহজ একটা কাজ, আবুলও মনে অানন্দ নিয়েই কাজটা করছে।
২
পরের দিন সকালের দিকে আবুল দোকান খোলে চায়ের পানি বসায়। একটু পরে মানুষ আসতে লাগলে চা আর পান চলতে লাগলে সমান তালে। আর সবুজদোকানের অন্য পাশ বিভিন্ন ধরনের চাল ডাল ঠান্ডা পানীয় বিক্রি করছে। আসাদ সাহেব আর তার ৫ বছরের নাতনি এসেছে দোকানে। আসাদ সাহেব শহরে বড় চাকুরী করে। ঈদ উপলক্ষে তারা বাড়িতে আসে। সবাই আসাদ সাহেবকে দেখে দাড়িয়ে সালাম করে। অনেকে কুশল বিনিময় করে। দোকানের উপস্থিত সবাইর মধ্যে কেমন যেন একটা প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে গেছে, সবাই চায় আসাদ সাহেবের দৃষ্টি আকর্ষণ। অনেকে চিপস, ড্রাই কেক কিনে দিচ্ছে আসাদ সাহেবের নাতনী কে। হঠাৎ করে আসাদ সাহেবের নাতনী কি যেন একটা জিনিসকে আঙুল দিয়ে দেখাচ্ছে। আসাদ সাহেব তখন সবুজকে বললো " সবুজ, দেখতো ও কি চায়? " সবুজ দ্রুত মেয়েটির কাছে এসে বলে " বলো মামণি কোনটা নিবে?" মেয়েটি একটা আইসক্রীমের দিকে আঙুল তুলে দেখায়। সবুজ আইসক্রীমটার দিকে একবার তাকিয়ে আবার মেয়েটার দিকে তাকায়। সবুজ কি যেন দেখতে থাকে তারপর বলে " মামণি, এই আইসক্রীম তো তুমি খেতে পারবে না, এটা পচা আইসক্রীম " তারপর ভালো মানের একটা আইসক্রীম মেয়েটার হাতে দিতে দিতে বলে " তুমি এটা নাও " মেয়েটা আইসক্রীম টা হাতে নিয়ে আসাদ সাহেবের পাশে গিয়ে দাড়ায়।
৩
পরের দিন বিকালে আবুল দোকানে কাজ করছিল। এমন সময়ে তার ভাগনি সানু এসে দাড়ালো তার পাশে আর আবুল তার আপন কাজ করে যাচ্ছে। দোকানে অনেক মানুষ। সাধারনত বিকালে গ্রাম্য দোকান গুলোতে ভিড় বেশীই হয় কারণ সবাই দুপুরের খাবার খেয়ে একটু ঘুমিয়ে তারপর দোকানের দিকে পা দেয়। সানুও কোন কথা বলছে না সে যেন বুঝে গিয়েছে মামা ব্যস্ত। সানু এতক্ষন দোকানের বিভিন্ন জিনিস ঘুরে ঘুরে দেখছিল। সানু এবার মুখ খুললো " মামা " আবুলও চা বানাতে বানাতে বললো " কি?? " দোকানের একটা জিনিসকে লক্ষ্য করে দেখানোর চেষ্টা করছে আর মাথা দোলাচ্ছে। মাথার সাথে পুরো শরীরও দোলছে। আবুল চা বানানোর কাজ বন্ধ করে সানুকে আবার জিজ্ঞেস করে " কি খাবি বল ? " সানু এবার চোঙাকৃতি একটি প্লাস্টিকের বোতলের দিকে আঙুল দিয়ে জিনিসটা দেখায়। আবুল ফ্রিজের ওপর হতে চোঙাকৃতি জিনিসটা হাতে নেয়। সবুজ পাশেই আলু মাপ ছিল। আবুলকে জিনিসটা হাতে নিতে দেখে বলে উঠে " কিরে এটা দিয়ে কি করবি? " "না সানু এটা খেতে চাচ্ছে " আবুল ইতস্তত হয়ে বলে উঠে। সবুজ যেন আকাশ হতে পড়লো কিছুক্ষন নীরব থেকে বললো " জানিস এটার নাম কি, আর কত দাম? " আবুল আর কিছুই বলতে পারলো, সে যেন বড় কোন অপরাধ করে ফেলছে। সবুজ বলতে লাগলো " এটা হলো চকলেট আইসক্রীম। এটার দাম পড়বে ৬০ টাকা।" আবুল যেন আরও লজ্জিত হয়ে পড়ে, আর ভাবতে লাগলো সত্যিই তো এই টুকু জিনিসের দাম অনেক। তাই বলে কি সে এটা কিনতে পারবে না। একবার ভাবলো জোর গলায় বলে উঠবে " যত দামই হোক, আমি তা কিনবো। " আর সানু যখন সেটা খাবে তা সে দেখবে। কিন্তু পারেনি। বরং এক অজানা ভয় তাকে ঘিরে ধরলো এই ভেবে, যখন সে এটা কিনে সানুকে দিবে তখন হয়তো সবাই হাসাহাসি বা টিটকারিও করবে।যা হয়তো সে নিতে পারবে না। সবুজ ফ্রিজ খোলে একটা নরমাল আইসক্রীম নিয়ে সানুকে দেয়। সানু ওঠা পেয়ে অনেক আনন্দিত মনে দৌড় দিতে দিতে বাড়ির দিকে চলে যায়। আর আবুল তাকিয়ে তা দেখতে থাকে। তখন তার ঠোঁটে র কোণে ছিল উপহাস সূচক এক চিলতে হাসি। সে হাসি কি নিজের জন্য নাকি পৃথিবীর জন্য তা বোঝা সত্যিই কঠিন
আমার গল্পসমূহ ::ব্যঙ্গ-রঙ্গ:: ছোটগল্প:: একচোখা মন্ত্রীর গল্প
০১ লা অক্টোবর, ২০১৫ দুপুর ১২:৩১
স্বপ্নবাজ তরী বলেছেন: ধন্যবাদ
©somewhere in net ltd.
১|
৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ সকাল ১০:৪৯
সিপন মিয়া বলেছেন: ভালোই লিখেছেন।