নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

Whatever you do in life, make sure it makes you happy

স্বপ্নময়

এখনো আমার মধ্যে বেঁচে আছে কিছু রং কিছু ঝরণা-নদী-বনাণী প্রান্তর। এখনো ছোট্ট শিশুর মত কিছু জিজ্ঞাসা আছে। আছে কিছু কৌতুহল কিছু বেহিসাবী ব্যবহার জর্জরিত সমস্যা, তমসায় ভরা অমাবস্যা...

স্বপ্নময় › বিস্তারিত পোস্টঃ

বৃষ্টি, সোডিয়াম আলো আর একলা পথিক

২৩ শে মে, ২০১৩ রাত ১২:২৪



পথিক যখন পথ হারায় তখন তার কি অবস্থা হয়? যদি পথিক খাঁটি না হয় তাহলে দুরবস্থা, পথিক খাঁটি হলে সে এটাকে সোভাগ্য হিসাবে ধরে নেয়। আজকে আমার অবস্থা পথিকের মতো। ঢাকা শহরে বেড়ে উঠেছি, চিনি না এমন কোন কোনা নেই; কিন্তু আজকে যখন পথ হারালাম তখন দুটা অনুভূতি হলো।



১। আমি আসলে ঢাকার সব জায়গা চিনি না!

২। মাঝে মাঝে পথ হারানো ভালো। পথ হারালে নিজেকে আসল পথিক মনে হয়! ভেতরে অদ্ভুত এক অনুভূতি হয়। সবচেয়ে মজার ব্যাপার, চারপাশে এতো মানুষজন, দোকানপাট, দালান কোঠা; কিন্তু আমি তার কিছুই চিনি না। সম্পূর্ণ এক নতুন পরিবেশ। নতুন পৃথিবী। এটা ঢাকা নাকি চট্টগ্রাম, নাকি অন্য কোথাও সেটা এখানে এসে বুঝার উপায় নাই।



প্রতি রাতে আমি সাইকেল নিয়ে বের হই। কখনো কখনো বন্ধুরা রাইডে সামিল হয় কিন্তু একা রাইড করতেই আমার ভীষন ভালো লাগে। তখন খেয়াল খুশিমত যেখানে ইচ্ছা সেখানে যেতে পারি। সাধারনত পল্লবী হয়ে মিরপুর ডিওএইচএস, তারপর সোজা রাস্তা ধরে মাটিকাটা ফ্লাইওভার পর্যন্ত যেয়ে আবার ফিরে আসি; সব মিলিয়ে সর্বোচ্চ ১৮/২০ মাইল রাস্তা। আজকে কি এক অদ্ভুত খেয়াল হলো। ভাবলাম ফ্লাইওভারের নিচের রাস্তা দিয়ে ডান দিকে মোড় নিয়ে ভাসানটেক হয়ে মিরপুর ১৪ নাম্বার যাব, তারপর ওখান থেকে ১০ নাম্বার হয়ে পল্লবী ফিরে আসবো। যে ভাবা সেই কাজ, ডানে মোড় নিয়ে ঢুকে গেলাম এক রাস্তায়। সাপের মতো আঁকাবাঁকা। পাহাড়ি রাস্তার মতো বাঁক আর বিশাল বড় বড় স্পিড ব্রেকার। ৭ নাম্বার গিয়ারে দিয়ে আমি পুরাদমে বাইক চালিয়ে যাচ্ছি। অদ্ভুত এক নেশায় মশগুল হয়ে আছি। রাস্তার কোথাও এবড়োখেবড়ো, কোথাও ভালো… কোথাও কাঁদা জল… পুরো পাহাড়ি রাস্তার আমেজ। পল্লবী থেকে একটানা ১ ঘন্টা ৩০ মিনিট বাইক চালিয়ে এক জায়গায় এসে থমকে দাঁড়ালাম। সামনে মেইন রোড। কোথায় এসেছি বুঝতে না পেরে পথচারীকে জিজ্ঞাসা করলাম। জায়গাটার নাম ধামালকোট। জীবনে প্রথম শুনলাম :p কিভাবে মিরপুর ১৪ নাম্বার যাব জিজ্ঞেস করলে উনি একদিকে হাত ইশারা করে বললেন এদিক দিয়ে একটা শর্টকাট রাস্তা আছে যেতে পারেন, রাস্তা তেমন ভালো না। আরেকটা রাস্তা আপনি যেদিক থেকে এসেছেন সেদিকে যেতে হবে! ভাবলাম যা থাকে কপালে, নতুন পথে নেমে পড়ি!



অনেক চিপাগলি, কানা গলি, বিল্ডিং এর ফাঁকফোকড় পাড়ি দিয়ে যেখানে এসে দাঁড়ালাম তার সামনের রাস্তা পুরাটা কাটা। রাস্তাটা খাল হয়ে আছে! খালের দুপাশে মানুষ সুরু পথ ধরে যাতায়াত করছে। কাঁদায় মাখিমাখি সেই সরু রাস্তায় সাইকেল চালানো সম্ভব না। ফসকে গর্তে পড়ে যাবার চান্স আছে! কি আর করা, ঘাড়ে ১৯ কেজি ওজনের প্রিন্স টরেন্টো নিয়ে আমিও মিনিট দশেক হাঁটলাম



তারপর শেষ মাথায় এসে মিরপুর ১৪ নাম্বারে যাবার রাস্তার খোঁজ পেলাম! ভাসানটেক জায়গাটা চিনি। তাই ১৪ নাম্বার আসতে বেগ পেতে হলো না। এদিকে রাজ্জাক ফোন করছে। ওর সাথে দেখা করার কথা ৯টায়। বাজে সাড়ে নয়টা। মিরপুর ১০ না গিয়ে মিরপুর ১৩ দিয়ে শর্টকাট মেরে দিলাম। পল্লবী এসে রাজ্জাককে বললাম চা খাবো। চা খেতে এসে বিপত্তি! বৃষ্টি নামতে শুরু করেছে… আমি বৃষ্টিতে ভিজার চান্স মিস করতে চাইছিলাম না। রাজ্জাককে একটা রিক্সায় উঠিয়ে আমি ঝুম বৃষ্টিতে ছুটলাম মিরপুর ডিওএইচএস এর দিকে!



যখন পৌঁছলাম তখন আকাশ ভেঙ্গে বৃষ্টি নামছে সমানে! রাস্তার দুপাশে সোডিয়াম আলো, মাঝখানে আমি, উপরে অজস্র জলরাশি ঝাঁকে ঝাঁকে আমার দিকে ছুটে আসছে! সোডিয়াম আলোর জন্য বৃষ্টি ফোঁটাকে অদ্ভুত সুন্দর লাগছিলো। আমার সাইকেল ছুটে চলছে আলোর পথ ধরে, আমার চারপাশে রাশি রাশি বৃষ্টি, দুপাশে দুহাত ছড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে বৃষ্টিকে নিজের করে নিচ্ছি আমি! ডান পাশ দিয়ে ছুটে যায় কিছু প্রাইভেট কার, মটর সাইকেল, হুক নামানো রিক্সা, কিছু কিশোর, পথচারী… সবাই যে যার মতো করে বৃষ্টি উপভোগ করছে…



কিছু দূর যাবার পর মোড়ের চটপটি দোকানগুলো পেরিয়ে ফুটপাতে কিছু জুটির দেখা পেলাম। কেউ চটপটির দোকানে আশ্রয় নিয়েছে, কেউ সিনেমার দৃশ্যের মতো আলিঙ্গন আর চুম্বনে ব্যস্ত! কেউ আবার দুজন দুজনার হাত ধরে ভিজছে… কেউ বৃষ্টিকে বরন করে নিচ্ছে একাকি… আবার কিছু পার্ক করা প্রাইভেট কার এর ভেতরে এক পলক দেখে মুখ হা হয়ে গেল! ক্যান্টিন এর সামনে সাইকেল ঘুরিয়ে ফিরে এসে সেই একই দৃশ্য দেখলাম। কিছু জুটির ঘষাঘষি দেখে মনে হলো ওদের ঠান্ডা লেগে গেছে! ঢাকা কয়েক বছরের ব্যাবধানে অনেক বদলে গেছে!



জায়গাটা পেরিয়ে আবার আমি বৃষ্টির রাজ্যে ফিরে এলাম। দুহাত দুদিকে প্রসারিত করে বৃষ্টিকে নিজের করে নিচ্ছি… অদ্ভুত এক অনুভূতি, চোখ বুঝে বৃষ্টির পতনের শব্দ শুনছি… পেছন থেকে দুটো মোটর সাইকেল এসে বললো, বস সেইরকম হইছে! :p



আমি কিছু বললাম না। হাসলাম। একজন বললো, চলেন বস রেস লাগি! কিছুদূর ওরা সাথেই ছিলো। তারপর আমাকে গুডবাই জানিয়ে ওরা ফিরে গেলে…. পলাশ বিল্ডিং এর কাছাকাছি এসে দেখলাম রাস্তার মাঝখানে প্লাষ্টিকের ডিভাইডার পড়ে আছে। সাইকেল থামিয়ে সেগুলো ঠিক করে দিলাম। বাকি রাস্তা পাড়ি দিয়ে বাসায় এসে আবিস্কার করলাম, আমার কিছু হয় নাই, কিন্তু আমার সাইকেলের সর্দিকাশি শুরু হয়ে গেছে!



অদ্ভুত এক ভালো লাগায় ভরে আছে মনটা। জীবনটা কতো দিনের…? জানি কখনোই ফিরে পাবোনা এসব দিন… কিন্তু যতোদিন বেঁচে আছি… আশা করবো এভাবে মাঝে মাঝে যেন পথ হারিয়ে যাই… পথ হারালেই যে নিজেকে পথিক মনে হয়!

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৩ শে মে, ২০১৩ সকাল ৯:২৫

ইউক্লিড রনি বলেছেন: সুন্দর লিখছেন। :-B

২| ০৬ ই জুলাই, ২০১৩ রাত ৮:০৮

তোমার গল্পের মৃত রাজকন্যা বলেছেন:

পথ হারালেই নিজেকে পথিক মনে হয়!
... হুউম !!


:)

শুভেচ্ছা!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.