নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মোহাম্মদ সোহাগ (A sinner slave of Allah) 2. সভ্যতার অসংগতি তুলে ধরার চেষ্ঠা করি ।\n

স্বপ্নবাজ তরী

প্রতিনিয়ত সৎ থাকার চেষ্টার যুদ্ধে লিপ্ত একসৈনিক

স্বপ্নবাজ তরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্পঃএকটি বাঁধ ও মনুষ্যত্ব

১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৭ সকাল ১০:৫০

শ্রী নীতেশ কুমার। রাজ্যের দুর্যোগ মন্ত্রী। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে কোটটার ভাঁজ ঠিক করছে। কয়েকদিন ধরে টানা বৃষ্টিতে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গা বন্যা কবলিত। বৃষ্টি যেভাবে হচ্ছে তাতে বন্যায় শহরও প্লাবিত হবার উপক্রম। মাথাটা হালকা বাঁকা করে জালানা দিয়ে বাহিরে চোখ রাখেন, না বৃষ্টি থামার কোন লক্ষ্যই নেই এখনও গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। চড়ুই পাখিটি ভেজা শরীর নিয়ে কার্নিশে চুপটি করে বসে আছে তার অভিব্যক্তিও যেন বলছে, আর বৃষ্টি চাই না। বাসার পিছনে বাগানে সূর্যমুখী ফুলটা হালকা বাতাসে দোল খাচ্ছে। এমন বৃষ্টিতে ঘুম আর হাতে রং চা নিয়ে বারান্দায় বসে বৃষ্টি উপভোগ করার মজাটাই আলাদা কিন্তু বিধিবাম। মন্ত্রী হওয়ায় এই এক জ্বালা, সব ধরনের বৈঠকে উপস্থিত থাকা চাই। স্যানিটারি ল্যাট্রিন সভা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন। কিন্তু আজকের বৈঠকটা অবশ্য জরুরী। কয়েক সপ্তাহ বৃষ্টিতে রাজ্যের বহু গ্রাম বন্যার পানিতে প্রায় ডুবে গেছে। কিভাবে বন্যার পানি কমানো যায় তারই বৈঠক। নীতেশ কুমার সাদা পাঞ্জাবীর হাতটা ঠিক করছে এমন সময়ে তার বড়ছেলের ৮বছরের বাচ্চাটা ঘরে ঢুকেই বলে, " দাদা আমি গতকালের ধাঁধাটার উত্তর খুঁজে বের করেছি। ঘন্টার কাঁটা এবং মিনিটের কাঁটা যদি ৬টার ঘর থেকে সমান দুরত্বে থাকে তবে তখন কয়টা বাজে? উত্তর হলো ৮টা ১৮ মিনিট। " "ওয়েল ডান বয়। আজ তোমার জন্য অন্যরকম একটা ধাঁধা রয়েছে , এমন একটি অংক করো যেটাকে ভাগ করলে শূন্য পাওয়া যায়। একটু তথ্য দিই, এটা যতটাই ম্যাথ ততটাই ম্যাথ নহে।" বলল নীতেশ কুমার। তিনি ছোটবেলা থেকেই ম্যাথে পাকা। ম্যাথে উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে কিছুদিন একটা কলেজে শিক্ষকতাও করেন কিন্তু পরে তার বাবা মারা যাবার পর রাজনীতিতে পদযাত্রা। রাজনীতি করলেও ম্যাথের প্রতি ভালোবাসা এখনও একটুও কমে নি। তাই সুযোগ পেলে ছোট বাচ্চাদের সাথে ম্যাথের বিভিন্ন ধাঁধা, ইতিহাস নিয়ে গল্প করে। এমন সময়ে পিএস রুমে ঢুকে নমস্কার দিয়ে বলে, স্যার গাড়ি রেডি। তিনি ড্রয়ার খুলে চকলেটের একটা প্যাকেট নাতির হাতে দিয়ে বের হন।
কালো গ্লাসবিশিষ্ট গাড়িতে উঠে তিনি দরজাটা টেনে বন্ধ করে দেন। এই এক অদ্ভুদ গাড়ি বাহির থেকে ভেতরের কিছুই দেখা যায় না কিন্তু ভেতর থেকে বাহিরের সবকিছু ফকফক দেখা যায়। রাস্তায় গোড়ালি পরিমান পানিই ইঙ্গিত দিচ্ছে শহরের বাহিরের ভয়াবহতা। নীতেশ কুমার ক্যাসিও ব্যান্ডের হাতঘড়িটার দিকে তাকিয়ে সময়টা দেখে নেন। সকাল ১০:১৫ কিন্তু এখন সূর্য উঠার কোন লক্ষ্যই দেখা যাচ্ছে না। রাস্তায় যান চলাচল বাড়ছে বিশেষ করে স্কুলগামী ছেলেমেয়েদের সংখ্যা। কাঁধে বিশাল এক ব্যাগ যার মধ্যে স্তরে স্তরে শুধু বই, খাতা সাজানো। নীতেশ কুমারের মনে পড়ে তার ছোটবেলার কথা। ১৯৪৫ সাল। দেশভাগের আগের কথা। তখন তাদের স্থায়ী নিবাস ছিল বর্তমান কাঁটাতার ঘেঁষা হরিপুর। তার বয়স তখন ৭-৮ হবে। এইটুকু বয়সে ডানপিটে খেতাব অর্জন করতে সময় লাগেনি। এপাড়া ঐপাড়া ঘুরে বেড়ানো, পাখি ধরা, বাগান থেকে ফল চুরি এমন কোন কাজ ছিল না যা সে করেনি। আর এসব কাজে তার সহযোগি বন্ধু ছিল রহিম। বন্যার সময় তারা দু'জনই ভেলায় করে সারাদিন ঘুরে বেড়াত আর মাছ ধরতো। দুর্গাপূজার সময়ে চলে আসতো গঙ্গা পাড়ে, যখন তার বয়সি ছেলেরা মায়ের কোলে লুকিয়ে থাকত ডাইনি বুড়ির ভয়ে। রহিমদের একটা মাছ ধরার নৌকা ছিল। উত্তাল পদ্মার বুকে রহিমের বড় ভাই সফিকের বাউল গান এখনও তার কানে বাজে। বিশাল পদ্মারu জলরাশিতে জাহাজের সম্মুখভাগে দাঁড়িয়ে থাকার সময়টা কখনও ভূলার নয়। কূপড়ি ভরা তরতাজা ইলিশের লাফালাফি আর রহিমদের বাসায় ইলিশ ভাজা ঘ্রাণ যেন আজও তার নাকে লেগে আছে। দেশ ভাগ হলো। রহিম কাঁটাতারের ঐপারে পড়ে গেল। রহিমের সাথে আর দেখা হয়নি। পত্রিকার সুবাধে জানা যায়, যৌবনভরা পদ্মাও আজ নেই। শতবন্ধুর ভীড়ে আজও রহিম প্রথম স্থানটি দখল করে আছে। মোবাইলের রিংটোন বেজে উঠে। দলের সভাপতি মানিকচন্দ্র ঘোষ। সে ফোনটা রিসিভ করে বলে,
-- নমস্কার স্যার।
-- নমস্কার। দেখ রাজ্যের বন্যার অবস্থা ভালো না। আজকের সভায় সবাইকে কনভিনস করে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বাঁধের গেইটগুলো খোলার ব্যবস্থা করো।
-- কিন্তু অনেকে বলছে, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাথে কথা বলার জন্য কারণ পার্শবর্তী দেশেও এখন বর্ষা মৌসুম। গেইট খুলে দিলে,,,,,,,,,,,
-- দেখ, এটা আমাদের দেখার বিষয় না। কেন্দ্রীয় সরকার দেখবে। এই রাজ্যের মানুষ তোমাকে ভোট দিয়ে মন্ত্রী বানিয়েছে। অতএব আগে এদের কথা শোনো।
-- ওকে স্যার।
লাইন কেটে দিয়ে কিছুক্ষন চুপ করে থাকে নীতেশ কুমার। বারবার রহিমের কথা মনে পড়ছে। বেঁচে থাকলে রহিমের নিশ্চয় বয়সও ৮০-৮৫ এর ঘরেই হবার কথা। তারও নিশ্চয় ছেলের নাতিপুতি আছে। ছোট রহিমের চেহারায় বয়সের চাপ দিয়ে বৃদ্ধ রহিমকে দেখার চেষ্টা করে সে। চেষ্টা করে হাড়ি,পাতিল, গরু ছাগল, নাতিপুতি নিয়ে বন্যার জলে ভাসমান রহিমকে দেখার। রহিম কি জানে তার বন্যার জলে ভাসার কারণ তারই বন্ধু নীতাই। সে কি ক্ষমা করবে মনুষ্যত্ব বিবর্জিত দেশপ্রেমিক নীতাই কে? যার বিবেক সামান্য কাঁটাতারের কাছে বারবার পরাজিত।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.