নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অমরত্বের লোভ কখনো আমাকে পায়না। মানব জীবনের নশ্বরতা নিয়েই আমার সুখ। লিখি নিজের জানার আনন্দে, তাতে কেউ যদি পড়ে সেটা অনেক বড় পাওয়া। কৃতজ্ঞতা জানানো ছাড়া আর কিছুই নেই।

শের শায়রী

হৃদয়ের কাছে বুদ্ধির বাস ভাল কথা। কিন্তু মাঝে মঝে হৃদয়ের ওপর থেকে বুদ্ধির শাসন তুলে দিতে হয়, হৃদয়কে স্বাধীন করে দিতে হয়, মুক্ত করে দিতে হয়। স্বাধীন মুক্ত হৃদয়ের ধর্মকে সব সময় বুদ্ধি দিয়ে বিচার করতে নেই।।

শের শায়রী › বিস্তারিত পোস্টঃ

কিছু ধর্ম এবং দার্শনিক ধর্মগুরু কথা

২৬ শে জানুয়ারি, ২০২০ রাত ৯:৫৬



ইদানিং বিভিন্ন ধর্ম নিয়ে আগ্রহ বাড়ছে, বিভিন্ন ধর্ম নিয়ে পড়াশুনা শুরু করছি নিজ ধর্ম সহ। আমার কাছে এই পৃথিবীর সব থেকে বড় রহস্যময় বিষয় মনে হয় ধর্ম। ধর্ম হল পারমানবিক শক্তির মত। কথা হল কে কোনভাবে ব্যাবহার করবে? কেউ কেউ পারমানবিক বোমার মত কেউ আবার বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য। ধর্ম মানুষকে অন্যায় করতে শেখায় না একটা নিয়ন্ত্রিত জীবন যাপন করতে সহায়তা করে কিন্তু সেই ধর্মই যখন কোন খারাপ মানুষের হাতে পরে সেটা হয়ে দাড়ায় মানুষ ধ্বংসের সব থেকে বড় হাতিয়ার।

খ্রিষ্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকে ভারতবর্ষে জন্মেছিলেন বুদ্ধ এবং মহাবীর ; চীনে কনফুসিয়াস এবং লাওৎসে এবং পারস্যে জরথুষ্ট্র বা জরোঅষ্টার (জরথ্রুষ্ট সম্ভবতঃ অষ্টম শতকে জন্মেছিলেন)। এবং গ্রীসের সামোস দ্বীপে জন্মেছিলেন পিথাগোরাস।



স্কুল কলেজের ছেলে মেয়েদের ধারনা পিথাগোরাস বোধ হয় খুব বড় সড় একজন অঙ্কবিদ ছিলেন যার কাজই ছিল অঙ্ক বা জ্যামিতি নিয়ে কঠিন কঠিন ভাবনা চিন্তা করা, ছোটকালে খুব জ্বালাতন দিছে এই প্রাচীন বুড়ো, তার উপপাদ্যটি ছিল “কোন একটি সমকোণী ত্রিভুজের অতিভুজের উপর অঙ্কিত বর্গক্ষেত্রের ক্ষেত্রফল ঐ ত্রিভুজের অপর দুই বাহুর উপর অঙ্কিত বর্গক্ষেত্রদ্বয়ের ক্ষেত্রফলের সমষ্টির সমান।" কিন্তু একজন দার্শনিক বা কিছুটা ধর্মগুরু হিসাবে যে পিথাগোরাসের নাম আছে তা কয়জন জানি?



সামোসের পিথাগোরাস ( খ্রিস্টপূর্ব ৫৭০– খ্রিস্টপূর্ব ৪৯৫) ছিলেন এক জন গ্রিক দার্শনিক, গণিতবিদ এবং পিথাগোরাসবাদী ভ্রাতৃত্বের জনক যার প্রকৃতি ধর্মীয় হলেও তা এমন সব নীতির উদ্ভব ঘটিয়েছিল যা পরবর্তীতে প্লেটো এবং অ্যারিস্টটলের মতো দার্শনিকদের প্রভাবিত করেছে। তিনি এজিয়ান সাগরের পূর্ব উপকূল অর্থাৎ বর্তমান তুরস্কের কাছাকাছি অবস্থিত সামোস দ্বীপে জন্মেছিলেন। ধারণা করা হয় শৈশবে জ্ঞান অন্বেষণের তাগিদে মিশর সহ বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করেছিলেন।



বর্তমানে পিথাগোরাস গণিতবিদ ও বিজ্ঞানী হিসেবে পরিচিত হলেও তার সময় বা তার মৃত্যুর ১৫০ বছর পর প্লেটো ও এরিস্টটলের সময়ও তিনি গণিত বা বিজ্ঞানের জন্য বিখ্যাত ছিল না। তখন তাঁর পরিচিত ছিল, প্রথমত মৃত্যুর পর আত্মার পরিণতি বিষয়ে বিশেষজ্ঞ যিনি ভাবতেন আত্মা অমর এবং ধারাবাহিকভাবে তার অনেকগুলো পুনর্জন্ম ঘটে, দ্বিতীয়ত ধর্মীয় আচারানুষ্ঠান বিষয়ে পণ্ডিত, তৃতীয়ত একজন ঐন্দ্রজালিক যার স্বর্ণের ঊরু আছে এবং যিনি একইসাথে দুই স্থানে থাকতে পারেন এবং চতুর্থত, একটি কঠোর জীবন ব্যবস্থা যাতে খাদ্যাভ্যাসের উপর নিষেধাজ্ঞা এবং আচারানুষ্ঠান পালন ও শক্ত আত্ম-নিয়ন্ত্রয়ণের নির্দেশ আছে তার জনক হিসেবে।আসলেই তাকে গণিতবিদ বলা যায় কিনা এ নিয়ে বিতর্ক আছে। তবে প্রাচীনতম নিদর্শন অনুযায়ী পিথাগোরাস এমন একটি বিশ্বজগতের ধারণা দিয়েছিল যা নৈতিক মানদণ্ড এবং সাংখ্যিক সম্পর্কের ভিত্তিতে গঠিত।



পিথাগোরিয়রা শুধু একটি দার্শনিক সম্প্রদায়ই ছিল না, তারা একটি ধর্মীয় সম্প্রদায়ও গড়ে তুলছিলো, যার মুল ভিত্তি ছিল জন্মান্তরবাদে বিশ্বাস। দেহ শুধু আত্মার এক ধরনের যন্ত্র মাত্র। দেহের মৃত্যুর পর আত্মা অন্য কোন দেহে স্থানান্তরিত হয়। একটি চক্রের মাধ্যমে আত্মা একটি দেহ থেকে আর একটি চক্রে ঘুরে বেড়ায় যতক্ষন পর্যন্ত না পরিশুদ্ধ লাভ করে। পিথাগোরাস বলেন আত্মার বিশুদ্ধি লাভের মাধ্যমে জন্ম মৃত্যুর চক্র থেকে মুক্তি লাভ করে ঈশ্বরের সাথে মিলিত হওয়া জীবনের চরম লক্ষ্য। অনেকে ধারনা করেন পিথাগোরাস ভারত ভ্রমন করেছিলেন এবং সেখান থেকে এই ধারনা পেয়েছিলেন।



প্লেটোর মহাজাগতিক পুরাণে যে সব ধারণা পাওয়া যায় তার সঙ্গে এর বেশ মিল আছে। বিভিন্ন সংখ্যার মধ্যে সম্পর্ক নিয়ে তিনি খুব আগ্রহী ছিলেন যার উৎকৃষ্ট উদাহরণ পিথাগোরাসের উপপাদ্য। কিন্তু এই উপপাদ্য তিনি প্রমাণ করেছিলেন বলে মনে হয় না। সম্ভবত পিথাগোরীয় দর্শনের উত্তরসূরিরাই এর প্রকৃত প্রতিপাদক। এই উত্তরসূরিরা তাঁদের গুরুর বিশ্বতত্ত্বকে দিন দিন আরও বৈজ্ঞানিক ও গাণিতিক দিকে নিয়ে গেছে যাঁদের মধ্যে ফিলোলাউস এবং আর্কিটাস উল্লেখযোগ্য। পিথাগোরাস মৃত্যু-পরবর্তী আত্মার অপেক্ষাকৃত আশাবাদী একটি চিত্র দাঁড় করিয়েছিলেন এবং জীবনযাপনের এমন একটি পদ্ধতি প্রদান করেছিলেন যা দৃঢ়তা ও নিয়মানুবর্তিতার কারণে অনেককে আকর্ষণ করতে সমর্থ হয়েছিল।


File:'Pythagoras Emerging from the Underworld', oil on canvas painting by Salvator Rosa

কয়েকটি ক্ষেত্রে পিথাগোরাস তার সময়ের চেয়ে কয়েক সহস্রাব্দ এগিয়ে ছিলেন। যেমন নারী পুরুষের সমতা। তিনি মনে করতেন তারা সমান, সম্পদের সমান অংশীদার এবং তারা একই ধরণের জীবন ধারণ করতে পারে। পিথাগোরাসের আরেকটি বিখ্যাত তত্ত্ব হচ্ছে, ‘সবকিছুই সংখ্যা’। তিনি সংগীতে সংখ্যার গুরুত্ব আবিষ্কার করেছিলেন। বর্গ ও ঘনের ধারণা আমরা পিথাগোরাস থেকেই পাই। সংগীত নিয়ে তাদের আরেকটি শক্ত মত হচ্ছে এর রোগ সাড়ানোর ক্ষমতা আছে যেটা আসলে অনেক সুদূরপ্রসারী চিন্তা ছিল। সংগীত তাদের দর্শনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে দাড়িয়েছিল কারণ এর মাধ্যমে প্রমাণ করা অতি সহজ ছিল যে ‘সবকিছুই সংখ্যা’। (সূত্রঃ বার্ট্রান্ড রাসেলের ‘হিস্ট্রি অব ওয়েস্টার্ন ফিলসফি’তে পিথাগোরাসের দর্শন এবং ধর্মতত্ত্ব নিয়ে কিছু আলোচনা আছে)



পারস্যে জরাথ্রুষ্ট নামে একটা একজন ধর্মগুরুর দেখা যায় যার জন্ম আগেই বলছি আনুমানিক খ্রিঃপূর্ব অষ্টম শতক। অনেকেই তাকে ঠিক নব ধর্মের প্রচারক হিসাবে দেখেনা, তাকে পারস্যের সনাতন ধর্মকে একটি পরিশীলিত রূপ দানকারী হিসাবে দেখেন। জরাথ্রুষ্টীয় বা পারসিক ধর্মের প্রবর্তক জরাথ্রুষ্ট। তার নাম অনুসারেই বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় এই ধর্মের নাম হয়েছে "জরোয়াস্ট্রিয়ানিজম" বা জরাথ্রুস্টবাদ। এ ধর্মে ঈশ্বরকে অহুর মজদা বা আহুরা মাজদা ("সর্বজ্ঞানস্বামী") নামে ডাকা হয়। এদের ধর্মগ্রন্থের নাম অবেস্তা (বা আবেস্তা) বা জেন্দাবেস্তা। পারসিক ধর্মের অনুসারীরা অগ্নি-উপাসক। আগুনের পবিত্রতাকে ঈশ্বরের পবিত্রতার সাথে তুলনীয় মনে করেন পারসিক জরাথ্রুষ্টীয়রা।



বর্তমান পারস্য থেকে এই ধর্ম এক রকম বিলুপ্ত প্রায়, অনেক আগেই নিজ ধর্ম রক্ষার্থে এই অগ্নি উপাসকরা ভারতে এসেছিল এখানে এরা অগ্নি উপাসক বা পার্সি নামে পরিচিত। পার্সিদের মাঝে সাধারনতঃ নিজেদের রক্ত সম্পর্কীয়দের মাঝে বিবাহ রীতি প্রচলিত যার কারনে শিশুদের বিকলাঙ্গ হবার হার অনেক বেশী। (এটা বৈজ্ঞানিকভাবে স্বীকৃত রক্ত সন্মন্ধ্যদের মাঝে বিবাহ হলে শিশুদের বিকলাঙ্গ হবার সম্ভাবনা বাড়ে)।



জরথ্রুস্টবাদীদের বিষ্ময়কর ব্যাপার হচ্ছে মৃত্যুর পর মৃতদেহ সৎকার। শকুনেরা যেহেতু সবচেয়ে বেশী উচুঁতে উঠে সূর্যের কাছে যেতে পারে, তাই তারা নিজেদের মৃতদেহকে শকুন দিয়ে খাওয়ানো পবিত্র কর্ম মনে করে। মৃতদেহকে যাতে সহজে শকুনে খেতে পারে তার ব্যবস্থা করে তারা এবং মাংস শকুনে খাওয়ার পর মৃতের হাড়-মজ্জা ‘পবিত্র কুয়ায়’ ফেলে দেয়া হয়। তাদের বিশ্বাস, মরণের ৪র্থ দিনে ‘রুহ’ অহুর মাজদার কাছে বিচারের জন্যে পৌঁছে, এই ৪-দিন মৃতকে শকুন দিয়ে খাওয়ানো অত্যন্ত পূর্ণ কর্ম। কারো দেহ শকুনে না খেলে সেটা অবশ্যই অশুভ।



জরথ্রুস্টবাদিরা যেখানে বাস করে সেখানে সৎকারের ব্যাবস্থা স্বরূপ থাকার কথা মৃতকে শকুন দিয়ে খাওয়ানোর ব্যবস্থা। তবে ভারতে যেহেতু বর্তমানে সবচেয়ে বেশি এ ধর্মের লোক তাই, দক্ষিণ মুম্বাইর মালাবার হিলে ৫৭ একর অরণ্য-উদ্যানের মাঝে বিরাটাকার 'ডখমা' বা ‘টাওয়ার অব সাইলেন্স’ (নির্জনতার স্তম্ভ) নির্মাণ করা হয়েছে। ঐ পাহাড় চূড়ায় বিশাল আধার নির্মাণ করে সেই আধারের মাঝে পাথর বসিয়ে তার উপর মৃতদেহ রেখে আসে তারা। এ টাওয়ারে বা কাছাকাছি শকুনেরা বসে থাকে মৃতদেহটি খাবারের জন্যে। ৩-দিন খাওয়ার পর হাড়গোড়গুলো সংগ্রহ করে অন্যত্র কয়লা ও বালির মিশ্রণের মধ্যে রেখে দেওয়া হয়। এর নাম হাড়দানি (Ossuary ), এরপর যায় পবিত্র কুয়ায় (কবর?)।

এই জরাথ্রুষ্ট ধর্মের প্রবর্তক জরাথ্রুষ্টকে নিয়ে খুব বেশী কিছু ইতিহসে লেখা নেই। আপাতত পল ক্রিসবাসজেকের “জরাথ্রুষ্ট সন্ধানে” বইটি পড়ছি, অনেক বড় বই নতুন কিছু পেলে আলাদা পোষ্ট দেবার ইচ্ছা রাখি।



এই একই সময় বা সমসাময়িক সময়ে চীনে দুজন দার্শনিক বা ধর্ম প্রবক্তার জন্ম হয় তাদের নাম কনফুসিয়া ও লাওৎসে। কনফুসিয়াসের চীনা উচ্চারন হল “কং ফু ৎসে”। প্রচলিত অর্থে ধর্ম প্রচারক বলতে যা বোজায় কনফুসিয়াস বা লাওৎসে সে রকম কিছু ছিলেন না, এরা আসলে কিছু নীতিমালা শিক্ষা দিত, কোনটা করা ঠিক বা কোনটা করা ঠিক না।



ধারণা করা হয়, কনফুসিয়াসের জন্ম ২৮ সেপ্টেম্বর, খ্রিস্টপূর্ব ৫৫১ সালে, যোউ জেলায়, বর্তমান কুফু, চীনের নিকটবর্তী এলাকায়। বাবার নাম কং হি বা শুলিয়াং হি, যিনি ছিলেন স্থানীয় লু গ্যারিসনের প্রবীণ সেনানায়ক।



তার দর্শন অনুসারে, পৃথিবীর কোনো মানুষই নিখুঁত নয় তবে মানুষ মহৎ কিছু গুণের চর্চার মাধ্যমে তার স্বীয় প্রকৃতির পরিবর্তন ঘটাতে পারে। তিনি জনগণের মানসিক পরিবর্তনের চাইতে শাসকের মানসিক পরিবর্তনকে বেশি গুরুত্ব প্রদান করেন। এ ব্যাপারে তিনি মনে করতেন, একটি ভাল সমাজের জন্য একজন শাসকের সে সকল গুণ ধারণ করতে হবে, যে সকল গুণ তিনি তার জনগণের মধ্যে দেখতে চান।



কনফুসিয়াসের মৃত্যুর পরপরই অনুসারীরা কনফুসিয়াসের তত্ত্বগুলো একত্র করে তার চিন্তাধারা সম্পর্কে গবেষণা শুরু করেন। তত্ত্বগুলো মূলত ছিল অনুসারীদের এবং কিছু শাসকদের সঙ্গে কনফুসিয়াসের কথোপকথন। তিনি সামাজিক, রাজনৈতিক এবং শিক্ষার ওপরে নিজের বেশ কিছু ধারণা প্রতিষ্ঠা করে গেছেন। তার সামাজিক দর্শনের মূলে ছিল ‘রেন’ বা ‘পারস্পরিক ভালোবাসা’র সঙ্গে সংযমের চর্চা। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘তুমি নিজের জন্য যা চাও না, অন্যের জন্যও তা আশা কর না।’ চীনা ঐতিহ্যের সাথে কনফুসিয়াসের নাম ওতপ্রোতভাবে জড়িত। চীনাদের যে ভদ্রতাবোধ তাও ঐ কনফুসিয়াসের প্রভাব।



গৌতম বুদ্ধকে নিয়ে এখানে আমি বিষদ আলোচনায় যাব না, কারন গৌতম বুদ্ধের জীবন চরিত এদেশের অধিকাংশ শিক্ষিত মানুষ কম বেশী জানেন। তিনি ছিলেন একজন রাজকুমার, ক্ষত্রিয়। সিদ্ধার্থের বাবা মা তাকে প্রচুর আরাম আয়েশে মানুষ করছিলো, তাকে সর্বদা পাহারা দিয়ে রাখা হত যেন তিনি কোন দুঃখী বা মৃত্যু কাউকে না দেখেন, কিন্তু যার জন্মই হয়েছিল বিরাট কিছু করার জন্য তাকে তো এভাবে বন্দী রাখা যায় না। এর পরের ইতিহাস সবাই জানেন। সেদিকে আর যাব না। বর্তমান বিশ্বে সব থেকে বড় ধর্ম কিন্তু বৌদ্ধ ধর্ম



জৈন কিংবদন্তি অনুসারে, “সকলপুরুষ” নামে তেষট্টি জন বিশিষ্ট সত্ত্বা এই পৃথিবীতে আবির্ভূত হয়েছেন। জৈন কিংবদন্তিমূলক ইতিহাস এই সত্ত্বাদের কর্মকাণ্ডের সংকলন। সকলপুরুষদের মধ্যে চব্বিশ জন তীর্থঙ্কর, বারো জন চক্রবর্তী, নয় জন বলদেব, নয় জন বাসুদেব ও নয় জন প্রতিবাসুদেব রয়েছেন।। এই চব্বিশ জন তীর্থাঙ্কর জৈন ধর্মের মতবাদ প্রচারিত হয় এঁদের মধ্যে তেইশতম প্রচারক পার্শ্বনাথ ও চবিবশতম মহাবীর ছিলেন ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্ব।



মহাবীর ছিলেন গৌতম বুদ্ধের সমসাময়িক এবং তিনি খ্রিস্টপূর্ব ৫৪০ থেকে ৪৬৮ অব্দ পর্যন্ত বেঁচেছিলেন। তাঁর পূর্বসূরি পার্শ্বনাথের আবির্ভাব ঘটে প্রায় আড়াই হাজার বছর আগে। পার্শ্বনাথ ও মহাবীরের শিক্ষা থেকেই জৈন ধর্মমতের উৎপত্তি। পার্শ্বনাথের ধর্মোপদেশকে বলা হয় চতুর্যাম। এতে পরিত্রাণের চারটি উপায়ের কথা বলা হয়েছে, যথা- সর্বজীবে দয়া, মিথ্যাকথন থেকে বিরত থাকা, চৌর্যবৃত্তিতে অংশ না নেওয়া এবং পার্থিব সম্পদ থেকে দূরে থাকা। পরবর্তী সময়ে মহাবীর আরও একটি উপায় সংযোজন করেন। এটি হলো কোনো পোশাক পরিধান না করা। এভাবে জৈনরা দুটি সম্প্রদায়ে বিভক্ত হয়ে পড়ে। পার্শ্বনাথের অনুসারীদের বলা হয় শ্বেতাম্বর অর্থাৎ সাদা বস্ত্র পরিধানকারী, আর মহাবীরের অনুসারীদের বলা হয় দিগম্বর অর্থাৎ নগ্ন (আক্ষরিক অর্থে, আকাশই হচ্ছে আচ্ছাদন)।



মহাবীরের জীবনকালেই বাংলায় জৈনধর্মের আবির্ভাব ঘটে। মহাবীর তাঁর মতবাদ প্রচারের জন্য রাঢ়ে (বর্তমান পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ অংশ) এসেছিলেন। এমন বিশ্বাস প্রচলিত আছে যে, চবিবশ জন তীর্থঙ্করের মধ্যে বাইশ জন পশ্চিমবঙ্গের পরেশনাথ পাহাড় নামে পরিচিত পার্বত্য অঞ্চলে আধ্যাত্মিক ক্ষমতা অর্জন করেছিলেন। “বোধিসত্ত্বভবদানকল্পলতার” ভাষ্য মতে খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ শতকে পুন্ড্রবর্ধন (উত্তরবঙ্গ) জৈনধর্ম অনুসৃত হতো। তখন জৈন মন্দিরের নেতা ছিলেন পুন্ড্রবর্ধনের অধিবাসী ভদ্রবাহু। তিনি ‘কল্পসূত্র’ নামে বেশ কিছু জৈন অনুশাসনের একটি সংকলন প্রকাশ করেন। তাঁর তিরোধানের পর গোডাস নামে তাঁর এক শিষ্য পুন্ড্রবর্ধন এর জৈন মন্দিরের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তাঁর অনুসারীদের বলা হয় গোডাসগণ। পরবর্তী পর্যায়ে ‘গোডাসগণ’ সম্প্রদায় তাম্রলিপ্তিকীয়, কোটিবর্ষীয়, পুন্ড্রবর্ধনিয়া ও ধসিখরবতিকা নামে আরও চারটি উপ-সম্প্রদায়ে বিভক্ত হয়ে পড়ে। সুতরাং এটা ধরে নেওয়া যায় যে, খ্রিস্টপূর্ব চার-তিন শতকের মধ্যে সমগ্র বাংলা জৈন মতবাদ প্রচারকদের প্রভাবাধীন হয়ে পড়ে।



বাংলার জৈনরা ছিল ‘দিগম্বর’ মতাদর্শের অনুসারী। প্রাপ্ত তথ্যাবলি থেকে এটা সুস্পষ্ট যে, বাংলায় প্রাপ্ত তীর্থঙ্করের বিগ্রহগুলির সবই নগ্ন। অল্প কয়েকটি বিগ্রহে দেখা যায় যে, তীর্থঙ্করগণ তাদের সঙ্গী তীর্থঙ্করদের দ্বারা পরিবেষ্টিত রয়েছে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত তীর্থঙ্কর ছাড়া অপর কোনো বিগ্রহ পাওয়া যায় নি। এ প্রসঙ্গে উল্লেখ করা যেতে পারে যে, উপমহাদেশের অন্যান্য অঞ্চলের জৈনরা তীর্থঙ্করদের ছাড়াও সলক পুরুচ, আচার্য, বাহুবলী, যক্ষ-যক্ষী, চক্রবর্তী, বাসুদেব, বলদেব, শসন দেবী, দিকপাল, ক্ষেত্রপাল, নবগ্রহ, অগ্নি, নৈর্ঋত, ব্রহ্ম, শ্রুতি দেবী ও হরিণ-গোমেশের প্রতি সশ্রদ্ধ আনুগত্য প্রদর্শন করে। এসব তথ্য থেকে প্রমাণিত হয় যে, ঐতিহাসিক যুগের গোড়ার দিকে জৈনধর্ম বাংলায় প্রচলিত থাকলেও এটি কখনই অন্যান্য অঞ্চলের মতো এদেশে ততটা বিস্তার লাভ করে নি।



অহিংসা জৈনধর্মের প্রধান ও সর্বাধিক পরিচিত বৈশিষ্ট্য।কোনোরকম আবেগের তাড়নায় কোনো জীবিত প্রাণীকে হত্যা করাকেই জৈনধর্মে ‘হিংসা’ বলা হয়। এই ধরনের কাজ থেকে দূরে থাকাই জৈনধর্মে ‘অহিংসা’ নামে পরিচিত। প্রতিদিনের কাজকর্মে অহিংসার আদর্শটিকে প্রাধান্য দেওয়া জৈনধর্মের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। প্রত্যেক মানুষ নিজেদের মধ্যে বাক্যালাপ ও কোনোরকম আদানপ্রদানের সময় অহিংসার চর্চা করবে এবং কাজ, বাক্য বা চিন্তার মাধ্যমে অন্যকে আঘাত করা থেকে বিরত থাকবে – এই হল জৈনদের অহিংসা আদর্শের মূল কথা।



জৈনদের নির্দিষ্ট একটি প্রধান ধর্মগ্রন্থ নেই। 'আগাম' নামে একাধিক গ্রন্থ আছে যেগুলোতে তীর্থঙ্কর মহাবীরের উপদেশগুলো লেখা আছে। আগামগুলোই জৈন ধর্মের অনুসারীদের কাছে পবিত্র বলে বিবেচিত হয়। এটি লেখা হয়েছে অর্ধ মাগধি প্রাকৃত ভাষায়। আগামকে আগাম সূত্র নামেও ডাকা হয়। শ্বেতাম্বর এবং দিগম্বর জৈনদের বিশ্বাসে কিছু পার্থক্য আছে। শ্বেতাম্বরেরা মনে করে অবিকৃত জৈন গ্রন্থ তাদের কাছে আছে, অন্যদিকে দিগম্বরদের বিশ্বাস তাদের প্রকৃত গ্রন্থ হারিয়ে গেছে।

কিছু মানুষ সব সময়ই থাকবে যারা ধর্মের খুত ধরে বেড়াবে এবং ধর্মপ্রচারকারী মহাপুরুষদের নামে নোংরামি ছড়াবে। এদের মাঝে আর ধর্মের নামে উগ্রতা সৃষ্টিকারীদের কোন পার্থক্য নেই। ধর্ম হোক সুন্দর জীবন যাপনের একটি নিয়ামক।

তথ্য সুত্রঃ বার্ট্রান্ড রাসেলের ‘হিস্ট্রি অব ওয়েস্টার্ন ফিলসফি’, পল ক্রিসবাসজেকের “জরাথ্রুষ্ট সন্ধানে” জৈনধর্ম এবং আরো অনেক অন্তর্জাল ফিচার।।

মন্তব্য ৪০ টি রেটিং +১৫/-০

মন্তব্য (৪০) মন্তব্য লিখুন

১| ২৬ শে জানুয়ারি, ২০২০ রাত ১১:৫১

পদাতিক চৌধুরি বলেছেন: আরও একটি তথ্যসমৃদ্ধ পোস্ট পেলাম আমরা। ধন্যবাদ আপনাকে।
পিথাগোরাসের পরিচয় বা গণিতবিদ হিসেবে জানতাম; ঠিক যেমন জানতাম প্লেটো একজন দার্শনিক। কিন্তু আপনি আজ আমাদের জ্ঞানের ভান্ডারকে সমৃদ্ধ করলেন ওনাদের নিজস্ব ধর্মীয় পরিচয় তুলে ধরে। আমরা একে একে জরাথুস্ট্র, কনফুসিয়াস, গৌতম বুদ্ধ মহাবীর সম্পর্কে জানলাম। গৌতম বুদ্ধ সম্পর্কে আপনার বিশদে আলোচনা না করার কারনটিও দেখলাম। তবে প্রাচীনত্বের দিক দিয়ে ভারতে কিন্তু জৈন ধর্ম বহু প্রাচীন। বিষ্ণুপুরাণে প্রথম জৈন তীর্থঙ্কর ঋষাবদেব সম্পর্কে উল্লেখ আছে। এমনকি 22 তম তীর্থঙ্কর নিনি নাথকে শ্রীকৃষ্ণের খুড়তুতো ভাই বলেও উল্লেখ করা আছে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে মহাবীরের সঙ্গে 23 তম তীর্থঙ্কর পার্শ্বনাথের সময়ের ব্যবধান ছিল 80 হাজার বছর।
একটি বিষয় একটু বৈসাদৃশ্য লাগলো-পার্শ্বনাথ প্রবর্তিত চতুর্যামের এর সঙ্গে মহাবীর পঞ্চমহাব্রত (অহিংস, সত্য, অচৌর্য, ব্রহ্মচর্য, অপরিগ্রহ জাগতিক বন্ধন থেকে মুক্তি) যোগ করেন।
উল্লেখ্য তৃতীয় জৈন সংগীতে জৈন সন্ন্যাসীদের মধ্যে এক বিতর্ককে কেন্দ্র করে সম্প্রদায়ের মধ্যে ভাঙ্গন স্পষ্ট হয়ে ওঠে। স্থুলভদ্রের নেতৃত্বে উত্তর ভারতের জৈনরা শ্বেতবস্ত্র পরিধান করতো বলে নাম হয় শ্বেতাম্বর। আর ভদ্রবাহুর নেতৃত্বে আরেকদল জৈনরা সম্পূর্ণ নির্গ্রন্থী হয়ে দক্ষিণ ভারতে চলে যায়।এরা দিগম্বর নামে পরিচিত হয়। উল্লেখ্য মৌর্য আমলে জৈন ধর্ম রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা লাভ করে। চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য নিজে শেষ জীবনে জৈন ধর্ম গ্রহণ করে দক্ষিণ ভারতের শ্রাবণবেলগলাতে গিয়ে অনশনে মৃত্যুবরণ করেন। উল্লেখ্য অনশনে মৃত্যু বরণ আজও জৈন সম্প্রদায়ের কাছে একটি পবিত্র কর্ম বলে বিবেচিত হয়। মাত্র কয়েক মাস আগেও আমেদাবাদে এক মায়ের শেষ ইচ্ছানুযায়ী তার পরিবার এমন মৃত্যুতে সম্মতি দেওয়াতে বিষয়টি সামনে এসেছিল।
শ্রদ্ধা ও শুভেচ্ছা প্রিয় ভাইকে।





২৭ শে জানুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৪:১৬

শের শায়রী বলেছেন: প্রিয় ভাই আমার, আমি আসলে ধর্মর ব্যাপারে এক রকম অজ্ঞ, কিছু কিছু জানছি, তবে ধর্মের ব্যাপারে নানা জায়গায় নানা মত পাওয়া যায় যেমন আপনি লিখছেন যে মহাবীরের সঙ্গে 23 তম তীর্থঙ্কর পার্শ্বনাথের সময়ের ব্যবধান ছিল 80 হাজার বছর। অথচ দেখুন বাংলা পিডিয়ায় লিখছে মহাবীর ছিলেন গৌতম বুদ্ধের সমসাময়িক এবং তিনি খ্রিস্টপূর্ব ৫৪০ থেকে ৪৬৮ অব্দ পর্যন্ত বেঁচেছিলেন। তাঁর পূর্বসূরি পার্শ্বনাথের আবির্ভাব ঘটে প্রায় আড়াই শ বছর আগে। পার্শ্বনাথ ও মহাবীরের শিক্ষা থেকেই জৈন ধর্মমতের উৎপত্তি। এই সব ব্যাপারে আমি আমার অজ্ঞতা স্বীকার করে নিচ্ছি। রূপমের পোষ্টে দেখলাম আপনি যাদবপুর ভার্সিটির ইতিহাসের ছাত্র ছিলেন, সে ক্ষেত্রে আমি আপনার দেয়া তথ্যকে মুল হিসাবে ধরে নেব।

বাকী যে তথ্যগুলো দিয়েছেন সেগুলো আমার জানার জন্য সেগুলো আমি অমুল্য হিসাবে বিবেচিত করে নিজের জানার পরিধি বৃদ্ধি হচ্ছে।

আমি আশা করব প্রিয় ভাই সামনেও এভাবে আমাকে সহায়তা করবেন। অনেক অনেক কৃতজ্ঞতা মুল্যবান মন্তব্যের জন্য।

২| ২৭ শে জানুয়ারি, ২০২০ রাত ১২:৩৫

চাঁদগাজী বলেছেন:



আদি মানুষদের ভাবনাচিন্তা হাজার রূপকথার জন্ম দিয়েছে

২৭ শে জানুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৪:২০

শের শায়রী বলেছেন: সে নিয়ে কোন দ্বিমত নেই।

৩| ২৭ শে জানুয়ারি, ২০২০ ভোর ৫:৫০

হাসান কালবৈশাখী বলেছেন:
ভাল লেখছেন।
কনফুসিয়াস নিয়ে আরেকটু বিস্তারিত বলা দরকার ছিল।
নইলে আলাদা একটা পোষ্ট দেন।

২৭ শে জানুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৪:২২

শের শায়রী বলেছেন: হাসান ভাই এরা প্রত্যেকেই আলাদা পোষ্টের দাবী রাখে, আমি আসলে অনেক অনেক কিছু বাদ দিয়ে লিখছি, যাই হোক আপনি বলছেন অবশ্যই আমার চেষ্টা থাকবে কনফুসিয়াস কে নিয়ে আলাদা পোষ্ট দেবার।

পাঠে কৃতজ্ঞতা।

৪| ২৭ শে জানুয়ারি, ২০২০ ভোর ৬:৪৪

স্বামী বিশুদ্ধানন্দ বলেছেন: বিশাল ও তথ্যবহুল পোস্টে ভালোলাগা | ++

জোরস্ত্রিয়ানিসম সম্পর্কে আরেকটি তথ্য হলো এদের মধ্যে পাঁচ বার প্রার্থনার প্রচলন রয়েছে এবং তাকে তারা নামাজ বলে থাকে

জোরস্ত্রিয়ানিসমে দিনে পাঁচ বার প্রার্থনা

২৮ শে জানুয়ারি, ২০২০ রাত ১২:০৪

শের শায়রী বলেছেন: অসংখ্য ধন্যবাদ দারুন একটা ইনফো দেবার জন্য। এটা আমার জানা ছিল না। কৃতজ্ঞতা জানুন। এটাই ব্লগের সৌন্দর্য্য তথ্য এবং জ্ঞানের আদান প্রদান।

৫| ২৭ শে জানুয়ারি, ২০২০ সকাল ৯:২৫

রাজীব নুর বলেছেন: সব মানুষই মাঝে মাঝে অন্য মানূষ হতে চায় ।

২৮ শে জানুয়ারি, ২০২০ রাত ১২:০৫

শের শায়রী বলেছেন: না রাজীব ভাই, কেউ কেউ অনন্য হয়েও অতি সাধারন থাকতে চায়।।

৬| ২৭ শে জানুয়ারি, ২০২০ দুপুর ১:১৯

রাজীব নুর বলেছেন: আমার ইচ্ছা করে দুনিয়া থেকে ধর্ম টাকে একদম দূর করে দেই।
ধর্ম নিয়ে তো কম হানাহানি হয় নাই। কম জীবন যায় নাই।
আমাদের মতো দরিদ্র দেশ গুলোতে ধর্ম বারোটা বাজিয়ে দিচ্ছে।

২৮ শে জানুয়ারি, ২০২০ রাত ১২:০৭

শের শায়রী বলেছেন: আবার উল্টোও হতে পারে রাজীব ভাই, এই ধর্মের জন্য একটা বিশাল অংশের মানুষ না চাইলেও সংযত জীবন যাপন করছে যা সমাজ কে করছে সভ্য। :)

৭| ২৭ শে জানুয়ারি, ২০২০ দুপুর ১:৩৬

হাসান কালবৈশাখী বলেছেন:

স্বামী বিশুদ্ধানন্দ। গুরু। আরো কিছু খুজে পেলাম।

জোরস্ত্রিয়ানিসম ধর্মেও ঈশ্বর একক। তাদের প্রফেট নিজেকে আহুরা মাজেদার(ইশ্বরের) বার্তা বাহক বলে দাবী করে থাকতেন,
তিনি দাবী করেছিলেন আহুরা মাজেদা (ঈশ্বর) সারাওস ( Saraosh) নামক এক স্বর্গদূতকে পাঠিয়ে তার ধারাবাহিক গাইডলাইন মাফিক তিনি ধর্মগ্রন্থ লিখে গেছেন।

পরে তাদের প্রফেট ইশ্বরের সাথে দেখা করে এসেছেন একজন স্বর্গের দূতের মারফতে।
এবং সেখান থেকে পাঁচবার উপাসনার আদেশ নিয়ে আসছেন, তাদের উপাসনা আর আমাদের নামাজ প্রায় একই সময়ে এবং উভয় ধর্মেই টাইমলি ৫ বার উপাসনার কথা আছে আমরা যেমন ওয়াক্তমত নামাজ পরি, তারাও পরতো। আমাদের মতো জামাতে একত্রিত হয়ে উপাসনা করে থাকতো।
শুধু তাই না। মুসলিমদের সুন্নত সালাতের মতো তাদের সুন্নত উপাসনাও আছে যার দ্বারা ঈশ্বর বেশি খুশি হয়ে থাকেন!

তাদের উপাসনা করতে এবং পবিত্র আবেস্তা গ্রন্থ পাঠের আগে মুখ হাত পা তিনবার করে ধৌত করতে হয়, (প্রায় অজুর মত)
পবিত্র হবার পানি (অজুর পানি) না পাওয়া গেলে তায়ামুমের কথাও উল্লেখ আছে যেটাকে তাদের আবেস্তার ভাষায় বলে "ইয়াবাবা"।

জুরাইস্ট ধর্মে এটাও বলা আছে, ইসলামের পুলসিরাতের ব্রীজের মতো তাদের ধর্মেও নরকের উপড় ব্রীজ আছে।
ওটা পার হতে হবে পার্থক্যটা শুধু জুারাইস্ট ধর্মের ব্রীজের পাশে চার চোখওয়ালা কুকুর বসে থাকার কথা আছে যেটা ইসলামে নেই।

আরেকটি তথ্য। আমাদের রসুল মোহম্মদ (স) এর যুদ্ধকালিন ঘনিষ্ট সহচর (সাহাবি) ও চিফ ইঞ্জিনিয়ার ও খন্দক যুদ্ধের বীর যুদ্ধকুশলী 'সালমান পার্শি' পারস্যের সেই এলাকার প্রায় বিলুপ্ত জুরাইস্ট ধর্মের অনুসারি ছিলেন। শেষ পর্যন্ত ধর্ম পরিবর্তন করে নি।


২৯ শে জানুয়ারি, ২০২০ রাত ১২:১৬

শের শায়রী বলেছেন: হাসান ভাই, আপনার অসাধারন তথ্য এই পোষ্টের জন্য অলঙ্কার স্বরূপ। কৃতজ্ঞতা জানুন।

৮| ২৭ শে জানুয়ারি, ২০২০ দুপুর ২:৪৩

ভুয়া মফিজ বলেছেন: বরাবরের মতোই.......চমৎকার। :)

আপনে তো দেখি ধর্ম নিয়া পইড়া ফাটায়া দিতাছেন। ধর্মীয় ব্যাপারে আমার জ্ঞান কম, এক্কেবারে বেসিক। তয় কানে কানে একটা কথা কই......ব্লগিং শুরু করনের আগে আমার ধারনা ছিল, এই ব্যাপারে আমার বহুত জ্ঞান আছে। ব্লগে আয়া দেহি, আসলে কিছুই নাই! কনতো দেহি কেমুন টা লাগে!!! :D

ধর্মের পরে কোন বিষয়টারে টার্গেট করবেন? আগেই জাইনা রাখি.....ওইটার থিকা দুরে থাকুম!!! :P

২৯ শে জানুয়ারি, ২০২০ রাত ১২:১৯

শের শায়রী বলেছেন: ভাবতাছি কিছু কিছু মাইনষে "ভুয়া" শব্দটার অপ ব্যাবহার করতাছে, তাগো বিরুদ্ধে কিছুটা পোষ্ট দিতে হবে, নাইলে "ভুয়া" ব্যাপারটা আসলেই ভুয়া অইয়া যাবো। কিচ্ছু না, কিচ্ছু না কইয়া হেগো ব্লগ বাড়ী গেলে দেখা যায় জানে না হেন ব্যাপার নাই, হুদা মাইনষের লজ্জায় ফালায় :P

৯| ২৭ শে জানুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৫:১৯

একাল-সেকাল বলেছেন:
অনেক ধইন্নাপাতা দিয়ে Direct to favorite. জানার বহুত বাকি, পাঞ্জেরী !

২৯ শে জানুয়ারি, ২০২০ রাত ১২:২০

শের শায়রী বলেছেন: অনেক অনেক কৃত্রজ্ঞতা জানবেন ভাই।

১০| ২৭ শে জানুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৫:৫০

রানার ব্লগ বলেছেন: আমার মাঝে মাঝে মনে হয় কিছু লোক যখন ভাবতে ভাবতে এক্সট্রিম লেভেলে চলে যায় যখন তার বোধ বুদ্ধি কাজ করে না তখন সে কিছু বার্তা গ্রহন করে ফ্রম নো হোয়ার !! এই গুলাই পরবর্তিতে ধর্ম আকারে রুপ লাভ করে। আমার নিজের একটা গল্প বলি তখন আমি এস এস সি পরিক্ষা দিয়ে বসে আছি। মাথায় ভয়াবহ টেনসান। না ফেলের না স্টার মার্ক পাবো কি না এটা নিয়ে। এতটাই আমি দোয়া দুরুদ পরা শুরু করেছিলাম আমার দিন রাত হিসেবের মধ্যে ছিল না, হঠাত একদিন রাতে আমি সপ্ন দেখলাম এক টা বিসাল কিছুর অস্তিত্ব আমার বারান্দায় যা ভাসমান, এবং ভয়ানক আলোক সমৃধ্য , আমাকে প্রশ্ন করছে কি চাও (লুকিয়া তখন প্রেমও করতাম) মেয়েটার ছবি সামনে এনে বলল একে না রেজাল্ট এনে বললো একে আমি রেজাল্ট চাইলাম ,এর পর আমি জানি না কি হোল, সকালে আমার ঘুম ভেঙ্গে গেল আমি ভয়ে আম্মা কে বললাম (প্রেমিকের ব্যাপারটা চেপে গেলাম) আম্মা সব শুনে বলল তুমি অনেক ভাবছো তাই এমন হইছে। এটা কিছু না। (কেউ স্বপ্নের ঘটোনা শুনে অতি ইমানী জোস প্রকাস করবেন না)

২৯ শে জানুয়ারি, ২০২০ রাত ১:১৮

শের শায়রী বলেছেন: ভাই স্বপ্ন আমরা সবাই দেখি, এটা খুব স্বাভাবিক প্রক্রিয়া, আমি পরীক্ষার আগে স্বপ্ন দেখতাম কোন প্রশ্নের জবাবই আমি পারছি না, ঘামে ভিজে চুপ চুপ হয়ে যেতাম, আবার অন্য কোন টেনশানে থাকলে সেটা নিয়ে স্বপ্ন দেখতাম, কোন কোন দিন স্বপ্নে দেখছি আকশে আমি উড়ছি, এগুলো সব স্বাভাবিক ব্যাপার চেতন অবচেতন (কনশাস আনকনশাস) মনের খেলা, ফ্রয়েডের খুব ভালো কিছু ব্যাখ্যা আছে এসব ব্যাপারে। এর মানে এই না যে এটা দিয়ে আমি কোন বার্তা বা কোন কিছু লাভ করছি। সবারই এমন হয়।

আর বার্তা বা ওহীর ব্যাপারটা ভিন্ন, এখানে তারা যা লাভ করত সেখানে সে সম্পূর্ন সজ্ঞানে থাকত। (অবশ্য কিছু কিছু ভন্ড আছে যারা ইচ্ছাকৃতভাবে এই কাজ করে, বর্তমান সমাজে এদের প্রচুর দেখা পাবেন সব ধর্মেই)। ওহীর ব্যাপার বাদ দিন, ধর্মের ব্যাপারটা একটা গভীর উপলদ্ধির ব্যাপার। এর মাঝে খুব অল্প সংখ্যক মানুষ এটাকে সাধনা হিসাবে নেন। একটা উদাহরন দেই, যারা ক্রিকেট খেলে, ধরুন আমাদের দেশের সাকিব, তামীম বা মুশফিক এরা বছরের পর বছর সাধনা করে নিজেকে এমন একটা পর্যায়ে উত্তীর্ন করে যে আর দশ জন স্বাভাবিক খেলোয়াড়ের থেকে তার পারফেকশান অনেক বেশী চলে আসে বিধায় সে খুব ভালো খেলে। যদি তার থেকেও বেশী সাধনা করে ধরুন এদের থেকেও ভালো যারা খেলে ( বিভিন্ন বিদেশী নাম করা খেলোয়াড়) তারা আরো বেশী এই খেলাটাকে নিয়ে সাধনা করে অসাধারন সব শট বাউন্ডারি মেরে মানুষদের পুলকিত করে। আসি মুল ব্যাপারে, ধর্মেও বছরের পর বছর সাধনা করলে এমন কোন পর্যায়ে উত্তীর্ন হওয়া যায় যা সাধারনের কাছে অলৌকিক বা অবোধ্য মনে হবে।

আবার দেখুন শচীন, লারা বা ব্র্যাডম্যান এরা সাধনার সাথে কিছু গড গিফটেড ব্যাপার স্যাপার নিয়ে আসে, যা সাধনা দিয়েও সম্ভব না, গড গিফটেডের সাথে তাদের সাধনা মিলে তাদের অসাধারন করে। আশা করি ব্যাপারটা বুজাতে পেরেছি, নাপারলে ধরে নেবেন সে আমার ব্যাখ্যার সীমাবদ্ধতা।

অনেক ধন্যবাদ।।

১১| ২৭ শে জানুয়ারি, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:০৯

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: পিথাগোরাসের কাহিনীতে মুগ্ধ!!!
কাঠখোট্টা জ্যামিতির জনকেরে এ কোন রুপে চিনাইলেন :) পুরাই ফিদা হইয়া গেলাম!

জ্যামিতি, গণিত আর পরজন্মবাদ ... আমার প্রিয় বিষয়গুলোর আদি গুরু তিনি
উস্তাদরে প্রণাম, ভক্তি আর সম্মান জানাই।

তুলনামুলক ধর্মশাস্ত্রীয় আলোচনাতো প্রায় বিলুপ্ত। আপনার দারুন জ্ঞানগর্ভ, তথ্যবহুল এবং সহজবোধ্য উপস্থাপনায় একরাশ ভাললাগা আর অন্তহীন কৃতজ্ঞতা।

সত্যে রুপ সবসময়ই এক! বাবা আদম থেকে অনাগত ভবিষ্যত সত্য একই থাকবে।
প্রকাশ ভঙ্গি হয়তো সময়ের প্রয়োজনে ভিন্ন হয়, তাতে সত্যের ভিন্নতা আসে না।
এক লক্ষা বা দুই লক্ষ (অর্থাৎ অসংখ্য) চব্বিশ হাজার নবী রাসুলদের ইতিহাসটাও মুসলমানরা ঠিকমতো চর্চা করলো না। সন্ধান করলো না। আবার সেই কথা- এমন কোন জনপদ নেই যেখানে আমি আমার বার্তা বাহক পাঠাইনি! কিংবা আমি সতর্ক করা ব্যাতিরেকে কাউকে ধ্বংস করি না। এর সারাৎসার ধরে যে গবেষনা প্রয়োজন, পুরাতাত্ত্বিক, ঐতিহাসিক, এবং সূত্র সমন্বয়ের মাধ্যমে সত্যান্বেষনের প্রচেষ্টাই শুন্য প্রায়।

ঔচিত্যবোধ জাগ্রত হোক। ধর্ম কেবল উপাসনা নয়! পোষাকি আচার সর্বস্বতা নয়। অনুভবের গহন গভীরে ডুবে আত্মোন্নয়নের মাধ্যমে নিজের এবং সমাজের কল্যান ইহ এবং পরের সমন্বয় শান্তি ও মুক্তির পথ হলো ধর্ম। ধার্মকের ভুলে ধর্মকে কাঠগড়ায় তোলার মানুষের যেমন অভাব নেই - আবার ধর্মের শক্ত প্রতিপক্ষ পূজিবাদের স্বার্থও তাতে দারুন জ্বালানী জোগায়। ধর্ম যখন কৃচ্ছতার জীবন যাপনে, উ'সাহিত করে, পূজিবাদ আতকে ওঠে! যখন সাম্যতার বানী প্রতিষ্ঠিত করার আহবান জানায় - আর্তচীতকার করে পূজিবাদ সকল অস্ত্র প্রয়োগ করে ধর্মকেই অপ্রয়োজনীয় প্রমাণে। যুগে যুগে এমনইতো দেখি পরম্পরাকে বিশ্লেষন করলে।
এখনো পূঁজিবাদের একমাত্র প্রতিপক্ষ ধর্ম। সত্য ধর্ম। তাই তারাই সবচে বেশি বিনিয়োগ করে ধর্মহীনতার সংস্কৃতি বিকাশে। আর যে পোষাকি, আচার ধর্মী ধর্ম তাতেও তারা উৎসাহি ! কারণ তাতে বানিজ্যটা রয়েই যায়!

ভাবনার ধারায় অনেক ভাবনা চলে আসলো । লিখে গেলাম। হয়তো পোষ্ট রিলেটেড নয়। আশাকরি ক্ষমাসুন্দর চোখে দেখবেন।

আপনার পোষ্ট মানেই দারুন ভাবনার খোরাক তো ;)

++++++++

২৯ শে জানুয়ারি, ২০২০ রাত ১:২১

শের শায়রী বলেছেন: ম্যাভাই আপনার এই মন্তব্য আমার পোষ্ট কে এক অনন্য মাত্রা দিয়েছে, কখনো কখনো পোষ্টের মন্তব্য পোষ্টের মুল বক্তব্যর থেকেও সুন্দর হয় এটাই ব্লগের সৌন্দর্য্য।

আমার এক রাশ মুগ্ধ কৃতজ্ঞতা।

১২| ২৮ শে জানুয়ারি, ২০২০ রাত ১:২৬

আকতার আর হোসাইন বলেছেন: পিথাগোরাস ও প্লেটো সম্পর্কে নতুন কিছু জানলাম। বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারী বর্তমানে সবচে বেশি তথ্যটা জানা ছিল না। দ্বিতীয় ও তৃতীয় কোন ধর্মের অনুসারী?


পাঠ্যবই এএর কাজী নজরুল ইসলামের কবিতা থেকে প্রথম নাম শুনি, কনফুসিয়াস, জৈন সম্পর্কে।

তথ্যমূলক একটা পোস্ট। ধন্যবাদ জানিবেন।

২৯ শে জানুয়ারি, ২০২০ রাত ১:২৩

শের শায়রী বলেছেন: দ্বিতীয় খ্রিষ্টান ধর্মাবলাম্বী এবং তৃতীয় ইসলাম ধর্মাবলাম্বীরা।

পাঠে অনেক অনেক কৃতজ্ঞতা জানবেন।

১৩| ২৯ শে জানুয়ারি, ২০২০ রাত ৯:২০

আরোগ্য বলেছেন: উফ মশাই, একের পর এক তুফান ছাড়ছেন। একটু চাপে আছি তাই নিয়মিত লগইন করতে পারছি না। সামু এ্যাপ থেকে পড়েই বিদায় নেই। তেমন কারও পোস্টে মন্তব্য করার সুযোগ পাচ্ছি না। নির্দ্বিধায় পোস্ট প্রিয়তে।
আচ্ছা আপনার কি কোন ইলুমিনাতি বিষয়ক পোস্ট আছে। থাকলে লিংক দিন। আমার এনিয়ে পড়ার আগ্রহ বেশ।

৩১ শে জানুয়ারি, ২০২০ রাত ২:০৮

শের শায়রী বলেছেন: না ভাই ইলুমিনাতি নিয়ে লেখা নেই, তবে "আলোকিতজনদের" নিয়ে লিখব, ফ্রি ম্যাসনদের নিয়ে পড়ছেন? ব্লগে ইমন ভাইর ভালো একটা পোষ্ট আছে ফ্রি ম্যাসনদের নিয়ে আপনি চাইলে শের শায়রীর রহস্যের দুনিয়ায় স্বাগতম এই পোষ্টের লিঙ্কগুলোতে ঢু দিয়ে আসতে পারেন। ভালো লাগবে। ইলুমিনাতি নিয়ে লেখা পাবেন, প্রস্ততি নিচ্ছি।

১৪| ৩১ শে জানুয়ারি, ২০২০ সকাল ৭:৪১

হাসান কালবৈশাখী বলেছেন:
জোরোস্টেরিয়াজম ধর্মের উৎপত্তি প্রচলিত বড় ধর্মের প্রচুর আগে খ্রীষ্টপুর্ব হাজার বছর আগে সম্পুর্ন স্বতন্ত্রভাবে আবির্ভুত হয়েছিল। এবং শক্তিপ্রয়গ যুদ্ধ ও রক্তপাত বাদেই ব্যাপকভাবে বিকশিত হয়েছিলো।
মুসলিম ধর্মের সাথে জোরোস্টেরিয়াজমের কোনরুপ আত্মিক সম্পর্ক থাকার কথা না। অনেক দূর বলে যোগাযোগও থাকার কথা না।

তবে অনেক প্রশ্নের সাথে কিছু গুরতর প্রশ্ন এসে যায়।
ইসলাম ধর্মিয় এবাদত নিয়ম আচার অনুষ্ঠান, ইতিহাস, কোরান নাজেল পদ্ধতি, মেরাজ অনেক ক্ষেত্রেই হুবুহু মিল পাওয়া যায়।

যেমন (একত্ববাদ)
পুনরুত্থান (হাশর),
বেহেস্ত - স্বর্গ, নরক,
শয়তান, সেইম।
জিব্রাইল - সারাওস ( Saraosh)
৫ বার নামাজ, আবেস্তাদেরও ৫ বার এবাদত
অজু। আবেস্তা গ্রন্থ পাঠের আগেও মুখ হাত পা তিনবার করে ধৌত করতে হয়, (প্রায় অজুর মত)
অজুর পানি না পেলে তায়ামুম - "ইয়াবাবা"।
এবং মেরাজের মত তাদের প্রফেট ইশ্বরের সাথে দেখা করে এসেছেন একজন স্বর্গের দূতের মারফতে।
এবং সেখান থেকে পাঁচবার উপাসনার আদেশ নিয়ে আসছেন,

সবই ইসলামের আচারের সাথে মিলে যায়।

হজরত মোহম্মদ সেই এলাকায় যান নি, বলা যায় না হয়তো যেতেও পারেন।
কারন যৌবন কালে রসুল (স) বয়স ৪০ হওয়ার আগ পর্যন্ত ২০ বছরের মত নিখোজ ছিলেন।
কিন্তু সেই এলাকার সালমান পার্শির সাথে বন্ধুত্ব। একজন অনারব ভিন্নধর্মি হওয়ার পরেও পার্শি নবী মুহম্মদ (স) এর উপর বেশ প্রভাব বিস্তারকারি এবং ক্ষমতাবান একজন বিখ্যাত সাহাবী। ইসলাম আবির্ভাবের সবটা সময়ই হজরতের মৃতুর শেষদিন পর্যন্ত নবীর সংগে ছিলেন। হযরত মুহাম্মদ (সা.) তাকে সালমান আল খায়র খেতাব প্রদান করেছিলেন।

পূর্বে তার নাম ছিল মাবিহ ইবনে বুজখ্শান । জন্ম ইরানের ইস্পাহান এলাকার জায়্য নগরীত। তার পিতা ছিলেন একজন প্রাচীন জরাথ্রুস্টবাদী ধর্মের। তিনিও সেই ধর্মের। তবে আরবে এসে হজরত মোহম্মদের সহচর হওয়ার সময় নিজেকে খ্রিষ্টান দাবি করে গেছেন। এবং হজরত মোহম্মদের মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তার সাথেই ছিলেন।

যুদ্ধকৌশল সহ বেশীরভাগ সিদ্ধান্তে হজরত মোহম্মদের উপর তার ব্যাপক প্রভাব দেখা যায়। ইসলাম ধর্ম তৈরিতে তার অবদান প্রভাব না থাকার কারন দেখি না।
আর ইসলাম ধর্ম একদিনেই নাজেল হয় নি, কোরানও একদিনে নাজেল হয় নি। বছরের পর বছর যুগের পর যুগ ধরে কোরান নাজেল হয়েছে, ইসলাম প্রতিষ্ঠা হয়েছে। যেমন একটা উদাহরন

রসুল বেঁচে থাকতে বেশীরভাগ সময় নামাজ পড়া হয়েছে উত্তর দিকে মুখ করে, অর্থাত কেবলা জেরুজালেমের দিকে। মক্কা বিজয় হবে নিশ্চিত হওয়ার পর দক্ষীন মুখি (কাবা মুখি) নামাজের প্রচলন হয়।
কোরানের আয়াতও বিভিন্ন সময়ে পারিপার্শিক অবস্থা এমনকি পারিবারিক বিষয়ে শৃক্ষলা আনতে একাধিক বার আয়াত পরিবর্তিত হয়েছিল।

আমার ভেতর অনেক প্রশ্ন। কিন্তু জানি না কিছুই। সবটাই আমার ধারনা।
আপনি যেহেতু বেশি জানেন সালমান পার্শিকে নিয়ে একটি পোষ্ট দেন। সাথে ইসলামে জোরোস্টেরিয়াজমের প্রভাব নিয়ে কিছু বের করতে পারেন কি না দেখেন। যানতে তো কোন দোষ নেই।

ধন্যবাদ, অনেক বলে ফেললাম।

০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ২:৪২

শের শায়রী বলেছেন: হাসান ভাই, একে একে আসি, হযরত মুহাম্মদ (সঃ) ৪০ বছরের আগে ২০ বছর নিখোজ ছিলেন জানি না আপনি এই তথ্য কোথায় পেয়েছেন, এটা সম্পূর্ন ভুল। তার জীবনের প্রতিটা সময় বিভিন্ন ভাবে তার জীবনে আসছে, এটা নিশ্চয়ই জানেন, উনি ২৫ বছর বয়সে বিবি খাদিজা (রাঃ) কে বিয়ে করছিলেন। সুতারাং ৪০ বছর হবার আগ পর্যন্ত ২০ বছর নিখোজ ছিলেন এটা সম্পুর্ন ভুল তথ্য। সীরাতুন্নবীতে তার পুরা জীবন কাহিনী বর্নিত আছে।

আসি সালমান (রাঃ) একজন সাহাবী ছিলেন এনিয়ে ইসলামিক স্কলারদের মাঝে কোন মতভেদ নেই, নীচে টারজান ভাই খুব সুন্দর ভাবে বর্ননা দিয়েছেন। সো উনাকে নিয়ে কথা বাড়াবার বা উনি অগ্নি উপাসক ছিলেন এটা সম্পুর্ন ইতিহাসের বিকৃতি। হাদীসবেত্তা গন তাহার হইতে অনেক হাদিস বর্ণনা করিয়াছেন। তিনি ধর্ম পরিবর্তন করিয়া ইসলাম গ্রহণ না করিলে তাহার হইতে কোন হাদিস কোন কালেই বর্ণনা করা হইতো না। কারণ হাদিস গ্রহণের মানদন্ডে শুধু ঈমানই নহে, ইবাদিয়াত, মুয়ামিলাত, মুবাশিরাত , আখলাক সবই বিচার্য ছিল !

আসি জরথ্রুষ্টজিয়ম নিয়ে, আপনি ওই ধর্মের অনেক কিছুর সাথে ইসলামের মিল খুজে পেয়েছেন। অস্বীকার করার উপায় নাই আমিও কিছু কিছু জায়গায় পড়ছি এবং কিছু মিল পেয়েছি, কিন্তু এর মানে এই না যে আপনি যা সন্দেহ করছেন যে সালমান (রাঃ) দ্ধারা প্রভাবিত হয়ে হযরত মুহাম্মদ (সঃ) এই সব নিজে নিজে বানাইছেন, আপনাকে আরো একটা তথ্য দেই, আপনি এখন যে হজ্জ্ব দেখছেন তাও কিন্তু অনেক আগে থেকেই আরবে প্রচলিত ছিল, এটাও নতুন কিছু না, এমন কি এহরাম বাধা বা মাথা মুন্ডন সব কালচার মহানবীর হজ্জ্বের আগে থেকেই প্রচলিত ছিল। এর মানে কি আমি ধরে নেব এটা আরবে যে পৌত্তলিক ধর্ম ছিল তার থেকে ধার করা!? না সেটাও ভুল। এব্যাপারে বিস্তারিত বিভিন্ন বইতে পাবেন।

সবশেষে, ইসলাম আকাশ থেকে পড়া এক দিনের কোন ধর্ম না, শেষ নবী আসার আগে এক লক্ষ বা দুই লক্ষ নবী বা পয়গম্বর এই দুনিয়ায় এসেছে। কোরবানীর প্রচলন কিভাবে হয়েছে আপনি জানেন। কোরান শরীফে মাত্র ২৫ জন নবী রাসুলের নাম আসছে। বাকী লাখ বা তার ওপর নবী রাসুল এদের ও কিন্তু ইসলাম অস্বীকার করে নাই।

সময় করে এব্যাপারে বিস্তারিত পোষ্ট আমারো দিতে হচ্ছে হয়, কিন্তু ধর্ম নিয়ে টানাটানি করতে খুব একটা ভালো লাগে না, আর আমার থেকে এই ব্লগে ধর্ম নিয়ে বেশী জানে অনেকেই আছে, তারা আশা রাখি ব্যাপারটা দেখবে।

অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।

১৫| ৩১ শে জানুয়ারি, ২০২০ সকাল ১০:১৭

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: অনেককিছু জানা গেল। ধন্যবাদ আপনাকে।

০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৩:০১

শের শায়রী বলেছেন: মন্তব্যে অনেক কৃতজ্ঞতা ভাই।

১৬| ৩১ শে জানুয়ারি, ২০২০ সকাল ১০:১৯

টারজান০০০০৭ বলেছেন: এই পোস্টে মন্তব্য করার ইচ্ছা ছিল না ! বাধ্য হইলাম ! হাসান বাআল বৈশাখী প্রদত্ত তথ্যে গুরুতর ভুল আছে !

"আরেকটি তথ্য। আমাদের রসুল মোহম্মদ (স) এর যুদ্ধকালিন ঘনিষ্ট সহচর (সাহাবি) ও চিফ ইঞ্জিনিয়ার ও খন্দক যুদ্ধের বীর যুদ্ধকুশলী 'সালমান পার্শি' পারস্যের সেই এলাকার প্রায় বিলুপ্ত জুরাইস্ট ধর্মের অনুসারি ছিলেন। শেষ পর্যন্ত ধর্ম পরিবর্তন করে নি।"

সালমান ফার্সি রা. মশহুর সাহাবী রা. ছিলেন ! তাঁর মতন আজিমুশ্বান সাহাবীর নামে বিকৃত ইতিহাস লেখার কারণ কি বুঝে আসিতেছে না ! হাসানের মতলব কি ইহাও আমার কাছে রহস্যময় মনে হইতাছে !

সালমান রা. পূর্বে কোন ধর্ম মানিতেন বিশেষ করিয়া অগ্নিউপাসনা বা প্যাগানিজম মানিতেন কিনা তাহা জানা নাই ! হায়াতুস সাহাবাতে আছে , তিনি সত্যের সন্ধানে বাহির হইয়া দীর্ঘকাল খ্রিস্টান রাহেবদের খেদমতে ছিলেন ! একে একে তিনজন রাহেবের মৃত্যুর পরে তিনি আবারো বাহির হন। পথিমধ্যে ডাকাতেরা তাহাকে দাস হিসেবে বিক্রয় করিয়া দেয় ! যতদূর মনে পরে , তিনি মদিনায় ইসলাম গ্রহণ করেন ! তিনি খুব মর্যাদাসম্পন্ন সাহাবী ছিলেন ! তিনি ধর্ম পরিবর্তন করেন নাই, অগ্নি উপাসকই ছিলেন ইহা ডাহা মিথ্যা কথা !
হাদীসবেত্তা গন তাহার হইতে অনেক হাদিস বর্ণনা করিয়াছেন। তিনি ধর্ম পরিবর্তন করিয়া ইসলাম গ্রহণ না করিলে তাহার হইতে কোন হাদিস কোন কালেই বর্ণনা করা হইতো না। কারণ হাদিস গ্রহণের মানদন্ডে শুধু ঈমানই নহে, ইবাদিয়াত, মুয়ামিলাত, মুবাশিরাত , আখলাক সবই বিচার্য ছিল !

অন্য ধর্মের সাথে ইসলামের মিল পাওয়া খুবই স্বাভাবিক। কারণ ইসলাম তো নতুন নহে। বরং আদম আ. হইতে সকল নবী, রাসূল আ. তো ইসলামেরই অনুসারী ছিলেন, ইসলামেরই দাওয়াত দিয়েছেন ! হ্যা, শরীয়তে বিভিন্ন সময়ে ভিন্নতা ছিল।

অন্যন্য ধর্মও হয়ত সেই সময়কার নবীর অনেক শিক্ষা গ্রহণ করিয়াছে, অথবা সেই সময়কার ইসলামের শিক্ষাই বিকৃত হইয়া নতুন ধর্মের উৎপত্তি হইয়াছে ! তাই ধর্মসমূহের মধ্যে মিল দেখা যাইতেই পারে ! তবে ইহা বর্ণনা করার উদ্দেশ্য কি ?

ইহা বর্ণনা করিয়া ইসলাম বিদ্বেষীদের সেই পুরোনো আকাম "রাসূল সা. ইসলামের বিধান অন্যদের হইতে নকল করিয়াছেন (নাউযুবিল্লাহ !)" আবারো সামনে আনার প্রয়াস। বস্তুত এই প্রয়াস তাহাদের বস্ত্রই উন্মোচন করিতেছে, আর কিছু নহে !

হজরত মাওলানা মাহমুদুল হাসান দা. বা. ঠিকই বলিয়াছেন--- "বিকৃত মস্তিষ্কের চেয়ে বড় আজাব আর কিছু নাই " ! যাহারা ধর্মীয় ইতিহাস বিকৃতির মতন আকামের চেষ্টা করিতেছে, যদি না বুঝিয়া করেন তাহা হইলে আল্লাহর কাছে তাহাদের জন্য হেদায়েতের দোয়া করিতেছি , আর উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হইলে আল্লাহর কাছেই ফরিয়াদ করিতেছি !

০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৩:০৪

শের শায়রী বলেছেন: অনেক অনেক কৃতজ্ঞতা টারজান ভাই, এই ধরনের মন্তব্য পোষ্টের থেকেও বেশী গুরুত্ব রাখে। অন্তত আমার কাছে। অনেক অনেক কৃতজ্ঞতা আবারো।

১৭| ৩১ শে জানুয়ারি, ২০২০ দুপুর ২:৩৭

হাসান কালবৈশাখী বলেছেন:

টারজান০০০০৭

ব্রাদার। এত উদবিগ্ন হওয়ার কিছু নেই।
সালমান পার্শি মদিনায় এসে পরে মোসলমান হতেও পারে। তবে তার পিতা ছিলেন একজন প্রাচীন জরাথ্রুস্টবাদী ধর্মের।
বাপের ধর্ম স্বাভাবিক ভাবে পোলায় করবে। আর পরে খ্রীষ্ট ধর্মে যেহেতু দিক্ষা নিয়েছিলেন, মুসলিমেও নেয়া সম্ভব। সেটা ব্যাপার না। আপনার কথাই মানলাম। সে মুসলিম।

আমার প্রশ্ন এত দুরের এত প্রাচীন জরাথ্রুস্টবাদী ধর্মের প্রায় সব রিচুয়ালগুলো ইসলামের প্রধান প্রধান প্রথাগুলোর সাথে হুবুহু মিলে যায় কেন?
এতে সালমান পার্শির প্রভাব কতটুকু?

০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৩:১৫

শের শায়রী বলেছেন: হাসান ভাই, শুধু এটুকুই না ইসলামের অনেক কিছুই অনেক আগে থেকে প্রচলিত ছিল, আপনি যদি এব্যাপারে পড়াশুনা করেন দেখবেন আমার কথা কতটুকু সত্য। এখানে শুধু জরাথ্রুষ্টবাদ না, আরো অনেক কিছুই অনেক ধর্মের আগে থেকে প্রচলিত ছিল যা ইসলামে মিশে গেছে।

ইসলামে এক লক্ষ বা দুই লক্ষ নবী বা পয়গম্বর আসছে, যাদের সঠিক হিসাব আমরা জানি না, ইসলাম কিন্তু মহানবীর হাত ধরে হঠাৎ করে আসেনি, সেই আদম (অঃ) থেকে খতমে নবুয়ত পর্যন্ত ইসলাম কিন্তু স্বীকার করে নেয় বিভিন্ন নবী রাসুলের ব্যাপারগুলো যার মধ্যে কিছু কিছু ঘটনা পবিত্র কোরান শরীফেও আসছে, মহানবীর একটা জায়গায় এসে ইসলাম অন্যান্য নবী রাসুলদের থেকে পার্থক্য হয়ে গেছে সেটা হল খতমে নবুয়ত। মানে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর পর আর কোন নবী রাসুল পৃথিবীতে আসবে না, কেয়ামতের লক্ষন প্রকাশের আগ পর্যন্ত।

আমি এখনো এই সব ব্যাপারে খুব বেশী কিছু জানি না, অল্প অল্প জানছি, সুতারাং এই অল্প জ্ঞানে অত গভীরে যাবার মত অবস্থা আমার নেই। তবে জানছি।

অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।

১৮| ০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:৩০

সুপারডুপার বলেছেন:



সমস্ত ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায়, একেশ্বরবাদী, দ্বৈতবাদী, বহু-ঈশ্বরবাদী ও বস্তুপ্রধান ধর্মের ধারণাগুলোর মিশ্রণে তৈরি হয়েছে আজকের একেশ্বরবাদী দর্শন। একজন গড়পড়তা মুসলিম একেশ্বরবাদী হয়ে আল্লাহকে বিশ্বাস করে, দ্বৈতবাদীর মতো শয়তানকে বিশ্বাস করে, বহু-ঈশ্বরবাদীদের মতো বিভিন্ন পীর সুফি বাবাদের পূজা করে, আবার প্রাচীন সর্বপ্রাণবাদীদের মতো জ্বীনেও বিশ্বাস করে। মুসলিমদের এই যে কয়েক রকম ভিন্ন, এমনকি পরস্পরবিরোধী বিশ্বাসকে একসাথে গ্রহণ করা দেখে বলা যায় ইসলাম আসলে একটি সমন্বিত ধর্ম।

০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৩:৪৭

শের শায়রী বলেছেন: সুপার ডুপার ভাই, ইসলামের এক মাত্র প্রচারক কিন্তু শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) না। উনার আগেও অনেকে ইসলাম প্রচার করেছে, অন্তত যারা ইসলাম ধর্মে বিশ্বাস করে তারা এটা মানে। বিভিন্ন সময়ের প্রেক্ষিতে আল্লাহ বলেন আর সৃষ্টি কর্তা বলেন, তিনি বিশেষ বিশেষ মানুষ কে বিভিন্ন নির্দিষ্ট অঞ্চল বা গোত্র ভিত্তিক হেদায়েতের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন নবী বা মহাপুরুষ পাঠিয়েছেন। শেষ নবীর কোন স্থান বা গোত্র ভিত্তিক না উনি হলেন সমগ্র বিশ্ব কেন্দ্রিক, আপনি যদি কোরান বা অন্য কোন ধর্মগ্রন্থ পড়েন বা ইভেন মীথ ও দেখেন দেখবেন মহানবীর থেকে (বাহ্যিক দৃষ্টিতে হলেও) অনেক বেশী ক্ষমতা (হতে পারে সেটা রাজনৈতিক বা অলৌকিক) নিয়েও তারা কিন্তু বিশ্বে প্রভাব রাখতে পারে নি। তাদের প্রভাবটা স্থান ভিত্তিক।

একশ্বরবাদের সাথে আপনি যেমন শয়তান বিশ্বাস কে দ্বৈতবাদ বা বহু ঈশ্বরবাদীদের মত পীর সুফীবাদের পুজা বা সর্বপ্রানবাদী দের মত জ্বীন বিশ্বাস এক করে ফেলছেন, সত্যি কথা বলতে কি আমি আপনার কাছ থেকে এই ধরনের যুক্তিহীন কমেন্ট আশা করিনি।

প্রথমেই আসি দ্বৈতবাদের ব্যাপারে, দ্বৈতবাদ কি? যে দার্শনিক মতবাদে জীবাত্মা ও পরমাত্মা অথবা সৃষ্টি ও স্রষ্টা অথবা পুরুষ ও প্রকৃতির স্বাতন্ত্র্য স্বীকৃত। মানে দুটো ভিন্ন ভিন্ন প্রকৃতির স্বীকৃতি। দেখুন এখানে জীবাত্মা বা পরমাত্মা, সৃষ্টি এবং স্রষ্টা এই সব কিন্তু এই জিনিসের দুটো রূপ হিসাবে স্বীকৃত। এটাই দ্বৈতবাদ। তাই আল্লাহ আর আর শয়তান দুটো সম্পুর্ন ভিন্ন প্রকৃতির তারা কোন ভাবেই দ্বৈতবাদের সংজ্ঞাকে সংজ্ঞায়িত করে না।

আপনি লিখছেন “একজন গড়পড়তা মুসলিম একেশ্বরবাদী হয়ে আল্লাহকে বিশ্বাস করে আবার বহু-ঈশ্বরবাদীদের মতো বিভিন্ন পীর সুফি বাবাদের পূজা করে” আপনি যদি এখন গাঁজা খাওয়া মাজার পুজারীদের গড়পড়তা মুসলমান হিসাবে দেখেন তাহলে আমার বলার কিছু নেই, কিন্তু এটা খুব পরিস্কারভাবে ইসলামে বলা আছে পীর সুফীদের (যদিও এই যুগের পীর সুফীদের ব্যাপারে আমার নিজেরই কোন ভক্তি নেই) সন্মান দেখানো আর তাদের পুজা করা সম্পূর্ন ভিন্ন ব্যাপার। কেউ যদি আপনার ভাষ্য মত পুজা করেই থাকে তবে সে ধর্মের দৃষ্টি কোন থেকে মারাত্মক অন্যায় করল যা কোন মতেই ইসলাম সমর্থিত না। এর দায় তো ধর্ম নেবে না।

আবার আপনি লিখেছেন “আবার প্রাচীন সর্বপ্রাণবাদীদের মতো জ্বীনেও বিশ্বাস করে” সর্বপ্রানবাদের সংজ্ঞা কি? সর্বপ্রাণবাদ (ইংরেজি: Animism) (ল্যাটিন ভাষা animus, -i "আত্মা, জীবন" থেকে) হচ্ছে মানব-বিহীন সত্ত্বাগুলোতে (প্রাণীসমূহ, উদ্ভিদসমূহ এবং প্রাণহীন বস্তুসমূহ বা ইন্দ্রিয়গোচর বস্তুসমূহে) আধ্যাত্মিক নির্যাস বিরাজিত থাকা। অন্য অর্থে, প্রকৃতির সব কিছুকেই সপ্রাণ মনে করা, সব ক্রিয়াকলাপের পেছনে প্রাণের অস্তিত্বকে অনুভব করাই হলও সর্বপ্রাণবাদ। এই অর্থের সাথে কি জ্বিন বিশ্বাস করা মেলে কিনা সে প্রশ্ন আপনার কাছেই রেখে যাই?

অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।


১৯| ০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৫:৪৫

সুপারডুপার বলেছেন:



উনার আগেও অনেকে ইসলাম প্রচার করেছে, অন্তত যারা ইসলাম ধর্মে বিশ্বাস করে তারা এটা মানে।
- আপনি ইতিহাস ঘেটে কি এটাই পেয়েছেন ?


ইসলামে এক লক্ষ বা দুই লক্ষ নবী বা পয়গম্বর আসছে।
- এটাও কি আপনি ইতিহাস ঘেটে পেয়েছেন ?

একেশ্বরবাদ ও দ্বৈতবাদ:

দ্বৈতবাদী ধর্মের উদ্ভব হয় আজ থেকে হাজার বছরেরও বেশি আগে। ১৫০০ থেকে ১০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের মধ্যে কোনো এক সময়ে মধ্য এশিয়ায় জরাথুস্ট্র নামক একজন ধর্মপ্রচারক ছিলেন। তাঁর প্রচারিত বিশ্বাস অনেক প্রজন্ম পার হয়ে পরিণত হয় পৃথিবীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দ্বৈতবাদী ধর্মে, যার নাম জরাথুস্ট্রবাদ। এই ধর্মানুসারে এই জগতে ভালো ঈশ্বর আহুরা মাজদা (Ahura Mazda) এবং খারাপ ঈশ্বর আংরা মাইনিউ (Angra Mainyu) এর মধ্যে লড়াই চলছে। মানুষের কর্তব্য হল এই যুদ্ধে ভালো ঈশ্বরকে সাহায্য করা।

একেশ্বরবাদের উত্থান দ্বৈতবাদকে পুরোপুরি মুছে ফেলতে পারেনি। ইহুদি ধর্ম, খ্রিস্টধর্ম ও ইসলাম- এই তিনটি একেশ্বরবাদী ধর্মই দ্বৈতবাদের অনেক বিশ্বাস ও আচার-আচরণকে নিজের মধ্যে ধারণ করেছে। একেশ্বরবাদের অনেক মৌলিক ধারণাই আসলে দ্বৈতবাদ থেকে উদ্ভূত। অসংখ্য ইহুদি, খ্রিস্টান ও মুসলিম একটা খারাপ শক্তির অস্তিত্বে বিশ্বাস করে, যে শক্তি ঈশ্বরের বিরুদ্ধে স্বাধীনভাবে কাজ করে। খ্রিস্টধর্মের ‘ডেভিল’ (Devil) বা ইসলাম ধর্মের ‘শয়তান’ই হলো সেই খারাপ শক্তি।

একেশ্বরবাদে বিশ্বাসী মানুষ কীভাবে এমন দ্বৈতবাদী বিশ্বাসকে গ্রহণ করে? যুক্তি দিয়ে এর ব্যাখ্যা দেওয়া যায় না। হয় একজন সর্বশক্তিমান ঈশ্বরে বিশ্বাস করতে হবে, নয়তো দুটি ভিন্ন পরস্পরবিরোধী শক্তিকে মেনে নিতে হবে যার কোনোটাই সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী নয়। কিন্তু একই সাথে দুটি পরস্পরবিরোধী যুক্তিকে মেনে নেওয়ার একটা অদ্ভুত ক্ষমতা মানুষের আছে। তাই লক্ষ লক্ষ ধার্মিক ইহুদি, খ্রিস্টান ও মুসলিম যে একই সাথে ঈশ্বর ও শয়তানের অস্তিত্ব ও ক্ষমতায় বিশ্বাস করে- এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। কিছু কিছু ক্ষেত্রে এই বিশ্বাস এতই প্রবল যে শয়তানের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ঈশ্বরকে সাহায্য করতে ‘জিহাদ’ কিংবা ‘ক্রুসেড’এর নামে মানুষ প্রাণ পর্যন্ত নিতে দ্বিধাবোধ করে না।

একেশ্বরবাদীরা দ্বি-বিভাজনের ধারণা থেকে পুরোপুরি সরেও আসতে পারে না, কারণ এ ছাড়া মন্দকে ব্যাখ্যা করার সহজ কোনও পথ নেই। এই দুটি পরস্পরবিরোধী তত্ত্ব থেকেই ইসলাম ও খ্রিস্টধর্মের অন্যতম একটি ভিত্তি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এই দুই ধর্মের মানুষ যে স্বর্গ এবং নরক এর ধারণায় বিশ্বাস করে, তা মূলত দ্বৈতবাদী ধারণা

০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:৩৫

শের শায়রী বলেছেন: সুপারডুপার ভাই, আপনি প্রথমে আমাকে প্রশ্ন করছেন

উনার আগেও অনেকে ইসলাম প্রচার করেছে, অন্তত যারা ইসলাম ধর্মে বিশ্বাস করে তারা এটা মানে।
- আপনি ইতিহাস ঘেটে কি এটাই পেয়েছেন ?


আপনার করা প্রশ্নেই আমি উত্তর দিয়ে দিয়েছি, প্রথম লাইনের দ্বিতীয় অংশে "অন্তত যারা ইসলাম ধর্মে বিশ্বাস করে তারা এটা মানে" এখন ইতিহাস যদি আপনি বলেন ধর্মীয় ইতিহাস ছাড়া তবে আমার কিছু বলার নেই, কিন্তু আপনিও জানেন ধর্মও ইতিহাসের বাইরে না। আর ইসলাম হঠাৎ করে আবির্ভুত কোন ধর্ম না, ইসলাম তার পূর্ববর্তী অনেক প্রচারককে স্বীকৃত দিয়েছে, অন্তত কোরানে ২৫ জন নবী রাসুলের উল্লেখ্য আছে। সুতারাং উনার আগে যে ইসলাম প্রচারিত হয়েছে সেটা নিয়ে কোন সন্দেহ নেই, স্বীকৃত। তবে ভিন্ন ফরম্যাটে হতে পারে। বর্তমানে যে ফরম্যাটে ইসলাম দেখা যায় সে ফরম্যাটে হয়ত না।

আপনার দ্বিতীয় প্রশ্ন ইসলামে এক লক্ষ বা দুই লক্ষ নবী বা পয়গম্বর আসছে।
- এটাও কি আপনি ইতিহাস ঘেটে পেয়েছেন ?


এটাও ধর্মীয় ইতিহাসের সাথে সম্পৃক্ত। আপনি যে জরাথ্রুষ্টবাদীদের উদাহরন আনছেন তাও কিন্তু ওই ইতিহাস ঘেটে এবং সেটা যারা ইতিহাস নিয়ে ঘাটাঘাটি করে তাদের লেখা থেকেই পেয়েছেন, অতীতের কোন কিছুই জানতে হলে আপনাকে ইতিহাসে যেতে হবে। এখানে প্রশ্ন আসতে পারে এক লক্ষ বা দুই লক্ষ চব্বিশ হাজার পয়গম্বরের কথা কোন ইতিহাসে লেখা আছে? ভাই আমি আগেই বলছি প্রতিটা ধর্মেরই কিছু ধর্মীয় গ্রন্থ আছে সেগুলোতে বা সে সম্পর্কিত বিভিন্ন সে ধর্মীয় ব্যাখ্যা কারকদের লেখায় আসে, এগুলো প্রমানিত কিছু না, এগুলো ধর্মীয় বিশ্বাস। কিন্তু বিশ্বাসটার পেছেন কিছু কিছু ইতিহাস থাকে বা যুক্তি থাকে, তবে মুলতঃ সেখানে বিশ্বাসটাই বড় হয়ে আসে যুক্তির থেকে।

আপনিই লিখছেন "একেশ্বরবাদে বিশ্বাসী মানুষ কীভাবে এমন দ্বৈতবাদী বিশ্বাসকে গ্রহণ করে? যুক্তি দিয়ে এর ব্যাখ্যা দেওয়া যায় না।"

আপনি লিখেছেন "একেশ্বরবাদীরা দ্বি-বিভাজনের ধারণা থেকে পুরোপুরি সরেও আসতে পারে না, কারণ এ ছাড়া মন্দকে ব্যাখ্যা করার সহজ কোনও পথ নেই।" দ্বিবিভাজন আর দ্বৈতবাদ তো এক জিনিস না ভাই, দ্বিবিভাজন অবশ্যই থাকবে, সেটা না থাকলে তো ন্যায় অন্যায় বোধই থাকেনা।

আর জিহাদ ক্রুসেডের ইতিহাস আপনি যদি দেখেন সেখানে যতটা না ধর্ম নিয়ে তার থেকে অনেক বেশী স্বার্থ নিয়ে, এই স্বার্থ আর ধর্ম এক জিনিস হতে পারে না। ন্যায় অন্যায়, ভালো মন্দ, আলো অন্ধকার এই পার্থক্য যদি দ্বৈতবাদ হয় তবে দ্বিবিভাজন কি? তবে কি দ্বিবিভাজন আর দ্বৈতবাদ একই জিনিস?

২০| ০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ৯:৫৮

সুপারডুপার বলেছেন:




শের শায়রী ভাই,

ধর্ম হচ্ছে বিশ্বাসের ধুপ জ্বালিয়ে, তার গন্ধে মানুষকে বোকা বানানোর সহজ উপায়। আর একটা ভুল বিশ্বাস যত প্রচার করা যাবে , একটা সময় মানুষ তা সত্য হিসেবে গ্রহণ করবে।

যখন বিশ্বাসের কথা বলেছেন আর যুক্তি দেওয়ার প্রয়োজন নাই। ১-২ লক্ষ নবীর জায়গায় ৪-৫ লক্ষ নবীও বলতে পারেন ও ছড়িয়ে দিতে পারেন। মানুষ ব্যাখ্যা চাইলে বলবেন , কিছু জনকে আল্লাহ দৃষ্টিগোচর করেছেন , বাকি নবীদের আল্লাহ গোপন রেখেছেন। ধর্মের নামীদামী স্কলার দ্বারা ভালো প্রচার হলে একটা সময় মানুষ এটাই সত্য হিসেবে গ্রহণ করবে।

ইসলাম আসলে একটি সমন্বিত ধর্ম যা আগমনের আগের ধর্মগুলো থেকে কপি - পেস্ট করে বানানো হয়েছে , যাহাতে অন্য সকল ধর্মের লোকেরা সহজে ইসলাম গ্রহণ করতে পারে। একজন গড়পড়তা মুসলিম বহু-ঈশ্বরবাদীদের মতো বিভিন্ন পীর সুফি বাবাদের পূজা করে, আবার প্রাচীন সর্বপ্রাণবাদীদের মতো জ্বীনেও বিশ্বাস করে। এটাও আমি যুক্তি দিয়ে বলতে পারতাম। কিন্তু লাভ কি! , আপনি আবার বিশ্বাস- ই টেনে আনবেন।

আমার কাছেই এটাই অবাক লাগে, আপনি ধর্মে বিশ্বাস করেন আবার ধর্মের রূপকথা নিয়ে ব্লগও লেখেন। সত্যিই একই সাথে দুটি পরস্পরবিরোধী যুক্তিকে মেনে নেওয়ার একটা অদ্ভুত ক্ষমতা আপনার আছে। হয়তো এই কারণে , আপনার নিজের ধর্ম বা ইসলাম ধর্মের রূপকথা নিয়ে ব্লগ লেখা এড়িয়ে চলেন।

০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ৩:১১

শের শায়রী বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.