নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি পৃথিবীর সন্তান।

সৈয়দ সাইফুল আলম শোভন

এই ব্লগের সকল প্রকার তথ্য কোন প্রকার অনুমতি ছাড়াই ব্যবহার করা যাবে ।

সৈয়দ সাইফুল আলম শোভন › বিস্তারিত পোস্টঃ

পানির ক্রমবর্ধমান চাহিদা শুধু জোগান দেওয়ার মাধ্যমে সমাধান করতে চাইলে তবে তা হবে ব্যয়বহুল ও ক্ষণস্থায়ী।

২৫ শে জুন, ২০১৪ দুপুর ১২:৪০

বুড়িগঙ্গার পানি দূষিত, তাই শীতলক্ষ্মার পানি শোধন করি। এখন শীতলক্ষ্মার পানিও মাত্রাতিরিক্ত দূষিত। শুধু শীতলক্ষ্মার নয়, শোধনের অযোগ্য হয়ে পড়েছে তুরাগ, বালু নদীর পানিও।



এখন ছুটছি পদ্মার পানি আনতে। পদ্মা থেকে দৈনিক ৪৫ কোটি লিটার পানি সরবরাহের লক্ষ্য। এজন্য চীনা আর্থিক সহায়তায় পদ্মা (জশলদিয়া) পানি শোধনাগার নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে বাণিজ্যিক চুক্তি স্বাক্ষর করেছে ঢাকা ওয়াসা।



এছাড়া পদ্মার মুন্সীগঞ্জ-জশলদিয়া থেকে ৩৩ কিলোমিটার পাইপলাইন দিয়ে রাজধানীতে পানি সরবরাহ করা হবে। মেঘনা নদী থেকে পানি এনে খিলক্ষেত পানি শোধনাগার নির্মাণ প্রকল্পের মাধ্যমে মাধ্যমে দৈনিক অর্ধশত কোটি লিটার পানি সরবরাহ করা হবে।



পদ্মা-মেঘনা-যমুনা নদী থেকে পানি এনে রাজধানীবাসীর পানি চাহিদা পূরণ করার চেষ্টা চলছে। কিন্তু এই তিন নদী কতদিন রাজধানীর পানির চাহিদা পূরণ করতে পারবে?

আর যদি চাহিদা পূরণ করাই সম্ভব, তবে তা কতটা যৌক্তিক। কারণ এই নদীগুলো নৌ যোগাযোগ, অর্থনীতি, কৃষি, পরিবেশ প্রতিবেশ রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।



সুতরাং নদীগুলো থেকে অতিরিক্ত হারে পানি নিয়ে আসা হলে শুষ্ক মৌসুমে নৌ যোগাযোগ, অর্থনীতি, কৃষি, পরিবেশে বিরূপ প্রভাব পড়বে। পানির ক্রমবর্ধমান চাহিদা শুধু জোগান দেওয়ার মাধ্যমে সমাধান করতে চাইলে তবে তা হবে ব্যয়বহুল ও ক্ষণস্থায়ী।



এক্ষেত্রে রাজধানীবাসীর অপ্রয়োজনীয় পানির ব্যবহার ও চাহিদা নিয়ন্ত্রণ করা উচিত। শুধু কি অর্থ দিয়ে রাজধানীবাসীর পানির চাহিদা পূরণ সম্ভব? অনেকের ধারনা অথনৈতিক উন্নয়ন হলে পানির সমস্যা অনেকাংশে সমাধান করা সম্ভব।কিন্ত শুধু অর্থ বা টাকা দিয়ে পানির চাহিদা পূরণ সম্ভব নয়। ঢাকাতে এখন অসংখ্য পানি কোম্পানির বোতলজাত পানি পাওয়া যায়।



ধরুন, রাজধানীতে একমাস ওয়াসার পানি সরবারহ নেই, তাহলে ধনী লোক যাদের অথনৈতিক অবস্থা ভাল, তাদের কতভাগ লোকই বা বোতলজাত পানি দিয়ে দৈনিক প্রয়োজনীয় সকল কাজ (গোসল, রান্না বান্না, কাপড় ধোয়া, টয়লেট, ঘর পরিষ্কার, গাড়ি ধোয়া) সম্পাদন করতে পারবে।



কতজনের সেই অর্থনৈতিক সামর্থ্য আছে যে মাম কোম্পানির পানি কিনে গোসল করবে। আর ঢাকার বাইরে গ্রামে যেখানে পানির আধারগুলো (পুকুর,খাল,বিল,নদী,নালা) সক্রিয় রয়েছে, সেখানে গরীব লোক ওয়াসার পানি কিংবা টাকা ছাড়াই তার প্রয়োজনীয় পানির চাহিদা পূরণ করতে পারে।



এক্ষেত্রে পানির উৎসগুলো সংরক্ষণ এবং এর সাথে মানুষের প্রবেশাধিকার বা Access তৈরির মাধ্যমে বিনামূল্যে কিংবা স্বল্প মূল্যে পানির চাহিদা পূরণ করা সম্ভব।

এজন্য রাজধানীতে ওয়াসা ব্যবস্থাপনায় এখন প্রায় ৪০টি খাল রয়েছে, এই খালগুলো রক্ষণাবেক্ষণে ওয়াসার দৃষ্টিভঙ্গি ও পরিকল্পনায় পরিবর্তন আনতে হবে । ওয়াসা বর্তমানে খালগুলোকে শুধু বৃষ্টির পানি ও পয়ঃনিষ্কাশনের জন্য ব্যবহার করে।



কিন্তু যথাযথ ব্যবস্থাপনা করতে পারলে এসব খাল ঢাকার মানুষের দৈনন্দিন কাজের পানি চাহিদা পূরণে বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে। পুরান ঢাকায় এখনো বেশ কিছু পুকুর আছে, যেগুলোতে এখনও সেখানকার বাসিন্দারা দৈনন্দিন কাজে ব্যবহার করে। আমাদের ধানমন্ডি লেক, হাতির ঝিল, গুলশান লেক, রমনা লেকসহ শহরের মধ্যে যে পানি উৎসগুলো আছে, তা শুধু বিনোদনের জন্য না রেখে আশেপাশের মানুষের জন্যে বিভিন্নভাবে পানি ব্যবহারের সুযোগ তৈরি করে দিতে হবে।



ধানমন্ডি লেকে যদি প্রতিদিন এক হাজার মানুষ গোছল করতে পারে, তবে এই এক লেক দিয়েই হাজার হাজার লিটার পানির চাহিদা মেটাতে পারতো ওয়াশা। এজন্য শহরের মধ্যে পানির আধার পুকুর, লেক, খাল তৈরি করতে হবে। একইসাথে তা ব্যবহারে সর্ব সাধারণের জন্য উন্মুক্ত রাখতে হবে।



শুধু টাকা দিয়ে পানি কিনে নয়, পানিতে সবার প্রবেশাধিকার /Access দিয়ে পানি ব্যবহারের সুযোগ তৈরি করতে হবে। কারণ টাকা থাকলেই কেউ মাম বা অন্য কোন কোম্পানীর বোতলজাত পানি দিয়ে গোসল করে না। তেমনিভাবে পুকুর বা লেক থাকলেও জনগণের পযাপ্ত ব্যবহারের সুযোগ না থাকলে মানুষ তা ব্যবহার করবে না।

ধনী গরিবের পানি ব্যবহারে ব্যবধান ঢাকার অধিকাংশ বস্তিবাসী এক কলস (বড় ২০ লিটার) পানির দাম ৪ থেকে ৫ টাকা। সেখানে ওয়াসার আবাসিক খাতে এক হাজার লিটার বিশুদ্ধ খাবার পানির মূল্য ৭.৩০ টাকা মাত্র।





ঢাকায় সুবিধাভোগী একজন মানুষ প্রতিবার টয়লেট ফ্লাশওয়াশে যে পানি ব্যবহার করে ।বস্তির একজন মানুষ সারাদিনেও তা ব্যবহার করার সুযোগ পায় না। বস্তির একজন মানুষ যেখানে সারা দিনে ওয়াসার ১০ লিটার পানি তার খাবার বা মৌলিক প্রয়োজনে ব্যবহার করতে পারছে না। বা করলেও সেটাকে বলা হচ্ছে চুরি। সেখানে প্রতিবার টয়লেট ব্যবহারের পর একবার ফ্লাশ করেই ৫ থেকে ১০ লিটার বিশুদ্ধ খাবার পানি নষ্ট করা হচ্ছে।



আবার কেউ যদি বাথটাবে গোছল করেন, তাহলে তাকে প্রতিবারে অন্তত কয়েকশ লিটার পান নষ্ট করতে হচ্ছে। পানির বৈষম্যমূলক প্রাপ্তিতে একজন নাগরিক জীবন ধারণের নূন্যতম পানি পাচ্ছেন না।



কোনভাবে সংগ্রহ করলেও সেটাকে বলা হচ্ছে চুরি। কারণ তার টাকা দিয়ে পানি কেনার সুযোগ নেই। অন্যদিকে আরেকজন বিত্তশালী তার মৌলিক প্রয়োজনের কয়েক গুণ বা তারও বেশি পানি নষ্ট বা ব্যবহার করছেন। সরকার পানিতে ভর্তুকি দিচ্ছে, তা বিত্তশালীর জন্য প্রযোজ্য হচ্ছে।



এক্ষেত্রে অবশ্যই পানিনীতির পরিবর্তন আনতে হবে। যিনি অতিরিক্ত পানি ব্যবহার করছেন বা বিলাসী জীবন যাপনে পানি ব্যবহার করছেন, তার পানির মূল্য কখনোই ভতুর্কি মূল্যে সরবারহ করা যাবে না। নির্দিষ্ট পরিমাণ পানি গরীব বা সর্ব সাধারণের জন্য বিনামূল্যে সরবরাহ করতে হবে সরকারকে। তবে এর বেশি কেউ ব্যবহার করলে তাকে মূল্য পরিশোধ করতে হবে।



মৌলিক প্রয়োজনীয় পানি নাগরিকের কাছে পৌছে দেয়ার দায়িত্ব সরকারকেই নিতে হবে। সর্ব প্রথম সুবিধাবঞ্চিত বা গরীব মানুষের পানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।



এরপর সুবিধাভোগীদের কাছে পানি সরবরাহ করতে হবে। পানি প্রাপ্তির ক্ষেত্রে গরীবের পানি পাবার অধিকারকে পানি চুরি হিসেবে চিহিৃত না করে। এটি তার পানি প্রাপ্তি অধিকার হিসেবে চিহ্নিত করতে হবে।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.