![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
প্রতিনিয়ত সৎ থাকার চেষ্টার যুদ্ধে লিপ্ত একসৈনিক
-- কেমন বোধ করছো??
-- ভালো। কিন্তু আপনি কে? ১ম ব্যক্তি বালিশ থেকে মাথাটি হালকা উঠিয়ে জানতে চাইলো।
-- মৃত আত্না!! একটি মগে চুমুক দিতে দিতে ২য় ব্যক্তি বলল। ১ম ব্যক্তি আতংকিত চোখে তাকিয়ে আছে লোকটির দিকে।লোকটির পরনে সাদা পোশাক,খ্রিষ্টানপাদ্রীরা যেমন ঘোমটাযুক্ত গলা থেকে পায়ের পাতা পর্যন্ত সাদা পোশাক পড়ে তেমন। তারপর মাথাটি হালকা ঘুরিয়ে চারদিকে তাকালো।ঘরটি হালকা ধোঁয়াপূর্ণ, অনেকটা কুয়াচ্ছনের মতো।ঘরের দেয়াল,ফ্লোর এবংছাদ ধবধবে সাদা । রুমের এক কোণে একটা টেবিল দেখা যাচ্ছে সেটিও সাদা, যদিও ধোঁয়ার জন্য স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে না।সে এবার নিজের দিকে তাকায়। তার শরীরে সাদা একটি পোশাকে আবৃত। সে কিছুটা ভয় পেয়ে যায়।
--কি বিশ্বাস হচ্ছে না। ভাবছো আত্না কিভাবে কপি খায়?? কপিতে চুমুক দিতে দিতে আবার বলল , “এই যে আমি খাচ্ছি। খাবে নাকি?” ঠোঁটের কোণে এক চিলতে হাসি এনে জানতে চাইলো। ১ম ব্যক্তি বিস্ময় আর আতংক মিশ্রিত চোখে শুধু তাকিয়েই আছে। সে মনে করার চেষ্টা করছে, কিভাবে এখানে এলো ?ভয়ে তার হৃদস্পন্দন বেড়ে গেল। রক্তচলাচল বেড়ে গেল। নিউরনের ভেতর দিয়ে যেন তড়িৎচুম্বকীয় তরঙ্গের বেগ বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু কিছুই বুঝতে পারছে না, কেন সে এখানে? কিভাবেই বা আসলো? কে এই ব্যক্তি? হঠাৎ তার মনে প্রশ্ন জাগলো, “আরে আমি বা কে?” তার ভাবনায় হঠাৎ যেন ছেদ পড়লো লোকটির প্রশ্নে “নাদিয়া কে?”
“নাদিয়া?”, ১ম লোকটি আস্তে করে নামটি উচ্চারণ করে।
“কি মনে পড়ছে না? আরে বাপু যার জন্য ব্রীজ থেকে লাফিয়ে পড়ে এখন ভূত বনে গেলে”, ২য় ব্যক্তিটির আকস্মিক এমন কথায় তার রক্তপ্রবাহ যেন আরও বেড়ে গেলে। তার নিউরনে ইলেক্ট্রোমেগনেটিক তরঙ্গ যেন দ্রুতগতিতে ছুটে চললো নিউরনের একপ্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে নাদিয়ার খোঁজে। অবশেষে নাদিয়ার সাথে কাটানো এক একটি দৃশ্য তার সামনে ভেসে উঠে। “আপনি কিভাবে নাদিয়ার কথা জানেন?”, প্রশ্ন করে বসে সে। ১ম ব্যক্তি কপির মগটা টেবিলের ওপর রেখে একটা টুল টেনে খাটের কাছে এসে বসে। তারপর ১ম ব্যক্তির মুখের দিকে ঝুকে বলে, “আমি আরো অনেক কিছু জানি” মুখটা একটু ওপরে তুলে বলল, “আমি এইও জানি নাদিয়া এখন কোথায় এবং কি করে? নাদিয়া অনেক সুন্দর ছিল, তাই না? লাল শাড়িতে তাকে পরীর মতো লাগতো?” বলে সে অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে। ২য় ব্যক্তি মাথা নাড়তে নাড়তে বলে, “ হ্যাঁ। কিন্তু আপনি জানেন কিভাবে?” “শুধু কি তাই। সে যখন হাসতো তখন মনে হতো পাশ দিয়ে বুঝি ঝরণা বয়ে যাচ্ছে। সে কপালো কখনও টিপ পড়তো না একদিন ছাড়া আর তা হচ্ছে …….??” কথাটি শেষ না করে দুই হাত বিছানার ওপর ভর দিয়ে ১ম ব্যক্তির মুখের কাছে গিয়ে বললো, “বলবো??” ১ম ব্যক্তি যেন আকাশ হতে পড়লো। লোকটি তার এত কিছু জানে কিভাবে? সে স্থির আতংকিত চোখে লোকটির চোখের দিকের তাকিয়ে আছে।লোকটির এমন দৃড়ভাবে কথাটি বলল মনে হচ্ছে সে তার চেনা পরিচিত কেউ । ২য় ব্যক্তি বলেই চলছে, “প্রতি মাসের ২৮ তারিখ। যেদিন নাদিয়া কে ভালবাসার কথা বলেছো?” তারিখটার কথা শুনে ১ম ব্যক্তি আর নিজেকে স্থির রাখতে পারে না চিৎকার করে বলে ওঠে, “ না। সব মিথ্যা। সবই মিথ্যা” বলে সে ধুঁকরে কেঁদে ওঠে।
২য় লোকটি তখন একটা মুচকি হাসি দেয়। সাদা দেয়ালের চারদিকে তাকায়। আরো দৃঢ় কন্ঠে বলে , “চিৎকার করে লাভ নেই। আত্নার চিৎকার কেউ শুনে না। আর সত্যকে কেউ লুকিয়ে রাখতে পারে না।” দেয়ালের ওপর আছড় কাটতে কাটতে বলল, “আফসোস! নাদিয়া তোমাকে ধোঁকা দিল।আর তুমি কাপুরুষেরর মতো ব্রীজ থেকে ঝাঁপিয়ে আত্নহত্যা করলে। একটা বাজে মেয়ের জন্য নিজের জীবন দিলে? বাজে মেয়ে এখন স্বামীর সাথে পূর্তি করছে আর তুমি?”
“আপনি ওকে বাজে মেয়ে বলছেন কেন? ”, প্রতিবাদ করে উঠে ১ম ব্যক্তি। কিন্তু কথাটা যতটা জোরে হবার ছিল ততটা হলো না।অর্ধেকটা কন্ঠনালীর ভেতরেই রয়ে গেল।“আরে বাজে মেয়ে বলবো না তো কি বলবো? যে মেয়ের জন্য একটা ছেলে জীবন বাজি রাখতে প্রস্তুত, সে কিনা সামান্য সুখের জন্য ছেলেটিকে ছেড়ে দিয়ে অন্যের গলায় মালা দিয়ে সুখের সংসার সাজায়, সে আর যাই হোক ভালো মেয়ে না।” ২য় ব্যক্তি এবার কিছুটা উত্তেজিত কন্ঠেই বলে ওঠে।
১ম ব্যক্তি এবার আর নিজেকে নিয়ন্ত্রন করতে পারলো না। খাট থেকে নেমে ২য় ব্যক্তির পিছনে দাঁড়িয়ে রাগান্বিত স্বরে বললো, “আপনি না জেনে ওর সম্পর্কে আর কোন বাজে কথা বলবেন না। আর যদি বলেন তবে এবার আমি আপনাকে খুন করে ফেলবো।” ২য় ব্যক্তি ঘুরে একটু মুচকি হাসি দিয়ে বললো, “তাই নাকি, তবে তুমিই সত্যি টা বলো।” “আপনি কে যে আমি আপনাকে সত্যিটা বলবো।” কিছুটা ঘাবরে গিয়ে থমথমে স্বরে বললো ১ম ব্যক্তি। “আজ থেকে আমি আর তুমি এই রুমে বন্দি। অনন্তকাল আমরা এখানেই থাকবো।এখানে লাল নীল রং নেই। শুধু সাদা। ধবদবে সাদা। চোখ জলসে যাওয়া সাদা।আর সাথে আছে ভয়ংকর নিরবতা।” একটা ছোট দীর্ঘশ্বাস ফেলে দেয়ালে ঝুলানো সাদা হ্যাটটি দিকে এগিয়ে যেতে যেতে আবার বলল, “এটা এমন এক জায়গা, যেখানে স্বপ্ন বলতে কিছুই নেই। যেখানে এলে কল্পনাশক্তি লোপ পায়। শুধু একটাই করা যায় অতীতের স্মৃতিচারণ আর ভুলের জন্য আফসোস” হঠাৎ কি যেন হলো, ২য় ব্যক্তি অট্টহাসি দিতে দিতে ১ম ব্যক্তির সামনে দাঁড়ায় তারপর চোখ দুইটা বড় করে, ১ম ব্যক্তির দুই গাল দুই হাত দিয়ে টেনে ধরে আস্তে আস্তে বললো, “বলবি না, বলবি না তুই।” ১ম ব্যক্তি ভয়ে আরো জড়োসড়ো হয়ে যায় ।১ম ব্যক্তির গাল ছেড়ে দিয়ে, রাগে গদগদ করতে করতে বললো “মারা যেতে প্রস্তুত অথচ মুখ ফুটে কেন মারা যাবি তা বলবি না। রাগ, অভিমান পুষে রাখবি।তারপর হঠাৎ একদিন মনে করবি বেঁচে থাকা শুধু্ই অর্থহীন।শেষে লাফিয়ে পড়ে মারা যাবি ,বেশ সব রাগ,অভিমান চুকে গেল ।এত সহজ মৃত্যু!এরাই নাকি শ্রেষ্ঠ জীব সৃষ্টির। লজ্জা, নির্মম লজ্জা” ১ম ব্যক্তি নিজেকে কিছুটা সামলে ধীরে ধীরে টেবিলের ওপর থেকে পানি পান করে। তারপর আস্তে করে বলে উঠে “ জানতে চান? ” ২য় ব্যক্তি যেন কিছুটা অপ্রস্তুতই ছিল এমন কথার শোনার জন্য। সে মাথাটা ঘুরিয়ে আস্তে আস্তে ১ম ব্যক্তির পাশে দাঁড়ায়। ১ম ব্যক্তি পানির গ্লাসটা হাতে নিয়ে খাটে বসে। তারপর বলতে থাকে “আমার নাম শাকিল আহমেদ। কম্পিউটার সাইন্সের ছাত্র। নাদিয়া ।আমাদের পাশের ফ্যাকাল্টিতে ম্যানেজমেন্টে পড়তো। একদিন পড়ন্ত বিকেলে হঠাৎ করেই পরিচয়। সুন্দর বচনভঙ্গি, সুশ্রী,দীর্ঘ কেশ আমাকে মুগ্ধ করে। প্রথম পরিচয়ে প্রেমে পড়ে গেলাম। কিন্তু লজ্জা আর হারানোর সংকায় তা আর বলা হয়ে উঠে না। ক্লাস না থাকলেও ভার্সিটিতে যেতাম শুধু ওর হাসি দেখার লোভে। কত দিন এমন লুকোচুরি খেলা খেলেছি বলতে পারবো না। তারপর একদিন কি হলো ঠিক বলতে পারবো না সব সংকোচ ভুলে বলেই পেললাম। আশা করিনি হ্যাঁ বলবে এবং ঠিক তাই হলো। চলে গেলো। আমি লজ্জায় ভার্সিটিতেই যাওয়াই বন্ধ করে দিলাম । ভেবেছিলাম আর ভার্সিটিতে যেয়ে লাভ নাই, বিদেশ চলে যাবো।” হাতের গ্লাসটা থেকে একটু পানি পান করে। এইদিকে ২য় ব্যক্তি আগ্রহ নিয়ে জানতে চাইলো “তারপর কি হলো?” একটা মুচকি হাসি দিয়ে শাকিল বললো, “ না, বিদেশ যাওয়া হলো না। এক বিকেলে সেই আমাকে কল করে অনেক কথা বলে, ভার্সিটিতে কেন যাচ্ছি না? রাগ, অভিমান মিশেল অনেক কথা । আমার তেমন কিছুই মনে নেই শুধু শেষ কথাটা মনে আছে আমাকে বলেছিল নন্দন রিসোর্টে যাওয়ার জন্য। আমি যেন আকাশের চাঁদ হাতে পেলাম। ইচ্ছে করছিল পাখি হয়ে উড়ে বেড়াই।”
শাকিল উঠে খাটের মাথায় বসে বললো, “ অদ্ভূদ জিনিসটা ছিল, আমি এতই আনন্দিত ছিলাম যে, আমি কোন গিফটই নিই নাই ওর জন্য। খাওয়া দাওয়া শেষ আমরা বের হই রিসোর্টের বাহিরে একটু হেঁটে বেড়ানোর জন্য। আপনি ঠিকই বলেছেন লাল শাড়িতে ওকে পরীর মতই লাগছিল। আমি সারাটা পথ শুধু ওকে আড় চোখে দেখেছি। আর ভেবেছি, এত সুন্দর মানুষ হয় কিভাবে । এমন সময়ে দেখি একটা ফেরিওয়ালা।” একটু থেমে ২য় ব্যক্তিকে উদ্দেশ্য করে বললো, “আপনি ভুল বলছেন, ২৮-ই ফেব্রুয়ারি আমি ওকে ভালোবাসার কথা বলিনি। ঐদিন আমি লাল টিপ ওর কপালে পড়িয়ে দিই। আর সেই থেকে প্রতি মাসের ২৮ তারিখ সে কপালে লালটিপ পড়তো শুধু আমাদের ভালোবাসার সাক্ষী স্বরুপ।৩ বছর কেটে যায় রাগ অভিমান আর অভিমান ভাঙানোর খেলায়।”
২য় ব্যক্তি, শাকিল যাতে না দেখে পকেটে তাড়াতাড়ি কাগজের একটা টুকরা ঢুকিয়ে জিজ্ঞেস করে , “ তারপর মেয়েটির বিয়ে হয়ে যায় আর তাই তুমি আত্নহত্যা করলে, এটাই না?” “ হ্যাঁ, ওর বিয়ে হয়ে যায় আর আমিই ওকে রাজি করাই বিয়ে করার জন্য।ও রাজি ছিলো না।” শাকিল বলে ওঠে।“ কি বলো তুমি। নিজে বিবাহ না করে কাপুরুষের মতো ওকে অন্যের হাতে তুলে দিলে?” ২য় ব্যক্তি মাথা চুলকাতে চুলকাতে জিজ্ঞেস করলো ,“আসলে কি তুমি ওকে ভালোবেসেছিলে? ” শাকিলের কন্ঠ দিয়ে যেন আর কথা বের হচ্ছে না। কোথায় যেন এক চাপা কষ্ট তাকে খুঁড়ে খাচ্ছে । হঠাৎ চিৎকার করে বলে ওঠে, “ হ্যাঁ,আমি কাপুরুষ। যার জন্মের ঠিক নেই সে আর যাই হোক পুরুষ হতে পারে না। যে জানেই না তার বাবা মায়ের নাম, সে আর যাই করুক বিয়ের মতো সামাজিক রীতি পালন করতে পারে না।” একটু থেমে ২য় ব্যক্তির দিকে তাকিয়ে বললো, “আপনি কি ভাবেন একজন মানুষ এত সহজে আত্নহত্যা করে, সেই ছোট বেলা হতে যেখানেই যাই, " পালক ছেলে " নামক শব্দটি শুনতে হয়েছে , বন্ধু বান্ধব, আত্নীয়-স্বজন থেকে শুরু করে সবাইর কাছ থেকে। আর কখনও দুষ্টুমি করতে পারিনি কারণ কিছু হলেই বলে আমি নাকি বেজন্মা। এই অসহ্য জীবনের কোন মূল্য আছে বলুন।”
২য় ব্যক্তির কথা যেন বন্ধ হয়ে গেল। সে বুঝছে না এখন কি বলবে। কিছুক্ষন দুই জনই নীরব। তারপর ২য় ব্যক্তি নীরবতা ভেঙ্গে বলল, “ হ্যাঁ। আসলেই এই অসহ্য জীবনের কোন মূল্য নেই। সত্যিই তো, যে ছেলে ছোট বেলা হতে এমন অসহ্য পরিস্থিতির ভেতর দিয়ে পার করে আসলো তার জীবনের কোন মূল্য আসলেই নেই। যাকে পদে পদে অপমান সহ্য করতো হয়, অবশেষে নিজের ভালবাসার মানুষটাকেও পেলেও না তার আত্নহত্যা করাই উচিত। এবং তুমি ঠিক কাজই করেছ।” একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো, “তবে একটা মিস্টেক করছো?” শাকিল আগ্রহ নিয়ে মাথা তুলে ব্যক্তিটির দিকে তাকায়। ২য় ব্যক্তি বললো , “ তোমার আরো অনেক আগেই আত্নহত্যা করা উচিত ছিল। যখন তোমার নাদিয়ার সাথে পরিচয় হয়নি তারও আগে তাহলে অন্তত নাদিয়া বেঁচে যেতো।” শাকিল পাগলের মতো জানতে চাইলো, “নাদিয়ার কি হয়েছে? ” “যখন শুনছে, তুমি ব্রিজ থেকে লাফিয়ে পড়েছ, তখনই সে বাসাতে ওড়না পেঁচিয়ে আত্নহত্যা করে।” শাকিল কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়ে। ২য় ব্যক্তি প্রশ্ন করে, “ তুমি যে পালক ছেলে নাদিয়া কি জানতো বা তোমার আব্বু আম্মু কে বলছো যে তুমি নাদিয়াকে ভালোবাসো বা বিয়ে করবে?” শাকিল না সুচক মাথা নাড়ে।“তার মানে তুমি নাদিয়াকে বিয়ে করার কোন চেষ্টাই করো নি?” বলল ২য় ব্যক্তি “ চেষ্টা করে কি হবে যখন তারা জানবে আমি তাদের "পালক ছেলে"। তখন কোন বাবা মা তার মেয়েকে আমার হাতে তুলে দিবে? আর আমিও আমার বাবা-মাকে কারো কাছে ছোট করাতে চাই না।” শাকিল বলল।
“তাই বলে তুমি চেষ্টাও করবে না। তুমি মনে মনে অংক কষে, নিজেই বললে ফেল। তুমি না হয়,কাপুরুষের মতো আত্নহত্যা করে বেঁচে গেলে কিন্তু একবারও কি ভাব উচিত ছিল না যাদের কে তুমি রেখে যাচ্ছো তাদের কি হবে?” ২য় ব্যক্তি তারপর বলল, “নাদিয়া আজ তোমার জন্য মারা গেছে। যে নিঃসন্তান দুইটি মানুষ তোমাকে লালন পালন করলো, শীতের প্রচন্ড ঠান্ডা থেকে বাঁচানোর জন্য বুকের ভিতরে লুকিয়ে রেখেছিল, তোমার শরীরের প্রতিটি কণা সুনিপূন হাতে গড়েছে, তোমাকে আকড়ে ধরে বেঁচে থাকার চেষ্ঠা করেছে তা তুমি ভেঙ্গে দিলে সমাজের কিছু মানুষের জন্য আর তোমার রাগ, অভিমান মেটানোর জন্য।” ২য় ব্যক্তি শাকিলের চোখে চোখ রেখে বলল, “রাগ বেড়ে গেলে তা একসময়ে কমে যাবে। অভিমান করলে কেউ না কেউ তা ভাঙ্গাবার ক্ষমতা রাখে। স্বপ্ন ভেঙ্গে গেলে পুনরায় স্বপ্ন দেখা সম্ভব। কিন্তু জীবন চলে গেলে তা আর ফিরিয়ে আনা সম্ভব না।” একটা ছোট র্দীঘশ্বাস ফেলে বলল “মৃত্যু কোন সমস্যার সমাধান দিতে পারে না বরং আরো হাজারো সমস্যার উৎপত্তি ঘটায়।” শাকিলরে মনের দৃশ্য পটে বেশে ওঠে, ছোটবেলায় বাবা-মায়ের সাথে কাটানো মুহূতগুলো ।বাবার পিঠে চড়ার দৃশ্য,বাবা-মায়ের সাথে মেলায় চড়কিতে চড়ার কথা,রাতের বেলায় মায়ের মুখে ভূতের গল্প শুনার কথা।একসময়ে শাকিল মেঝেতে ঢুলে পড়ে।২য় ব্যক্তি তাড়াতাড়ি ওকে ধরে খাটের ওপরে শোয়ায় । তারপর দ্রুত একটা কপাটিকা খুলে রুম থেকে বের হয়ে যায়।
২.
কাক ডাকা ভোরে শাকিলের ঘুম ভাঙ্গে।সে শুয়ে আছে তার অতি চেনাজানা রুমে। ধীরে ধীরে ভেলকনিতে গিয়ে দাঁড়ায় । কাঁঠাল পাতার ফাঁকে ফাঁকে সূর্যের আলো এসে পড়ে তার মুখমন্ডলে। সে আজ নিজেকেই বড়ই হালকা মনে হচ্ছে। মনের কোণে অজানা এক প্রশান্তি অনুভুব করছে। একটা চড়ুই পাখি তার কানের পাশ দিয়ে উড়াল দিয়ে যায়। এমন সময়ে পিছন
থেকে একটা শব্দ ভেসে আসে, “ হ্যালো! ইয়ং ম্যান।” সে পিছন ফিরে তাকায়। লোকটাকে তার চেনাচেনা লাগছে। কোথায় যেন দেখা হয়েছিল। কিন্তু মনে করতে পারছে না। সে জিজ্ঞেস করে বসে “আমি কি আপনাকে চিনি?” লোকটা একটা মুচকি হাসি দিতে দিতে বলল, “ আমি সাইক্রিয়াস্টিক ডা.ইফতি রহমান, এখন কেমন ফিল করছো?” কিছুটা ইতঃতস্ত বোধ করে বলল “ভালো কিন্তু এখানে…….।” কথাটি শেষ হবার আগেই ডা. ইফতি বললো,
“এখন তুমি ফ্রেশ হও। তারপর আমি আসবো।” ডাঃ সাহেব চলে যাবার পর সে গতকালের কথা সমূহ মনে পড়তে থাকে।নাদিয়ার কথা মনে পড়ার পর সে কাঁদতে থাকে।
৩.
নাদিয়া এবং ডাঃ ইফতি, শাকিলদের ড্রয়িং রুমের সোফায় বসে আছে।
--দেখ আমি তোমাকে জরুরী ডেকে এনেছি একটা কারণেই তাহলো ইফতি জানে তুমি মারা গেছ।বলল ডাঃ ইফতি।
-- কেন? এমন মিথ্যার আশ্রয় নিলেন ? জানতে চাইলো নাদিয়া।
-- এর বাহিরে আমার আর কোন উপায় ছিলো না।ওর অর্ন্তগত জীবনীশক্তি প্রায় শূণ্যের কোটায়।এখন সে যখন তোমাকে দেখবে হয়েতো তখন তোমার জন্য নতুন করে বেঁচে থাকার অনুপ্রেরণা পাবে, নতুন করে বেঁচে থাকার জন্য স্বপ্ন দেখতে পারে।
-- সে কি জানে আমার ডিভোর্স হয়ে গেছে ??
-- না।সে কিছুই জানে না ।
টেবিলের ওপর রাখা ট্রে থেকে আপেলের একটা টুকরা হাতে নিয়ে ডাঃ সাহেব বলল, “চলো।এতক্ষনে মনে হয় সে ফ্রেশ হয়ে গেছে” নাদিয়া ইচ্ছে করছে পাখির মতো ডানা মেলে আকাশে উড়তে।এতদিন নাদিয়ার ওপর দিয়ে বয়ে গেছে এক ভয়ংকর ঝড়। নাদিয়ার স্বামী যখন জানতে পারছে সে পূর্বে আরেকজন কে ভালোবাসতো এবং সে আত্নহত্যা করতে গিয়ে এখন অনেকটা পাগলপায় তখন থেকেই নাদিয়ার সাথে ছোটখাটো ব্যাপারগুলো নিয়ে ঝগড়াঝাটি হতে থাকে। নাদিয়া প্রথম কিছুদিন মানিয়ে নেয়ার চেষ্টা করলেও পরে তা আরো খারাপ থেকে খারাপের দিকে যেতে থাকে এমনকি তার গায়ে হাতও ওঠে । নাদিয়ার পরিবার বিষয়গুলো জানার পর তারা ডিভোর্স এর সিদ্ধান্ত নেয় এবং অবশেষে ডির্ভোস।আর এইদিকে ডাঃ সাহেবের পরামর্শে শাকিলের সুস্থ জীবনে ফিরে আনার জন্য তার আব্বু আম্মুও নাদিয়াকে পুত্রবধু হিসেবে মেনে নিতে রাজি হয়। নাদিয়া ডাক্তার সাহেবের সামনে ছিল ।সে আজ শাকিলের পছন্দের লালটিপ কপালে পড়ে ।সে প্রথমে দরজাটা নক করে কিন্তু দরজা খোলাই ছিল।সে ধীরে ধীরে ভিতরে প্রবেশ করে।সে যেন নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না।সে স্থির উপরের দিকে তাকিয়ে আছে।ডাঃসাহেব্ও ভিতরে প্রবেশ কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে যায়।শাকিল ফ্যানের সাথে ঝুলে আছে। টেবিল্ও উপর একটা চিরকুট ডাক্তার সাহেব টেবিলেও উপর থেকে চিরকুটটা হাতে নিয়ে পড়তে যাবে এমন সময়ে ভেলকনির দিক থেকে ধুপ করে একটা আওয়াজ হয়। ডাঃ ইফতি ঘুরে দেখে পিছনে নাদিয়া নাই। সে দ্রুত ভেলকনিতে গিয়ে দাঁড়ায় । নিচের দিকে তাকিয়ে দেখে নাদিয়া উপুড় হয়ে পড়ে আছে, মাথা থেকে লাল রক্ত বের হয়ে মাটি ভেজে যাচ্ছে আর মাটি চুসে নিচ্ছে। ইফতি সাহেব ভাবে শাকিল আর নাদিয়ার বাবা মায়ের কথা তাদের মস্তিকের রক্তক্ষরন কে চুসবে? তিনি একটা র্দীঘশ্বাস ছেড়ে ধীরে ধীরে চিরকুটটা খোলে আর তাতে লেখাছিল, “মা আমায়ে ক্ষমা করো, নাদিয়া আমি আসতেছি”
[বিঃদ্রঃ সপ্তম বাংলা ব্লগ দিবস উপলক্ষে আয়োজিত প্রতিযোগিতার জন্য প্রেরিত]
০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:১১
স্বপ্নবাজ তরী বলেছেন: মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ
২| ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৫:৫৯
মাকড়সাঁ বলেছেন: Purusker ta aber apner na hoyea jay....tobe holea mondo hoito na...
০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:১২
স্বপ্নবাজ তরী বলেছেন: অনুপ্রানিত করার জন্য ধন্যবাদ
৩| ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:২৭
ইষ্টিকুটুম বলেছেন: আমিও কবিতা জমা দিয়েছি। ৭ম ব্লগ প্রতিযোগিতায়।
০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৩৬
স্বপ্নবাজ তরী বলেছেন: হুম। অনেক ভালো । আমি ও মাঝে মাঝে কবিতা লিখি । আপনার জন্যও রইলো শুভকামনা ।
৪| ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৩৫
ইষ্টিকুটুম বলেছেন: আচ্ছা, আপনাকে কি ব্লগে পোস্ট করার নির্দেশ দেয়ার পরেই আপনি ব্লগে পোস্ট করেছেন?
নাকি
নিয়ম অনুসরণ করে?
নিয়মঃ ৬। যে লেখাগুলো প্রতিযোগিতার জন্য পাঠানো হবে, তা কোন ভাবেই ডিসেম্বরের ৫ তারিখ পর্যন্ত নিজের ব্লগ বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা যাবে না এবং ডিসেম্বরের ৬ তারিখ থেকে ১০ তারিখের মধ্যে অবশ্যই তা নিজ নিজ ব্লগে পোস্ট করতে হবে।
০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৪৬
স্বপ্নবাজ তরী বলেছেন: উপরের নিয়ম অনুসরণ করে ।
©somewhere in net ltd.
১|
০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৫:৪৮
ইষ্টিকুটুম বলেছেন: বাহ! বেশ লিখেছেন।