![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
প্রতিনিয়ত সৎ থাকার চেষ্টার যুদ্ধে লিপ্ত একসৈনিক
ইফতি সাহেব গাড়ীর ইস্টিশনে দাড়িয়ে আছেন। অনেক মানুষের ভীড়। ঈদের ছুটি কাটিয়ে যে যার কর্মস্থলে ফিরে যাচ্ছে। ইফতি সাহেব,বারবার তার সাদা পাঞ্জাবীর বুকপকেটে হাত দিয়ে পরীক্ষা করে দেখছেন জিনিসটা আছে কিনা। এটাই যে তার জীবনের শেষ সম্বল। কোনভাবেই তা হারানো যাবে না। ইফতি সাহেব মূলত একজন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক। পাঁচ ছেলেমেয়ে তার।এরমাঝে দুই মেয়ে আর তিন ছেলে। মেয়েদের বিয়ে হয়ে গেছে। কোনরূপ যৌতুক ছাড়াই বলা চলে। তবে ছোট মেয়ে একটু কালচে বলে, তিনি নিজেই জামাইর বিদেশ যাওয়ার সময়ে, জমিবিক্রি করে সব খরচ যোগান দিয়েছিলেন। তবুও যাতে মেয়ের সংসার টা টিকে। এই কাক ফাটা রোদের মধ্যে ইফতি সাহেব দাড়িয়ে আছেন। আর ভাবছেন, সারাজীবন যে জিনিসটা তাকে কেউ জোর করে দিতে পারেনি আজ তিনি নিজেই সেই জিনিসটা দেবার জন্য অপেক্ষায় আছেন। আর ভাবছেন,তার মতই কি সবাই এমন নিজেদের শেষ সম্বল নিয়ে তার কাছে ছুটে আসতো। ইফতি সাহেব ছোট করে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন।কিছুক্ষণ পর,একটা গাড়ি এসে থামলো।ইফতি সাহেব সামনে- পিছনে তাকিয়ে কাকে যেন খোঁজছেন।তারপর, একহাত বুকপকেটে দিয়ে ভীড় ঢেলে সামনে এগুনোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হলেন।হঠাৎ তার কাঁধে একটা হাতের স্পর্শ অনুভব হতেই তিনি ভয়ে দ্রুত ঘুরে দাড়ান। কিন্তু ঘুরে দাড়ানোর পড় সামনের লোকটিকে দেখে , তার মনে ভয়ের পরিবর্তন ঘটলো। মনে হলো, এতক্ষন যে বোঝা তার মাথায় ছিল তা যেন অনেকাংশেই নেমে গেছে। লোকটি সালাম দিয়ে হ্যান্ডশেক করার জন্য হাত বাড়িয়ে দিতে দিতে বললো " কেমন আছেন?? শরীরের অবস্থা কেমন এখন? " ইফতি সাহেব হ্যান্ডশেক করে বললেন " আলাহামদুলিল্লাহ্, ভালো " একটু থেমে আবার বললেন "শরীরের অবস্থা আর কি বলবো বয়স হলে যা হয় আর কি? " "চলুন তাড়াতাড়ি বাসে উঠুন। আমাকে আবার অফিস হয়ে বাসায় যেতে হবে " লোকটি বললো "আপনি বাসে যাবেন?? প্রশ্নটা করেই ফেললেন ইফতি সাহেব। "কি করবো বলুন, এধরনের কাজের জন্য লোকাল বাসই এখন নিরাপদ। অফিসের সব জায়গায় সিসি ক্যামরা লাগানো " একটু থেমে আবার বললেন " আর নিজস্ব গাড়িতে এসব করতেও ভয় লাগে। আজকাল ড্রাইভারদেরকেও বিশ্বাস করা যায় না। " দুইজনই গাড়িতে উঠেন কিন্তু কোন সিট খালি নেই। ফলে দু'জন কেই দাড়িয়ে থাকতে হলো। ইফতি সাহেব কিছুটা বিব্রতবোধ করেন। আর ভাবেন তার কাজের জন্যই সাঈদ সাহেবকে হয়তো এভাবে দাড়িয়ে থাকতে হচ্ছে। কিন্তু এখন তার কিছুই করারও নেই। "যা বলেছি তা কি নিয়ে এসেছে?" জানতে চাইলো সাঈদ সাহেব। " জ্বী বরাবরই এনেছি " একটু থেমে ইফতি সাহেব আবার বললো " চাকরি টা হবে তো? এটাই আমার শেষ সম্বল। " বলতে গিয়ে যেন গলাটা ধরে এলো। " আশা করি হবে, বড় সাহেবর সাথে আমার কথা হয়েছে। উনি আশ্বাস দিয়েছে। " একটু থেমে আবার বললেন " বুঝেনি তো দেশের যা অবস্থা, চাকুরী তো একপ্রকার সোনার হরিণ। আর সরকারী চাকুরীর কথা কিবা বলবো।বড় সাহেব বলেছে তাই আমি ওটার জন্য বলেছি। আমার ক্ষমতা থাকলে আমি এমনিতেই ওকে ব্যবস্থা করে দিতাম শত হলেও সে আমার এলাকার।" দুইজনই চুপ করে দাড়িয়ে আছেন।এমন সময়ে তার বিবেক যেন ব্যঙ্গ করে জানতে চাইলো “কে বড় সাহেব?তুই বড় সাহেব জানতে পারলে টাকা কম দিতে পারে এই ভয়েই তো কাল্পনিক বড় সাহেবরে আশ্রয় নিলি” একটা বিদ্রুপপূর্ণ হাসি হেসে আবার বলল “ভার্সসিটি তে পড়ার সময়ে খুব তো বড়াই করে বলতে, মরে গেল্ও র্দূনীতি করবে না।” সাইদ সাহেবের মাথাটা যেন হঠাৎ ভারি হয়ে গেছে।তিনি হাত দিয়ে মাথা টিপার চেষ্ঠা করেন। ”স্যার কিছু লাগবে ?” ইফতি সাহেব বলে উঠেন. “পানি হবে ।?“ তিনি তার হাত ব্যাগ হতে ছোট পানির বোতল বের করে এগিয়ে দেন সাইদ সাহেবের দিকে । তিনি কয়েক চুমুক পানিপান করেন । কিছুক্ষন পর হেলফার আসে টাকা তোলার জন্য। ইফতি সাহেব ভাড়া দেয় যদিও সাঈদ সাহেব দেয়ার চেষ্টা করেন কিন্তু পারেননি। হঠাৎ হেলফার ড্রাইভারকে বাস থামতে ইঙ্গিত করে। বাস থামলে কিছু যাত্রী নামে। হেলফারের এধরনের আচরণে সবাই তাকে ধমক, গালিগালাজ দিতে থাকে। কিন্তু হেলফারের কোন ধরনের প্রতিক্রিয়া না দেখে সবাই আস্তে আস্তে আবার থেমে যায়। কিছু যাত্রী নেমে যাওয়ায় কিছু সিটখালি হয়। ইফতি সাহেব জানালার পাশে আর সাঈদ সাহেব তার ঠিক পাশেই বসলেন। " দেশে নিয়ম কানুন বলতে কিছুই নাই " সিটে বসতে বসতে বললেন সাঈদ সাহেব। "যে যেভাবে পারে নিজের আখের ঘুচাতে ব্যস্ত, এদেশেটা আর বদলালোনা "কিছুটা আক্ষেপ করেই বললেন সাঈদ সাহেব। হঠাৎ সাঈদ সাহেব চুপ হয়ে গেল তার এমন কথা শুনে তার বিবেক যেন অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো এবংতাকে বলতে লাগলো " হেলপার তো অশিক্ষিত, কিন্তু তুমি তো শিক্ষিত। তুমি কি পেরেছো বদলাতে, সাঈদ সাহেব? তিনি হচকচিয়ে চোখ খোলে চারদিকে তাকান। "চলে এসেছি " বলতে বলতে ইফতি সাহেব বুকপকেট হতে একটা চেক সাঈদ সাহেবের হাতে গুজে দিতে দিতে বললেন "একটু আন্তরিক ভাবে দেখবেন " সাঈদ সাহেব মাথা নাড়লেন। তারপর বাস থেকে নেমে তার গাড়ীর দিকে যেতে যেতে ভাবতে লাগলেন এ কাজটা করা তার আদৌ ঠিক হচ্ছে কি? এমন সময়ে তার অন্তঃ সও্বা তাকে যেন বলতে লাগলো " সাঈদ সাহেব এগুলো ভেবো না। তোমাকে অনেক বড় হতে হবে। এগুলো ভাবলে কিভাবে হবে? আর তুমি তো একটা ফ্যামিলির উপকারের বিনিময় এই কয়টা টাকা নিচ্ছো তা আর কিবা অপরাধ। চারদিকে তাকিয়ে দেখো, কত বড় বড় অপরাধী তোমার চারপাশে, তাদের তুলনায় তুমি তো অতি ক্ষুদ্র " সাঈদ সাহেব আর ভাবতে পারলেন না। তিনি সামনে তার জন্য অপেক্ষা করা অফিসের গাড়িতে উঠে বসলেন। সাঈদ সাহেব আগেই ড্রাইভারকে এখানে অপেক্ষা করতে বলেছিলেন। " আজ আমি অফিসে যাবো না।গতকাল যে ডেভেলপার্সের অফিসে গিয়েছিলাম তুমি গাড়িটা ঐখানে নিয়ে চলো " বললেন সাঈদ সাহেব। "যাক শেষ পর্যন্ত একটা বাড়ির ব্যবস্থা হলো " মনে মনে বললেন সাঈদ সাহেব। তারপর ছোট একটা হাই তুলে পকেট হতে চেকটা বের করে দেখলেন যত টাকা বলেছেন তত ঠিকভাবে আছে কিনা। ভদ্রতার খাতিরে ঐসময়ে খুলে দেখতে পারেননি। না সব ঠিকভাবেই আছে। চেকটা বুকপকেটে রাখতে রাখতে সাঈদ সাহেব সিটের মধ্যে মাথাটা এলিয়ে দিলেন।
--------------------------০-------------------------------
আমার অন্যগল্পসমূহ::
ব্যঙ্গ-রঙ্গ:: ছোটগল্প:: একচোখা মন্ত্রীর গল্প
ছোটগল্প (সাইকোলজিকল):: আইসক্রীম
গল্প(সাইকোলজিকল) :: টেলিভিশন(১ম পর্ব)
গল্প(সাইকোলজিকল) :: টেলিভিশন(শেষ পর্ব)
১০ ই অক্টোবর, ২০১৫ রাত ২:০৫
স্বপ্নবাজ তরী বলেছেন: ধন্যবাদ
২| ১০ ই অক্টোবর, ২০১৫ বিকাল ৪:৪৩
কথাকথিকেথিকথন বলেছেন: বাস্তব চিত্রের গল্প । ভাল লেগেছে ।
১২ ই অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ১১:৪৩
স্বপ্নবাজ তরী বলেছেন: ধন্যবাদ
৩| ২৫ শে নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:৫৭
বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: ছোটগল্প (সাইকোলজিকল):: চেক শিরোনাম দেখে পোস্টে ঢুকেছিলাম। কিন্তু কেম্নে কি?
©somewhere in net ltd.
১|
০৯ ই অক্টোবর, ২০১৫ বিকাল ৫:২৭
সুমন কর বলেছেন: দেশের একটি পরিচিত খারাপ রূপ, ঘুষ খাওয়াটা ভিন্নভাবে তুলে ধরেছেন।
ভালো লাগা। +।