নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মোহাম্মদ সোহাগ (A sinner slave of Allah) 2. সভ্যতার অসংগতি তুলে ধরার চেষ্ঠা করি ।\n

স্বপ্নবাজ তরী

প্রতিনিয়ত সৎ থাকার চেষ্টার যুদ্ধে লিপ্ত একসৈনিক

স্বপ্নবাজ তরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

গোয়েন্দা খালিদের প্রথম কেসঃ মোবাইল চোর [১ম পর্র ]

১৭ ই জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ১১:৫৮


আমি ইফতেখার। সবাই আদর করে ইফতি ডাকে। গতবছর ভার্সিটিতে ভর্তি হলাম। ভালো সাবজেক্ট, । আইসিটি অথাৎ ইনফরম্যশন এন্ড কমুনিকেশন টেকনোলজি। দেশে নতুন। চাহিদাও আছে আর সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার মূল হাতিয়ার। সুতারাং সাতপাঁচ না ভেবে ভর্তি হয়েছি। ভালই লাগতেছে। প্রথমে মেসে উঠি, ভার্সিটির কাছাকাছি কোটবাড়ি তে। কিন্তু গ্রাম এরিয়া বলে সব কিছু পাওয়া যায় না সহজে, সামান্য একটি ফটোকপির জন্যও শহরে আসে লাগে, পরে বিরক্ত হয়ে শহরে চলে আসি। উঠেছি স্কুলের বড় ভাইয়ের মেসে। মেস বললে ভুল হবে, তিন তলা বিশিষ্ট ফ্ল্যাট বাসা। নিচে দুইটি ফ্ল্যাট আছে, আমরা থাকি একটিতে আর পাশের ফ্ল্যাটে থাকে ছোট একটি পরিবার। পুরো বাসাতে আর কোন ব্যাচেলর নাই। আমাদের ফ্ল্যাটে চারটি রুম। প্রতি রুমে তিনজন করে, মোট বার জন থাকি। গতরাতে আমার নকিয়া ব্র্যান্ডের সি২ মোবাইল টা চুরি হয়। খুবই খারাপ লাগতেছে, যতটা মোবাইলের জন্য, তারচেয়ে বেশি এই ভেবে যে, আমাদের সাথে একটা চোর বসবাস করে। আর গতকাল বৃহস্পতিবার বলে অনেকেই বাড়িতে ছিল। ছিলাম মাত্র ৫জন। আমি, ইমরান, হাশেম ভাই, সে একটা ইনসুরেন্স কোম্পানিতে চাকরী করেন। সাদ্দাম, সে অনার্স করতেছে ইকোনমিক্সের উপর এবং অনিক, সে সামনে ইন্টারমিয়েট পরীক্ষা দিবে । এদের সবাইকে খুবই বিশ্বাস করতাম, এখন সেই বিশ্বাসটা ভেঙ্গে গেল। আমি নিশ্চিত মোবাইল টা বাসার কেউ নিয়েছে কারণ আমি রাতে যেখানে ঘুমিয়েছি সেখান থেকে জানালা দিয়ে চোরের পক্ষে মোবাইল নেয়া সম্ভব না, আর ভেলকনির সাথের দরজাটা খোলা থাকলেও, সেখান থেকেও মোবাইল চোরের পক্ষে নেয়া সম্ভব না। কারণ ভেলকনির প্রস্থ্য দুই হাতের মতো আবার সেখান থেকে আমি যেখানে ঘুমিয়েছি তার দুরত্ব হবে আরও হাত সাতেক। তারচেয়ে বড় কথা মোবাইলটা ছিল আমার মাথার পাশে মুজাহিদ ভাইয়ের টেবিলের উপর। মুজাহিদ ভাই মাস্টাসে ভর্তি হয়েছেন, আর গতকাল উনিও বাড়িতে ছিলেন বলে আমি উনার ফ্লোরিং করা বেডে শুয়েছিলাম। আর আমি যেখানে শুইতাম সেখানে ইমরান শুয়েছিল। ইমরান ভিক্টোরিয়াতে অনার্সে পড়ে। মেসের সবচেয়ে পুরাতন সদস্য মহসিন ভাই, উনি গত কাল ছিল না। কারন প্রতি বৃহস্পতিবার উনি বাড়িতে যান এবং আসেন শুক্রবার। এটা উনার সাপ্তাহিক রুটিন। উনি একটা কাপড়ের দোকানে চাকরী করেন। গতকালই আমি উনাকে বিষয়টা জানাই। উনি শনিবার রাতে ব্যপারটা নিয়ে বসবেন বলেছেন, আর বলছে মেসের অন্য সদস্য যারা বাড়িতে গিয়েছে তাদেরকে জানাতে এবং শনিবার যাতে সবাই রাতে বাসায় থাকে তা বলতে। এখন বসে বসে সবাইকে আমি কল দিচ্ছি। সবাইকে কল দেয়া শেষ, বাকী আছে শুধু খালিদ ভাই। খালিদ ভাই মেসের নতুন সদস্য। উনার সাথে এখনও ঠিকভাবে পরিচয় হয়নি আমার। শুনেছি মাস্টার্সে পড়ে আর সাথে সাথে একটা চাকরীও করে। প্রচন্ড ব্যক্তিত্ব সম্পূর্ণ একজন মানুষ। সুঠাম দেহ, গায়ের রং উজ্জল শ্যমল, জিম করার কারনে পেশী গুলোও দেখতে সুন্দর, প্রশস্ত কপাল, ঘন কালো চুল, চুলে জেল ব্যবহার করে, মাথায় সীতি কাটেন, এতে চুল গুলো নড়াচড়া করে না। মুখে হালকা খোঁচাখোঁচা দাঁড়ি আছে, যা তার ব্যক্তিত্ব কে অারো সুন্দর করে ফুটিয়ে তুলেছে । টিশার্ট পড়তে ভালোবাসেন তবে কাতুয়াও পড়েন। কাতুয়ার কলার শার্টের মতো এবং বুকের উপর বুকপকেট ও কিন্তু নিচের দিকটা পাঞ্জাবীর মতো গোল হলেও সাইট দুইটা শার্টের মতো কাটা।আর কাতুয়ার হাতা দুইটা, না পাঞ্জাবী, না শার্টের। যেন এক অদ্ভুদ সুন্দর ডিজাইন। সবচেয়ে সুন্দর হলো উনার চোখ দুইটা, শিকারী বিড়ালের মতো। খুবই মিশুক প্রকৃতির যদিও আমি এখনও মিশতে পারি নি। কারনটা ঐ ব্যক্তিত্ব আর বয়সের ফারাকের জন্যই। উনি আমার চেয়ে ৬ বছরের বড় হবে। অবশেষে সাতপাঁচ না ভেবে কল দিলাম, না কল রিসিভ করলো না। দ্বিতীয় বার আর কল দিলাম না। পরে মহসিন ভাই কে কলদিয়ে বলেছি যেন তিনি খালিদ ভাইকে বলে। পরেরদিন শনিবার রাত, সবাই আমাদের রুমে বসেছে। মহসিন ভাই, মুজাহিদ ভাই, খালিদ ভাই চেয়ারে বসেছে, আর আমরা বাকী সবাই নিচে ফ্লোরিং করা বেডের উপর বসলাম। প্রথমে মহসিন ভাই কথা শুরু করলেন, তিনি কিছু উপদেশ ও কঠোর কিছু কথা সবার উদ্দেশ্যে বলার পর, প্রথমে আমাকে রাতের পুরো ঘটনা খুলে বলার জন্য বললেন।
-- সেইদিন রাতে আমি ১২টার দিকে ঘুমাতে যাই। মুজাহিদ ভাই না থাকার কারণে আমি মুজাহিদ ভাইয়ের বেডে ঘুমাই। আর আমার বেডে এমরান ঘুমায়। শুয়ে শুয়ে গেইমস খেলার কারণে চার্জ শেষ পর্যায়ে হলে আমি মোবাইল টা টেবিলের উপর চার্জ দিয়ে ঘুমিয়ে পড়ি। মধ্যরাতে ঘুম ভাঙ্গে আমার। আমার একটা অভ্যাস হলো ঘুম ভাঙ্গলেই মোবাইলে সময় দেখি। তখন দেখি রাত ৪টা ১৭ মিনিট। তারপর আবার ঘুমিয়ে পড়ি এবং ঘুম ভাঙ্গে ৭টার দিকে, তখন মোবাইল খুজতে গিয়ে দেখি মোবাইল টেবিলের উপর নাই। তখন আমি ভাবি মোবাইলটা হয়তো টেবিল থেকে নিচে পড়ে গিয়েছে আর নয়তো লেপতোশকের কোথাও পড়ে আছে। তাই আমি ভাবলাম পড়ে খুজবো। এইভেবে আমি আবার ঘুমিয়ে পড়ি এবং ঘুম ভাঙ্গে ১০টার দিকে। তখন মোবাইল খোজ আর পাই নি। বললাম আমি।
খালিদ ভাই আমাকে তখন জিজ্ঞেস করলো, "তুমি যখন ৪টা ১৭ মিনিটে মোবাইলে সময় দেখে আবার কি তুমি মোবাইলটা টেবিল উপর রেখেছিলে?
----- আমি ঠিক বলতে পারবো না, ঘুমের ঘোরে কি করছি ঠিক মনে নেই।
------- দ্বিতীয় বার ঘুম ভাঙ্গার পর , তুমি কিভাবে বুঝলে যে তখন ৭টা বাজে?
------- আমি যখন মোবাইল খুজতে ছিলাম তখন দেখে দরজা টা হালকা খোলা, আর মাঝের রুমের লাইটও অন করা ছিল ফলে দেয়াল ঘড়িতে আমি সময়টা দেখি।
এরপর মহসিন ভাই এমরানকে ঘটনা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে। এমরান বলতে শুরু করলো ,"সোহাগ যখন শুয়ে শুয়ে গেমস খেলতেছিল, তখন আমি মশারী টানিয়ে শুয়ে পড়ি। এরপর ১০টার দিকে সোহাগই আমাকে ঘুমথেকে জাগায়।"
---- রাতে কি তুমি কোন আওয়াজ শুনতে পাও?? খালিদ ভাই জিজ্ঞেস করে এমরানকে।
---- ও আমার একটু ভুল হয়, আসলে ভোরের দিকে অনিক রুমে ঢুকার সময়ে আমার পায়ের পা পড়ে, তখন আমার ঘুম ভেঙ্গে যায়।

মহসিন ভাই অনিকে জিজ্ঞেস করলে অনিকও তা স্বীকার করে এবং বলে “আমি আসলে ভেলকনি থেকে আমার কাপড় গুলো আনি।“ এরপর সাদ্দামকে জিজ্ঞেস করলে, সাদ্দাম বলে “আমি রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়ি, রাতে আমার ঘুম ভাঙ্গেনি। সকাল ৮ বাজে আমি ইকোনোমিক্স প্রাইভেট পড়তে বাসা থেকে বের হই। আসি ১২টা বাজে। তারপর ঘটনা শুনতে পাই।"
মহসিন ভাই, তখন হাশেম ভাইকে জিজ্ঞেস করে রাতের ঘটনা সম্পর্কে,
---- যেহেতু পরেদিন শুক্রবার ছিল, আমার অফিস বন্ধ। তাই রাতে ঘুমাতে আমার দেরি হয়। আমি ঘুমাতে যখন চাই তখন রাত ৪টা বেজে যায়। এরপর ইফতিই আমার ঘুম ভাঙ্গায়।
---- রাতে যেহেতু আপনিই সবার শেষে ঘুমান, তখন কি মাঝের রুমের লাইট অন করা ছিল?? খালিদ ভাই জিজ্ঞেস করে।
--- আমি নিজে লাইট বন্ধ করি। ঘুমাতে যাই তবে এর কিছুক্ষন পর মাঝের ওয়াশ রুমের দরজা খোলার আওয়াজ শুনতে পাই। তবে কে খুলেছে তা বলতে পারবো না।
"অনিক, তুমি কি ওয়াশ রুমে গিয়েছিলে?" মুজাহিদ জিজ্ঞেস করে। "জ্বী আমি ফজর নামাজ পড়ার জন্য উঠেছিলাম তখন, আর লাইট বন্ধ করতে ভুলে যাই। আমি নামাজ পড়ে আবার ঘুমিয়ে পড়ি এবং উঠে তখন কাপড় আনতে যাই। "
"মোবাইলের কথা কখন জানতে পারো?" খালিদ ভাই অনিককে প্রশ্ন করে।
--- আমি যখন প্রাইভেট পড়তে বের হবো, তখন ইফতি ভাই বলে।
-- - সামনের দরজাও খোলা ছিল, মোবাইলটা যদি টেবিলের উপর থাকে তবে যে কেউ সামনের দরজা দিয়ে ঢুকেও মোবাইল টা নিয়ে চলে যেতে পারে। আর তাছাড়া সকালে খালা আমরা ঘুমে থাকতেই রান্না করে চলে যায়। " বললেন এমরান।
--- "অারে আমি যখন কাপড় আনতে ভেলকনির দরজাও খোলা দেখি আর ইফতি ভাই বলছে উনি নাকি দরজা লাগিয়ে ঘুমিয়েছে। " বললো অনিক।
-- "আসলে আমি রাতে ভুত এফএম শুনি। তাই ভয়ে দরজা লাগিয়ে ঘুমাই।" আমি বললাম।
মহসিন ভাইকে সম্বোধন করে অনিক বলে, " আরে আমাদের বাসায় এর আগে হাসেম ভাইয়ের মোবাইল চুরি হয় সেটা ত চুম্বক ব্যবহার করে।"
মহসিন ভাই হ্যাঁ সূচক মাথা নেড়ে বলে, "আরে এখনকার চোরেরা স্মার্ট। লাঠির আগাতে শক্ত করে চুম্বকটি বেঁধে জানালার ভেতর দিয়ে রুমের ভেতর চুম্বকের মাধ্যমে মোবাইল চুরি করে। হাসেমের মোবাইল টাও ঔভাবে নিয়েছিল।"
খালিদ ভাই এতক্ষন মাথা নিচু করে চুপ ছিলেন। মাথাটা হালকা উঠিয়ে মহসিন ভাইকে উদ্দেশ্য বললেন, ভাই আপনি যদি অনুমতি দেন তবে আমাকে দুইদিন সময় দেন, ইনশাল্লাহ আমি একটু চেষ্টা করে দেখি সম্যসার রহস্য উদঘাটন করতে পারি কিনা? মহসিন ভাই কিছুক্ষন খালিদ ভাইয়ের দিক তাকিয়ে থেকে কি যেন পর্যবেক্ষণ করলেন তারপর সবার উদ্দেশ্য বললো, " তোমরা কি বলো " প্রথমে সবাই একটু হতবাক হলো, আসলে কেউ এই ধরনের কোন কিছুর জন্য প্রস্তুত ছিল না। সবাই অনেকটা কৌতুহল বসতই রাজি হলো। "তবে আমার একটা শর্ত আছে, যারা ঐরাতে বাসাতে ছিল এবং যারা ছিল না সবাই আমাকে সহযোগিতা করতে হবো কোন রকম প্রশ্ন ছাড়া। রাজি থাকলে বলেন আর না হয় আমি এই কাজে নাই ?" একটু দৃৃঢ়তার সাথেই বললেন যেন একজন প্রফেশনাল গোয়েন্দা। সবাই মুখ চাওয়া চাই করে, আবার রাজি হলো। এর পর সবাই যার যার রুমে চলে গেল। শুধু খালিদ ভাই থাকলো। আর আমাকে বললো কাল বাসার পিছনে যাওয়া হবে। আমি যেন রেডি থাকি। আর দুই দিন যেন হাতে কোন কাজ না রাখি কারণ দুই দিন উনাকে সঙ্গ দিতে হবে। বলে খালিদ ভাইও চলে গেলেন।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.