নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি পৃথিবীর সন্তান।

সৈয়দ সাইফুল আলম শোভন

এই ব্লগের সকল প্রকার তথ্য কোন প্রকার অনুমতি ছাড়াই ব্যবহার করা যাবে ।

সৈয়দ সাইফুল আলম শোভন › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমার বন্ধু। বিদায়।

২৯ শে মার্চ, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:১৮

দুপুরের খাওয়া দাওয়ার পর ভাত ঘুমের মাঝে বাসার কলিং বেলের শব্দে ঘুম ভাঙ্গলে যতটা বিরক্ত লাগে।ততটাই বিরক্তকর আমার কন্ঠে গান।এটা আমার গান সম্পর্কে নিজের মন্তব্য। আমি গুনগুন করেও কখনো গান গাই না। নিজের কাছে ভয়ানক লাগে।

আমার এক বন্ধুর কন্ঠ অসাধারন। ময়মনসিংহের আঞ্চলিক ভাষায় খুবই দরদ দিয়ে গান গায়।তার গান শুনলে আমার মনে হয় আমি ভাত ঘুমের মাঝে আছি।কেউ আমার মাথার চুল টেনে দিচ্ছে। এই রকম একটা কোকিল কন্ঠের বন্ধু মধ্যপ্রাচ্যে চলে গেল জীবিকার জন্যে। আর যাই হোক আমি জানি জলে ভাসা এই মানুষটাকে মরুভূমির রুক্ষ বালুর সমুদ্রে মানায় না।

আমার এই বন্ধুর বিদায়ে দেশের লাভ ক্ষতির পরিমাণ কি হবে তার হিসেব জানি না। তবে আমি ক্ষতিগ্রস্ত হলাম। কারণ এই রাষ্ট্রে মাত্র একজন মানুষ ছিল যে কিনা আমাকে প্রায়ই বলত শোভন একজন টেররিস্টের চিঠিটা পড়।আমিও ২য় বার অনুরোধ করার আগে আগেই আমার বেসুর কন্ঠে সুবোধ সরকারের একজন টেররিস্টের চিঠি পড়তাম।

একটা বেসুর কন্ঠেও এই চিঠিটা কতটা নেশা তৈরি করতে পারে তা নাকি সুবোধ সরকার জানেন না। আমিও জানি না। তবে মাঝে মাঝে ভাত ঘুমের সময় আমিও পড়ি নিজের জন্য।

একজন টেররিস্টের চিঠি

প্রিয়তমাসু
আমি তিনদিন খাইনি। কেউ কোনও খাবার দিয়ে যায়নি।
কী করে দেবে? গুহার বাইরে প্রচন্ড বরফ পড়ছে।
যে কোনও দিন আমি গুলিতে মারা যাব। যে কোনও দিন
তুমি টিভির পর্দায় আমার মুখ দেখতে পাবে।আমি
গুহার ভেতর সারারাত কম্পিউটরের সামনে বসে। কতদিন
আমি বকুল ফুলের গন্ধ পাইনি। কতদিন আমি গরম রুটি
খাইনি। কতদিন আমি তোমার ঘাসে হাত দিইনি।
কালো ঘাস। আঃ! ভাবলেই চে গুয়েভারা ছুটে বেড়ায়
শরীরে। স্টালিনকে হাতের মুঠোয় ধরে বসে থাকি।
তার মুখ দিয়ে গরম বেরিয়ে আসে। আঃ, গরম।
আমার স্টালিন ভালো আছে। তোমার সাইবেরিয়া?
হা,হা,হা… এখানে কেউ আমার জন্মদিন কবে
জানে না।

আমি পড়াশুনায় ভাল ছিলাম। অধ্যাপক বাবার ছেলে।
কম্পিউটরে আমার চাইতে কেউ ভাল ছিলনা। আজ আমি
গুহায় বসে আছি।কিন্তু কেন? প্রিয়তমাসু,মাই লাভ,তুমি
এর উত্তর পাবে যদি অত্যাচারের ইতিহাস পড়ো। কত হাজার
কোটি ডলার খরচ করে ওরা গরিবকে আরও গরিব
করে চলেছে। ১১ বছরের একটি
বালককে একটি পাউরুটি কিনে দিয়ে আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম,
তোর কি হয়েছে রে? সে গোগ্রাসে পাউরুটি কামড়
দিয়ে বলেছিলঃ আমার বাবা-মাকে ওরা পুড়িয়ে
দিয়েছে,জ্যান্ত। ছেলেটা খেতে খেতে কর গুনছিল,
বাবা-মা, দুই ভাই, তিন বোন…এক,দুই,তিন,চার,পাঁচ…
হ্যাঁ, এগারো জন। ছেলেটার নাম বলব না। কে খোঁজো। আজীবন
খুঁজে যাও।

প্রিয়তমা, আমাকে আর বেশি দিন ওরা বাঁচিয়ে রাখবেনা।
তার আগেই আমি ওদের দু’দুটো ঘাঁটি উড়িয়ে দেব।
ওদেরতো পুরোপুরি উড়িয়ে দেয়া যায়না, ওরা
আবার জন্মায়, আবার গনতন্ত্র বানায়, আবার পার্লামেন্টে
যায়।আবার প্রেস মিট করে। একটা সত্যি কথা লিখি,
ওরা গনতন্ত্র দিয়ে যা করায়, আমরাও AK-47 কে,
দিয়ে তাই তাই করাই। ওদেরটা দোষ নয়, আমাদেরটা দোষ।
আমি মারা যাব। তার আগে একবার, যদি
একবার তোমাকে দেখতে পেতাম। তোমার হাত ধরতে
পারতাম।যদি একবার তোমার ভেতরে ঢুকতে পারতাম, যেভাবে
বরফ ঢোকে গুহায়,যেভাবে শিকড় ঢোকে পাথরে,যেভাবে
ভাইরাস ঢোকে কম্পিউটরে।

আজ আমি একজন টেররিস্ট। হয়তো এটাই আমার শেষ চিঠি।
বলতো,কেন আমার মত ছেলে টেররিস্ট হবে?
কেন আমি ঘর-বাড়ি ছেড়ে,মায়ের হাতের খাবার ছেড়ে,
ভাল চাকরী ছেড়ে;গুহার জীবন,জঙ্গলের জীবন,
বরফের জীবন বেছে নিলাম?

আমি মাতাল হতে পারতাম।লম্পট হতে পারতাম। একজন
মাতালকে মেনে নেয় সমাজ। একজন লম্পটকে মেনে নেয় রাষ্ট্র।
একজন মাফিয়া বিধায়ককে মেনে নেয় এসেম্বলি। কিন্তু
একজন টেররিস্টকে মেনে নেয়া যায়না।
কতদিন তোমার স্নান করা চুলের গন্ধ পাইনি।
চোখ ভরে আসে জলে। পাউরুটি খাওয়া শেষ করে
১১ বছরের ছেলেটি বলেছিল,আর আছে? আমি আর
একটা পাউরুটি কিনে দিয়ে বলেছিলাম; শোন্ তুই বড় হয়ে
কী করবি? সে বলেছিলঃ বদলা নেব।
ছেলেটার মুখ ভেসে ওঠে যেই মনে হয় আমার সামনে
অনেক অনেক কাজ। অনেকগুলো খারাপ কাজ। ভুল
বললাম,অনেক,অনেক,ভালো কাজ।

আমাকে ক্ষমা করো। মা’কে একবার দেখে এসো। বোকা মেয়েটা
আমার মা হয়ে কোনও অন্যায় করেনি।

ইতি-
কোন নাম নেই

পুনশ্চঃ আমি মরে গেলে, আমাকে তুমি ‘আকাশ’ বলে ডেকো।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৯ শে মার্চ, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৩২

আকিব হাসান জাভেদ বলেছেন: আকাশ তুমি ফিরে এসো মায়ের বুকে। বীর যুদ্ধা আকাশ ভেঙ্গে যাবে কেনো । সাহসি মাথা কখনো নত হয় না কখনো না ।

৩১ শে মার্চ, ২০১৮ রাত ১২:৫২

সৈয়দ সাইফুল আলম শোভন বলেছেন: তাই তো ভেবে আমি যোদ্ধা হতে চেয়েছি বার বার

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.