নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি পৃথিবীর সন্তান।

সৈয়দ সাইফুল আলম শোভন

এই ব্লগের সকল প্রকার তথ্য কোন প্রকার অনুমতি ছাড়াই ব্যবহার করা যাবে ।

সৈয়দ সাইফুল আলম শোভন › বিস্তারিত পোস্টঃ

বুলেট শুধু জীবনটা নেয় নাই , বাকি সব নিছে। এখন স্বপ্ন একটাই, মারে তার জমিটা ফিরাই দিমু

২৫ শে মে, ২০১৩ দুপুর ১২:৩২

আমার বন্ধু রাজ হামিদ, এজাজুল হক মুকুল আর আমি মিলে বিডিআর বিদ্রোহে দু বছর পর আহত ও নিহত (বেসামরিক) বেশকিছু পরিবারের বর্তমান অবস্থার খবর সংগ্রহ করে একটি প্রতিবেদন তৈরি করি। ঐ প্রতিবেদন আমরা এমন কিছুর ব্যক্তির সন্ধান পাই যারা বিডিআর বিদ্রোহে আহত হবার পরও কোন প্রকার আর্থিক সরকারী সহযোগিতা পায়নি। কিন্তু সরকার প্রতি আহত ও নিহত পরিবারের জন্য আর্থিক ব্যবস্থার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। আমাদের উদ্দেশ্য ছিল সংবাদটি প্রকাশের পর সংশ্লিষ্ট্য কতৃপক্ষ তাদের প্রাপ্য ক্ষতিপূরণ দেওয়ার উদ্যোগ নিবে। যে পত্রিকা কোন অজানা কারণ ও তৎকালীন সময়ে পত্রিকাটির নীতিনিধারনী পর্যায়ের ব্যক্তিবর্গ এবং পত্রিকাটির নীতির জন্য সংবাদটি ফাইলবন্দি হয়ে পড়ে। সেই ফাইলবন্দি সংবাদটি আজও ফাইলবন্দি। কিন্তু এই ফাইলবন্দি সংবাদটির মাঝে একটি কিশোর আর্তনাদ এখনও আমরা তিনজন শুনতে পাই। আমরা জানি না বুলবুল বেচেঁ আছে কিনা কিংবা বুলবুল ফিরে যেতে পেরেছে কি মায়ে কোলে। বুলবুল ক্ষমা করো আমাদের।







বুলেট শুধু জীবনটা নেয় নাই , বাকি সব নিছে।

এখন স্বপ্ন একটাই, মারে তার জমিটা ফিরাই দিমু ।





হতাহতদের অনেকের ভীড়ে আড়ালেই পড়ে রইলো পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহে গুলিবিদ্ধ কিশোর বুলবুল। বুলেটের অসহ্য যন্ত্রণা এখনো সেরে না উঠলেও টাকার অভাবে চিকিৎসা বন্ধ হয়ে গেছে তার অনেক আগেই। বুলেটের তচিহ্ন শুকিয়ে গেলেও মাঝে মধ্যেই তীব্র যন্ত্রণায় সারা শরীর কুকড়ে ওঠে। ভারী কোন কাজ করতে পারে না। তাই শুধুমাত্র থাকা ও তিন বেলা খাওয়ার বিনিময়ে একটি ইলেকট্রনিক্স’র দোকানে কাজ নিয়েছে।





পান্থপথের ঈদগাহ্ মসজিদ সংলগ্ন ভাই ভাই ইলেক্টনিক্সের ওই দোকানেই দেখা হয় বুলবুলের সঙ্গে। গুলিবিদ্ধ হওয়ার দু’বছর পর কেউ তার সঙ্গে কথা বলতে এসেছে তা শুনে বিস্ময়ের ঘোর লাগে তার চোখে। ফ্যাল ফ্যাল দৃষ্টিতে কিছুণ তাকিয়ে থেকে বলে, এ্যাদ্দিন তো কেউ আমার খোঁজ লয় নাই। আপনারা আমার খোঁজ পাইলেন ক্যামনে?





কিভাবে গুলিবিদ্ধ হল জানতে চাওয়ায় বুলবুল জানায়, পিলখানা সংলগ্ন ঝিগাতলা এলাকার একটা মোটর গ্যারেজে কাজ করতো সে। গোলাগুলির শব্দ শুনে অন্যদের মতোও ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ঝিগাতলা জাপান-বাংলাদেশ ফেন্ড্রশীপ হাসপাতালের সামনে এসেছিল। এ সময় আকস্মিক একটি গুলি তার ডান রানে বিদ্ধ হয়। মুহুর্তেই রাস্তায় লুটিয়ে পড়ে সে। অতিরিক্ত রক্তরণে কিছুণের মধ্যেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। সংজ্ঞা ফিরে নিজেকে আবিস্কার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বেডে।





বুলবুলের মা মজিদা খাতুন জানান, ছেলের চিকিৎসা করাতে গিয়ে অনেক ধারকর্জ করতে হয়েছে। তারপরও যখন পারছিলাম না তখন ময়মনসিংহের একমাত্র সম্পদ ভিটাবাড়ী বিক্রি করে দিয়েছেন। সেখান থেকে যে ৫০ হাজার টাকা পেয়েছি, তা কেবল ছোট্ট একটি অপারেশন আর ওষুধ কিনতেই শেষ হয়ে গেছে। এরপর আর চিকিৎসা করাতে পারেননি।



তিনি আরো জানান, পড়ালেখা জানি না তাই ঠিকমত দৌড়াদৌড়ি করতে পারি নাই। সরকারি সহায়তা দেওয়ার কথা বলে রং-বাবু কাগজপত্র নিয়েছিলেন। কিন্তু কারো কোনো সহযোগিতা জোগাড় করে দিতে পারেননি সে। এরপর একবার রং-বাবু তাকে বলেছিলো সরকারি সহায়তা পেতে ফরম পূরণ করতে হবে, যাতে অনেক টাকা দরকার। ফরমের সেই টাকা জোগাড় করতে না পারায় পরবর্তীতে তার সঙ্গে আর যোগাযোগ করেননি।



সহায়তা পাওয়ার আশায় পায়ে ব্যান্ডিজ নিয়ে বেশ কয়েকদিন বিডিআর সদর দপ্তরের গেটেও গিয়েছিলো বুলবুল ও তার মা। কিন্তু বিডিআরের ঊর্ধ্বতন কারো সঙ্গে দেখাও করতে পারেননি ।



আর কতদিন পারা যায় মানুষের বাড়িতে ঝি’র কাজ কইরা চিকিৎসা করান। বুকে পাথর চাপা দিয়া পাষাণের মত এই ছেলেটারে আমি কাজ করতে পাঠাইছি। আমার বুকের ধন আমারে ছাইরা কতদূরে থাকে। কি খায় আমি জানি না। শুধু আল্লাহ জানে আমার বুকের ধন ছাইরা প্রতিটা রাত আমার কেমন যায়।



তিন ভাই বোনের মধ্যে বুলবুল সবার ছোট। বাবা মজিবুর রহমান থেকেও নেই। মা মজিদা খাতুন অন্যের বাড়ীতে কাজ করেন। বড় ভাই বিয়ে করে অন্যত্র থাকেন। মেঝ ভাইয়ের সাথে ঝিগাতলার একটি জির্ণশীর্ণ ঘরে ভাড়া থাকেন মা মজিদা খাতুন।

অভাবের সংসারে তাই না চাইলেও মাকে ছেড়ে ইলেকট্রনিক্স’র দোকানের ছোট্ট ওই কাজটি বেছে নিতে হয়েছে তাকে। ৩ ফুট বাই ৮ ফুট দোকান ঘরের মেঝেতে একটি কাঁথা বিছিয়েই রাত কেটে যায়। এটাই নিয়তি ধরে নিয়েছে কিশোর বুলবুল।

রাত ১১টা পর্যন্ত তেতুলতলা মাঠে বসে বুলবুলের সাথে আড্ডা দিয়েছিলাম।



কি করবে বুলবুল?

বুলবুল : ঠিকমত কাজ শিখলে ওস্তাদ কইছে মাসে মাসে বেতন দিব। তখন মা, আমি আর ভাইয়ে আবারও একসাথে থাকুম। আর পুরা কাজ শিখতে পারলে টাকা জমাইয়া মায়ে ভিটাটা তারে ফেরত আইনা দিমু। ঐ ভিটা ছাড়া তো মার আর কোন সম্পদ নাই।

গত দুই বছর যাবৎ বুলবুলে কোন খবর নেই নি ব্যস্ততার অযুহাতে। কিন্তু নিজের ভিতরে জমে থাকা অপরাধবোধটা থেকে কোনভাবেই মুক্তি পাচ্ছি না। তাই গত সপ্তাহে যাই বুলবুলের মায়ে খোঁজ নিতে ঝিগাতলার বস্তিতে। ঐখানে কোন বস্তি নেই এখন। হাউজিং কোম্পানীর নতুন সাইন বোর্ড।



আমরা জানি না আজও বুলবুল কতটুকু কাজ শিখতে পেরেছে। ওস্তাদ তার মাইনে দেয় কিনা? শুধু জানি বুলবুল তার মায়ে শেষ ভিটাটুকু ফিরিয়ে দিতে চায়। বুলবুলের মা চায় তার সন্তানকে বুকে জড়িয়ে ধরে ঘুমাতে। যে অনাকাক্ষিত বুলেট বুলবুলে মাকে ভিটাশূন্য করেছে তার দায় রাষ্ট্রের। এই রাষ্ট্র প্রতি বছর কোটি কোটি টাকা বুলেটের জন্য ব্যয় করে। কিন্তু যে বুলেট শূন্যতা তৈরি করল তা দায় রাষ্ট্রকেই শোধ করতে হবে। প্রয়োজনে এবছর এক লাখ বুলেট কম কিনতে হলেও। ফিরিয়ে দিতে হবে বুলবুলের শৈশব, মায়ের ভিটা, নিশ্চিত করতে হবে মায়ের বুকে ঘুমানোর অধিকার।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.