![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছোট ভাই,মাস্টার্সে পড়ে, আমার জেলায়ই বাড়ী। একদিন ফোন দিয়ে বললো, "ভাই, এক হাজার টাকা দিতে পারবেন? আগামী মাসে টিউশনির বেতন পেয়ে দিয়ে দিবো।"
আমি বললাম, “পারবো, এসে নিয়ে যেও”।
ছোটভাই সেদিন বিকালে বাসার কাছে এসে টাকা নিয়ে গেল। আমি সরকারী চাকরী করি, মাস শেষে বেতন একাউন্টে ক্রেডিট হতে দেখি কিন্তু পকেটে ঢুকাতে পারিনা, তার আগেই এ দেনা ,সে দেনা দিতে দিতেই শেষ। তাই কেউ টাকা চাইলে কেবল লজ্জাই দেই, টাকা দিতে পারিনা।
এবার বাসা ভাড়ার টাকাটা তখনও না দেওয়ায় দিতে পারলাম। যাহোক মাস শেষে আমি ছোটভাইয়ের আসার অপেক্ষা করতে থাকি, টাকাটার আশা করতে থাকি। কিন্তু এক সপ্তাহ চলে গেলেও ছোট ভাই এলোনা। পরের সপ্তাহেরও কয়েকদিন চলে গেল, ছোট ভাই এলোনা। অপেক্ষা করতে করতে একসময় ভুলে গেলাম টাকাটার কথা। ধরে নিলাম এমাসে হয়তো আসবেনা। পরের সপ্তাহের শেষের দিকে ছোট ভাই ফোন দিলঃ- “ভাই, কেমন আছেন?”
-জি,ভাল, তুমি!
-“ আছি মোটামুটি। ভাই, দুইটা সার্কুলার দিছে, হাতে কোন টাকা নাই, এপ্লাই করতে পারতেছি না। আপনি যদি কিছু টাকা দেন তবে সামনের মাসে আগের এক হাজার সহ এ টাকাটা দিয়ে দিব।”
বুঝলাম ছোটভাইয়ের না আসার কারণ। ছোট ভাইকে বললামঃ-
- “কত টাকা লাগবে তোমার?
-ভাই, পাঁচশ হলেই হবে।
-ঠিক আছে, এসে নিয়ে যেও।
ছোট ভাই এসে টাকা নিয়ে গেল। পরের মাসে প্রথম মাসের মতো অপেক্ষা না করলেও ছোট ভাই সপ্তাহের শুরুর দিকেই আমাকে ফোন দিলঃ
-“ভাই, আমি আপনার সাথে দেখা করতে চাই”
ধরে নিলাম সে আমার টাকা দিতে আসছে। আমি বললাম-
“কখন আসবা?”
-“আপনি যখন বলেন।”
-ঠিক আছে, তাহলে এখনই অফিসে চলে আসো।
-না ভাই, অফিসে না, আমি পান্থপথে আপনার বাসার আশেপাশে আসবো, আপনি কখন বের হতে পারবেন?
- ঠিক আছে, সন্ধা সাতটার দিকে আসো।
ছোট ভাই আসলো, একটি চায়ের দোকানে বসলাম। ছোটভাইকে বেশ বিষন্ন মনে হলো। আমি জিঙ্গেস করলামঃ
-কি ব্যাপার? কি হইছে তোমার?
“ভাই কি করুম বুঝতেছিনা। মাসে তিন চারটা চাকরীর এপ্লাই করতে হয়। গত মাসে দুইটা টিউশনি ছিল,এমাসে একটা চলে গেছে এখন একটা আছে, এক টিউশনির টাকায় না পারি চলতে, না পারি এপ্লাই করতে। আবার এপ্লাই করি, ভাইবা দেই, চাকরী হয় না। চারদিকে তো অন্ধকার দেখতাছি”
আমি চুপ করে রইলাম। আমি ছোট ভাইটির কষ্টটা বুঝতে পারি। এই সময়টা আমিও পার করেছি। পৃথিবীতে একটা ছাত্রের জীবনে সবচেয়ে কষ্টকর সময় হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় শেষ এবং চাকরী পাওয়ার পূর্বের সময়। ছাত্র জীবনে বাপ-মার কাছ থেকে টাকা আনা গেলেও এই সময় সেটা আনা সম্ভব হয়না। কিন্ত খরচ ছাত্রজীবনের চেয়ে কয়েকগুন বেড়ে যায়। অন্যান্য খরচের সাথে যোগ হয় চাকরীতে এপ্লাইয়ের খরচ, বাসা/মেস ভাড়ার খরচ। যা টিওশনি করে মেটানো একেবারে অসম্ভব।
ছেলেটি মাথা নিচু করে ছিল। হঠাৎ তার চোখে পানি দেখলাম। তার গলা ভারী হয়ে আসলো। ভারী গলায় বললোঃ-
-“ভাই ,একবার চিন্তা করি গ্রামে চলে যাই, গ্রামে গিয়ে বাসায় বসে পড়াশোনা করি আর বাড়ীর কাজ করি। কিন্তু সেখানে গেলেও অনেক কথা শুনতে হবে। বলবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেও চাকরী হয়না। বাপের ঘাড়ে বসে খায়! কি করবো ভাই একটা বুদ্ধি দেন!”
কথা গুলো বলতে বলতে সে চোখ মুছে। আমি বুদ্ধি নয়, স্বান্তনা দেই। বলি "এ সময়টা একটু কঠিন, কিছুদিন কষ্ট করো,আশাকরি ঠিক হয়ে যাবে। আর এপ্লাই করা ছেড়োনা। এপ্লাই না করলে তো সুযোগই তৈরি হবেনা, চাকরী পাবে কীভাবে?"
ছোট ভাই ভরসা পায়না। চোখে-মুখে প্রশ্ন,“পকেটে টাকা নাই, এপ্লাই করবো কীভাবে?”
আমি বলি, “তোমার যখন এপ্লাই করা লাগে আমার কাছে এসো, আমি চেষ্টা করবো।”
ছোট ভাই আশ্বস্ত হয়। চা খায়, চা খেয়ে চলে যায়। বিশ্ববিদ্যালয় পাশ করা একটা ছেলের আত্ত্বসম্মানবোধ থাকে। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে সে যেখানে কোথাও মাথা নত করেনি সেখানে পড়াশোনা শেষ করে চাকরীতে এপ্লাইয়ের টাকার জন্য হাত পাততে হচ্ছে। যত কাছের বড় ভাই ই হোক,নিজের ব্যার্থ্যতার কথা স্বীকার করে চোখে পানি আনা যে কতটা লজ্জার সে বুঝতে পারে। অসহায়ের মতো কারও কাছ থেকে টাকা নিয়ে এপ্লাই করা যন্ত্রণাটা সে নিতে পারেনি। তাই হয়তো পরে আর আমার কাছে টাকা চাইতে আসেনি। আমি কয়েকবার সার্কুলার দেখে ডেকে এনে নিজে পে-অর্ডার করে হাতে দিয়েছি। সে সেটা নিয়ে মাথা নীচু করে চলে যেত। আমি বলতামঃ
-"বিব্রত হওয়ার কিছু নেই, তুমি তো একেবারে নিচ্ছনা। ধার নিচ্ছ। চাকরী পেয়ে দিয়ে দিও।"
আমি এখানে একটা ছোটভাইয়ের কথা বললাম। আমি নিশ্চিত এদেশের অর্ধেকের বেশী বেকার যুবকের অবস্থাই এরকম। অসংখ্য বেকার ছেলে বাংলাদেশে আছে যারা চাকরীতে এপ্লাইয়ের টাকা জোগার করতে পারেনা। একবেলা না খেয়ে কিংবা দু-মাইল রাস্তা হেঁটে রিকশা ভাড়া বাঁচিয়ে পাঁচটাকা দশটাকা করে পরীক্ষার ফি জোগার করে। যখন জোগাড় হয় এপ্লাই করে, যখন হয়না ছেড়ে দেয়। এরা না পারে হাত পাততে না পারে ভিতরের যন্ত্রণার কথা কাউকে বলতে। শুধু ভিতর ভিতর পুড়ে। আত্ত্ববিশ্বাস হারায়,তারুণ্য হারায়, নিঃশেষ হয়, হতেই থাকে!!
শুনছি, সরকার চিন্তা করছে চাকরীতে এপ্লাইয়ের জন্য পরীক্ষার ফি না নেওয়ার। শুধু চিন্তা নয় এটা বাস্তবায়ন হওয়া খুবই দরকার। এটা বাস্তবায়ন হলে বেকার যুবকদের ঘাড়ে বিষ ফোঁড়া হয়ে যে যন্ত্রণাটা আছে সেটা সরে যাবে। এপ্লাই করার টাকা জোগাড় করার টেনশান বাদ দিয়ে পড়াশোনায় মন দিতে পারবে। প্রয়োজনে চাকরী হওয়ার পর দ্বিগুণ বা তিনগুণ ফি বাবদ প্রথম মাসের বেতন থেকে কেটে নেওয়া হোক, আমার বিশ্বাস সবাই সেটা হাসতে হাসতে মেনে নিবে। কিন্তু চাকরী হওয়ার আগে চাকরী ফি টা যে এদের জন্য বোঝার উপর শাকের আটি!! সেটা থেকে তাদের মুক্তি দেওয়া হোক!!
০৬ ই অক্টোবর, ২০১৫ বিকাল ৩:৩৩
সপ্নচোরা বলেছেন: সবগুলোই ইতিবাচক চিন্তা। আশাকরি বাস্তবায়ন হবে।
২| ০৬ ই অক্টোবর, ২০১৫ দুপুর ২:৪৯
শূণ্য মাত্রিক বলেছেন: ঐ পর্যায়টিতে যেতে আর মাত্র দুবছর বাকি। আল্লাহই জানেন কপালে কি আছে! !!
০৬ ই অক্টোবর, ২০১৫ বিকাল ৩:৩৩
সপ্নচোরা বলেছেন: সময়টা নিঃসন্দেহে খারাপ। পারলে আগে থেকে প্রস্তুতি নেন। অগ্রীম শুভ কামনা।
৩| ০৬ ই অক্টোবর, ২০১৫ বিকাল ৩:১৯
ভিটামিন সি বলেছেন: খুবই ভালো লিখেছেন। আর লেখার আপনার মানবিক দিকটাও ফোটে উঠেছে। ভালো লিখবেন সতত।
০৬ ই অক্টোবর, ২০১৫ বিকাল ৩:৩৩
সপ্নচোরা বলেছেন: ধন্যবাদ। ভাল থাকবেন।
৪| ০৬ ই অক্টোবর, ২০১৫ বিকাল ৩:৪৬
আজিজার বলেছেন: সরকার চিন্তা করছে চাকরীতে এপ্লাইয়ের জন্য পরীক্ষার ফি না নেওয়ার। শুধু চিন্তা নয় এটা বাস্তবায়ন হওয়া খুবই দরকার।
০৬ ই অক্টোবর, ২০১৫ বিকাল ৩:৪৮
সপ্নচোরা বলেছেন: শুধু চিন্তা নয় এটা বাস্তবায়ন হওয়া খুবই দরকার।
৫| ০৬ ই অক্টোবর, ২০১৫ বিকাল ৪:২৬
ক্রিবিণ বলেছেন: এ সময়টার খুবই নিকটে আমি... তাই, একটু আধটু উপলব্ধি করতে পারছি... আর, আত্মবিশ্বাস ও আত্মমর্যাদা হারানোর নির্মমতা অবর্ণনীয়... সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করছি...
০৬ ই অক্টোবর, ২০১৫ বিকাল ৪:২৮
সপ্নচোরা বলেছেন: সময়টা নিঃসন্দেহে খারাপ। পারলে আগে থেকে প্রস্তুতি নেন। অগ্রীম শুভ কামনা।
৬| ০৬ ই অক্টোবর, ২০১৫ রাত ৯:২৩
কথাকথিকেথিকথন বলেছেন: চমৎকার কিছু কথা বলেছেন । বেশ ভাল লেগেছে ।
০৭ ই অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ৯:৫৬
সপ্নচোরা বলেছেন: ) ধন্যবাদ আপনাকে।
©somewhere in net ltd.
১|
০৬ ই অক্টোবর, ২০১৫ দুপুর ২:২৩
রেজওয়ানা আলী তনিমা বলেছেন: খুব ভালো চিন্তাভাবনা। এই দুঃসহ সময়ের মধ্যে দিয়ে আমিও গেছি। কি বাজে লাগতো টাকা চাইতে। আবেদন অনলাইন ভিত্তিক হলে সরকারেরও খরচ কমে যাবে। এছাড়াও শুনেছি এখন থেকে নির্বাচিত হবার আগে সনদকপি চাওয়া হবেনা। সেটা হলে আরও ভালো হবে। ফটোকপি, সত্যয়ন আবার ডাক খরচ এও একটা অযথা বোঝা।