অসম্ভব ক্ষমতাধর একটা যন্ত্র

০৯ ই জুলাই, ২০১৫ দুপুর ১:০০

শীতের সকাল, কুয়াশা ঠেলে সবে রোদ উঁকি দিচ্ছে। যথারীতি অফিসে যাবার জন্য রুপম, সোহোম, রাহুল আর অদিত বেড়িয়ে পড়েছে। বাস ধরতে হবে, না হয় অফিসের দেরী হয়ে যাবে। ধুপ ধাপ করে, গোটা কয়েক মানুষের সাথে প্রতিযোগীতা করে, মাত্র ইস্ত্রী করা জামাটা কুঁচকে গেল, মাত্র রঙ করা জুতাটা কেউ একজন মাড়িয়ে দিয়েছে। উফ কত ঝক্কি ঝামেলা পোহানোর পর যখন বাসটা পায় তখন মনেহয় না জীবনটা খারাপ না।
বাসে উঠা বাকি আর সবার কানে মোবাইল হেডফোনটা গোঁজা বাকি। একটা গান ছেড়ে দিয়েই শুরু হয়ে যায় ফেইসবুকিং বা অনলাইন পেপার পড়া। কিন্তু জানতেও পারেনা পাশের সিটে বসে আছে তার অনেক দিনের স্মৃতিজড়িত বন্ধুটি, যার সাথে জীবনের সবচেয়ে সুন্দর সময়গুলো কেটেছে। আজ সময়ের প্রয়োজনে পাশের সিটে বসে থেকেও কি অদ্ভুতভাবে এড়িয়ে যাচ্ছে একে অন্যকে। একই বাসে চার বন্ধু কিন্তু প্রযুক্তি বানিয়ে দিয়েছে হাজার মাইল দূর। কি অদ্ভুত এই প্রযুক্তির খেলা। ঘন্টার পর ঘণ্টা একই বাসে কিন্তু বলতেও পারেনা যে সেই বন্ধুগুলো সব একই সাথেই আছে। পারবে কিভাবে? সবার মাথা হেট হয়ে আছে অই ছোট্ট কিন্তু অসম্ভব ক্ষমতাধর একটা যন্ত্রে।
এই খেলা শেষ হবেনা। মাঝখান থেকে মানুষ শেষ হয়ে যাবে, শেষ হয়ে যাবে তার আবেগ, অনুভুতি, ভালোবাসা, কান্না, আনন্দ, বন্ধুত্ব। নিজের অজান্তে এই চার বন্ধুর মত আমরা অতি দ্রুত প্রচন্ড আত্মকেন্দ্রিক হয়ে পড়ছি। আমরা এমন হয়ে গেছি বিপদে পড়লে এখন আর আপন কারো কাছে পরামর্শ চাইনা আমাদের আছে গুগল। কান্না করতে ইচ্ছে হলে একটা বৃষ্টির ছবি আপলোড করে দেই ফেইসবুকে বা একটা কান্নার ইমো দিয়ে দেই। হাঁসতে ইচ্ছে হলে খুঁজে খুঁজে মিরাক্কেলের ভিডিও শেয়ার দিয়ে দেই। হায়রে মানুষ কি হয়ে যাচ্ছি আমরা। বাস থেকে নামার মুহূর্তে ধাক্কা খেয়ে তখন হয়তো চোখে পড়ে প্রিয় বন্ধুদের কিন্তু ততক্ষণে অফিসের সময় হয়ে যায়। আবার দেখা হবে বলে চলে যেতে হয় আর ঘড়ির কাঁটা ঘুড়তেই থাকে কিন্তু আর দেখা হয়না প্রচন্ড ব্যস্ত এই বন্ধু গুলোর।

৪ টি +২/-০