নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মোহাম্মদ সোহাগ (A sinner slave of Allah) 2. সভ্যতার অসংগতি তুলে ধরার চেষ্ঠা করি ।\n

স্বপ্নবাজ তরী

প্রতিনিয়ত সৎ থাকার চেষ্টার যুদ্ধে লিপ্ত একসৈনিক

স্বপ্নবাজ তরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্প(সাইেকালজিকল) :: টেলিভিশন(১ম পর্ব)

৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ সকাল ১১:৪৬

আকরাম সাহেব একজন প্রবাসী । আকরাম সাহেবের পরিবারে ৫ সদস্য।স্ত্রী, দুই মেয়ে, মৃদু ও মাহি আর এক ছেলে ইফতি। আকরাম সাহেব ইসলামি রীতি নীতি মেনে চলার চেষ্টা করে এবং পরিবাবের অন্য সদস্যদেরকেও তা মানিয়ে চলার চেষ্টা করেন। গ্রামে নতুন একটা আধুনিক যন্ত্র আসে। তাহলো টেলিভিশন। উত্তরপাড়ার রহমত সাহেব তা নিয়ে আসেন। গ্রামের মাতব্বর আলী আক্কাস, প্রথমে তার ঘোর বিরোধী মনভাব প্রকাশ করেন। তার সাথে সাথে সমাজের অনেক জনই তাতে মত দেন। কিন্তু সামনাসামনি কেউ তা রহমত সাহেবকে বলেনি কারণ তিনি কলেজের টিচার।
ফলে গ্রামের মানুষ এখন যখনই অবসর সময়ই তখনই তারা রহমত সাহেবর বাড়িতে টিভির বিভিন্ন প্রোগ্রাম দেখে সময় কাটায়। রহমত সাহের স্ত্রীও অনেক ভালো মনের মানুষ। তিনিও কাহকে কখন মানা করেনা বরং অনেক সময়ে চা, বিস্কুট, পেয়ারা, বিভিন্ন মৌসুমি ফল দিয়ে মানুষকে অাপায়ণ করেন। শুক্রবার বেশি ভিড় হয় কারণ ঐ দিন বিকালে বিটিভি তে ছায়াছবি দেয় । সবাই তাই তাড়াতাড়ি সকালের দিকে বাসার সব কাজ শেষ করে, পিড়ি, মোড়া নিয়ে রহমত সাহেবর উঠনে বসে পড়ে। টিভি দেখতে দেখতে তারাও একজন আরেক জনের বিভিন্ন সুখ দুঃখের কথাও বলে। হাসি ঠাট্টা, মারামারিও হয়। একদিনতো মোড়াতে বসা নিয়ে হাসান আর ইকবালের মধ্যে প্রচন্ড মারামারি হয়। রহমত সাহেব সেজন্য খুবই খেপে যান। কয়েক সপ্তাহ তিনি টেলিভিশন বন্ধও রাখেন। পরে আবার চালু করেন আর হাসান আর ইকবালও আর মারামারি করে না কারণ ঘটনার পর হাসানের বাবা বিদেশ থেকে একটা দামি রঙিন টেলিভিশন পাঠায়

এদিকে আকরাম সাহেব রাতের খাবার খেতে খেতে ছেলে মেয়েদের উদ্দেশ্যে বললো, "এলাকাটা আর ভালো থাকলো না। শয়তান ঢুকে পড়ছে। " স্ত্রী, ছেলে, মেয়ে সবাই নিরব দর্শকের মতো শুনতেছে। একটু পানি খেয়ে আবার বললো "তবে আশা করি আমার বাসার কেউ ঐ শয়তানের পাল্লায় পড়বে না। " মুখের বাকি খাবারটা শেষ করে একটু কঠোরতা এনে বললো " আমি যদি জানতে পারি কেউ ঐ বাড়িতে গিয়েছো তবে তার জন্য আমার বাড়ির দরজা বন্ধ হয়ে যাবে। " আর কোন কথা হয়না। সবাই নিরবে খাবার খেয়ে পড়তে বসে। বড় মেয়ে ক্লাস নাইনে পড়ে, এরপর ছেলে ইফতি ক্লাস সিক্সে আর সবার ছোট মেয়ে মাহি ক্লাস টুতে পড়ে। ইফতি লুকিয়ে লুকিয়ে তারপরও টিভি দেখতে যায়। আর হাসানদের টিভি আসার পর তো সে প্রায় যায় কারণ হাসান ইফতির সাথে একই ক্লাসে পড়ে। ফলে বই, নোট ইত্যাদির কারণ দেখিয়ে ইফতি প্রায় টিভি দেখতে পারে।কিন্তু মৃদু আর মাহির সেই সুযোগও হয় না
আকরাম সাহেব আজ বিদেশ চলে যাবেন। যাবার আগে স্ত্রী,ছেলে মেয়েদরকে সামনে বসিয়ে বললেন " বাড়ির সবার সাথে মিলেমিশে থাকবে, ঝগড়াঝাঁটি করবে না, আর কেউ ঝগড়া করতে চাইলেও ধৈর্য ধারণ করে চলে আসবে, আল্লাহ ধৈর্য শীলদের সাথে আছেন।"
"খেলাধুলা কম করে, পড়ার প্রতি মনযোগ দাও। আর হাসানদের বাড়িতে যাওয়া আসা কমিয়ে দাও" ইফতি কে বললো উদ্দেশ্য করে বললেন।
ইফতি হা সুচক মাথা নাড়লেন।
আকরাম সাহেব বাড়ির পাড়াপ্রতিবেশীদের কাছ হতে বিদায় নিয়ে আল্লাহর নামে গাড়িতে উঠেন।

বার বছর পর। আকরাম সাহেব তার ঘরের দরজার সামনের সিড়িতে বসে আছেন। তিনি একা। বড়ওছোট মেয়ের বিয়ে হয়ে যায়। আর ছেলে ইফতি শহরে পড়তে চলে যায়।বাড়িতে শুধু তিনি আর স্ত্রী মরিয়ম বেগম। আকরাম সাহেব কি যেন চিন্তা করেন। বাড়ির উঠনে হাঁস মুরগিরা দৌড়াদৌড়ি করতেছে। মরিয়ম বেগম হাঁস মুরগিগুলোকে খাবার খাইয়ে আতাল (হাঁসমুরগী যেখানে রাতে থাকে) ঢুকানোর চেষ্টা করতেছেন।কিন্তু এগুলো দৌড়াদৌড়ি অার উড়াউড়ির কাছে মরিয়ম বেগম অতিষ্ঠ হয়ে যান। উনি গাছের একটা ছোট টুকরা হাতে নিয়ে মুরগির উদ্দেশ্যে মারেন। এটা উড়ে গিয়ে পড়ে আকরাম সাহেবের গায়ে। আকরাম সাহেব প্রচন্ড রেগে যান এবং তিনি মরিয়ম বেগম কে গালমন্দ করতে থাকেন। কয়েকটা মুরগির পা ও ভেঙ্গে দেন। মরিয়ম বেগম স্বামীর আচরনে প্রচন্ড মনঃকষ্ট পান তিনি নিরবে চোখের জল পেলেন।
রাতে যখন ঘুমাতে যান তখন মরিয়ম বেগম স্বামীর দিকে পিঠ দিয়ে শুয়ে পড়েন। আকরাম সাহেবও স্ত্রীর এমন আচারনের কারন বুঝতে পারেন। আকরাম সাহেব মনে মনে নিজেকে ধিক্কার দিতে থাকেন। কারণ তিনি বিকালে সামান্য এই ঘটনার জন্য স্ত্রীর সাথে এমন ব্যবহার না করলেও পারতেন। আকরাম সাহেবের আজ নিজেকে নিজের কাছে খুবই ছোট মনে হচ্ছে। আকরাম সাহেবের বিবেক যেন তাকে বলতেছে স্ত্রীর কাছে ক্ষমা চাইতে কিন্তু তার মন কোন ভাবেই তাতে সায় দিচ্ছে না। তার মন যেন তার সাথে ব্যঙ্গ করে বলছে " আকরাম সাহেব, এগুলো কি ভাবো তুমি তো পুরুষ জাতির কলঙ্ক, স্ত্রীর কাছে ক্ষমা? " এটা বলতে বলতে যেন তার মন অট্টহাসিতে তার কান জ্বালাফালা করে ফেলতেছে। আকরাম সাহেব আর কিছুই ভাবতে পারলেন না তিনি বিছনা থেকে উঠে সিড়িতে বসে সিগেরেট ধরিয়ে টানতে থাকেন।আর এদিকে মরিয়ম বেগম চিন্তা করে, আকরাম তো এমন নয়, সামান্য এমন ব্যপার নিয়ে তো সে আগে কখনও এমন করেনি। গত কয়েক মাস ধরে এমন ছোটখাট ব্যপার গুলো নিয়ে সে হঠাৎ করে প্রচন্ড রেগে যাচ্ছে। ঐদিনতো তার গায়েও হাত তুলেছে। এগুলো ভাবতেই মরিয়ম বেগমের কেমন যেন মনে হচ্ছে। যে স্বামী তার গায়ে হাত দেওয়া কে কাপুরুষজনোচিত আচারণ মনে করে সে কিনা এখন নিজেই!! তাছাড়া প্রায় সময়ে সে একা একা বসে যেন গভীর কোন চিন্তায় মগ্ন হয়ে যায়। মরিয়ম বেগম আর ভাবতে পারছে না তার মাথাটা যেন প্রচন্ড মোটা ও ভারি হয়ে যাচ্ছে। সে মনে মনে ভয় পেয়ে যায় এভেবে, আকরাম সাহেবের বড় কোন অসুখ হয়নি তো?!
আমার গল্পসমূহ ::ব্যঙ্গ-রঙ্গ:: ছোটগল্প:: একচোখা মন্ত্রীর গল্প
ছোটগল্প (সাইকোলজিকল):: আইসক্রীম
ডায়েরীর পাতা হতে কবিতা -১:: “কবি ও কবিত্ব”
ডায়েরীর পাতা হতে কবিতা -2:: ভয় পেয়েও না তুমি

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.