![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
প্রতিনিয়ত সৎ থাকার চেষ্টার যুদ্ধে লিপ্ত একসৈনিক
গোয়েন্দা খালিদের প্রথম কেসঃ মোবাইল চোর ১ম পর্র
পরেরদিন সকাল১১টায় ভার্সিটিতে আজ ক্লাস ছিল না বলে, কম্পিউটারে মুভি দেখতে ছিলাম। খালিদ ভাই একটা সিগারেট ধরাতে ধরাতে, আমাকে বললো, "ইফতি চলো বাসার পিছনে যাবো"। আমি কোন কথা না বলে, ট্রিশার্ট পড়ে খালিদ ভাইকে অনুসরণ করে বাসার পিছনে গেলাম । খালিদ ভাই কিছুক্ষন এদিক ঐদিক চোখ বুলাতে লাগলেন। তিনটি বাসার কেন্দ্রবিন্দু বলে জায়গাটা প্রচুর ময়লা আবর্জনায় পূর্ন। একটি চুম্বক ছাড়া খালিদ ভাই কিছুই পেল না। চুম্বকটির দিকে তাকিয়ে একটু মুচকি হেসে বলল, এইটিই তাহলে সেই মহাযন্ত্র চোরের।" আমি কিছুটা হতাশ কন্ঠে বলি, " তবে কি মহসিন ভাইয়ের কথাই সত্যি?"
-- আরে এত তাড়াতাড়ি হতাশ হলে কি চলবে রে ইফতি, যেখানে দেখিবে ছাই উড়াই দেখ তাই । এইটুকু বলে গুনগুন করে একটা গান ধরে,"সোনা বন্ধু তুই আমারে........।" বাসায় আসার পর খালিদ ভাই একএক করে বাসার সবার ড্রয়ার, কাপড় রাখার বক্স, খাটের তল তলাশী করেন। সাথে আমি ছিলাম তেমন কিছুই উনি পেল না। খালিদ ভাই কিছুটা হতাশই হলো মনে হয়। একটা চেয়ারে বসে বলল
-- ইফতি?
-- জ্বী।
-- অনিক কোন কলেজে পড়ে?
-- ইবনে তাইমিয়া
-- হুম।
কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল, "আচ্ছা এমরানের রুমে একটা রেডিও দেখলাম। ওটা কি চলে?"
-- না। ওটা অনেক আগে থেকেই নষ্ট। কেন?
-- এমনিতে। বিকালে বের হবো রেডি থেকো।
দুপুরে খাবার খেয়ে ঘুমিয়েছিলাম। খালিদ ভাই এসে, বিকালে ঘুম থেকে উঠিয়ে বলে " চলো চা পান করবো উঠো। " খুবই বিরক্ত লেগেছিল কিন্তু বড় ভাই আর তাছাড়া তিনি আমার মোবাইলের রহস্য উদগাটনরে জন্য স্বেচ্ছাশ্রম দিতেছে তাই সব বিরক্ত পেটে রেখে মুখে একটা হাসির ভাব ফুটিয়ে বললাম " জ্বী ভাই রেড়ি হচ্ছি" বলে ঊঠে বাথরুমে গেলাম। শহরের মেইন রোড়ের পাশেই একটা হোটেল আছে, মোটামুটি ভালো মানের খাবার দাবার পাওয়া যায়। আমরা হোটেলে ঢুকে চায়ের অর্ডার দিলাম। চা চুমুক দিতে দিতে আমি খালিদ ভাইকে জিজ্ঞেস করলাম " কিছু কি অনুমান করতে পেরেছেন, কে চুরি করতে পারে? " "অনুমান করলে কি হবে,? তবে কিছুটা নিশ্চিতই বলতে পারো " কিছুক্ষণ চুপ থেকে খালিদ ভাই জিজ্ঞেস করলেন " অনিক আর এমরানের মধ্যে কি কোন কিছু নিয়ে কখনও মতের অমিল ছিল? " আমি কিছুটা অবাকই হলাম। আসলে অনিক আর এমরান দুইজনই আগে একই রুমে ছিল পরে প্রেম সংক্রান্ত ব্যপারে একবার ঝামেলা হয়েছিল। আমাদের বাসার তিন তলায় একটি মেয়ে থাকতো। তারা দুই জনই ঐ মেয়েকে পছন্দ করতো। তবে শুনেছি মেয়েটি নাকি এমরানকে পছন্দ করতো এবং আরও কানাঘুষা হয় অনিককে নাকি মেয়েটি অপমানও করে। তবে মেয়েরা তো অনেক আগেই বাসা ছেড়ে চলে যায়। মেয়েটির বিয়েও নাকি হয়ে যায়। আমি খালিদ ভাইকে ঘটনাটি বলি। উনি কিছুক্ষন চুপ থেকে বল " তবে এখন ঊঠা যাক "। হোটেল থেকে বের হয় খালিদ ভাই বললেন, "ইফতি তুমি একটু দাড়াও আমি আসছি " খালিদ ভাই রোড় ক্রস করে নতুন একটি বিল্ডিং করতেছে ঐটার নিচ তলায় কয়েকজন যুবক বা কিশোর বয়সের ছেলে দাড়িয়ে ছিল, আবছা অন্ধকারের জন্য বুঝা যাচ্ছে না। তাদের দিকে এগিয়ে গেল। খালিদ ভাই কে দেখে একজন এগিয়ে এসে হ্যান্ডশেক করল। এখন কিছুটা বুঝা যাচ্ছে, কিশোর বয়সের একটা ছেলে। কিছুক্ষন কথা বলে খালিদ ভাই আমার কাছে আসে এবং বলল, " তুমি বাসার দিকে যাও আমার আরেকটু কাজ কাজে।"
বাসায় এসে দেখি এমরানের রুমে উঁকি দিয়ে দেখি ওর হাতে নতুন একটি মোবাইল সেট। মেজাজ টা কিছুটা বিগড়ে গেল তবুও নিজেকে শান্ত করে হাসি মুখে জিজ্ঞেস করলাম, " কত নিল? "
-- পাঁচ হাজার। এমরান কিছুটা বিব্রতবোধ করল।
মনে মনে গালি দিতে দিতে আমার রুমে আসলাম। মুজাহিদ ভাইও দেখি রুমে। উনাকে ব্যপারটা বললাম। উনি বলল, "তুই খালিদ ভাই ও মহসিন ভাইকে বল।"
আমি খালিদ ভাইকে ফোনে ব্যপারটা বললাম।
-- শুনছি, সাদ্দাম নাকি বাড়ি চলে গেছে। বলল মুজাহিদ ভাই
-- কি বলেন। শালা সবগুলো চোর। আরে তুই আমায় বলে দেখতি তোর টাকার দরকার?
-- আরে কোন প্রয়োজনেও ত যেতে পারে। ও ত এমনিতেই সপ্তাহে কয়েকবারই বাড়ি যায়।
মুখ দিয়ে যেন গালিগালাজ ছাড়া আর কোন ভালো কথাই বের হচ্ছে না। আমি চুপ করে ওয়াশ রুমে প্রবেশ করি। মেজাজটা আরো বিগড়ে গেছে। যে সাদ্দামকে জড়িয়ে ধরে আমি বহু রাত ঘুমাইছি। শেষ পর্যন্ত সেও।
রাত দশটা। আমি আমার রুমে পড়ছি এমন সময়ে এমরান এসে বলল, মহসিন ভাই আমাকে ডাকে। আমি গায়ে গামছা জড়িয়ে উনার রুমে প্রবেশ করার পর দেখি সেখানে আগে থেকেই খালিদ ভাই, মুজাহিদ ভাই, এবং হাসেম ভাইও রয়েছে। মহসিন ভাই আমার দিকে একটা মোবাইল এগিয়ে দিয়ে বলল, দেখ ত সব ঠিক আছে কিনা?" আমি মোবাইলটা হাতে নিয়ে পুলকিত বোধ করলাম কারণ এটা আমারই হারানো মোবাইল। মোবাইলটা ওপেন করে দেখি সবই ঠিক ঠাক আছে শুধু কন্ট্রাক নম্বার গুলো নাই। শেষ পর্যন্ত মোবাইল টা পাওয়া গেছে তাতেই আমি আনন্দিত।
-- কে চুরি করছে? প্রশ্নটা করে আমি সবার দিকে জিজ্ঞাসু চোখে সবার দিকে তাকাই। কিন্তু দেখি সবাই একে অন্যের দিকে চাওয়া চাওয়ি করতে থাকে।
-- চুরিটা বাসার লোকই করেছে তবে কে করছে সেটা গোপন থাকবে। কারণ চোর কে জানাজানি হয়ে গেলে দেখা যাবে সবাই তার প্রতি ভেতরে ভেতরে এক ধরনের ঘৃণা জমাতে থাকবে। তখন দেখা যাবে ছোট খাটো ব্যপার নিয়ে সবাই তার দিকে সন্দেহের আঙুল তুলবে। তাই আমরা সবাই সিদ্ধান্ত নিই চোরের পরিচয় গোপন থাকবে। বলল মহসিন ভাই।
তারপরও আমি যখন জেদ চেপে বসি চোরের নাম জানার তখন খালিদ ভাই বলে উঠে, " সেটা তুই পরে জানিস। আগে একটা কাজ কর সবাইকে ঐ প্যাকেট থেকে একটা করে মিষ্টি দিয়ে আয়। "
হাসেম ভাই বলল, " মোবাইল উপলক্ষ্যে নাকি? "
--- হুম। অনেকটা ঐ রকম। আসলে সারা জীবন গোয়েন্দা বই পড়েছি আর আজ প্রথম একটা কেস সলভ করলাম। এটা আমার পক্ষ থেকে। বলল খালিদ বলল।
সারারাত আমার ঘুম হয় নি। কে আমার মোবাইল চুরি করল সেটা আমাকে জানতেই হবে, এমন একটা প্রমিজনেস মনের ভেতর শিকড় গাড়ে।
পরেরদিন আমি খালিদ ভাইকে চোর কে জানতে চাইলে উনি বিষয়টি এড়িয়ে যায়।
কিছুদিন পর দেখি অনিকের আম্মু এসে অনিককে মেস থেকে নিয়ে হোস্টেলে দিয়ে দেয়। তখন সবাই ব্যপারটা ধরে পেলে অনিকই চোর। কিন্তু সবার মনেই খটকা লাগে। সে না হয় চুরি করল কিন্তু সেটা জানলো কিভাবে আর মোবাইলই পেল কিভাবে?
পরের দিন শুক্রবার আমি নিজেই খালিদ ভাইকে বিকেলে চায়ের অফার দিই, তিনি মুচকি হেসে বলল,"আগ্রহঃ জলকতৎ মনহঁ।"
-- ভাই বুজিনি।
উনি হাসিটাকে একটু মলিন করে বলল, " চা প্রাণ ত করাই যায় তবে আমি তাতে মুখ খুলিব না কিন্তু। "
-- ও বুঝে পেলছেন। তবে ত ভালই। তা হলে বলে পেলুন। চায়ের সঙ্গে তখন টাও পাবেন।
-- ওকে আসামি যখন এখন আর বাসায় নেই বলে সেটা তুমি জানতেই পারো।
উনি বলতে শুরু করেন,“আসলে তোমার কাছ থেকে পুরো ঘটনা শুনার পর আমি নিশ্চিত ছিলাম চোর বাসাতেই আছে কিন্তু কে চোর সেটা তখনও বুঝতে পারি নি। প্রথমত আমি যে কাজটি করি সেটা হলো, হাসেম ভাইকে সন্দেহের তালিকা থেকে বাদ দিই কারণ অফিসের দুর্নীতিখোর লোকটি সামান্য মোবাইল চুরি করে হাত নষ্ট করবে না। বাকী থাকে অনিক, এমরান ও সাদ্দাম। প্রত্যেকেরই টাকার দরকার। প্রথমত সাদ্দাম সে খেলা ধূলা নিয়ে ব্যস্ত থাকে। বন্ধু বান্ধবের অভাব নেই। টাকার প্রয়োজন রয়েছে। দ্বিতীয়ত এমরান। প্রেমিক পুরুষ হিসেবে তার যথেষ্ট সুখ্যাতি রয়েছে। ঘন্টার পর ঘন্টা মশার কামড় খেয়েও মোবাইলে কথা বলার অভ্যাস। টিউশনি করার পরও মহসিন ভাই থেকে টাকা ধার করার অভ্যাস আছে। সেও চুরি করতে পারে। বাকী থাকে অনিক। সে কলেজে পড়ে। ফলে হিসেবের বাহিরে সে ফ্যামিলি থেকে বাড়তি টাকা পায় না। তার ওপর সে খরুচে। ফ্যাশনবল, নতুন নতুন টিশার্ট ও দামী রেস্টুরেন্টে বন্ধুদের সাথে খাওয়া দাওয়া করা ছেলে। প্রাইভেটের নাম করে ফ্যামিলি থেকে টাকা আনার নজির রয়েছে। তার ওপর ধারের অভ্যাস। তাই এই তিনজনের মধ্যে একজন যে চোর তা নিশ্চিত ছিলাম তারওপর সবার সমান সমান সুযোগও ছিল মোবাইল টা চুরি করার। কিন্তু কে চোর সেটা বের করতে হবে।
একটু থেমে আমার দিকে তাকিয়ে খালিদ ভাই বলল, তোমার কি খেয়াল আছে, অনিক চুম্বক দিয়ে মোবাইল চুরি হয়েছে তার স্বপক্ষে যুক্তি দেখাতে?
আমি বললাম, হুম।
-- একেই বলে নিজের খাদে নিজে পড়া, আমি যখন বাহিরে গিয়ে চুম্বক পাই। আরে একটু ভালো করে চিন্তা করে দেখ, চোর কি কারণে তার চুম্বকটি প্রমাণ স্বরুপ ফেলে যাবে। বরং যাতে সবাই বুঝে চুরি বাহিরের কেউ করেছে তার প্রমানস্বরুপ একটা চুম্বক পেলে সেটা কি প্রমাণকে আরো বাস্তবসম্মত করে না? তখনই অনেকটা পরিষ্কার কিন্তু চুম্বকটি যে বাসার সেটা জানার জন্যই বাসা চেক করা এবং পেলামও। ভাঙা রেডিওর সব থাকলেও তার ভেতরের ম্যাগনেট টা ছিল না। কিন্তু রেডিও টা এমরানের। সন্দেহের তীর তখন এমরানের দিকে। একটুপর যখন অনিকের রুম চেক করি তখন খুঁজে পাই, এইচএসসি পরীক্ষার ফর্ম ফিল আপ বাবদ টাকার রশিদ তবে সেটা বিলম্ব ফি সহ। গুরুত্বপূর্ণ ছিল রশিদের তারিখ ছিল, ৫-ই জানুয়ারি যেদিন তোমার মোবাইল হারায়।আর তোমার কাছ থেকে যখন তাদের দ্বন্দেরে কথা শুনি তখন মনে হয়েছে এটা একটা“এক ঢিলে দুই পাখি মারার মতো” এক.মোবাইল চুরি,২প্রতিশোধ নেয়া।অনিক ভাবছিল যদি বুঝ্ওে ফেলে চুরিবাসার কেউ করেছে তবে যেন সন্দেহের তীর এমরানরে দিকেই যায়। মহসিন ভাইয়ের মাধ্যমে অনিকের আম্মুকে কল দিয়ে জানতে পারলাম অনিককে ফর্মফিল আপের টাকা গত মাসে দেয়া হয়েছিল। তখনই নিশ্চিত ছিলাম চোর অনিকই। কিন্তু প্রমাণ কই?
-- তারপর কি করলেন?
---ঐদিন রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়ে যার সাথে হঠাৎ করে দেখা সে মূলত অনিকের বন্ধু রশিদ । তার কাছ থেকে জানতে পারি অনিক কিছুদিন আগে তার কাছে টাকা ধার চেয়েছে কিন্তু তার কাছে টাকা ছিল না তাই দিতে পারে নি। তুমি চলে আসার পর আমি আবার তার সাথে কথা বলি এবং পুরো ব্যপারটা খুলে বলি সে তখন তার এক বন্ধুকে কল করে জানতে অনিক সফিকের কাছে একটা মোবাইল জমা রেখে ২০০০ টাকা ধার নেয়। এরপর নিজ পকেট থেকে ২০০০ টাকা সফিক কে দিয়ে মোবাইল টা নিয়ে আসি।
-- ধন্যবাদ। কিন্তু সে ত এখন বাসা থেকে চলে গেছে আপনার টাকার কি হল।
-- ও, পরে বাসায় এসে মহসিন ভাই সহ সিদ্ধান্ত নিয়ে তার আম্মুকে সব কিছু জানাই। ভদ্রমহিলা ভালোই। উনি ছেলের কর্মকান্ডের জন্য প্রচন্ড লজ্জিতবোধ করল এবং বলল ব্যপারটা যাতে কেউ না জানে। উনি এসে আমার টাকা দিবে সাথে অনিককেও মেস থেকে নিয়ে যাবে।
-- হুম। ভদ্র মহিলার সাথে আমার কয়েকবার কথা বলার সুযোগ হয়েছে। যথেষ্ট ভালো মনের একজন মানুষ। কিন্তু ছেলেটা! আচ্ছা তাহলে ঐ কথাই রইল। বিকালে চা পান করছেন।
-- শুধু কি চা?
-- না, শুধু চা হলে ভারী অন্যায় হবে। আপনি আমার মোবাইল উদ্ধার করে দিলেন। চায়ের সাথে অন্য কিছু থাকবে এটা আপনি নিশ্চিত থাকতে পারেন।
"ওকে ঐ কথাই রইল।" বলে খালিদ ভাই কাঁথা মুড়ে আবার শুয়ে পড়ে। আমি অগত্যা নিজের রুমের দিকে পা বাড়ালাম।
২০ শে জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ১০:৩৯
স্বপ্নবাজ তরী বলেছেন: কষ্ট করে পড়ার জন্য ধন্যবাদ
©somewhere in net ltd.
১|
১৯ শে জানুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ২:৩১
তৌফিক বলেছেন: সাবলীল লেখা। ভাল লাগলো।